nulibrary

লেলিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির দ্বন্দ্বের কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : স্ট্যালিন এবং ট্রটস্কি ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ঘোর বিরোধী দুই নেতা । সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র গড়ে তুলতে চেয়েছে স্ট্যালিন কিন্তু ট্রটস্কি এর বিরোধিতা করে। সবসময় সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র গড়ার বিরোধী ছিলেন ট্রটস্কি। বিভিন্নভাবে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতেন তিনি লেনিনের সমালোচনা করে। তাই ট্রটস্কিসহ তার সমর্থকদের দমন করে দল থেকে বহিষ্কার করেন স্ট্যালিন । স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির পরিচয় : সমর দপ্তরের কর্তা ছিলেন ট্রটস্কি। আপসহীন নীতিকে ঘৃণা করতেন তিনি। লাল ফৌজ গঠন করে প্রতি বিপ্লবীদের দমন করেন ট্রটস্কি। গোঁড়া বিপ্লবী ও তীক্ষ্ণ বৃদ্ধির অধিকারী ছিলেন তিনি।

অন্যদিকে, CPSU বা রুশ কমিউনিস্ট দলের সম্পাদক এবং স্বরাষ্ট্র ও পুলিশ বিভাগের কর্তা ছিলেন স্ট্যালিন। প্রভিদা পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি গৃহযুদ্ধের সময় সশস্ত্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত এবং গুপ্ত পুলিশ বা চেকার প্রধান পরিচালক ছিলেন। তিনি ছিলেন বলশেভিক দলের সেরা নেতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯০৭-১৯১৭ খ্রি. মধ্যে ৭ বছর জেলেই ছিলেন তিনি । তার বিশেষ অবদান ছিল ১৯১৭ খ্রি. বলশেভিক বিপ্লবে ।

দ্বন্দ্বের সূচনা : ব্যক্তিগত সংঘাত এবং আদর্শের সংঘাত গড়ে উঠে স্ট্যালিন ও ট্রটস্কির মধ্যে ১৯২৪ সালে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ধনতন্ত্রের দা-কুমড়া সম্পর্ক বিদ্যমান তিনি মনে করেন। ধনতন্ত্রী দেশগুলো রুশ দেশে সমাজতন্ত্রী বিপ্লব সফল হতে দিবে না বলে তার ধারণা ছিল। অভ্যন্তরীণ সংগঠনের মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে এজন্য তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উপর জোর দেন স্ট্যালিন ট্রটস্কির বক্তব্যের প্রতিবাদে এই মন্তব্য করেন।

পরবর্তীতে ১৯২৬ সালে স্ট্যালিন স্বৈরতন্ত্র স্থাপন করেন পলিটবুরো থেকে ট্রটস্কিপন্থিদের বহিষ্কৃত করার মাধ্যমে। স্বদেশে পুঁজিতন্ত্র খতম করার মতো শক্তি সোভিয়েত শ্রমিক শ্রেণির ছিল না। এ সম্পর্কে ট্রটস্কি মতামত দেন । ট্রটস্কিপন্থিদের মধ্যে লেনিনবাদ বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য 'নয়া প্রতিপক্ষ' মৈত্রী জোট করে। ট্রটস্কিরা সোভিয়েত অর্থনীতিকে পুঁজিতন্ত্র নাম দিয়ে বলতেন সোভিয়েত জনগণ যা গড়েছিল সেটা সমাজতন্ত্র নয় পুঁজিতন্ত্র। ট্রটস্কি সোভিয়েত ইউনিয়নের বা কোনো কঠিন সমস্যার ভাঙন ধরাবার চেষ্টায় ছিলেন।
লেনিনবাদ জলাঞ্জলি দিয়েছে তা ১৯২৭ সালে ডিসেম্বর মাসে ১৫শ পার্টি কংগ্রেস থেকে বলা হয়। তারা অধঃপতিত হয়েছে। পরে ট্রটস্কিপন্থিদের এসব মিথ্যা তথ্য ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে দেশ বিদেশে নির্বাসিত হন ট্রটস্কি।

সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার কারণ : ট্রটস্কি বলেছেন, অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে রাশিয়ার পঞ্চবার্ষিকী করা হলে তা হবে মার্কসবাদের বিচ্যুতি। তাই সোভিয়েত সরকারের আসল কাজ হলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাদ বা ব্যক্তিগত মূলধনকে ধ্বংস করা যা সম্পর্কে তিনি মতামত দেন। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর হস্তক্ষেপের মুখে কেবলমাত্র রুশ দেশে সমাজতন্ত্রী বিপ্লব স্থায়ী হবে না। ট্রটস্কি মত প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব বিপ্লব এবং স্থায়ী বিপ্লবের কথা।

সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ধনতন্ত্রের দা-কুমড়া সম্পর্ক। তাই উভয়ের সহাবস্থান অসম্ভব বলে ট্রটস্কি মতামত দেন। কৃষকরা শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে সংঘর্ষ বাধিয়ে প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করবে বলে তিনি ধারণা করতেন। প্রধান প্রধান পশ্চিমী দেশ থেকে পুঁজিতন্ত্রের অবসান হওয়া অবধি সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র গড়া সম্ভব নয়, ট্রটস্কি পৃথকভাবে একটিমাত্র দেশে সমাজতন্ত্র গড়ার বিপক্ষে এ কথা বলেছেন। তার মতামত অনুযায়ী, স্বদেশে পুঁজিতন্ত্র খতম করার ক্ষমতা সোভিয়েত শ্রমিক শ্রেণির ছিল না। তার মতে, সোভিয়েত শ্রমিকেরা তখনই সমাজতন্ত্র গড়ে তুলতে পারবে যখন পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিক শ্রেণি ক্ষমতা দখল করতে পারবে।

ট্রটস্কি যেভাবে লেনিনবাদ বিরোধি ছিলেন : ট্রটস্কি তখনই পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগানোর চেষ্টা করেছে যখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন কোনো কঠিন অবস্থায় পড়েছে। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি দেশকে নিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামে। ট্রটস্কি শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রীর বিপণনের সমস্যার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অভিযোগ তুলে ধরেন। পার্টি শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রীর দাম কমানোর জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল ট্রটস্কি এর বিরোধিতা করে দাম বাড়াতে চেয়েছিল। কৃষকদের অসন্তোষ এতে সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানতেন। তাই দ্রব্যসামগ্রীর দামকে সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য পার্টি ট্রটস্কির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে পুনরায় স্বস্তি ফিরে আসে।

ট্রটস্কি যেভাবে তার মত প্রতিষ্ঠা করতে চান : বিভিন্নভাবে ট্রটস্কি তার মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। লেনিন পার্টির বিরুদ্ধে ট্রটস্কি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং বিভিন্ন কুৎসা রটাতেন শুধুমাত্র তার মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাছাড়া শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতেন তিনি। লেনিনের ব্যক্ত উদ্বৃত্তকে ট্রটস্কি বিকৃত করে তার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তুলতেন শ্রমিক শ্রেণিকে। ট্রটস্কি এভাবেই তার মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি ।
ট্রটস্কির সহযোগী এবং পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : লেনিনবাদী পার্টির বিরোধিতা করতেন ট্রটস্কি । সমাজতন্ত্রী বিপ্লবে তাকে বাধা দিতেন। ট্রটস্কিকে লেনিন পার্টির বিরুদ্ধে প্রধান দুইজন সাহায্যকারী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১. জিনোভিয়েভ, ২. কামানভ ছিলেন। ট্রটস্কি লেনিন পার্টির উপর যেকোন কঠিন অবস্থায় নতুন হামলা চালাত সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন ধরাবার চেষ্টায়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি দেশকে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছিল। এই বলে ট্রটস্কি ১৯২৩ সালে শরৎকালের শিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী বিপণনে সমস্যার সময় অভিযোগ তুলেন ৷ কৃষক শ্রেণির মধ্যে বিভিন্নভাবে অসন্তোষের সৃষ্টি করতেন তিনি। অক্টোবর বিপ্লবের জন্য সংগ্রামের ইতিহাসে বিকৃত করতে চেয়েছিলেন তিনি। 'নয়া প্রতিপক্ষ' পার্টির বিরুদ্ধে বুর্জোয়া আর সুবিধাবাদের অভিযোগ তুলে ট্রটস্কির অধঃপতন সাহায্যকারীরা বলেছিল পার্টি কুলাকদের অবস্থানে চলে গেছে। লেনিন পার্টি এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন এই দুইয়ে ভাঙনের জন্য ট্রটস্কি জিনোভিয়েভ জোট ১৯২৬ সালের বসন্ত কালে অভিযান শুরু করে। ট্রটস্কি এবং তার জোট পার্টি এইভাবেই বিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত থাকতো।

ট্রটস্কিপন্থিদের যেভাবে দমন করা হয় : ট্রটস্কিপন্থিরা লেনিন বিরোধী কর্মধারা প্রচারে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে লেনিনের মৃত্যুর পর থেকেই। যুদ্ধের আশঙ্কা তখন দেখা দেয় যখন ব্রিটেনের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে যায়। প্রতিপক্ষ যুদ্ধ বাধার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লেনিনবাদী কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সোভিয়েত সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের হাতে ক্ষমতা দখল করবে বলে ট্রটস্কি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। পার্টির জন্য পিছন থেকে ছুরি মারার হুমকিস্বরূপ ছিল এই বক্তব্যটি। সোভিয়েত ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের শত্রুদের সহায়তা দেবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল এর মাধ্যমেই।

ট্রটস্কিপন্থিরা যে ভাবধারার প্রচার করে উক্ত কারণে তাদেরকে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত করা হবে বলে কংগ্রেস ঘোষণা দেয়। তাদেরকে অন্যান্য অনেক কমিউনিস্ট অন্তর্ভুক্ত আন্ত র্জাতিক পার্টিও বহিষ্কার করে। ট্রটস্কিপন্থিরা লেনিনবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম পরিচালনা করেছিল অত্যন্ত কলঙ্কিতভাবে সে সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং ট্রটস্কিকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। ট্রটস্কি দেশ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায় যদিও তিনি তেমনভাবে সফল হতে পারেনি। ট্রটস্কিপন্থিদের সকল কার্যকলাপকে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে প্রতিহত করেন স্ট্যালিন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ট্রটস্কি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হবার পর বেশ কয়েকবার আন্দোলনের চেষ্টা করলে ও বারবার তার প্রচেষ্টা অসফল হয়। ট্রটস্কিপন্থিদের যেসব সংগ্রাম ছিল তা স্ট্যালিন প্রতিবারই অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দমন করেন। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য চূড়ান্ত ক্ষমতা স্ট্যালিন অর্জন করে। নিজের অবস্থান একটি উঁচু পর্যায়ে তৈরি করতে যা তাকে পরবর্তীতে সাহায্য করেছে।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram