nulibrary

১৯৩৬ সালের রুশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা: সোভিয়েত জনগণের অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বিভিন্ন মূলগত পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল ১৯৩৬ সাল থেকে। তখন দেশে আর কোনো উৎপীড়নকারী ছিল না। এমন কেউ আর ছিল না যে অপরের ক্ষতি করে জীবনযাত্রা চালায়। এ সোভিয়েতে কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এক নতুন সমাজ তৈরি হলো। তাই একটি পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে উঠল । আর ১৯৩৬ সালের সংবিধানে এ পরিবর্তনের চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটল। স্ট্যালিন সংবিধান (Satlin constitution) হিসেবে পরিচিত ১৯৩৬ সালের সোভিয়েত সংবিধান। এ সংবিধানে সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাসরত সকল জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছিল। এই সংবিধানের বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো :

১৯৩৬ সালের সংবিধান : নতুন সংবিধান রচনার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গৃহীত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে। সংবাদপত্রে এ সংবিধানের খসড়াসমূহ প্রকাশিত হয়। এ সংবিধানের উপর সাড়ে পাঁচ মাস যাবৎ বিভিন্ন আলোচনা চলতে থাকে। এতে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৫ কোটি জনগণ। ইতিহাসে কোন দেশের বুনিয়াদি সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে জনগণের বিরাট অংশের এমন বিস্তৃত অংশগ্রহণের ঘটনা নজিরবিহীন ছিল। এ সংবিধান গৃহীত হয় ১৯৩৬ সালের ৫ ডিসেম্বর জয়যুক্ত হওয়ার পর।

এ সংবিধানের মূল বিষয়সমূহ নিচে বিশ্লেষণ করা হলো :
১. গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদান : জনগণের কমিউনিজম গড়ার সহযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয় কমিউনিস্ট পার্টিকে। সংবিধানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত নাগরিকের বিস্তৃত গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদান করা হয়। তাছাড়া বিবেকের স্বাধীনতা স্বাধীনতাও প্রদান করা হয় বাকস্বাধীনতা সভা সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের |

২. সোভিয়েত জাতিসমূহের সমানাধিকার : সমান সমান ইউনিয়ন প্রজাতন্ত্রগুলোর স্বেচ্ছামিলনী হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর প্রজাতন্ত্র ১৯২২ সালে সোভিয়েত গঠনের সময়ে ৪টি ছিল কিন্তু ১৯৩৬ সালে ১১টি ছিল। এ কারণে প্রত্যেক প্রজাতন্ত্রের মানুষকে সমঅধিকার দেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠে। ধারণা করা হয় লেনিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্ট্যালিন অবশ্যই এ কাজ করেছিলেন। তাছাড়া বহু জাতির রাষ্ট্র হলো সোভিয়েত সংবিধানে বলা হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমস্ত জাতির অধিকার সমান সমান তারা থাকে ভ্রাতৃত্বসুলভ বন্ধুত্বের মধ্যে ।

৩. জনগণের দায়-দায়িত্ব : সোভিয়েত ভূমিকে রক্ষা করা প্রত্যেকের পবিত্র কর্তব্য এটি সংবিধানে বলা হয়েছে। তাছাড়া সংবিধানে বলা হয় সোভিয়েত জনগণের বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব পালনের কথা। আরো বলা হয় রাষ্ট্রীয় আইনকানুন মেনে চলা। দেশের সম্পদের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত মানুষের মালিকানার মনোভাব শ্রম শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সাধারণের সম্পত্তি বজায় রাখার কথাও ।

৪. জনগণ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী : জনগণকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে সোভিয়েত সংবিধানে ঘোষণা করা হয়। সোভিয়েত জনগণ এতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ লাভ করে। শ্রমজীবী সোভিয়েত জনপ্রতিনিধি সৃষ্টি করা হয় প্রত্যেকটি গ্রামে শহরে এবং ইউনিয়নে। তাদের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলোর সমস্যা সমাধান করবে এরা এবং সরকারকে সমস্যাগুলোর কথা জানাবে।

৫. সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা : সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় ১৯৩৬ সালের সংবিধানে উল্লেখ করা হয় শ্রমিক ও কৃষকদের একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। দেশের একমাত্র মালিক হলো শ্রমিক এবং কৃষকরা। এটি সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদ উল্লিখিত।

৬. রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা : বার্ধক্য কিংবা অসুস্থতার দরুণ যেসব নাগরিকের কর্মহানি ঘটবে তাদের ভরণপোষণের ভার নেবে রাষ্ট্র এ সম্পর্কে সংবিধানে বলা আছে। চিকিৎসাকালীন মজুরির ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ অবাধ মজুরি লাভ করার অধিকার পায় শ্রমিকেরা। তাছাড়া রাষ্ট্রের কাছ থেকে অসুস্থরা চিকিৎসা সেবা লাভ করবে।

৭. ধর্মীয় স্বাধীনতা : বলা হয়েছে নিজেদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে সোভিয়েত নাগরিক। কেননা ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধানে প্রদান করা হয় ।

৮. নারীর অধিকার প্রদান : সোভিয়েত ইউনিয়নে সর্বক্ষেত্রেই নারীর অধিকার পুরুষের সমান এবং এটি দৃঢ়তাসহকারে সংবিধানে পুনর্ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা নারীর অধিকার প্রদানই হলো ১৯৩৬ সালের সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীর অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা হয় এ সংবিধানে। তাই সোভিয়েতকে ইতিহাসে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জোর দেয়ার কারণে এ সংবিধানের গুরুত্ব অপরিহার্য।

৯. শিক্ষার অধিকার : সকল সোভিয়েত নাগরিকের শিক্ষা লাভের অধিকার স্বীকৃত হয় ১৯৩৬ সালের সংবিধানে। সাধারণ শিক্ষা বিদ্যালয়, বিশেষিত মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাই সংবিধানে উল্লিখিত এই অধিকারটি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ।

১০. রিপাবলিকগুলোর স্বাধীন সৈন্য : প্রতিটি রিপাবলিকাকে স্বাধীন সৈন্য রাখার অনুমতি প্রদান করা হয় সংবিধানে। দেশপ্রেমী ও আত্মত্যাগী ছিলেন এ সৈন্যরা। তাই এদেরকে বলা হয় Real Army.

১১. যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়ার অধিকার : সকল নাগরিককে যোগ্যতা অনুসারে কাজ পাওয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করা হয় ১৯৩৬ সালের সংবিধান অনুযায়ী। সাংবিধানিক স্বীকৃতি অর্জন করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে নাগরিকের কাজ করার মাধ্যমে। কাজ করার অধিকার বলতে সোভিয়েত ইউনিয়নে বেকারদের কাজে নিয়োজিত করাকে বোঝায়। তাছাড়া 'কাজের পরিমাণ আর গুণের উপর মজুরি নির্ভর করে।

১২. শ্রমজীবী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা : সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশেষ অনুগ্রহশীল শ্রমজীবী জনগণের অবকাশ অবসরের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে। বেতন সমেত ছুটি, সুদূর ত জাতের মত সব বিশ্রামাগার, স্বাস্থ্য নিবাস এবং কোডিং হাউস প্রভৃতি সংবিধানের বিশ্রাম অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া মানুষ এই সব জায়গায় ছুটি কাটাতে পারে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, পৃথিবীতে সামন্ততান্ত্রিক দেশ হিসেবে সোভিয়েত স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৩৬ সালের সংবিধানের মধ্য দিয়ে। সাধারণ জনগণের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্ব প্রদান করে এ সংবিধান। সমগ্র বিশ্বে সমাজতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু হয় স্ট্যালিনের নেতৃত্বে। সোভিয়েত জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এ সংবিধান। এ কারণেই সাধারণ জনগণ তাদের দেশের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করে। সমগ্র বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় করে তোলে তাদের দেশপ্রেমকে ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram