nulibrary

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৬ (অনুষ্ঠিত-২১/০৯/২০১৭)। (ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় কোড : 241509
বিষয় : রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)

ক-বিভাগ

(ক) USSR-এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : Union Soviet Socialist Republic.

(খ) আধুনিক রাশিয়ার জনক বলা হয় কাকে?
উত্তর : আধুনিক রাশিয়ার জনক পিটার দি গ্রেটকে বলা হয় ।

(গ) “মীর” কি?
উত্তর : মীর একটি বিখ্যাত সমিতি।

(ঘ) “ইসক্রা” শব্দের অর্থ কি?
উত্তর : স্ফুলিঙ্গ।

(ঙ) কখন রুশ-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল?
উত্তর : রুশ-জাপান যুদ্ধ ১৯০৪-০৫ সালে সংঘটিত হয় ।

(চ) কোন বিপ্লবকে “প্রভাতী তারা” বলা হয়?
উত্তর : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে।

(ছ) বলশেভিক শব্দটির অর্থ লিখ ।
উত্তর : বলশেভিক শব্দটির অর্থ সংখ্যাগুরু ।

(জ) ডিসেমব্রিস্ট আন্দোলন কত সালে হয়েছিল?
উত্তর : ১৮২৫ সালে ।

(ঝ) রাশিয়ার সর্বশেষ জার কে ছিলেন?
উত্তর : রাশিয়ার সর্বশেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস ।

(ঞ) লেলিনের পুরো নাম কি?
উত্তর : লেলিনের পুরো নাম ভাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেলিন।

(ট) লাল ফৌজ কি?
উত্তর : লাল ফৌজ হলো কমিউনিস্ট আর্মি ।

(ঠ) দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৪১ খ্রি: হতে ১৯৪৫ খ্রি: পর্যন্ত

খ-বিভাগ

২। নিহিলিজম ব্যাখ্যা কর।

৩। ১৯০৫ সালের “রক্তাক্ত রবিবার” ঘটনার বিবরণ দাও।

৪। দ্বিতীয় আলেকজান্ডরকে কেন ‘মুক্তিদাতা জার' বলা হয়?

৫। কার্ল মার্কসের পরিচয় দাও!

৬। “এপ্রিল থিসিস” এর মুল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর।

৭। লেলিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতর গুরুত্ব আলোচনা কর ।

৮। “যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ”-ব্যাখ্যা কর।

৯। ১৯৩৬ সালের রুশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ ।

গ-বিভাগ

১০। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়াতে সংঘটিত বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিবরণ দাও ।

১১। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।

১২। লেলিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির দ্বন্দ্বের কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর।

১৩। রাশিয়ার সমাজতন্ত্র সংহতকরণে যোসেফ স্ট্যালিনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

১৪। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা কর।

১৫। ১৯৩৯ সালের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির পটভূমি ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

১৬। অপারেশন বাররারোসা কি? হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ান আক্রমণের বর্ণনা দাও।

১৭। সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান দেশপ্রেমিক যুদ্ধের বিবরণ দাও।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৭ (অনুষ্ঠিত-২৪/০৩/২০১৮)]
(ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় :রাশিয়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)
বিষয় কোড : 241509

ক-বিভাগ

(ক) কাকে মুক্তিদাতা জার' বলা হয়?
উত্তর : দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে ।

(খ) ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?
উত্তর : ১৮৫৪ সালে।

(গ) সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কে?
উত্তর : কার্ল মার্কস ।

(ঘ) RSDLP এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : RSDLP এর পূর্ণরূপ হলো- Russian Social Democratic Labour Party.

(ঙ) চার্লস ওয়েন কে ছিলেন?
উত্তর : একজন ইংরেজ সমাজতান্ত্রিক ।

(চ) বলশেভিক দলের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : লেনিন ।

(ছ) পোর্টস মাউথের সন্ধি কবে সম্পাদিত হয়?
উত্তর : ১৯০৫ সালে ।

(জ) কোন বিপ্লব রাশিয়ার জারতন্ত্রের অবসান ঘটায়?
উত্তর : ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে।

(ঝ) 'The Big Three! কাদের বলা হয়?
উত্তর : আমেরিকা, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডকে।

(ঞ) 'সোভিয়েত' শব্দের অর্থ কি?
উত্তর : স্বশাসিত পরিষদ।

লেনিন কখন মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি

(ঠ). অপারেশন বারবারোসা কি?
উত্তর : হিটলারের রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনার নাম অপারেশন বারবারোসা ।

খ-বিভাগ

২। রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথা সম্পর্কে টীকা লিখ ।

৩। নারোদনিক আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

8। রাসপুটিন কে ছিলেন?

৫। দাস ক্যাপিটাল' এর উপর টীকা লিখ ।

৬। ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এর পরিচয় দাও।

৭। ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে বলশেভিকরা কেন সাফল্য লাভ করেছিল?

৮। রাপালো চুক্তি কি?

৯। মহাজোট সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

গ-বিভাগ

১০। ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও ।

১১। জার প্রথম নিকোলাসের বৈদেশিক নীতি আলোচনা কর।

১২। ৯০৫ সালের রুশ বিপ্লবের ফলাফল আলোচনা কর।

১৩। রাশিয়ার মার্কসবাদের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা কর ।

১৪। রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ কর।

১৫ | রুশ নেতা লেনিন-এর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

১৬। স্ট্যালিনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলোর সাফল্য সম্পর্কে লিখ।

১৭ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের যোগদানের কারণগুলো বিশ্লেষণ কর।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৮ (অনুষ্ঠিত-২৩/০৪/২০১৯)]
(ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় : রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)
বিষয় কোড : 241509

ক-বিভাগ

(ক) রাশিয়ার সর্বশেষ জার কে ছিলেন? (Who was the last Tsar of Russia?)
উত্তর : রাশিয়ার সর্বশেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস ।

(খ) রাশিয়াতে কবে ‘সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়? (When did the ‘Social Democratic Party' found in Russia?)
উত্তর : ১৮৯৮ সালে।

(গ) রাশিয়ার ইতিহাসে ‘রক্তাক্ত রবিবারের ঘটনা কখন ঘটে? (When did the event of 'Bloody Sunday' take place in the
history of Russia?)
উত্তর : ১৯০৫ সালে ।

(ঘ)কখন রুশ-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল? (When was the battle of Russo-Japan started?)
উত্তর : রুশ-জাপান যুদ্ধ ১৯০৪-০৫ সালে সংঘটিত হয়।

(ঙ) ‘বলশেভিক’ শব্দটির অর্থ কী? (What is the meaning of the word 'Bloshevik?)
উত্তর : বলশেভিক শব্দটির অর্থ সংখ্যাগুরু।

(চ) কোন বিপ্লবকে ‘প্রভাতী তারা' বলা হয়? (Which revolution is called 'Morning Star?)
উত্তর : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে।

(ছ) USSR এর পূর্ণরূপ কী? (What is the full from of USSR?)
উত্তর : USSR এর পূর্ণরূপ হলো- Union of Soviet Socialist Republic.

(জ) কত সালে ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো' প্রকাশিত হয়েছিল? (In which year 'Communist Manifesto' was published?)
উত্তর : ১৮৪৮ সালে ।

(ঝ) ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ' তত্ত্বের প্রবক্তা কে? (Who is the introducer of 'Dialectic Materialism' theory?)
উত্তর : কার্ল মার্কস ।

(ঞ) রাশিয়ার ইতিহাসে কুলাক নামে কারা পরিচিত? (Who wer known as Kulak in the history of Russia?)
উত্তর : সমৃদ্ধশালী কৃষকেরা ।

(ট) NEP এর পূর্ণরূপ কী? (What is the full form of NEP?)
উত্তর : NEP এর পূর্ণরূপ হলো- New Economic Policy.

(ঠ) ‘দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ' কত দিন স্থায়ী হয়েছিল? (How long the 'Great Patriotic War' was lasted?)
উত্তর : ১৯৪১ খ্রি: হতে ১৯৪৫ খ্রি: পর্যন্ত ৷

খ-বিভাগ

.২। 'দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে কেন 'মুক্তিদাতা জার' বলা হয়?

৩। বলশেভিক পার্টি সম্পর্কে টীকা লিখ ।

৪। 'এপ্রিল থিসিস' এর মূল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর ।

৫। নিহিলিজম ব্যাখ্যা কর ।

৬। কার্ল মার্কসের পরিচয় দাও।

৭। ‘যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ' ব্যাখ্যা কর।

৮। ১৯৩৬ সালের রুশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ ।

৯। ১৯৩৯ সালের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ কর।

গ-বিভাগ

১0। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়াতে সংঘটিত বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিবরণ দাও ।

১১। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফল আলোচনা কর।

১2। লেনিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির দ্বন্ধের কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর ।

১৩। রাশিয়ার সমাজতন্ত্র সংহতকরণে যোসেফ স্ট্যালিনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

১৪। সোভিয়েত ইউনিয়নের নতুন অর্থনৈতিক নীতি-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।

১৫। পটসমডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা কর।

১৬। ১৯৩৯ সালের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির পটভূমি ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

১৭। অপারেশন বারবারোসা কী? হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের বর্ণনা দাও।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৯ (অনুষ্ঠিত-১৪/০৩/২০২০)।
(ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় :রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)
বিষয় কোড : 241509

ক-বিভাগ

(ক) আধুনিক রাশিয়ার জনক বলা হয় কাকে? (Who is called the father of Modem Russia?)
উত্তর : আধুনিক রাশিয়ার জনক পিটার দি গ্রেটকে বলা হয় ।

(খ) রাশিয়ার শেষ রাজবংশের নাম কী? (What is the name of the last Russian Dynasty?)
উত্তর : রোমানভ রাজবংশ।

(গ) ‘নিহিলিজম' শব্দটির অর্থ কী? (What is the meaning of the word 'Nihilism'?)
উত্তর : উচ্ছেদবাদ বা ধ্বংসবাদ ।

(ঘ) ডিসেমব্রিস্ট আন্দোলন' কত সালে হয়েছিল? (In which year 'Decembrist Movement' took place?)
উত্তর : ডিসেমব্রিস্ট আন্দোলন ১৮২৫ সালে সংঘটিত হয়।

(ঙ) রাশিয়ায় বলশেভিক পার্টি কখন গঠিত হয়? (When did the Bolshevik Party form in Russia?)
উত্তর : রাশিয়ায় বলশেভিক পার্টি ১৯০৩ সালে গঠিত হয়।

(চ) কোন বিপ্লব রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটায়? (Which revolution concluded the Czarism in Russia?)
উত্তর : ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের মাধ্যমে ।

(ছ) 'মেনশেভিক' শব্দটির অর্থ লিখ। (Write the meaning of the word 'Menshevic'.)
উত্তর : 'মেনশেভিক' শব্দটির অর্থ সংখ্যালঘু।

(জ) রাসপুটিন কে ছিলেন? (Who was Rasputin ?)
উত্তর : জার ২য় নিকোলাসের সময়কার একজন ধর্মযাজক।

(ঝ) RSDLP এর পূর্ণরূপ কী? (What is full form of RSDLP?)
উত্তর : RSDLP এর পূর্ণরূপ Russian Social Democratic Labour Party.

(ঞ) প্লেখানভ কে ছিলেন? (Who was Plekhanov ?)
উত্তর : নারদিক মতবাদে বিশ্বাসী একজন চিন্তাবিদ ছিলেন ।

(ট) "The Big Three" কাদের বলা হয়? (Who are known as "The Big Three"?)
উত্তর : আমেরিকা, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডকে ।

(ঠ)'অপারেশন বারবারোসা কী? (What is the 'Operation Barbarossa'?
উত্তর : হিটলারের রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনার নাম অপারেশন বারবারোসা ।

খ-বিভাগ

২। উষ্ণ জলনীতি বলতে কী বুঝায়?

৩। রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথা সম্পর্কে লিখ।

৪। ১৯০৫ সালের ‘রক্তাক্ত রবিবার' এর ঘটনার বিবরণ দাও।

৫। ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এর পরিচয় দাও।

৬। 'স্ট্যালিনের এক রাষ্ট্রে সাম্যবাদ' কী? ব্যাখ্যা কর ।

৭। লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতির গুরুত্ব আলোচনা কর ।

৮। ব্রেস্ট লিটভস্কের চুক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

৯। ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সফলতার কারণ কী ছিল?

গ-বিভাগ

১০। ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও।

১১। দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে 'মুক্তিদাতা জার' বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

১২। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।

১৩। রাশিয়ায় মার্কসবাদ সম্পর্ক আলোচনা কর।

১৪। রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বিশ্লেষণ কর।

১৫। ১৯১৭ সালের অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঘটনা বিশ্লেষণ কর ।

১৬। স্টালিনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলোর সাফল্য মূল্যায়ন কর।

১৭। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা কর।

ভূমিকা : রাশিয়ার, রোমানভ বংশের শাসন ইতিহাসে করেন। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি তার যো ইতিহাসে মুক্তিদাতা জার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হন। তিনি রাশিয়ান সমাজব্যবস্থার সবচাইতে বড় সমস্যা ভূমিদাস | রাজনৈতি প্রথা উচ্ছেদ করে এ খ্যাতি অর্জন করেন। তার পূর্বে ভূমিদাস করেন। শ্রেণি অভ্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতি অতিক্রম করে আসছিল। করেছেন তাদের আর্থ-সামাজিক দুলবস্থা একটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়। ফলে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

মুক্তিদাতা জার : রাশিয়ার ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার মুক্তিদাতা জার হিসেবে বিখ্যাত। তার পূর্বে ভূমিদাস শ্রেণির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ভূমিব্যবস্থায় তারা অভিজাত জমিদার শ্রেণির জমি চাষ করতো। এটা মূলত জমিদারদের জমির ছোট অংশ। এর বিনিময়ে তাদের জমিদারদের জমিতে তিন দিন বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটতে হতো। তাদেরকে গির্জা ও জমিদারদের কর প্রদান করতে হতো। তারা নানা রকম কর দেয়ার পর তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের কোনো ধরনের আর্থ-সামাজিক অধিকার ছিল না। তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের জীবন ছিল জমিদারদের কেনা গোলামের মতো। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যক্তি অধিকার বলতে কিছু তাদের ছিল না। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহ দেখা দিতে থাকে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ক্ষমতায় আরোহণ করার পর তিনি এ সমস্যা বিদূরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি সেনাপতি রোস্টাভাস্টেভের নেতৃত্বে একটি কমিটি লি গঠন করেন। এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জার ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি করেন। ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ৪ টি নীতির উপর ভিত্তি করে ক মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। ১. ভূমিদাসদের স্বাধীন ও মুক্ত নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। ২. মুক্ত ভূমিদাসদের জীবিকার জন্যে জমি দিতে হবে। ৩. সমগ্র ব্যবস্থাটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত হবে। ৪. অভিজাত বা সামন্তদের আর্থিক ক্ষতি না করে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করা হবে। এর ফলে ভূমিদাস শ্রেণি জমিদারদের অত্যাচারের হাত থেকে রেহায় পায়। কিছু সমস্যা থাকলেও মুক্তির ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মূলত কৃষক সম্প্রদায় মুি লাভ করে । এ কারণে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়। কৃষকরা যখন নিজেদের মতো করে শ্রমদান বা জমি চাষাবাদের সুযোগ পায় এবং তার মুক্ত জীবন লাভ করে। জার তাদের মুক্ত জীবনের সুযোগ করে দেয়। এ কারণে মূলত তাদের মুক্তিদাতা জার বলা হয়।

তাছাড়া নানা কারণে রাশিয়ান, সমাজব্যবস্থা তৎকালীন অন্যান্য ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থা থেকে নিচুতে অবস্থান করছিল। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়াকে এ বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। রাশিয়ার কৃষক সম্প্রদায় ও সমাজব্যবস্থাকে মুক্ত করার কারণে তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার মূলত যোগ্যতার কারণে ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করেন। রাশিয়ার দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা সমস্যাগুলো তিনি তার যোগ্যতা দিয়ে সেভাবে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি কৃষক সম্প্রদায়ের মুক্তি দেয়া পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করেন। শুধু জনগণ তথা কৃষকদের নয় রাশিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন বলে তাকে “মুক্তিদাতা জার” বলা হয়।

ভূমিকা : কোনো বিপ্লবই নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের ঘটনা নয়, বরং অনেক সময় এবং শ্রমের পরে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং প্রতিটি বিপ্লবই হলো অত্যন্ত ঘটনাবহুল। তবে রুশ বিপ্লব বা অক্টোবর বিপ্লবের ঘটনাগুলো আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। কেননা এই বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য ছিল শোষণ বৈষম্যের যন্ত্রণায় আর্তনাদরত অমানবিক সমাজব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা এবং শত শত বছরের শোষণের সমাজব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী জার শাসকরে বিরুদ্ধে সংঘটিত হওয়া এই বিপ্লব ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লব। সাম্যভিত্তিক মানবিক সমাজের যে স্বপ্ন মানুষ যুগ যুগ ধরে লালন করে আসছিল তার রূপায়নই ছিল এই বিপ্লবের লক্ষ্য ।

অক্টোবর বিপ্লবের ধারণা : যদিও জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়। কিন্তু এই বিপ্লবের পূর্বের আরো ২টি বিপ্লবের ধারাবাহিকতা ছিল রুশ বিপ্লব। তাই বলা যায়, অক্টোবর বিপ্লব শুরু হয় মূলত ১৯১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই। নিম্নে অক্টোবর বিপ্লবের ঘটনাবলি বর্ণনা দেয়া হলো :

১. মার্চ/ফেব্রুয়ারি বিপ্লব : ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে জার দ্বিতীয় গয়া নিকোলাসকে বিদ্রোহী সৈন্যরা পদত্যাগ করতে বাধ্য করে এর আগে এই পলাতক জারের ট্রেন-রেল শ্রমিকরা মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিল। ইন অনেক লোমহর্ষক ঘটনার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার জার সরকারের পতন ঘটে। তারপর প্রথমে লভোভ এবং পরে কেরেনস্কি-এর নেতৃত্বে পর মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। এই মন্ত্রিসভার বুর্জোয়া দল । কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরাই সর্বেসর্বা ছিল। তাই লেনিন একে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব বলেছেন।

২. জুলাই-এর ঘটনা : বুর্জোয়া সরকার ১৯১৭ সালের ১৮ জুন জার্মানির বিরুদ্ধে একটি অভিযান পরিচালনা করে দক্ষিণ রাশিয়ার গ্যালিসিয়া উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু রাশিয়ার এ অভিযান র ব্যর্থ হয় এবং প্রায় ৬০,০০০ সৈনিক হতাহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেশিনগান রেজিমেন্টের সৈন্যরা ২ জুলাই শ্রমিকদের সাথে নিয়ে একটি অভিযানের পরিচালনা করে এবং তা ব্যর্থ হয়। লেনিন যদিও নিজেকে এবং শ্রমিকদেরকে এ ব্যাপারে থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু ৫ লক্ষ উত্তেজিত শ্রমিক ও সৈনিক ৪ জুলাই পেট্রোগ্রাদে বিক্ষোভ করে এবং সরকারি বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ চালায়। বলশেভিকদের অফিস ভেঙে দেয় ও গ্রেফতার করে। লেনিনকে জার্মানের চর বলা হয় এবং হত্যার চেষ্টা করলো । এই ঘটনাটি রুশ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।

৩. লেনিনের কর্তৃত্ব গ্রহণ : ১৯০৫ সালে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন এবং আলেকজান্ডার বগদানভ বলশেভিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলটি ছিল সংগঠিত শ্রমিক গোষ্ঠী। যা কিনা কেন্দ্রীভূত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতো। এই দলটির সদস্যের কর্মীরা নিজেদের রাশিয়ার বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণির নেতা বলে দাবি করতো। রুশ বিপ্লবের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সময় তিনি দেশে ছিলেন না। পরবর্তীতে তিনি দেশে ফিরে ১৯১৭ সালের ৭ অক্টোবর ফিনল্যান্ডে থেকে ফিরে এসে রাশিয়ার বিপ্লবের নেতৃত্ব নেন।

৪. অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি : লেনিন ১০ অক্টোবর বলশেভিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি গোপন বৈঠক বসান। সেই বৈঠকে তিনি একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অস্থায়ী সরকারকে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সবাইকে অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি স্বরূপ বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, পেট্রোগ্রাদ সোভিয়েত, ট্রেড ইউনিয়নগুলো বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের কমিটি, সেনা ও সৈন্যবাহিনী থেকে লোকজন নিয়ে বিপ্লবী সাময়িক কমিটি গঠন করা হয়।

৫. প্রতিনিধি নিয়োগ : লেনিন সাময়িক কমিটি গঠন করার পর কমিটির বিভিন্ন কার্যাবলি পরিচালনা করার জন্য স্ট্যালিন, সাদলভ, বনাজিনস্কি কুবনভ আর উরিটস্কিকে নিয়োগ দেন। এসব ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব ছিল সাময়িক অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি সূচারুরূপে সম্পন্ন করা। লেনিন নিজে সকলের সাথে বৈঠক ডেকে অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি ও কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতেন যাতে অভ্যুত্থানে সফল হয় ।

৬. অভ্যুত্থানের তথ্য ফাঁস : বলশেভিক পার্টির একটি বর্ধিত সভায় ১৬ অক্টোবর লেনিন অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা | বিপ্লব ছিল করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম ২ জন বিপ্লবের সদস্য কামেনভ ও জিনেভিয়েভ সশস্ত্র অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেন। বিপক্ষে তবে তারা কেবল বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং কেরনস্কির কাছ পেট্রোগ্রা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সকল গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয় যা পরে | এগুলোে পত্রিকায় প্রকাশ হয়। এতে অস্থায়ী সরকার অভ্যুত্থানে মোকাবেলা করার জন্য পেট্রোগ্রাদ ও মস্কোতে সাময়িক শক্তি জড়ো করে ।

৭. অভ্যুত্থানের ১ম পর্ব : নতুন ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী ৬ নভেম্বর সকালবেলা (২৪ অক্টোবর জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) লেনিনের নির্দেশানুযায়ী লালফৌজ ও বিপ্লবী সেনারা রেলস্টেশন, ডাকঘর, তারঘর, পার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ভবনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে দেয়। এভাবেই পেট্রোগ্রাদের স্মোলনি বালিকা ইনস্টিটিউটকে প্রধান ঘাঁটি করে অক্টোবর বিপ্লবের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়।

৮. অভ্যূত্থানের ২য় পর্ব : জারের নীতি প্রাসাদ তথা কেরেনস্কি সরকারের প্রধান কর্মস্থলকে লক্ষ করে যুদ্ধজাহাজ আরোরাতে কামান আগেই বসানো ছিল। সেদিন সকাল নাগাদ অস্থায়ী সরকারের সকল সৈনিকদের প্রতিরোধে চূর্ণ করা হয়। রাত ৯.৪৫ নাগাদ জাহাজ আরোরা থেকে প্রাসাদে কামাল দাগা শুরু হয়। বলশেভিকরা শীত প্রাসাদ দখল করে মন্ত্রীদের প্রলে গ্রেফতার করে। তাদের পিটারপল দুর্গে আটকে রাখা হয়। কেরেনস্কি ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে সামান্য রক্তপাতের মাধ্যমেই এই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।

৯. সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব : পৃথিবীর যেকোনো বিপ্লবই মানু অনেক রক্তের মাধ্যমে সফল হয়। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের অন্যতম নিয়ামক আন্দোলন বলশেভিক আন্দোলনে খুবই সামান্য পৃথি রক্তপাত হয়েছিল। কেননা এটা ছিল গণমানুষের বিপ্লব। রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষই বিপ্লবের অংশ নিয়েছিল এবং জার বির সকল রথী-মহারথীরা পালিয়ে যায়। বুর্জোয়া সরকারের মন্ত্রীদের অব আটক করে পিটবুল দুর্গে রাখা হয়। তাই তেমন একটা প্রতিরোধ । মা ছাড়াই লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয় ।

১০. পুঁজিবাদের পতন : অক্টোবর বিপ্লব ছিল পুঁজিবাদের কিন্তু বিরুদ্ধে। কেননা ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে জার শাসনের অবসানের পর সকলে ভেবেছিল যে সমাজে ন্যায় ও সাম্যের প্রতিষ্ঠা হবে। শাসন ক্ষমতা জারের হাত থেকে অভিজাত ও বুর্জোয়া শ্রেণির হাতে যায়। এই বুর্জোয়ারা বলতে গেলে জার সরকারেরই অন্যরূপ ছিল। ফলে জনগণের কোনো লাভ হয়নি, বরং এই সরকার পুঁজিবাদের বিকাশে অনেক ভূমিকা রাখছিল। তাই লেনিন এই সামরিক ও পুঁজিবাদী সরকারের পতনের জন্য আন্দোলনের ডাক দিলেন এবং অবশেষে রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে।

১১. বলশেভিক দলের ক্ষমতা গ্রহণ : অক্টোবর বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের পর জার শাসকের পুরোপুরি পতন ঘটে। এতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা কার হাতে যাবে এই প্রশ্ন উঠে । স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বদানকারী বলশেভিক দলই ক্ষমতা গ্রহণ করেন অর্থাৎ লেনিন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই লেনিন রাষ্ট্র পরিচালনায় মন দিতে পারেননি।

১২. প্রতিবিপ্লবীদের দমন : যদিও অক্টোবর বিপ্লব গণমানুষের বিপ্লব ছিল তার মানে এই না যে রাশিয়ার সব মানুষই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পক্ষপাতি ছিল। যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিপ্লবের বিপক্ষে ছিল তারা প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করলো। যেমন মস্কো ও পেট্রোগ্রাদের পৌরসভাগুলো বিপ্লবের বিপক্ষে ছিল বলে লেনিন এগুলোকে ভেঙে দেন। লেনিনকে বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবীদের দমন করার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়।

১৩. প্রজাতন্ত্রে প্রতিষ্ঠা : মহান অক্টোবর বিপ্লবের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল জার শাসনের ও বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে মজলুম সাধারণ কৃষক শ্রমিক তথা প্রলেতারিয়েতদের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। লেনিন তাই বুর্জোয়া ও অভিজাতদের সংসদ ডুমা ভেঙে দেন। পুরোনো প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে একটি নতুন রাশিয়ার জন্ম দেন। যার নাম হয় প্রজাতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া।

১৪. অক্টোবর বিপ্লবের প্রকৃতি : অক্টোবর বিপ্লব ছিল পৃথিবীর অন্যতম সফল বিপ্লব। প্রকৃতগত দিক থেকে এটি ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। লেনিন এই আন্দোলনের গড়ে তোলেন যাতে রাশিয়ার সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের অবসান টানে । যাতে মজলুম, শোষিত, বঞ্চিত সাধারণ কৃষক শ্রমিক তথা প্রলেতারিয়েতদের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। সকল ভূমি ও কলকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায়। সকল ধরনের উপাদনের উপকরণ ও উৎপাদনের উপায় এবং বণ্টন ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়া হয়। যাতে সমাজে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে সাম্য, মৈত্রী ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অক্টোবর বিপ্লব ছিল এই পৃথিবীর জন্য এক নতুন সমাজব্যবস্থার দ্বার উন্মোচনের বিপ্লব। এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই বিপ্লব ছিল সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে । এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার জার ও বুর্জোয়া ঈশ্বরতন্ত্রের অবসান ঘটে। মূলত ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের জার শাসনের পতনের মাধ্যমইে অক্টোবর বিপ্লবের বীজ বোনা হয়ে যায় ।

ভূমিকা : রুশ বিপ্লবের প্রথম সূচনা হয়েছিল মূলত ১৯০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসে একে ব্লাডি সানডে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জার দ্বিতীয় নিকোলাস শাসনের বিরুদ্ধে সেদিন তরুণ ফাদার গাপনের নেতৃত্ব এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জারের পেটোয়া বাহিনী। প্রকাশ্যে বিনা বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে জনগণ বিক্ষোভ ডাকলে হরতাল অবরোধে পুরো রাশিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। এই সময় রাজনৈতিক ব্যক্তি শ্রেণি ও শ্রমিকরা পার্লামেন্ট শাসনের দাবি জানান। কৃষক শ্রেণি জমিদার থেকে তাদের জমি দখলে নিয়েছিল এবং সৈন্যরা জনগণের সাথে মিলে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়। এর ফলে পরবর্তীতে অন্যান্য বিপ্লব উৎসাহিত হয়েছিল ।

১৯০৫ সালের বিপ্লবের কারণ : ১৯০৫ সালে রাশিয়ার বিপ্লবের বহুবিদ কারণ বিদ্যমান ছিল। কিন্তু রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণই ১৯০৫ সালের বিপ্লবের জন্য বেশি দায়ী। নিম্নে এই কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :

(ক) সামাজিক কারণ : ১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবের অন্যতম একটি কারণ হলো সামাজিক অবস্থান। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথার বিলুপ্তি করলেও তখন পর্যন্ত কোনো মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব হয়নি। যার ফলে সমাজ একদিকে বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বকারী আর অন্যদিকে অভিজাত শ্রেণি এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়লে তাদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান লক্ষ করা যায়। এজন্য সমাজের দুর্নীতি ও অর্থলিপ্সার কারণে সমাজে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। যা ১৯০৫ সালের বিপ্লবকে উৎসাহিত করে তোলে ।

(খ) অর্থনৈতিক কারণ : বিংশ শতকের পূর্বে রাশিয়ার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন হলেও যার কোনো মূলভিত্তি ছিল না। ১৯০৪ সালে রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও রুশ-জাপান যুদ্ধের কারণেও রাশিয়ার অর্থনৈতিক গতি রুদ্ধ হয়ে পড়ে। যার ফলে সমাজে মন্দা দেখা দিলে রাষ্ট্র অসন্তুষ্ট বৃদ্ধি পেলে যা ১৯০৫ সালের বিপ্লবের গতিকে গতি সঞ্চার করে।

(গ) রাজনৈতিক কারণ : প্রায় তিন শতক ধরে রাশিয়ার জারের স্বৈরাতান্ত্রিক শাসন চলাকালে সমাজে সর্বত্র জারের হ একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন শাসনব্যবস্থায় | বিকেন্দ্রীকরণের কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। যার ফলে তখন নির্বিচারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার। সংবাদপত্রের ড স্বাধীনতা খর্ব, নির্বাসন ও বিচারের নামে প্রহসন করা হতো । এতে সাধারণত মানুষ দুর্বিষহ অবস্থায় পতিত হয়। যার ফলে ল সর্বশ্রেণির মানুষের মধ্যে বিক্ষোভের দানা বাঁধতে থাকে। অবশেষে ১৯০৫ সালের বিপ্লবের সূচনা হয় ।

(ঘ) রুশ-জাপান যুদ্ধ : ১৯০৪-০৫ সালের রুশ জাপান যুদ্ধ রাশিয়ার সমগ্র প্রাচ্যের ইতিহাসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ যুদ্ধে যদিও জাপান বিজয় লাভ করলেও প্রাচ্যবাসী নিজেদের অর্জন বলে প্রচার করতে থাকে। আবার এই যুদ্ধের ফলে রাশিয়াকে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়। এতে সাধারণত জনগণের মধ্যে জাতীয় স্বার্থে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বিক্ষোভের ডাক দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯০৫ সালে বিপ্লব ত্বরান্বিত হয় ।

(ঙ) দ্বিতীয় নিকোলাসের স্বৈরাচারী মনোভাব : তৃতীয় আলেকজান্ডার মৃত্যুর পর তার পুত্র (১৮৯৪ সালে) ২য় নিকোলাস ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি পিতার মতো স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা খর্ব ও দেশে চলমান দুর্নীতি, নির্যাতন ও বিচারের নামে প্রহসন চালু রাখে এবং সর্বপ্রকার র। গণতান্ত্রিক কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করলে জনগণের মনে ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায়। যার ফলে বিপ্লবের পথ আরো গতি সঞ্চায়িত হয় ।

(চ) দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের অবদান : ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লবের পিছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল তৎকালীন দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের অনুপ্রেরণা। তাঁরা তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন চিত্র লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরনের। যার ফলে জনগণ তাদের অধিকার ও বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এতে বিক্ষোভ আরো গতি লাভ করে। তখন দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন ম্যাক্সিম গোর্কি, পুসকিন, নিউটলস্টয়, দত্তনেভস্কি প্রমুখ ।

১৯০৫ সালের বিপ্লবের ফলাফল : সাধারণত ১৯০৫ সালের বিপ্লব ব্যর্থ হলেও রাশিয়ার জারতন্ত্রের মূলে আঘাত হানে।দ্বিতীয় নিকোলাস এই বিপ্লবের থেকে বুঝতে সক্ষম হয়।

(ক) ১৯১৭ সালের পটভূমি সৃষ্টি : ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক য়। বিপ্লবের পটভূমি সৃষ্টি হয় ১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার নতুনভাবে
পদক্ষেপ নেয় ।

(খ) সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন : রাশিয়ার ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ফলে সমাজ কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন হয়। যার পলে পরবর্তীতে সকল শ্রেণির জনগণ একতাবদ্ধ হয়ে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আওয়াজ তোলে ।

(গ) অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন : ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ফলে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন হয়। শ্রমিক, কৃষক, সকল শ্রেণির জনসাধারণ একসাথে জারতন্ত্রের সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। যার ফলে রাশিয়ার প্রচলিত আমলাতন্ত্র চরম সমস্যার সম্মুখীন হয় ।

(ঘ) আন্তর্জাতিক প্রভাব : ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তার করে। এতে রাশিয়ার অনুপ্রেরণার অন্যান্য দেশের জনগণ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু করে। যেমন- ইতালি, ‘হাঙ্গেরি, জার্মানির, শ্রমিকরা রাশিয়ার অনুপ্রেরণার সংগ্রামকে আরো গতিশীল রূপ দেয় । যার ফলে বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবের পিছনে নানাবিধ কারণ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখে। তবে এই বিপ্লবের মূল কারণটি ১৯০৪-০৫ সালের রুশ-জাপান যুদ্ধের মধ্যে নিহিত ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও দার্শনিকের ভূমিকাও ছিল পর্যাপ্ত। এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার সামাজিক পরিবর্তনসহ সারা বিশ্বে স্বৈরাচারী আন্দোলনের সূচনা সৃষ্টি হয় ৷

ভূমিকা : রাশিয়ার, রোমানভ বংশের শাসন ইতিহাসে করেন। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি তার যো ইতিহাসে মুক্তিদাতা জার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হন। তিনি রাশিয়ান সমাজব্যবস্থার সবচাইতে বড় সমস্যা ভূমিদাস | রাজনৈতি প্রথা উচ্ছেদ করে এ খ্যাতি অর্জন করেন। তার পূর্বে ভূমিদাস করেন। শ্রেণি অভ্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতি অতিক্রম করে আসছিল। করেছেন তাদের আর্থ-সামাজিক দুলবস্থা একটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়। ফলে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

মুক্তিদাতা জার : রাশিয়ার ইতিহাসে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার মুক্তিদাতা জার হিসেবে বিখ্যাত। তার পূর্বে ভূমিদাস শ্রেণির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। ভূমিব্যবস্থায় তারা অভিজাত জমিদার শ্রেণির জমি চাষ করতো। এটা মূলত জমিদারদের জমির ছোট অংশ। এর বিনিময়ে তাদের জমিদারদের জমিতে তিন দিন বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটতে হতো। তাদেরকে গির্জা ও জমিদারদের কর প্রদান করতে হতো। তারা নানা রকম কর দেয়ার পর তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের কোনো ধরনের আর্থ-সামাজিক অধিকার ছিল না। তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো অধিকার ছিল না। তাদের জীবন ছিল জমিদারদের কেনা গোলামের মতো। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যক্তি অধিকার বলতে কিছু তাদের ছিল না। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহ দেখা দিতে থাকে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ক্ষমতায় আরোহণ করার পর তিনি এ সমস্যা বিদূরিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি সেনাপতি রোস্টাভাস্টেভের নেতৃত্বে একটি কমিটি লি গঠন করেন। এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জার ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি করেন। ভূমিদাস মুক্তির ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ৪ টি নীতির উপর ভিত্তি করে ক মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। ১. ভূমিদাসদের স্বাধীন ও মুক্ত নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। ২. মুক্ত ভূমিদাসদের জীবিকার জন্যে জমি দিতে হবে। ৩. সমগ্র ব্যবস্থাটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত হবে। ৪. অভিজাত বা সামন্তদের আর্থিক ক্ষতি না করে ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করা হবে। এর ফলে ভূমিদাস শ্রেণি জমিদারদের অত্যাচারের হাত থেকে রেহায় পায়। কিছু সমস্যা থাকলেও মুক্তির ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মূলত কৃষক সম্প্রদায় মুি লাভ করে । এ কারণে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়। কৃষকরা যখন নিজেদের মতো করে শ্রমদান বা জমি চাষাবাদের সুযোগ পায় এবং তার মুক্ত জীবন লাভ করে। জার তাদের মুক্ত জীবনের সুযোগ করে দেয়। এ কারণে মূলত তাদের মুক্তিদাতা জার বলা হয়।

তাছাড়া নানা কারণে রাশিয়ান, সমাজব্যবস্থা তৎকালীন অন্যান্য ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থা থেকে নিচুতে অবস্থান করছিল। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়াকে এ বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। রাশিয়ার কৃষক সম্প্রদায় ও সমাজব্যবস্থাকে মুক্ত করার কারণে তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার মূলত যোগ্যতার কারণে ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করেন। রাশিয়ার দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা সমস্যাগুলো তিনি তার যোগ্যতা দিয়ে সেভাবে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি কৃষক সম্প্রদায়ের মুক্তি দেয়া পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করেন। শুধু জনগণ তথা কৃষকদের নয় রাশিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন বলে তাকে “মুক্তিদাতা জার” বলা হয়।

ভূমিকা : বলশেভিক বিপ্লবের ইতিহাসে ব্রেস্ট পেটভস্কের সন্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও জাতীয় জীবনকে সুদৃঢ় ভিত্তিতে স্থাপনের মতো সমস্যাবলি থাকা সত্ত্বেও বলশেভিক সরকার পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে শান্তি স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বলশেভিক সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি ও সামর্থ্য বৈদেশিক যুদ্ধে জয় না করে অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রতি মনযোগ প্রদানের জন্যই জার্মানির সঙ্গে লিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষর করে।

→ ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি : রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপনের ম্যান্ডেট নিয়েই শাসনভার গ্রহণ করে বলশেভিক সরকার। বলশেভিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রটস্কি ১৯১৭ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির রাষ্ট্রদূতদের নিকট সকল ফ্রন্টে যুদ্ধ বন্ধের জন্য রুশ সিদ্ধান্ত জানান দিয়ে দেন। বলশেভিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার ফলে জার্মানি ৬ দিন পর ২৭ নভেম্বর যুদ্ধ বন্ধের স্বীকৃতি এবং ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ হয়। এহেন মুহূর্তে প্রয়োজন পড়ে শান্তি চুক্তি। ফলে উভয় পক্ষ শান্তি আলোচনার জন্য ব্রেস্ট লিটভস্কে মিলিত হয়। দীর্ঘদিন আলোচনার পর ১৯১৮ সালের ৩ মার্চ ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়া ও জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রে-হাঙ্গেরি, ওসমানীয় সাম্রাজ্য ও বুলগেরিয়া এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে রাশিয়া পোল্যান্ড, এস্তেনিয়া ও লিথুয়ানিয়া হতে পিছু হটে।

ফলাফল : এ চুক্তির ফলে রাশিয়া যে সকল এলাকার দাবি ত্যাগ করে স্থির হয় যে, এগুলোর ভাগ্য কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হবে। রাশিয়া আনাতোলিয়া হতে সরে যায় এবং ফারস ও আর্দাহাম উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ফেরত দেয়। ব্রেস্ট লিটভস্কে সন্ধির সুযোগ নিয়ে ইউক্রেন ও জার্মানির সাহায্যে মাথা তুলে দাঁড়ায় এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করলে রাশিয়া তা মেনেও নেয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় ঐক্যজোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য ব্রেস্ট লিটভস্কের সন্ধি একটি বিরাট সফলতার বিষয়। এ যুদ্ধের ফলে রাশিয়া জার্মানির সকল শর্ত মেনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়। যদিও ১৯১৮ সালের গ্রীষ্মের পরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জার্মানি, অস্টো-হাঙ্গেরি ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয় ।

ভূমিকা : সরকারি প্রশাসন যন্ত্র এবং দলীয় আমলাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল স্ট্যালিনের কারণ তিনি CPSU এর সম্পাদক ছিলেন। স্বরাষ্ট্র বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের কর্তা হিসেবে স্ট্যালিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করে বিশেষ করে লেনিনের মৃত্যুর পর। তিনি বলশেভিক দলের অন্যতম নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং তিনি কৃষক শ্রেণি থেকে এসে দলের কর্মী হিসেবে উঁচু পদে আসেন।

স্ট্যালিনের এক রাষ্ট্র সাম্যবাদ : জর্জিয়া প্রদেশে এক দরিত্র চর্মকারের গৃহে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয়েছিল স্ট্যালিনের। তিনি তাঁর ছাত্রজীবন গির্জা বিদ্যালয়ে কাটান কারণ তিনি যথেষ্ট উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না। একদম প্রথম থেকেই রুশ কমিউনিস্ট দলের একজন সাহসী ও সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির মধ্যকার দ্বন্দ্ব শুরু হয় ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর থেকেই। স্ট্যালিন সাম্যবাদের বিকাশ সম্ভব এই মর্মে একটি থিসিস রচনা করেন ট্রটস্কির বক্তব্যের প্রতিবাদে। তার বক্তব্য অনুসারে :

১. সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতন্ত্রকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে রাশিয়াকে শিল্পবিপ্লবের পিতৃভূমি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ।
২. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সফল করে গড়ে তোলার জন্য রাশিয়ার বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। এই সাহায্য পাওয়া যাবে না যদি শিল্পবিপ্লবের কথা ভাবা হয় ।
৩. সোভিয়েত রাশিয়াকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা দরকার সোভিয়েত বিপ্লবের ভিত দৃঢ় করার লক্ষ্যে।
৪. সোভিয়েত রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো সংগঠন। সংগঠন গড়ে তুলতে না পারলে সোভিয়েত বিপ্লবের ক্ষতি হবে বলে তিনি বলেন।
৫. তিনি যথেষ্ট তাগিদ দিয়েছিলেন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উপরও যেন সোভিয়েত বিপ্লব সচল হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্ট্যালিনের সম্পূর্ণভাবে তাঁর নিজের একটা স্বতন্ত্র মতবাদ ছিল এক রাষ্ট্রে সাম্যবাদ । তিনি এ সাম্যবাদ নীতি আরোপ করেন প্রধানত ট্রটস্কির সাথে তার দ্বন্দ্বের প্রতিবাদস্বরূপ। পরবর্তীতে সোভিয়েত বিপ্লবের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাঁর এ নীতি। সমাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে স্ট্যালিনের এই নীতি । পরবর্তী সময়ে তা একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও।

ভূমিকা : উষ্ণ জলনীতি (Warm water policy) হচ্ছে জার পিটার দি গ্রেট কর্তৃক গৃহীত পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পিটার যখন রাশিয়ার জার পদ লাভ করেন তখন রুশ জাতি ছিল অর্ধ অসভ্য এবং ইউরোপীয় সভ্যতার প্রভাব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বরফাবৃত শ্বেতসাগর ভিন্ন বাল্টিক বা কৃষ্ণসাগরের পথে পশ্চিম ইউরোপের সাথে রাশিয়ার কোনো যোগাযোগ তখন ছিল না। রুশ রাষ্ট্রকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ স্থানদানের জন্য এবং কৃষ্ণসাগর ও বাল্টিক সাগরের পথে ইউরোপের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়ে পিটার উষ্ণ জলনীতি গ্রহণ করেন ।

এ উষ্ণ জলনীতি গ্রহণের উদ্দেশ্য : পিটার দি গ্রেটের ক্ষমতা লাভের সময় রাশিয়া ছিল সর্বদিক দিয়ে অনগ্রসর। রাশিয়াকে ইউরোপীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এক মর্যাদাপূর্ণ শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে পিটার উষ্ণ জলনীতি গ্রহণ করেন। কেননা, শ্বেতসাগর তীরে অবস্থিত আর্চেঞ্জেল বন্দর ভিন্ন অপর কোনো পথে রাশিয়ার পক্ষে সমুদ্রে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু শ্বেতসাগর বছরের নয় মাসই বরফে ঢাকা থাকত।

→ উষ্ণ জলনীতি নামকরণের কারণ : শ্বেতসাগর বছরের নয় মাসই বরফাবৃত থাকত। শ্বেতসাগর অপেক্ষা বাল্টিক ও কৃষ্ণসাগরের জল ছিল উষ্ণ। যেহেতু পিটার বাল্টিক ও কৃষ্ণসাগরের পথে ইউরোপের সাথে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করেন সেহেতু তিনি এর নামকরণ করেন উষ্ণ জলনীতি।

→ উষ্ণ জলনীতির বাস্তবায়ন : পিটার উষ্ণ জলনীতি বাস্ত বায়নের অগ্রসর হন। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
১. আজফ বন্দর দখল : তুর্কি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পিটার কৃষ্ণসাগরের উপকূলের আজফ নামক বন্দরটি ১৬৯৬ সালে দখল করেন। বসফরাস ও দর্দানেলিস প্রণালির ওপর তুর্কি প্রাধান্য থাকায় আজফ বন্দর দখল তেমন একটা উপকারে আসেনি |

২. নার্ভার যুদ্ধে পরাজয় : ১৬৯৭ সালে সুইডেনের সিংহাসনে দ্বাদশ চার্লস আরোহণ করলে পিটার ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডের সাথে সম্মিলিতভাবে সুইডেন আক্রমণ করে সাম্রাজ্য ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ১৭০০ সালে সংঘটিত নার্ভার যুদ্ধে বাদশ চার্লসের কাছে তিনি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন ।

৩. কেরেলিয়া ও ইংরিয়া বন্দর দখল : পিটার পরাজিত হলেও দ্বাদশ চার্লসের অদূরদর্শিতার সুযোগে তিনি পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে বাল্টিক উপকূলে উপস্থিত হন। দ্বাদশ চার্লস এসময় পোল্যান্ড ও স্যাক্সনিদের দমনে কালক্ষেপণ করলে পিটার কেরেলিয়া ও ইংরিয়া নামক দুটি বাল্টিক সাগরের বন্দর দখল করেন।

৪. পোল্টাভার যুদ্ধ : ১৭০৯ সালে দ্বাদশ চার্লস মস্কো নগরী আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। ফেরার পথে পোল্টাভার যুদ্ধে পিটারের নিকট সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হন। এর ফলে বাল্টিক সাগরে সুইডেনের স্থলে রাশিয়ার প্রাধান্য স্থাপিত হয়।

৫. প্রুথের সন্ধি : পোল্টাভার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দ্বাদশ চার্লস তুরস্কে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং তুর্কি সুলতানের সাহায্য প্রার্থনা করেন। একই সাথে সুইডেন ও তুরস্কের মিলিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা সমীচীন হবে না মনে করে পিটার ১৭১১ সালে প্রুথের সন্ধি করেন।

৬. নিস্ট্যাডাট -এর সন্ধি : দ্বাদশ চার্লসের মৃত্যুর পর পিটা দি গ্রেট ১৭২১ সালে নিস্ট্যাডাট এর সন্ধি করেন। এ সন্ধি অনুসারে পিটার সুইডেনের নিকট হতে এন্থোনিয়া, কেরেলিয়া, লিভোনিয়া, ইংরিয়া প্রভৃতি লাভ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পিটার কর্তৃক গৃহীত উচ্চ জলনীতি রাশিয়াকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দান করে। উত্তর ইউরোপে সুইডেনের প্রাধান্য বিনষ্ট হয়ে রাশিয়ার প্রাধান্য স্থাপিত হয়। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কালে রাশিয়া কোন পথে অগ্রসর হবে সে ইঙ্গিত পিটার তার উষ্ণ জলনীতির মধ্যেই রেখে গিয়েছিলেন।

ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সম্মেলনগুলো মৈত্রী জোট দেশগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় পটসডাম সম্মেলন সে সম্মেলনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশেষ সম্মেলন ছিল। আমেরিকার ও সোভিয়েতের মধ্যকার বহুদিনের মতানৈক্য প্রকাশ রূপ লাভ করে এ সম্মেলনের মাধ্যমে আর প্রকাশ্যে চলে আসে বিদ্যমান স্নায়ুযুদ্ধ ও। তবে এ সম্মেলনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যদিও সম্মেলনে মতবিরোধ বিদ্যমান ছিল।
পটসডাম সম্মেলনের পূর্বে ঘটনাবলি : ইউরোপে এ ব্যাপারে পরিবর্তন সূচিত হয় পটসডাম সম্মেলনের পূর্বে আর সোভিয়েত ইউনিয়নের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরসহ অন্যান্য মিত্র শক্তি দেশগুলোর মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এ পরিবর্তনের সূত্র ধরে। তবে যে ঘটনাগুলো যুদ্ধ পরবর্তী Cold war-কে ত্বরান্বিত করে সেগুলো হলো :

১. সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুমোদিত পোল্যান্ডের সরকার হবে। যার ফলে সমাজতান্ত্রিকদের সরকার সেখানে ক্ষমতায় বসে। তবে মস্কোতে । পুঁজিবাদের বিতাড়ন করা হয় পোল্যান্ড থেকে । পোল্যান্ডের জন্য একটি প্রবাসী সরকার গঠন করা হয় সোভিয়েতের এবং
২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাঙ্গেরি জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করায়, তাদের কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। পশ্চিমা শক্তি ইয়াল্টা সম্মেলনের লঙ্ঘন বলে দাবি করে এটাকে ।
৩. রুমানিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের Red Army বা লালফৌজ বাহিনী প্রবেশ করে ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে এবং সেখানে একটি সরকার গঠন করে সেখান থেকে জার্মান করবে বলে অঙ্গীকার করে ।
৪. জার্মান বাহিনীকে বুলগেরিয়া থেকে বিতাড়িত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী। আর সেখানে গঠন করা হয় প্রগতিশীল সরকার এবং রাশিয়াকে সমর্থন করে এই সরকার।
৫. একটি কোয়ালিশন সরকার চেকোশ্লাভিয়াতে গঠিত হয়। সেখানে ক্ষমতায় আসীন করা হয় কমিউনিস্টদের। আর প্রচলন করা হয় একটি প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ।
৬. বহুদিন জার্মান বাহিনীকে প্রতিরোধ করে রেখেছিল যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো বাহিনী। সেখানে পরবর্তীতে শত্রু-মুক্ত হয় রুশ বাহিনীর সহায়তায়। সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় টিটোর নেতৃত্বে রাশিয়াকে প্রয়োজনীয় সহায়তার অঙ্গীকার করে টিটো সরকার ।
৭. কমিউনিস্টদের নিয়ে আলবেনিয়াতেও সরকার গঠন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
৮. সোভিয়েত দখল করে নেয় পূর্ব জার্মানি। তারা কমিউনিস্ট সরকার গঠনের চেষ্টা করে সেখানে।
৯. জার্মান থেকে পৃথক করা হয় অস্ট্রিয়াকে। সরকার গঠন করা হয় সেখানে ।

ইয়াল্টা থেকে পটডাম সম্মেলনের মধ্যে ঘটে যায় এই কাজ বা ঘটনাগুলো। ফলশ্রুতিতে দূরত্ব সৃষ্টি হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করে তারা। যার কারণে তাদের মধ্যে এই অসন্তোষের কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। পরিশেষে তারা উপনীত হয় আংশিক সিদ্ধান্তে এবং বলা হয় যে, পরবর্তীতে বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া পটসডাম সম্মেলনের সকল সিদ্ধান্তই দ্বিমত ছিল
পটসডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ : যে সকল সিদ্ধান্ত পটডাম সম্মেলনে গ্রহণ করা হয় তার বেশিরভাগই দ্বিমত ছিল। এ সম্মেলনে মিত্রশক্তির জোট অনেক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও ঐক্যমত ছিল যে সকল বিষয়ে তা হলো :

১. জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন । গঠন করা হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদ। একটি খসড়া প্রণয়ন করবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদ এবং খসড়াগুলো স্বাক্ষরিত হবে পরবর্তী সম্মেলনের মাধ্যমে ।
২. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা হবে জার্মানি জাতির। তবে জার্মানিতে তাদের অতিজাতীয়তাবাদ বা নাৎসিজম, নিরস্ত্রীকরণ এবং তাদের চেতনাবোধ তথা স্কুল কলেজ থেকে নাৎসিবাদের বিষয়বস্তু তুলে নেওয়া হবে ইয়াল্টা সম্মেলন অনুসারে ।
৩. বহু দলের অংশগ্রহণে জার্মানিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতা জাগ্রত করার জন্য । ৪. জার্মানির সামরিক অস্ত্র নির্মাণের কারখানাগুলো ধ্বংস করা হবে।
৫. ভেঙে দেয়া হবে জার্মান সামরিক বাহিনীকে। কোনো ধরনের সমরাস্ত্র তারা তৈরি করতে পারবে না ।
৬. পূর্ব জার্মানির কল-কারখানাগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে নিতে পারবে যা সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী দখল করেছিল।
৭. পোল্যান্ডকে ফিরিয়ে দেয়া হবে যে সকল পোল্যান্ডের অঞ্চল জার্মানি দখল করেছিল ।
৮. ইয়াল্টা সম্মেলন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে পোল্যান্ড জার্মানির সীমানা ।
৯. ৪টি ভাগে ভাগ করা হবে জার্মানিকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে থাকবে পূর্ব জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বাকি অঞ্চল ।
১০, ৪টি ভাগে বিভক্ত করা হবে বার্লিনকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন পাবে একটি অংশ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স পাবে বাকি অংশ ।
১১. ফ্রান্সকে দেয়া হবে আলসার্স ও লরেন্স ।
১২. চেকোস্লাভাকিয়ার জার্মানির দখল করা অঞ্চল ফিরিয়ে দিতে হবে।
১৩. স্বাধীনতা দেয়া হবে অস্ট্রিয়াকে।
১৪. জার্মানির পক্ষে যুদ্ধ করেছিল ইতালি, ফিনল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, তারপর ও এসব দেশের শান্তি চুক্তির কথা বলা হয় এ চুক্তিতে।
১৫. মিত্র বাহিনী অপসারণ করা হবে পারস্য তথা ইরান থেকে । সোভিয়েত ইউনিয়ন ওমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে Cold war বা ঠান্ডা যুদ্ধ বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে পটসডাম সম্মেলনের মাধ্যমে এটি অনেকের ধারণা ছিল। যদিও এই সম্মেলনের প্রতিটি মতেরই দ্বিমত ছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যুদ্ধপরবর্তী সকল কার্যক্রম পটসডাম সম্মেলনের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালনা করা হলেও সোভিয়েত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্মেলন পরবর্তী ভুল বুঝাবুঝির দরুণ এক অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হয় যা সবচেয়ে জঘন্য ও বর্বরোচিত' কাজ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত। আর সেটি হলো জাপানের উপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ। এটি ইতিহাসের অত্যন্ত কলঙ্কজনক ঘটনা ।

ভূমিকা : লেনিনের নব অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পুঁজিপতিদের বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করা হয়। সেই সাথে দেশের অর্থ ব‍্যবস্থাকে এর মাধ্যমে সুদৃঢ় করা হয়। লেনিনের এ নীতি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিবিপ্লবী সক্ষম হয় পুঁজির বিকাশ ঘটাতে। ফলশ্রুতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় প্রতি বিপ্লব। তাই বলা যায়, নানামুখী সমস্যা সমাধানের প্রকাশ ছিল লেনিনের এই নব অর্থনীতি পরিকল্পনা।

নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা NEP এর পটভূমি/কারণ : নিয়ে নতুন অর্থনৈতিক নীতির পটভূমি/কারণ আলোচনা করা হলো :

১. সামাজিক কারণ/অবস্থা : গ্রামের বিত্তশালী কৃষক বা কুলাকদের থেকে সরকার বাধ্যতামূলক খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালায় যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ সময়ে। কিন্তু তার দিতে রাজি | ব ছিল না। এ কারণে গ্রামে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে সরকার। স মূলত সরকারের উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য ছিল দুটি। (ক) শিল্প শ্রমিকদের খাদ্যদ্রব্যের যোগান দেওয়া এবং(খ) কুলাকদের আধিপত্য গ্রামাঞ্চলে খর্ব করা।সাধারণ কৃষকরা ও মধ্যবিত্তরা একে সুনজরে দেখেনি এ বিষয়ে অসচেতনতার কারণে। যার কারণে কুলাকদের সাথে এক সময় সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বের সূচনা হয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে ফল গেলে। সমাজে এক বিরাট বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় কৃষকদের এরূপ বিরূপ অবস্থার কারণে।

২. অর্থনৈতিক কারণ বা পরিস্থিতি : নৈরাজ্য, হতাশা, প্রশা অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি রাশিয়ার প্রায় সর্বক্ষেত্রে Ves বিরাজমান ছিল নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পূর্বে। ব্যবসা- পরিি বাণিজ্য, মুদ্রা, কৃষ্টি, শিল্প ও ব্যাংক ব্যবস্থায় যুদ্ধকালীন স্থানী সাম্যবাদের আওতায় যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তা প্রায় / অস ব্যর্থতায় পরিণত হয়। নিম্নে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজমান সঙ্গে পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো :

(ক) কৃষি পরিস্থিতি : কৃষকরা বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে খাদ্যশস্য দিতে বাধ্য হতো যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ নীতির কারণে। কৃষকদের প্রতিক্রিয়া এতে মারাত্মক হয়। কৃষকরা তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ানোর জন্য ক্ষেত্রের উদ্বৃত্ত ফসল বাজারে বিক্রি করতে চাচ্ছিল। কিন্তু কৃষকদের উপর জোরজবরদস্তি করা হয় ফসল আদায়ের জন্য। জোরপূর্বক কৃষকদের কাছ থেকে ফসল আদায় করা হয়। আর বাকি জমি অনাবাদি রাখা হয়। এসব কারণে অনেকে গৃহপালিত পশু, শস্যের গোলা লুকিয়ে রেখে ও কৃষি ব্যবস্থার ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করে। অনেকে আবার অস্বীকৃতি জানায় চাষাবাদ করতে । রাশিয়ার এ সময় কৃষক ছিল তিন শ্রেণির। কুলাক বা ধনী কৃষক, মাঝারি কৃষক ও সাধারণ গরিব কৃষক। এ তিন শ্রেণির সকল কৃষকই একত্রে জমি আবাদে অসহযোগিতা, বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহ না দেখানোর পক্ষে ছিল। যার পরিণামে রাশিয়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয় ১৯২০-২১ সালে। বলশেভিক সরকারের ভূমিনীতি পরিবর্তন করা দরকার বলে এই পরিস্থিতিতে লেনিন সেটা উপলব্ধি করেন ।

(খ) মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দুষ্প্রাপ্যতা : দেশীর যেসব সংস্থাসমূহ যুদ্ধকালীন সাম্যবাদের আওতায় ছিল এবং তা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যা হতে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বহুবিধ অভাব লক্ষ করা হয় সেই সাথে উৎপাদনের ক্রমাবনতি সবক্ষেত্রে দেখা যায়। কারণ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের গৃহীত নীতিসমূহ ব্যর্থ হয়। অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে যা মেটানো। ফলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।

(গ) শিল্প পরিস্থিতি : সোভিয়েত সরকারের শিল্প উৎপাদনে বিপর্যয় ডেকে আনে যুদ্ধকালীন সাম্যবাদের ফলে যে শিল্পনীতি গৃহীত হয়। সরকার এ সময় কেন্দ্রীভূত করে শিল্প প্রশাসন ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় শিল্পক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার, বৃদ্ধি পায় শ্রমিক অসন্তোষ। যার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক ও ধর্মঘটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিকের অনুপস্থিতি শিল্পকারখানায় বৃদ্ধি পায় । প্রশাসনের জন্য Glavki এবং সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক পরিষদ Vesenkha গঠিত হয় দৃষ্টান্তস্বরূপ। তাদের পূর্বজ্ঞান ছিল না স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে। যার কারণে তাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় স্থানীয় সংস্থাসমূহের। এছাড়া Vesenkha এর কার্যাবলি ও নীতি অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল সরবরাহ শিল্প ও পরিবহন দপ্তরের কার্যাবলির সঙ্গে। ১৯১৩ সালের উৎপাদনের মাত্র ২০% ছিল ১৯২১ সালের শিল্প উৎপাদন। এর অর্থ, হ্রাস পায় ৮০% উৎপাদন।

(ঘ) ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহণ পরিস্থিতি : মুক্তবাজার ব্যবস্থার মুক্ত বিনিময় প্রথার বিলোপ সাধন করা হয় অর্থনীতিকে সমাজতন্ত্রীকরণের সাথে সাথে। একচেটিয়া রাষ্ট্রীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে। রাষ্ট্রের কতিপয় সংস্থার উপর ভার দেয়া হয় দ্রব্যসামগ্রী বণ্টনের। ফলশ্রুতিতে ধ্বসে যায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রচলিত ব্যবসা-বাণিজ্যের সরবরাহ। কিন্তু এদিকে গ্রামের মধ্যে কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের সুষ্ঠু বণ্টন অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং দ্রব্যসামগ্রী বণ্টনে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অদক্ষতার কারণে ।

তাছাড়া অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে পরিবহণ ব্যবস্থা। কাঁচামাল পরিবহণে ও খাদ্য পরিবহণে সংকট সৃষ্টি হয় বেল ইঞ্জিনের এবং মালগাড়ির ওয়ানগনের অভাবের ফলে ।

৩. রাজনৈতিক কারণ বা পরিস্থিতি : রাশিয়ায় এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয় বলশেভিক বিপ্লবের পর। যারা বিপ্লবের বিরুদ্ধবাদী ছিল বিশেষত কুলাক কৃষক শ্রেণি তারা বিপ্লবের বিরোধিতা করতে থাকে সমাজের বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা, উৎপাদক ধ্বংস ও নানাবিধ উপায়ের মাধ্যমে। অপরদিকে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয় হতাশা ও শিল্পক্ষেত্রে অরাজকতার ফলে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে একই সময়ে গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি হয় বাইরের কিছু রাষ্ট্র যেমন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হস্তক্ষেপের জন্য। সরকারকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সন্দিহান করে তোলার পেছনে একদিকে বিপ্লবের বিরুদ্ধবাদী ও প্রতিবিপ্লবী শক্তির বিরুদ্ধাচরণ এবং অপরদিকে বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপ কাজ করে। এ কারণে সমাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সরকার গ্রহণ করে নতুন ব্যবস্থা ।
নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা NEP : লেনিন ১৯২১ সালে তার বিখ্যাত নতুন অর্থনৈতিক নীতি বা New Economic Policy প্রবর্তন করেন উপরিউক্ত অবস্থা মোকাবিলার জন্য এবং দৃঢ়ভাবে সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে। প্রাগমেটিক সাম্যবাদ বা প্রয়োজনভিত্তিক সাম্যবাদ হিসেবে এই নীতিকে অভিহিত করা হয়। মার্কসবাদকে হুবহু প্রয়োগ করে সাম্যবাদ নীতি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করাই এর অর্থ ছিল। নিচে সোভিয়েত সরকারের গৃহীত নীতিগুলো দেয়া হলো :

১. গৃহীত নতুন নীতি অনুসারে বাধ্যতামূলকভাবে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহ বন্ধ করে সরকারি (Tax) হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য সরকারকে প্রদান করার ডিক্রি জারি করা হয় । যার নাম খাদ্য কর ।
২. খোলা বাজারে বিক্রির অনুমতি প্রদান করা হয় কর হিসেবে খাদ্যশস্য প্রদানের পর তার উদ্বৃত্ত কৃষিজাত পণ্য সামগ্রী
৩. মধ্যবৃত্ত ও বিত্তশালী কৃষকদের (কুলাক) ওপর বেশি করে করে আরোপ করা হয় গরিব কৃষকদের কর মওকুফ করে ।
৪. ফিরিয়ে দেয়া হয়, ক্ষুদ্র জমির মালিক ও ব্যবসায়ীদের সম্পত্তি। বলা হয় তারা কাউকে শোষণা করে না।
৫. খাদ্যের মূল্য যাতে না বাড়ে তার ব্যবস্থা করা হয়। ৬. শিল্পকারখানা স্থাপনের নীতি গৃহীত হয় বিদেশ থেকে মূলধন এনে ।
৭. সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয় শিল্পকারখানার উপর। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকানা পুনঃপ্রবর্তন করা হয় ।
৮. নেপম্যান নামে পরিচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে নতুন নীতিতে বং তাদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে তাদের তৎপরতা বাড়ানো হয় ।
৯. পুনরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থাপন করা হয় রাশিয়ায়। ১৯২১ সালে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও ব্যাংকটি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জীবনবিমাও চালু করা হয় ১৯২৪ সালে।
১০. স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয় উৎপাদন ও 1 বণ্টনের বিভিন্ন স্তরের সমরায় সমিতিগুলোকে ।
১১. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বহুলাংশে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয় বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রের একটি অধিকার রেখে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয় যে সকল ব্যবস্থা নতুন অর্থনৈতিক নীতির অধীনে নেয়া হয় তার ফলে। পিছনের সব সংকট কাটিয়ে ওঠার সুযোগ খুঁজে পায় রাশিয়া। অবশেষে বলা যায়, মহামতি লেনিনের মহাপ্রতিভা ও বিজ্ঞানসম্মত দূরদর্শিতা পরিচায়ক ছিল। বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে সাফল্যের জন্য নতুন অর্থনৈতিক নীতি ।
নতুন অর্থনৈতিক নীতির ফলাফল : রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয় ১৯২৫ সালের দিকে লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবে। কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন ১৯১৩ সালের উৎপাদন পর্যায়ে পৌঁছে ১৯২৭-২৮ সাল নাগাদ।

বাজারে কৃষকরা তাদের উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রি করে শিল্পজাত পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে একদিকে শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বাণিজ্যিক যোগসূত্র স্থাপিত হয় গ্রাম ও শহরের মধ্যে। আরও জোরদার হয় শ্রমিক আর কৃষকের মধ্যে মৈত্রী জোট। তাছাড়া রাশিয়া আরো উন্নতি লাভ করে জল পরিবহণ, রেলপথ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও।এই নীতির সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সুদৃঢ়করণের পথ প্রশস্ত করেছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করেছিল এ উদ্দেশ্য। নতুন অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তনের নীতি সূচনা করেছিল সামাজিক ক্ষেত্রেও। ক্ষুদ্র কৃষকদের ভূমির হয় বিত্তশালী কৃষকে উপর বাড়িয়ে দেয়া হয় ফসল উৎপাদন। যার ফলে তারা পরিণত কুলাকরা ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় গ্রাম অঞ্চলের। একতা স্থাপিত হয় ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে। এছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয় সামাজিক ক্ষেত্রেও।

এছাড়া পুঁজিপতি ও ভূস্বামীদের নতুন অর্থনৈতিক নীতির ফলে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল এ সকল প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে সাময়িককালের জন্য বিপ্লবের বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে রাখা। তাদেরকে পরবর্তী সময়ে শ্রমিক ও কৃষকদের একত্র করে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করা হয় । পররাষ্ট্রনীতিতে ও প্রতিফলিত হয় এই নীতির প্রভাব। রাশিয়ার কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটে নতুন অর্থনৈতিক নীতির কারণে। রাশিয়াকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের অনেক পুঁজিবাদী দেশ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দান করে ১৯২৪ সালের দিকে। রাশিয়ায় পুঁজি বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসে ব্রিটেনসহ অনেক দেশ ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মহামতি লেনিনের মহাপ্রতিভা এবং বিজ্ঞানসম্মত দূরদর্শিতার পরিচায়ক ছিল বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্যের জন্য নতুন অর্থনৈতিক নীতি। রাশিয়ার সমাজব্যবস্থাকে ব্যাপক উন্নতি সাধন হয় এই নীতির ফলে। নতুন অর্থনৈতিক নীতির গুরুত্ব তাই সমাজতান্ত্রিক ক্ষেত্রে অপরিসীম ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram