nulibrary

ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়াতে সংঘটিত বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিবরণ দাও ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে ৫টি পরাশক্তির অন্যতম একটি হলো রাশিয়া। একবিংশ শতাব্দীর পূর্বে যেটি সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত ছিল। রাশিয়ার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সম্রাট প্রথা চালু ছিল যাদেরকে জার বলা হতো। জারদের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ আন্দোলন শুরু করে। যা পরিবর্তীতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের রূপ ধারণ করে এবং জার প্রথার বিলুপ্তি স্বাধিত হয় ।
রাশিয়ার বৈপ্লবিক আন্দোলনসমূহ : সম্রাট বা জারদের অত্যাচার ও নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। জনগণ জারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তাদের আন্দোলনে সকল জনগণ একাত্মতা ঘোষণা করলে আন্দোলন বৈপ্লবিক রূপ লাভ করে। নিম্নে বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলনগুলো তুলে ধরা হলো :

১. নিহিলিস্ট আন্দোলন : জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার যখন রাশিয়াতে শাসনব্যবস্থা সংস্কার সাধন করেন। তখন নানারকম নৈরাজ্য দেখা দেয় সাধারণ মানুষের উপর অভিজাতদের আধিপত্য ও প্রভাব বৃদ্ধির ফলে সমাজে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পশ্চিম ইউরোপের মতো রাশিয়াতেও জাতীয়তাবাদ এবং মানবতাবাদের সূচনা হয় সাহিত্য সংস্কৃতি মাধ্যমে। ফলে জনগণ এই মানবতা বাদে উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে যা নিহিলিস্ট আন্দোলন নামে পরিচিত।

২. নিহিলিস্ট ধারণার উদ্ভব : জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার যখন তার শাসনব্যবস্থায় সংস্কার সাধন করেন যেটি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে বাস্তবায়ন হয়। এতে জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৮৫৮ সালে Bell নামক এর পত্রিকায় হার্জেন নামক এক ব্যক্তি এই সংস্কারের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। এতে রাশিয়ার ছাত্র সমাজ সচেতন হয়ে উঠে। এরপর ১৮৬১ সালে পিসারেভ তুর্গেনিভ তাঁর Father and son উপন্যাসে নিহিলিস্ট শব্দটি ব্যবহার করেন। যেটি পরবর্তী সময়ে রুশ বিপ্লবিরা তাদের আন্দোলনে নামকরণ করেন।

৩. সামাজিক বৈষম্যের প্রচার : ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার সমাজব্যবস্থায় ব্যাপক বৈষম্য ছিল। সেখানে সকল মানুষ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। একটি শ্রেণিকে অধিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় যেটি অভিজাত শ্রেণি হিসেবে পরিচিত ছিল। অপরদিকে আরেকটি শ্রেণিকে সকল ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় যেটি ভূমিদাস নামে পরিচিত ছিল। এর ফলে চরম বৈষম্য দেখা দেয়। এই বৈষম্য আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ।

৪. অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে প্রচার : রাশিয়ার মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল দরিদ্র কৃষক বা ভূমিদাস। এদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ভূমি মালিকগণ ফসলে আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকদের উপর কর হিসেবে চাপিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতো। ফলে কৃষকগণ আরো দরিদ্র হয়ে পড়তো। আন্দোলনে তার দরিদ্রতার কথা প্রচার করতো।

৫. নবচেতনার ডাক : রাশিয়ার অধিকাংশ জনগণ পুরাতন জার শাসনব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেন। এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তরুণ উদীয়মান যুবকগণ। যারা তাদের আদর্শ হিসেবে কর্নিসেভস্কি, আলেকজান্ডার হার্জেন, বেলিনস্কি ও মাইকেল বাকুলিনকে গ্রহণ করেন। তারা বিজ্ঞান, বস্তুবাদ এবং যুক্তিবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠেন এবং শোষণহীন সমাজ গঠনে প্রত্যয়ী হয়ে উঠেন।

৬. নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন : রাশিয়ার আন্দোলনসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি আন্দোলন হলো নৈরাজ্যবাদ আন্দোলন। এটিকে শূন্যবাদের আন্দোলনও বলা হয়। মাইকেল বাকুনিন ছিলেন এই আন্দোলনের প্রবক্তা। এই আন্দোলনের মূলকথা ছিল রাশিয়ার পূববর্তী শাসনব্যবস্থা ছিল অকল্যাণকর এবং শূন্য থেকে পুনরায় আন্দোলনের মাধ্যমে কল্যাণকর শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা। যার মাধ্যমে সকল প্রকার নৈরাজ্যের বিলোপ সাধন হবে।

৭. বাকুনিন : রাশিয়ায় যাদের লেখনী বা বক্তিতার মাধ্যমে আন্দোলন সূচনা এবং পরিচালনা হতো তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন বাবুনিন। তিনি কার্ল মার্কসের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তবে তিনি মার্কসবাদের সর্বহারা শ্রেণির একনায়কতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। শূন্যবাদের ধারণার মাধ্যমে তিনি আলোচিত হয়ে উঠেন |

৮. নারোদনিক আন্দোলন : নারোদনিক আন্দোলন রাশিয়ার অন্যান্য আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময় ঘটেছিল। এটিকে নিহিলিস্ট আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায় হিসেবে ধরা হয়। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল বলে এটিকে নারোদনিক আন্দোলন বলা হয়। এই আন্দোলনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

(ক) নারোদনিক প্রথম আন্দোলন : প্রথম নারোদনিক আন্দোলন শুরু হয় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে। জনগণ স্বেচ্ছায় এই আন্দোলন করেছিল বিধায় এই আন্দোলনকে People will আন্দোলন বলা হয় । প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে সন্ত্রাসবাদ ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের রূপ নেয় ।

(খ) দ্বিতীয় নারোদনিক আন্দোলন : দ্বিতীয় নারোদনিক আন্দোলনটি ছিল মূলত কৃষ্ণ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। প্রথম নারোদনিক আন্দোলন থেকে কৃষ্ণ বর্ণগোষ্ঠীরা আলাদা হয়ে গিয়ে পৃথকভাবে আন্দোলন শুরু করে। এদের আন্দোলন Black partition হিসেবে পরিচিত লাভ করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাশিয়ায় যতগুলো বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল তার মূল কারণ ছিল সাধারণ মানুষকে সুবিধাবঞ্চিত করে রাখার ফল। মানুষ অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আন্দোলন শুরু করে যেটি পরবর্তীতে বৈপ্লবিক রূপ ধারণ করে। রাশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক উন্নতির জন্য বৈপ্লবিক আন্দোলনসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram