nulibrary

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফল আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : রাশিয়ায় সংঘটিত দুই বিপ্লবের মধ্যে অন্যতম একটি বিপ্লব হলো ১৯১৭ সালে সংঘটিত ফেব্রুয়ারি বিপ্লব। এই বিপ্লব যদি পেট্রোগ্রাদে শুরু হয়ে সেন্ট পিটার্সবুর্গ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে এই বিপ্লব শেষ হয় ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি শেষ দিকে। এজন্য রাশিয়ার ইতিহাসে এটি ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে পরিচিত।

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ : সুনির্দিষ্ট কোনো কারণে এই বিপ্লব হয়নি। এর পিছনে বহু সমন্বিত কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

১. জার সরকারের রক্ষণশীলতা ও স্বৈরতন্ত্র : ঊনবিংশ শতকে ইউরোপে পরিবর্তনের স্রোত বইতে শুরু হয়। কিন্তু জার সরকার যুগের গতি অগ্রাহ্য করে স্রোতের বিপরীতে বলতে থাকে । ইউরোপে যখন পুরাতন সমাজ কাঠামো ভেঙে উদারতন্ত্র গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি ঘটেছিল তখন পর্যন্ত রাশিয়ায় জার সরকারের স্বৈরতন্ত্র অব্যাহত থাকে।

সর্বশেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস ও তার পিতার ন্যায় দমননীতিতে বিশ্বাস করতেন। গুপ্তচর ও পুলিশ দ্বারা তিনি জনমনের স্বাধীনতা খর্ব করতেন। যার ফলে জনগণ বিপ্লবী হয়ে ওঠে।
২. ১৯০৫ সালে বিপ্লবের প্রভাব : ১৯০৫ সালের বিপ্লবে স্বৈরাচারী জার সরকারের গুলিবর্ষণে ১১০ জনের মতো শ্রমিক নিহত হয়। এর ফলে শ্রমিক শ্রেণি আন্দোলনের ডাক দেয়। জার সরকার এই বিপ্লব দমনে সকল হলেও এই বিপ্লব থেকে শিক্ষা - নিয়ে ১৯১৭ সালের আন্দোলন গতি সঞ্চারিত হয় ।

৩. কৃষক শ্রেণির অসন্তোষ : ১৯১৭ সালের বিপ্লবের অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো রাশিয়ার কৃষক শ্রেণির আন্দোলন। ১৮৬১ সালে রাশিয়ার ভূমিদাস উচ্ছেদ ও যাত্রী স্টোলিপিনের ভূমিসংস্কার আইন পাস করলে রাশিয়ায় কুলাক বা জোতদার শ্রেণির উদ্ভব হয় জমির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে কৃষক শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে ।

৪. বলশেভিক পার্টির নেতৃত্ব : এই বিপ্লবের অন্যতম কারণ হলো বলশেভিক পার্টির ভূমিকা। বলশেভিকদের সুদক্ষ নেতৃত্বে এই বিপ্লব সংগঠিত হয়। বলশেভিকরা শ্রমিক কৃষকদের তাদের দলে আনতে সফল হয় এবং লেলিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি। যার ফলে রাশিয়ায় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বিদ্রোহী হয়ে উঠে । যা ১৯১৭ সালের বিপ্লব সংগঠিত করতে আন্দোলন অংশ নেয় ।

৫. সাহিত্যিকদের ভূমিকা : রাশিয়ার সাহিত্যিকদের স্বৈরাচারবিরোধী ভূমিকা বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। টলস্টয় দস্তোয়ভস্কির মতো লেখকরা জার দ্বিতীয় নিকোলাসের নির্যাতন ও দমননীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে নিয়েছিলেন এবং জনগণ তাদের লেখনীর অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে আগ্রহী হয় ।

৬. শ্রমিক শ্রেণির অসন্তোষ : কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণিও ছিল অসন্তুষ্ট। বিপ্লবের প্রাক্কালে তাদের অর্থনৈতিক দুর্দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ধর্মঘট ও ট্রেড ইউনিয়ন করার কোনো অধিকার তাদের ছিল না। এছাড়াও শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নাজুক। মজুরিও ছিল অতি অল্প।

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রকৃতি : ১৯১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার সরকার এর সাথে কৃষক শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবকে “ফেব্রুয়ারি বিপ্লব” বলা হয়। বলশেভিকদের আহ্বানে কৃষক শ্রমিক শ্রেণির রাজধানী পেট্রোগ্রাদে বিপ্লব শুরু করে। সর্বপ্রথম বিপ্লব শুরু হয় পেট্রোগ্রাদের পুলিতভ নামক বলে কারখানার শ্রমিকদের মাধ্যমে। আর অন্যান্য শ্রমিকরাও দলে দলে তাদের মিছিল নিয়ে জড়ো হয়ে এদের মিছিলে যোগ দের। শ্রমিকরা মিছিল দিলে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিলে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে খণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে আন্দোলনকারী শ্রমিক শ্লোগান তুলে যে-যুদ্ধ নিপাত যাক ও জার নিপাত থাক।

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলাফল : ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

১. রাশিয়ার রোমানড শাসনের অবসান : এই বিপ্লবের ফলেই রাশিয়ায় রোমানভ শাসনের অবসান হয়। তাদের দীর্ঘ ৩০০ বছরের শাসন ও শোষণে রাশিয়ার জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তাদের শাসনের শোষণ থেকে মুক্তির জন্য ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল ।
২. জারতন্ত্রের অবসান : রাশিয়ার ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমেই জারতন্ত্রের অবসান হয়। সর্বশেষ দ্বিতীয় নিকোলাসই ছিল রাশিয়ার শেষ জার সরকার। এই সরকারের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ।
৩. প্রলেতারিয়েতের বিজয় : এই বিপ্লবের প্রলেতারিয়েডের বিজয় লাভ হয়। শ্রমিক শ্রেণি অসন্তুষ্টির ফলে সকল কলকারখানার বন্ধ হলে সকল শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সফল করে। এছাড়াও রাস্তাঘাট করে দিলেও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে তারা এই বিপ্লবে সফল হয়।
৪. প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় প্রলেতারিয়েত একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৫. আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েতের উৎসাহ বৃদ্ধি : ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে প্রলেতারিয়েত শ্রেণির বিজয়ে আন্ত জাতিক প্রলেতারিয়েত শ্রেণিও প্রভাবিত হয়। যার ফলে রাশিয়ার মতো অন্যান্য দেশেও প্রলেতারিয়েত বিপ্লব করার চেষ্টা করে।
৬. রাশিয়ায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উদ্ভব : এই বিপ্লবে যখন প্রলেতারিয়েত শ্রেণি জয়লাভের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উদ্ভব হয়। সকল ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা ও রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র এবং বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জার সরকারের পতন ও সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সর্বোপরি বলা যায়, রাশিয়ায় শ্রমিক কৃষকদের অধিকার আদায় ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই বিপ্লবের ভূমিকা অপরিসীম ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram