nulibrary

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ: পরীক্ষা-২০১৬ (অনুষ্ঠিত- ১৭/০৯/২০১৭)। (ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় কোড : 1586
বিষয় : আধুনিক পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাস (১৯৪৫ সাল পর্যন্ত)

ক-বিভাগ

(ক)পশ্চিম এশিয়ার প্রধান ভাষা কি?
উত্তর : পশ্চিম এশিয়ার প্রধান ভাষা আরবি।

(খ) আরব জাতীয়তাবাদের জনক কে?
উত্তর : জামাল আব্দুল নাসের।

(গ) কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন?
উত্তর : কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্কের জনক ছিলেন।

(ঘ) সুয়েজখাল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : মিশরে

(ঙ) ওয়াফদ পার্টি কত সালে গঠিত হয়?
উত্তর : ১৯১৯ সালে ওয়াফদ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

(চ) পাহলভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : রেজাশাহ পাহলভী ।

(ছ) আল-ফাও কি?
উত্তর : ইরাকি বন্দর।

(জ) সিরিয়ায় কত সালে ফরাসি ম্যান্ডেটরী শুরু হয়?
উত্তর : ১৯২০ সালে ।

(ঝ) ইহুদীবাদ কি?
উত্তর : ইহুদীবাদ হলো ইসরাইলের জাতীয় ভাবাদর্শ।

(ঞ) PLO -এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : PLO -এর পূর্ণরূপ হলো- Palestine Liberation Organization.

(ট) সৌদি আরব রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর : বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ ।

(ঠ)দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?
উত্তর : ১৯৩৯ সালে।

খ-বিভাগ

২। পশ্চিম এশিয়ার ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, পশ্চিম এশিয়ার ভৌগোলিক সংক্ষেপে লিখ।

৩। যুবতুর্কী কারা?

অথবা, Young Turks কারা? অথবা, নব্য তুর্কিদের পরিচয় দাও ।

৪। সেভার্সের চুক্তি কি?

৫। সাদ জগলুল পাশা কে ছিলেন?

৬। সিরিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

৭। Levant বলতে কি বুঝায়?

অথবা, Levant বলতে কী বুঝায়? বর্ণনা কর ।

৮। ইসরাইল রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

৯। ক্যাম্প ডেভিট চুক্তি কি?

গ-বিভাগ

১০। উনিশ শতকে আরব জাতীয়বাদ চেতনার উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।

অথবা, উনিশ শতকে আরব জাতীয়তাবাদের | অথবা, উনিশ শতকে আরব জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ মূল্যায়ন কর।

১১। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা হিওেসবে মুহাম্মাদ আলী পাশার মূল্যায়ন কর।

অথবা, মোস্তফা কামাল পাশার পরিচয় দাও। তাঁর সংস্কারসমূহ আলোচনা কর ৷

১২। ১৯৩২ সালের ইঙ্গ-ইরানী চুক্তি আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৩২ সালের অ্যাংলো-ইরান চুক্তি আলোচনা কর।

১৩। লুজান চুক্তির পটভূমি ও ফলাফল বিশ্লেষণ কর।

অথবা, লুজান চুক্তির পটভূমি ও ফলাফল বিস্তারিত ভাবে মূল্যায়ন কর।

১৪। ১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির ধারণাসমূহ পর্যালোচনা কর ।

১৫। ফিলিস্তিনী সমস্যা সংক্ষেপে বর্ণনা কর । ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশেষ পরিস্থিতির উপর মন্তব্য কর।

১৬। সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর।

১৭। আরব লীগের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৭ (অনুষ্ঠিত-২০/০৩/২০১৮)]
(ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় : আধুনিক পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাস (১৯৪৫ সাল পর্যন্ত)
বিষয় কোড : 241507

ক-বিভাগ

(ক) UAR এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : UAR এর পূর্ণরূপ হলো- United Arab Republic.

(খ) ‘পাশা' শব্দের অর্থ কি?
উত্তর : পাশা শব্দের অর্থ গভর্নর বা শাসনকর্তা বা জেলার শাসক ।

(গ) সাইকস-পিকো চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর : ১৯১৬ সালে

(ঘ) নেপোলিয়ান কত সালে মিশর জয় করেন ?
উত্তর : ১৭৯৮ সালে ।

(ঙ) পশ্চিম এশিয়ার প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ কোনটি?
উত্তর : পশ্চিম এশিয়ার প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব ।

(চ) ব্যালফুর ঘোষণা কখন দেয়া হয়?
উত্তর : বেলফোর ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৭ সালে ।

(ছ) ইরানের প্রাচীন নাম কি?
উত্তর : ইরানের প্রাচীন নাম পারস্য ।

(জ) OPEC এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : OPEC এর পূর্ণরূপ হলো- Organization of Petroleum Exporting Countries.

(ঝ) কত সালে তুরস্কে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে?
উত্তর : ১৯৩৪ সালে ।

(ঞ) লুজান চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর : ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই লুজান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।

(ট) ‘দ্যা ডেজার্ট কিং' গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর : Olivia Gates.

(ঠ) আরব লীগের সদর দপ্তর কোথায়?
উত্তর : আরব লীগের সদর দপ্তর কায়রোতে।

খ-বিভাগ

২। আরব জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝ?

৩। মুসলিম ব্রাদারহুড সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লিখ ।

৪। নাসিফ ইয়াজিজীর পরিচয় দাও।

৫ । শরীফ-ম্যাকমোহন পত্রালাপ কি?

৬। ম্যান্ডেটারি শাসন বলতে কি বুঝায়?

৭। ওয়াহাবী মতবাদ কি?

৮ । ওয়াফদ পার্টি সম্পর্কে লিখ।

৯। ইখওয়ান বলতে কি বুঝায়?

গ-বিভাগ

১০। পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা কর।

১১। মোস্তফা কামাল পাশার সংস্কারগুলো পর্যালোচনা কর।

১২। সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আলোচনা কর।

১৩। ইরানের আধুনিকীকরণে রেজাশাহের পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা দাও।

১৪। ১৯৩০ সালের ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর বিবরণ দাও ।

১৫। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর ।

১৬। আধুনিক সৌদি আরবের জনক হিসেবে বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদের অবদান মূল্যায়ন কর ।

১৭। সিরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা কর ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৮ (অনুষ্ঠিত-২০/০৪/২০১৯)]
(ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় : আধুনিক পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাস (১৯৪৫ পর্যন্ত)
বিষয় কোড : 241507

ক-বিভাগ

(ক) পশ্চিম এশিয়ার প্রধান ভাষা কী? (What is the main language of West Asia?)
উত্তর : পশ্চিম এশিয়ার প্রধান ভাষা আরবি।

(খ) সুয়েজ খাল কোন দুটি সাগরকে সংযুক্ত করেছে? (Which two seas does the Suez Canal connect?)
উত্তর : সুয়েজখাল দু'টি সাগরকে সংযুক্ত করেছে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে ।

(গ) ‘আতাতুর্ক' শব্দের অর্থ কী? (What is the meaning of the word 'Ataturk?)
উত্তর : তুর্কি জাতির পিতা ।

(ঘ) . সেভার্স চুক্তি কখন স্বাক্ষরিত হয়? (When was the Severse Treaty signed?)
উত্তর : সেভার্সের চুক্তি ১৯২০ সালে (১০ আগস্ট) স্বাক্ষরিত হয়।

(ঙ)আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ‘সুতিকাগার' কোন দেশকে বলা হয়? (Which country is called 'The Pioneer'
of the Arab Nationalist Movement?)
উত্তর : আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূতিকাগার বলা হয় মিশরকে।

(চ)পাহলভী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? (Who was the founder of Pahlavi dynasty?)
উত্তর : রেজাশাহ পাহলভী ।

(ছ) কত সালে তুরস্কের নারীরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার লাভ করে? (When did the Turkish women
acquire the right of being candidates in National Election?)
উত্তর : ১৯৩৫ সালে। ।

(জ) সিরিয়া-লেবালনে কোন দেশের ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? (Which country's mandatory rule was established in Syria-Lebalon?)
উত্তর : ফ্রান্সের ।

(ঝ) ইহুদীবাদ কী? (What is Zionism?)
উত্তর : ইহুদীবাদ হলো ইসরাইলের জাতীয় ভাবাদর্শ ।

(ঞ) LAND OF LORD বা পবিত্র ভূমি বলা হয় কাকে? (Which land is called 'The Land of Lord')
উত্তর : ‘Land of Lord' বা পবিত্র ভূমি বলা হয় ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইনকে।


(ট) PLO অর্থ কী? (What is the full form of PLO?)
উত্তর : PLO এর সম্প্রসারিত রূপ হলো Palestine Liberation Organization.

(ঠ) কোন সন্ধি বা চুক্তি মাধ্যমে আরব লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়? (By which agreement was Arab League established?)
উত্তর : আলেকজান্দ্রিয়া সন্ধি বা আলেকজান্দ্রিয়া চুক্তি ।

খ-বিভাগ

২। পশ্চিম এশিয়ার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

৩। মোস্তফা কামাল সম্পর্কে লিখ।

8। Young Turks কারা? (Who were the Young Turks?)

৫। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি কী? (What is Camp David Agreement?)

৬।‘দামস্কো প্রটোকল' সম্পর্কে লিখ।

৭। ‘বেলফোর ঘোষণা' কী?

৮। ইসলাইল রাষ্ট্র কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

৯। Levant বলতে কী বুঝায়?

গ-বিভাগ

১০। ঊনিশ শতকে আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর ।

১১। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মুহম্মদ আলী পাশার মূল্যায়ন কর ।

১২। লুজান চুক্তির পটভূমি ব্যাখ্যা কর । এই চুক্তি কি সেভার্স চুক্তি দ্বারা সৃষ্ট অসঙ্গতিগুলো দূর করতে সমর্থ হয়েছিল?

১৩। ১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির ধারাসমূহ পর্যালোচনা কর ।

১৪। শরীফ-ম্যাকমোহন পত্রালাপ আলোচনা কর।

১৫। সিরিয়া ও লেবাননে ফরাসি ম্যান্ডেটরি শাসনের বিবরণ দাও।

১৬। ফিলিস্তিনী সংকট সংক্ষেপে বর্ণনা কর । এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘের পদক্ষেপকে কি তুমি যথার্থ মনে কর?

১৭। আরব লীগের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৯ (অনুষ্ঠিত-১১/০৩/২০২০)] (ইতিহাস বিভাগ)
বিষয় কোড : ২৪১৫০৭
বিষয় : আধুনিক পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাস (১৯৪৫ পর্যন্ত)

ক-বিভাগ

(ক) পশ্চিম এশিয়ায় কয়টি দেশ আছে? (How many countries are there in West Asia?)
উত্তর : ২১টি।

(খ) ‘পাশা' শব্দের অর্থ কী? (What is the meaning of the word 'Pasha'?)
উত্তর : পাশা শব্দের অর্থ গভর্নর বা শাসনকর্তা বা জেলার শাসক।

(গ) মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন? (Who was the first President of Egypt?)
উত্তর : মোহাম্মাদ নাগীব।

(ঘ) আরব জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠাতা কে? (Who is the founder of Arab Nationalism?)
উত্তর : জামাল আব্দুল নাসের।

(ঙ) 'OPEC' এর পূর্ণরূপ লিখ। (Write down the full form of OPEC )
উত্তর : OPEC-এর পূর্ণরূপ হলো- Organization of Petroleum Exporting Countries.

(চ) সুয়েজ খাল কোথায় অবস্থিত? (Where is the Suez Canal situated?)
উত্তর : মিশরে।

(ছ)ওয়াফদ পার্টি কত সালে গঠিত হয়?
উত্তর : ১৯১৯ সালে ।

(জ)স্বাধীন সিরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের নাম কী? (What is the name of the first President of Independent Syria?)
উত্তর : কুয়াতলী ।

(ঝ)আল ফাও কী? (What is Al-Fao?)
উত্তর : ইরাকি বন্দর ।

(ঞ) কোন সালে তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়? (In which year Turkey declared Republic?)
উত্তর : ১৯২৩ সালে ।

(ট) লেবানন কবে স্বাধীনতা লাভ করে? (When did Labanon gain independence?)
উত্তর : লেবানন স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৩ সালে ।

(ঠ) আরব লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? (In which year the Arab League established?)
উত্তর : ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ ।

খ-বিভাগ

২। পশ্চিম এশিয়া বলতে কোন অঞ্চলকে বুঝানো হয়েছে?

৩ । আরব জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝ ?

৪। সেভাসের চুক্তি কী?

৫। ওয়াফদ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লিখ।

৬। সাদ জগলুল পাশার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

৭। ম্যান্ডেটরি শাসন বলতে কী বুঝায়?

৮। ফিলিস্তিন সংকট সম্পর্কে লিখ।

৯। আরব লীগ সম্পর্কে টীকা লিখ।

গ-বিভাগ

১০। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্ব নিরূপণ কর।

১১। সাইকস-পিকো চুক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা কর।

১২। মোস্তফা কামাল পাশার সংস্কারসমূহ পর্যালোচনা কর।

১৩। ইরানের আধুনিকীকরণে রেজা শাহ পাহলভীর পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর ।

১৪। মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা কর।

১৫। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর।

১৬। সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি বর্ণনা কর।

১৭। সিরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা কর ।

ভূমিকা : জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যেকোনো দেশ ও জাতি আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রসূত আন্দোলন। যা জাতীয় রাষ্ট্র গঠনে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মিশরের স্বাধীনতা পূর্বে তা ছিল ইউরোপের শাসনাধীন একটি রাষ্ট্র। ইউরোপীয় আধিপত্য মিশরীয়দের মনে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়।

→ মিশরে জাতীয়বাদী আন্দোলন : জাতীয়তাবাদী শব্দটি Nationalist বা Nation শব্দ থেকে এসেছে। Nation শব্দের অর্থ হলো জাতি। একটি জাতি যখন স্থায়ী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে একতাবদ্ধ হয়ে সেই ঐক্যের জন্য একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস চালায়, তখনই জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মিশরের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ইউরোপীয় পাত্র শাসনাধীনে ছিল। মিশরীয়রা ইউরোপীয়দের শোষণ-বঞ্চনার ভাজ | নাগপাশ থেকে মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। জ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা এই চালায়, মুখ্যত এটাই মিশরীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। এই নক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে মিশরীয়রা একসময় স্বাধীনতা ও লাভ করে একটি আধুনিক মিশর রাষ্ট্র গঠনে সফল হয়।

→ মিশরে জাতীয়বাদী আন্দোলনের পর্যায়সমূহ : মিশরের এত জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তিনটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়। নিয়ে দ্ধে পর্যায়সমূহ আলোচনা করা হলো :

১. প্রথম পর্যায় : মিশরীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম প্ত পর্যায় শুরু হয় আহম্মদ ওয়াবি পাশার নেতৃত্বে। আল আজাহার ণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী ওরাবি পাশা সাধারণ সৈনিক কর্মজীবন শুরু করে স্বল্পসময়ে কর্নেল পদে উন্নীত হন তিনি মিশরীয় সৈন্যবাহিনীতে নিজের প্রতি একান্ত আনুগত নর বেশকিছু সৈন্য নিয়ে গুপ্ত বাহিনী গঠন করেন। ওরাবি ছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি ১৮৮২ সালে সেনাবাহিনীর সদস্য জাতীয়বাদী ও বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ইউরাপীয় আধিপত্যবাদের শ নিরসন করে মিশরীয়দের জন্য মিশর (Egypt for Egyption) এই নীতি ঘোষণা করে বিদ্রোহ শুরু করেন। ১৮৮২ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স মিশরেরখেদিভ তৌফিক পাশাকে যৌথ নোট (Joint Note) প্রেরণ করে তাকে সমর্থন জানায়। ওরাবি ও তাঁর মতাদর্শীগণ এই পদক্ষেপকে মিশরীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাতস্বরূপ মনে করে বিরোধিতা শুরু করে। আন্দোলন সংকটময়কালে ওরাবি পাশা মিশরের সমরমন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু শাসনব্যবস্থা খদিভের মনমতো না হওয়ার দরুন ওয়াবিপন্থিদের সাথে খেদিভ সরকারের সংকট দেখা দেয়। ইঙ্গ-ফরাসি সরকার খেদিভ়কে সামরিক হস্তক্ষেপ করার প্রস্তাব দেয় এবং মিত্রবাহিনী ভূমধ্যসাগরের সংকট দেখা দেয়। ইঙ্গ-ফরাসি সরকার খোদিতকে সামরিক হস্তক্ষেপ করার প্রস্তাব দেয় এবং মিত্রবাহিনী ভূমধ্যসাগরে নৌবহর প্রেরণ করে। সমরমন্ত্রী হিসেবে ওরাবি পাশা এর বিরোধিতা করেন। ইঙ্গ-ফরাসিরা নৌ অবরোধ করে এবং খেদিভকে মিশরীয় সরকারের পতন ও ওরাবিপন্থিদের বিতাড়িত করার পরামর্শ দেয়; অন্যথায় অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়ে দেয়। পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ওরাবি পাশা আত্মগোপন করেন এবং গোপন ইশতাহারে সেনাবাহিনী ও দেশবাসীকে বিদেশি শক্তির আগ্রাসন এবং খেদিভের বিশ্বাসঘাতকতার কথা প্রচার করে। ওরাবি পাশা খেদিভ তৌফিককে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ব্রিটিশ নৌবহর ও সেনাবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ওরাবি পাশা সংকটাপন্ন হয়ে একটি ডিক্রি জারি করে সমগ্র দেশপ্রেমিক মিশরীয়দের বিদেশি আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু শেষাব্ধি যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে সিংহলে নির্বাসিত হন ওরাবি পাশা। ওরাবি পাশার পতনের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ের মিশরীয় . জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

২. দ্বিতীয় পর্যায় : ১৮৯২ সালে খেদিভ তৌফিক পাশাার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় আব্বাস হিলমি (১৮৯২-১৯১৪) খেদিভ নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন নাবালক এবং প্রশাসনে অনভিজ্ঞ । তিনি ছিলেন আইনজ্ঞ এবং প্যারিসে আইনশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে মিশরে ব্রিটিশ আধিপত্যের দাবি করে। ১৮৯৫ সালে মোস্তফা কামাল "হিযাবুল ওয়াতান' নামে একটি জাতীয় দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি সংবাদপত্র ও স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর জাতীয়তাবাদী মূলমন্ত্র প্রচারসহকর্মী ফরিদ করতে থাকেন।

৩. তৃতীয় পর্যায় : মিশরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তৃতীয়বারের মতো শুরু হয়, যখন মিশরে ব্রিটিশ আধিপত্য সুদৃঢ় হয়ে উঠে। এ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন দুইজন কৃতী সন্তান শেখ মোহাম্মদ আবদুহু এবং সাদ জগলুল ।
মোহাম্মদ অবদুহু ওরাবি পাশার সহচর ছিলেন। তিনিও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন এবং তাঁর প্রতিষ্টিত 'হিযারল উম্মা' দল দিয়ে তার মতবাদ প্রচার করেন। - তিনি তাঁর লিখনিতে কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি দূরীকরণ করে ধর্মীয় সংস্কারের আভাস যোগিয়ে মিশরীয় জনগণকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান । ১৮৯৯-১৯০৫ সাল পর্যন্ত তিনি গ্রান্ড মুফতির পদ অলঙ্কৃত করেন।তবে মিশরীয় জাতীয়বাদী আন্দোলন যথার্থতা লাভ করে সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে। বিশ্ব ইসলামবাদী সৈয়দ জামালউদ্দীন আফগানীর কৃতী ছাত্র আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জনকারী জগলুল পাশা কয়েকজন সহযোগীদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করেন। মিশরে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। তিনি প্রতিনিধি দল নিয়ে মিশরের হাইকমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করে লন্ডনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেন এবং বিশেষত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন । কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যাত হন এবং তিনি প্রতিনিধি দলের ১২ জন | সদস্য নিয়ে ‘ওফাফদ পাটি' নামে একটি দল ১৯১৯ সালে গঠন। করেন। এই দল ছিল জনগণের স্বার্থের পক্ষের দল এবং দ্রুতই । জনপ্রিয়তা অর্জন করে। জগলুল পাশা ওয়াফদ পার্টির নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে আহ্বান করেন। জনগণ গ্রেফতার করে তাঁর সহকর্মীসহ মাল্টায় প্রেরণ করা হয়। কিন্তু উদ্বুদ্ধ হয় সেই আন্দোলনে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার জগলুলকে । এর প্রতিবাদে মিশরে গণআন্দোলন শুরু হয়। ১৯২৩ সালে মে মাসে মিশরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নতুন সংবিধান। ঘোষিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠন করেন। ক্ষমতা গ্রহণ করেই ) মিশরকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেন। ১৯২৬ সালে শ জগলুল পাশা মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি। কারণ বার্ধক্যজনিত কারণে । ১৯২৭ সালের আগস্টে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পরও Y ওয়াফদ পার্টির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চলে। ১৯৩৬ সালে স্বাধীনতা চুক্তি সম্পাদন এবং ১৯৫০-এর দশকে নাহাস পাশা ওয়াদফ পার্টির নেতৃত্বে যে বলিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়েছেন তা জগলুল পাশারই অবদান।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অনেকের অবদান রয়েছে। তবে সাদ জগলুল পাশার অবদান ছিল অপরিসীম। তার ওয়াফদ পার্টি পরবর্তীতে মিশরের স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করে। তাদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাদ জগলুল পাশার অবদান অনস্বীকার্য। অন্যান্য রাজনীতিবিদরা যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করে সাদ জগলুল পাশা তাকে আরো গতিশীল করে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ।

ভূমিকা : ১৯১৪ সালের ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আরব উপদ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে শরীফ হোসেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হেনরি ম্যাকমোহনের সাথে পত্রালাপ করেন। এই পত্র চুক্তি চলাকালেই ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরকার সাইকাস-পিকো নামক আরেকটি গোপন চুক্তি সম্পাদন করে আরব উপদ্বীপকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি ও অন্যান্য স্বার্থগত ব্যাপারে দলিল স্বাক্ষর করে।

→ সাইকাস-পিকো চুক্তি : হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ বন্ধ হওয়ার ৬ মাস পর সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পাদিত হয়। এটা ছিল গোপন ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের একটি অংশ বিশেষ ৷

হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ চলাকালেই ১৯১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্রিটেনের পক্ষে স্যার মার্ক সাইকাস ও ফ্রান্সের পক্ষে জর্জ পিকো আরব উপদ্বীপ নিয়ে একটি গোপন চুক্তি সম্পাদন করেন ।

এই চুক্তির শর্তাবলি নিম্নরূপ :
(ক) আরব উপদ্বীপের বিভাজন : চুক্তির সাথে সংযুক্ত মানচিত্রে A চিহ্নিত সিরিয়াকে ফ্রান্সের অধীনে এবং B চিহ্নিত এলাকা ব্রিটেনের অধীনে থাকবে ।

(খ) ফিলিস্তিন : ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে প্যালেস্টাইনকে একটি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থার কথা বলা হয় ।

(গ) পানি বণ্টন : মানচিত্রের A চিহ্নিত এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দজলা ও ফোরাত নদীর পানি B চিহ্নিত এলাকার ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে দেয়ার ব্যাপারে ব্রিটেনকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ।

(ঘ) রেলপথ চুক্তি : A চিহ্নিত এলাকায় বাগদাদ রেলপথ মসুল এর দক্ষিণে প্রসারিত করা যাবে না এবং B চিহ্নিত এলাকায় সামাররা তার সর্বোত্তম সীমা হবে ।

(ঙ) বন্দরবিষয়ক চুক্তি : ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যের জন্যে আলেকজান্দ্রেত্তা বন্দরকে ‘মুক্ত বন্দর' বলা হয়।

(চ) শুল্কবিষয়ক চুক্তি : লোহিত এবং A ও B এলাকায় ওসমানীয়া আমলে প্রচলিত হারে আবগারি কর থাকবে এবং ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের সম্মতি ছাড়া এ হার কমানো যাবে না ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাইকাস-পিকো এবং হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তি দুটি ফ্রান্স ও ব্রিটেনের চাল মাত্র। এ দুটির মাধ্যমে তারা আরবদের সাথে অবিশ্বাস্য বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

ভূমিকা : আরব রাষ্ট্রগুলোর সংহতিমূলক সংগঠন হলো আরব লীগ। আরব লীগের জন্ম কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার ভিত্তিতে নয়, বরং বহু বছরের উপনিবেশ হিসেবে শোষিত হওয়ার পর একটি স্বাধীনতার জন্য তাদের প্রচেষ্টার ফল ছিল আরব লীগ ।

আরব লীগ : ঊনবিংশ শতাব্দীতে ও সমানীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আরব জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল আরব অঞ্চলসমূহের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষাবলম্বন করলে আরবরা মিত্রশক্তির পক্ষে যোগ দেয়। তুর্কি শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি বৃহত্তর আরব রাজ্য গঠনের উদ্দেশ্যে তারা তুরষ্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং মিত্রশক্তির পক্ষে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু যুদ্ধে জয়লাভ করলেও যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি সম্মেলনে আবরদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালে প্যান আরব সম্মেলন এবং ফিলিস্তিন সমস্যাকে কেন্দ্র করে আরব ঐক্যের চেতনা জাগ্রত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার সহযোগিতা করে আবরদের বন্ধুত্ব অর্জনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অক্ষশক্তির তৎপরতাকে মোকাবিলা করাই ছিল ব্রিটেনের মূল উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথক পৃথকভাবে আরব রাষ্ট্রগুলো স্বাধীনতা লাভ করল। তবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুপ্ত বাসনা তখনও পা তাদের মন থেকে মুছে যায়নি। সাম্রাজ্যবাদী দেশ ব্রিটেন তার ভাগ কর শাসন কর নীতি পরিত্যাগ করে আরব ঐক্যের প্রয়াসকে স্বাগত জানাল। কেননা উপনিবেশগুলো আগের মতো লাভজনক ছিল না। বরং উপনিবেশের জনগণের শিক্ষা- সাংস্কৃতিক উন্নয়নের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হতো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটেন বুঝতে পেরেছিল যে, এ উপনিবেশগুলো যুদ্ধের পর আর ধরে রাখা যাবে না। ম্যান্ডেটভুক্ত অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রেও এই কথা সমভাবে প্রযোজ্য। তাই ব্রিটেন অঞ্চলগুলোকে একটি সংস্থার অধীনে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের কৃতজ্ঞতা অর্জন এবং এর মাধ্যমে পুরাতন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ বজায় রাখতে চেয়েছিল। অবশেষে আরবদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা ও ব্রিটেনের সহায়তায় সাতটি আরবদেশের সমন্বয়ে আরব লীগের জন্ম হয়। ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ এই সংগঠনের সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৭টি। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা ২২-এ দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৮ সালে মিসর ইসরায়েলের শান্তি চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আরব লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে। মিসর আরব লীগ ত্যাগ করে এবং এর সদর দপ্তর কায়রো থেকে তিউনেসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে পুনরায় মিশর আরব লীগে যোগদান করে এবং এর সদর দপ্তর কায়রোতে স্থানান্তরিত হয় ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা বুঝা যায় যে, ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ এই সংগঠনের সৃষ্টি হয়। আরব লীগ হলো আরব রাষ্ট্রগুলোর সংহতিমূলক সংগঠন। আরব রাষ্ট্রসমূহের সাধারণ কল্যাণ সাধন, মর্যাদা বৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও রাষ্ট্রসমূহের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন আরব লীগের উদ্দেশ্য। আরব লীগের সংবিধানে যে ৩টি সংযুক্তি রয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ।

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় একটি আলোচিত সংকট হলো প্যালেস্টাইন সংকট। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র ইউরোপীয়দের প্রচেষ্টায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জোরপূর্বক ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে যে অন্তহীন সমস্যার সূচনা হয় তা আজ এত বছর পরেও গোটা বিশ্ববাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্ব পরাশক্তিসমূহ প্যালেস্টাইন সংকটের সুন্দর সমাধানের প্রচেষ্টা চালালেও এর যৌক্তিক কোনো সমাধান করা যাচ্ছে না।

প্যালেস্টাইন সংকট : ১৯৪৮ সাল থেকে অদ্যাবধি বিশ্ববাসী যে অন্তহীন সংকটে জর্জরিত তা হলো প্যালেস্টাইন লক্ষে সংকট। এই প্যালেস্টাইন সংকট গোটা বিশ্ব ব্যবস্থাকেই প্রত্যক্ষ ও কথা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। এই সংকটের সূচনা ঘটে | প্রথে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিসূতি দিলে। এই ফরা ঘোষণাটি ছিল পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে আর ব্রিটিশ সরকারের নির্মম প্রতারণা। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো ব্রিটিশ সরকারের এই অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলনমুখী হয়ে উঠে। এদিকে সুদী কারবারি, ইহুদিরা অর্থের বিশাল ভাণ্ডার নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ধারণা দিতে থাকে তাদের দাবির পক্ষে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিটলার প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদি হত্যা করলে প্রাণভয়ে সা দলে দলে ইহুদিরা ব্যালফোর ঘোষণার আলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত ফিলিস্তিনের দিকে ছুটে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অ অর্থবিত্ত ও অস্ত্র দিয়ে ইহুদিরা মিত্রশক্তিকে সাহায্যের বিনিময়ে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি আদায় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে না মিত্রশক্তি বিজয়ী হয়ে আরব বিশ্বের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৯৪৮ সালে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক পত্তন ঘটায়। ফলে শুরু হয় নতুন প্যালেস্টাইন সংকট, আরব দেশগুলো জোটবদ্ধ হয়ে ইসরাইলে হামলা করলেও উন্মত্ত অস্ত্রশস্ত্র ও মার্কিন সাহায্যে বলীয়ান ইসরাইলের ক্ষুদ্র সৈন্যবাহিনীর সাথে সম্মিলিত আরব বাহিনী পরাজিত হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময় পরপর আরবদের সাথে ইসরাইলের মোট ৩টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু আরবদের আত্মদ্বন্দ্ব, স্বার্থের সংগত, অনুন্নত যুদ্ধ সরঞ্জামের বিপরীতে অর্থবিত্তশালী ও উন্নত যুদ্ধ সরঞ্জামে ঘোষিত মার্কিন সদদাপুষ্ট ইসরাইলি বাহিনী প্রতিটি যুদ্ধেই আরব সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে বিভিন্ন আরব ভূখণ্ড হস্তগত করে। এই প্যালেস্টাইন সংকট সমাধানের জন্য বিভিন্ন সময় জাতিসংঘ ও বিশ্ব পরাশক্তিসমূহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরাইলের একগুঁয়েমি ও সন্ত্রাসবাদের কারণে এর সুষ্ঠু কোনো সমাধান হচ্ছে না অদ্যাবধি ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় শক্তিবর্গ অনেকটা জোর করেই ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে বিষফোড়ার মতো এই প্যালেস্টাইন ইসরাইল সংকট
সমগ্র বিশ্বের শান্তি বিনষ্ট করে চলছে প্রতিনিয়ত ।

ভূমিকা : অতি সুপ্রাচীন থেকেই পশ্চিম এশিয়া সমগ্র বিশ্বের ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। · বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে এটি সর্বাধিক সমাদৃত। এটি বর্তমানে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ১৯০০ সালের দিকে এখানে তেলক্ষেত্র আবিষ্কার শুরু হলে সমগ্র বিশ্ব পরাশক্তির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে পশ্চিম এশিয়া। নিম্নে প্রশ্নালোকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের পরিচয় বর্ণনা করা হলো :

১. পশ্চিম এশিয়া : সাধারণত পশ্চিম এশিয়া বলতে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলকে বুঝানো হয়ে থাকে। পূর্বে অঞ্চলটি | নিকটপ্রাচ্য নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সামরিক প্রয়োজনে এই সমগ্র অঞ্চলটিকে একত্রে মধ্যপ্রাচ্য বলে। অভিহিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালের ঐতিহাসিকগণ | মধ্যপ্রাচ্যকে পশ্চিম এশিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

2.ভৌগোলিক অবস্থান : পশ্চিম এশিয়া ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ৭টি সাগর দ্বারা আবৃত হয়ে আছে। সাগরগুলো হলো ইজিয়ান সাগর, কৃষ্ণ সাগর, পারস্য আরব, ভূমধ্যসাগর, কাস্পিয়ান ও লোহিত সাগর। এর উত্তর দিকে ককেশাস পবর্তমালা একে ইউরোপ থেকে পৃথক করেছে এবং একই সাথে তা মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।

৩. দেশসমূহ : পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল এশিয়ার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩টি দেশসহ মোট ১৮টি দেশ আছে। দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, ইরান, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, ওমান, সৌদিআরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ।

৪. অর্থনৈতিক অবস্থান : অর্থনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম ব এশিয়া বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তিই হলো খনিজ তেল। বর্তমান বিশ্বের মোট মজুত তেলের প্রায় ৬০% খনিজ তেলই উক্ত অঞ্চলে মজুতকৃত আছে। এছাড়া কৃষ্ণ সাগর, আরব পারস্য, লোহিত ও ভূমধ্যসাগরের অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলের সমুদ্র বাণিজ্যের সিংহাভাগই নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো।

৫. ধর্মীয় অবস্থান : হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে ইসলাম আরবে প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই দ্রুত এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটতে থাকে। পরে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও সেলজুক সালতানাতের সময় তা আরো বিস্তৃত হয়। ১২৮৮ সালে উসমানীয় সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ইসলামের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৬. পশ্চিম এশিয়ার ভূপ্রকৃতি : পশ্চিম এশিয়ার ভূপ্রকৃতি সাধারণত উষ্ণ। এই অঞ্চলে উর্বর, অনুর্বর, সমতল, পাহাড়- পর্বত, তৃণভূমি, নদী-নালা সমুদ্র সবরকম ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পশ্চিম এশিয়ার বিখ্যাত মরুভূমি দাস্ত-ই-বাড়ির এবং দাস্ত-ই লুট ইরানে অবস্থিত। ইতিহাস প্রসিদ্ধ ট্রাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস এই অঞ্চলে প্রবাহমান। পশ্চিম এশিয়ার পর্বতগুলোর মধ্যে তাওরাস আরাফাত জাগরত পর্বত অন্যতম।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতার কেন্দ্রভূমি হিসেবে পশ্চিম এশিয়া বিশ্ববাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থলে ছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সালতানাতের বিভক্তির মাধ্যমে এখানে অনেকগুলো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আর ১৯ শতকের প্রারম্ভিকে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে বিপুল খনিজ তেলের ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় এই অঞ্চলটি বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ভূমিকা : বিশ শতাব্দীর শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এ ষড়যন্ত্র সফলতা লাভ করে এবং ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল নামক সন্ত্রাসবাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। ফিলিস্তিনিদের বুকে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা ছিল বিগত শতাব্দীর বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিষয়। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে শুরু এক দীর্ঘ সংকট। মধ্যপ্রাচ্যে দেখা দেয় অস্থিরতা। অস্থিরতা। সে কারণেই ইসরাইলকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া। নিম্নে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে ফিলিস্তিনে যে সংকট তৈরি হয় তার স্বরূপ এবং এ সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা তুলে ধরা হলো :

→ ফিলিস্তিন সংকট : নিম্নে ফিলিস্তিন সংকট সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সংকটের শুরু : উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের শুরু করে। জায়নবাদী আন্দোলনের মূল কথা ছিল ফিলিস্তিনে বিশেষত পূর্ব ইউরোপের নির্যাতিত ইহুদিরা জায়নবাদী আন্দোলন। ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্যে ইহুদিরা | তৎকালীন পরাশক্তিসমূহের সাথে লবিং শুরু করে। প্রথম ফে বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয় এবং আরব জাতীয়তাবাদী | | আন্দোলনকে পুজি করে ব্রিটিশরা ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব [ বিস্তার করে। সে সময় ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের স চূড়ান্ত বিজয় সাপেক্ষে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় যা ব্যালফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। | ফিলিস্তিন সংকটের সূচনা সেখান থেকেই ।

২. সংকটের বিস্তার : বিশ শতাব্দীর শুরু থেকে পূর্ব ব ইউরোপ বিশেষত পোল্যান্ড ও রাশিয়ার ইহুদিরা ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনে অভিভাসন নিতে শুরু করে। ১৯১৭ সালে ব্যালফোর ঘোষণার পরে এ অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো জোরদার হয়। দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। ফলে ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘর্ষ তৈরি হয়। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু এবং জার্মানিতে ইহুদি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে ইহুদি মানবিক দিককে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে।

৩. সংকট : অবশেষে ১৯৪৮ সালে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থনে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিল জাতিসংঘে পাস হয়। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ইসরাইল নামক স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি বৈধতা লাভ করে। জাতিসংঘের রেজুলেশনে ফিলিস্তিনে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও ইসরাইল মূলত সমগ্র ফিলিস্তিনের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফলে শুরু ফিলিস্তিন সংকট।

৪. সংকটের স্বরূপ ও পরিধি : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে আরব দেশগুলো এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। শুরু হয় প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধ। ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে মোট ৪টি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয় এবং প্রত্যেকটি যুদ্ধে আরবরা ইসরাইলের কাছে পরাজয় বরণ করে। ইসরাইলও ধীরে তার সীমানা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। ঘনীভূত হতে থাকে ফিলিস্তিন সংকট।

৫. সংকটের বর্তমান অবস্থা : বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরবদের একতায় ফাটল লক্ষ করা যায়। ১৯৭৩ সালে মিশর ইসরাইল স্বীকৃতি প্রদান করে। পরবর্তীতে। জর্ডান ও মিশরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ১৯৯৩ সালে আসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফলে এ সময়টাতে ইসরাইলের কূটনৈতিক বিজয় লাভ করে। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় মুসলিম দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। জাতিসংঘের ভূমিকা ও তার যথার্থতা : নিম্নে জাতিসংঘের ভূমিকা ও তার যথার্থতা আলোচনা করা হলো-

১. জাতিসংঘের আমেরিকা ঘেঁষা নীতি : ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর সদর দপ্তর অবস্থিত নিউইয়র্কে। জাতিসংঘের সিংহভাগ চাঁদা প্রদান করে আমেরিকা । ফলে জাতিসংঘের সকল নীতি আমেরিকার স্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে আমেরিকায় সংরক্ষক। প্রত্যক্ষ সাহায্যে। ইসরাইল হলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার স্বার্থের ফলে আমেরিকা যেহেতু ইসরাইলের পক্ষে অবলম্বনকারী রাষ্ট্র, সেহেতু জাতিসংঘ কখনো ইসরাইলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দূর অবস্থান নিতে পারে না ।

২. ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও জাতিসংঘের ভূমিকা : ব্যালফোর ঘোষণা, আলিয়া, ফিলিস্তিনি ইহুদি সংঘাত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ইহুদি নিধন এবং ফিলিস্তিনে ব্যাপক ইসরাইলী অভিভাসন সমস্যা সমাধানকল্পে অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি ব্যর্থ হলে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে ইসরাইল ইস্যুটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উঠে এবং ১৯৪৮ সালের মে মাসে বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে জাতিসংঘে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিল পাস হয়। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

৩. ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের যে রেজুলেশন পাস হয় তাতেই সে অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের জন্যও একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে হলেও জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যদিও সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে তথাপি সেটা স্বাধনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থনের সমকক্ষ নয় ।

৪. জাতিসংঘের নতজানুনীতি : ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে জাতিসংঘ কখনো শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। এক্ষেত্রে তারা আমেরিকা ইসরাইলের সামনে নতজানু হয়ে থেকেছে। ইসরাইল ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, জমি, জমা দখল করে অন্যায়ভাবে বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখলেও জাতিসংঘ কখনো এর প্রতিবাদ করেনি এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেনি। ৫. আরব ইসরাইল যুদ্ধ ও জাতিসংঘ : সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এবং আরবদের আপত্তি সত্ত্বেও জাতিসংঘের ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া ছিল একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালে মোট ৪টি আরব ইসরাইল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ইসরাইল অন্যায়ভাবে অনেক আরব ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। তবুও জাতিসংঘ ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইসরাইল রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলিকে জাতিসংঘ পিছন থেকে সমর্থন দিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত ইসরাইল ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সেখানকার মানুষের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করছে নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। অবরোধ আরোপ করছে কিন্তু এসব বিষয়ে জাতিসংঘ নির্বিকার। ফিলিস্তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা প্রদান এবং ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে সে অঞ্চলের মানুষদের রক্ষার জন্য জাতিসংঘ কখনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে জাতিসংঘ পুরোপুরি ব্যর্থ।

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লন্ডন যে রকম অনেকগুলো দেশ দখল করে সেখানে তাদের ম্যান্ডেট শাসন। প্রতিষ্ঠা করে, ঠিক তেমনি ফ্রান্স দখল করে নেয় সিরিয়াকে বিশ্বসভ্যতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিরিয়া। এখানে ফ্রান্স বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। সিরিয়া ফ্রান্সের হাতে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে প্রধানত কারণগুলো ছিল আবর জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। শরীফ হোসেনের বিশ্বাসঘাতকতা, হুসাইনের ম্যাকমোহন পত্রালাপসহ অনেকগুলো কারণ পরিলক্ষিত হয়।

→ সিরিয়ায় ফ্রান্সের ম্যান্ডেটরি শাসন : তুর্কি ওসমানীয় প্রশাসনে সিরিয়া মানে লেবানন ও প্যালেস্টাইনকে বুঝাত। এদেরকে একসাথে Levant বলত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথমে আরব জনগণ ফারটাইল ক্রিসেন্টের জনগণের তুর্কি বিরোধী মনোভাব, যুদ্ধের প্রথম বছরগুলোতে তুর্কি তিনজন শাসকের একজন সদস্য, জামালপাশা তুর্কির প্রধান থাকাকালে অনেক নিষ্ঠুর ব্যবহার করে এ ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণে সিরিয়া ফ্রান্সের হাতে চলে যায়। নিম্নে ফ্রান্স ম্যান্ডেটরি শাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে রাজনৈতিক অবস্থা : প্রাচীন ও মধ্যযুগে সিরিয়ায় অনেক রাজা শাসন করেন। রাজনৈতিক ইতিহাসের খেলায় ১৫ থেকে ১৮ শতকে সিরিয়ার অঞ্চলগুলো লিভন্টি নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩১ সাল থেকে শুরু করে নয় বছর পর্যন্ত সিরিয়া ছিল মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলীর নিয়ন্ত্রণে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হওয়ায় সিরিয়া চলে যায় ফ্রান্সের হাতে। পরবর্তীতে এটি বাথ পার্টির নিয়ন্ত্রণে আসে ১৯৪৬ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর।

→ সিরিয়ায় ফ্রান্সের শাসন : সিরিয়ায় ফ্রান্সের শাসন সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. প্রেক্ষাপট : ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তি সিরিয়াকে প্রস্তাব দেয় যে, যদি সিরিয়া তুরস্ককে ছেড়ে মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয় তবে তারা যুদ্ধের পর সিরিয়াকে স্বাধীনতা দেবে। যুদ্ধের শেষের দিকে সিরিয়া তুরস্ককে ত্যাগ করলেও যুদ্ধ শেষে মিত্রশক্তি সিরিয়াকে স্বাধীনতা দেয়নি। বরং তারা তাদের Sykes picot Agreement অনুযায়ী সিরিয়া ও লেবাননকে ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়।

২. ফ্রান্সের ম্যান্ডেট অধিকার : ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে রেমো সম্মেলনের মাধ্যমে সিরিয়ার উপর ফ্রান্সের ম্যান্ডেট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় সিরিয়া জেব এল দ্রুজ ও লাতাকিয়া অঞ্চলে ফ্রান্সের সরাসরি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জেব এল দ্রুজের শাসনকর্তা করবিলেটের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ফ্রান্স তা কঠোর হস্তে দমন করে। এর ফলে সমগ্র সিরিয়ায় ফারসি বিরোধী মনোভাব বিরাজ করলেও ফ্রান্সের একক কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৩. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যাপকতা : ফরাসীদের দমননীতি সিরিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে আরো ব্যাপকতা দান করে। তারা কামান ব্যবহার করে দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে স্বীয় আধিপত্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৩ সালে ফ্রান্স সিরিয়ার শাসনতন্ত্র বাতিল করে ফরাসি শাসন প্রতিষ্ঠা করে সামরিক দমননীতির দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। এতে সিরিয়রা আগের চেয়ে বেশি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং তারা ফরাসি পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু করে।

৪. ভাগকর ও শাসনকর নীতি : ফ্রান্স সিরিয়ায় ভাগকর ও শাসনকর নীতি গ্রহণ করে যাতে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তারা শিয়া সুন্নির মধ্যে একটি তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। ফ্রান্স শিয়াদেরকে ব্যাপকভাবে সরকারি উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ দেয়।যার দ্বারা কৌশল করে চাকরি ও প্রশাসন থেকে সুন্নিদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়। নুসাইরী শিয়াদের সাথে খ্রিষ্টানদের ভাল সম্পর্ক ১ থাকায় তারা আলাদা সুবিধা ভোগ করত। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করার জন্য সিরিয়াকে মনমত কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে।

৫. অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় : সিরিয়ায় ম্যান্ডেট শাসনের সময় এ দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা বললেও ত বাস্তবে এর বিপরীত ফল পাওয়া যায়। এ সময় সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। ফরাসিগণ সিরিয়াকে তাদের পণ্যদ্রব্যে পরিণত করে এবং তারা নিজেদের কৃষ্টি, সভ্যতা, ভাষা ও সংস্কৃতি সিরিয়দের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়। যার ফলে ত সিরিয়া তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে ।

৬. ফ্রান্স-সিরিয়া চুক্তি : ইতোপূর্বে ফ্রান্স সিরিয়ার সাথে মীমাংসার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। তাই ১৯৩৬ সালে তাদের মধ্যে মীমাংসামূলক আলোচনার কারণে সিরিয়দের সাথে ফ্রান্সের একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ফারসী সরকার সিরিয়দের স্বাধীনতা মেনে নেয়। দ্রুজ ও আলওয়াই অঞ্চলের সিরিয়দের সাথে সংযুক্ত এবং ফরাসি সরকারের সাথে অন্য একটি চুক্তির মাধ্যমে সিরিয়ায় ফরাসি সৈন্য ও ঘাটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৭. ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : ১৯৩৬ সালের সিরিয়া-ফ্রান্স চুক্তি অনুযায়ী জামিল মর্দানের নেতৃত্বে এক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ফ্রান্স সরকার এ চুক্তির বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে থাকে। এ সময় ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটলে তাতে ভীত হয়ে ফ্রান্স পার্লামেন্টে এটি নাকচ করে দেয় ৷

৮. সিরিয়দের অসন্তোষ ও ফরাসি সরকারের পুনঃদখল : এ চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় সিরিয়রা প্রচন্ড ব্যথিত হয়। তাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে সমস্ত সিরিয়বাসী আন্দোলন শুরু করে। এ পরিস্থিতি তাদের নিয়মের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফরাসী হাই কমিশনার দমননীতি গ্রহণ করে। তারা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দামেস্ক দখল করে। এ সময় ফরাসি সরকার মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়ে সিরিয়ার উপর পুন:আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সিরিয়া : সিরিয়ায় ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দুই বছর ফরাসি শাসন বজায় ছিল। পরবর্তীতে সময় অতিবাহিত C হওয়ার সাথে সাথে সিরিয়ায় রাজনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে :
(i) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমে জার্মানির নিকট ফ্রান্সের ি পরাজয় ঘটলে জার্মানির আওতায় চলে যায় সিরিয়া ।
(ii) জার্মানির কাছ থেকে মিত্র বাহিনী আবার সিরিয়াকে নি পুনরায় দখল করে এবং তাদেরকে স্বাধীনতার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। ফ্রান্সের জেনারেল কাতরিয়ো সিরিয়ায় জাতীয়তাবাদীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে এবং সিরিয়াকে তাদের হাতে হস্তান্তর করবে বলে ঠিক করে। ১৯৪১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দ্যা-গলে সিরিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিলেও তাদের ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্য প্রত্যাহার করেনি। যা সিরিয়ার স্বাধীনতার অন্তরায়।
(iii) অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৪ সালে সিরিয়ার স্বাধীনতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেয় ।
(iv) ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ সিরিয়া আরবলীগে যোগ দেয়।
(v) সিরিয়া জার্মান ও জাপানের বিরুদ্ধে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর পুরস্কার স্বরূপ ইয়াল্টা কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে সিরিয়ার প্রতিনিধি যথাযোগ্য আসন লাভ করে ।

১০. জাতিসংঘের অধিবেশনে সিরিয়ার অভিযোগ : ১৯৪৪ সালে সিরিয়া স্বাধীন হলেও সেখানে ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যেরা অবস্থান ছিল। ১৯৪৬ সালে সিরিয়া জাতিসংঘের নিকট অভিযোগ দেয়। এতে ফ্রান্স ব্রিটেন তাদের সৈন্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা পরিষদকে জানায়। যার ফলে ৩১ ডিসেম্বর ফ্রান্স ও ব্রিটেন সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে। যার ফলে সিরিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে ১ জানুয়ারী ১৯৪৭ সালে ।

উপসংহার : সবকিছুর পর্যালোচনা করে আমরা প্রতীয়মান হই যে, সিরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে ফ্রান্সের ম্যান্ডেটরি শাসন ছিল একটি দুঃখজনক অধ্যায়। এটি সিরিয়ার কৃষ্টি, সামাজিক, অর্থনৈতিক সবকিছুর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার ফলে তাদের অত্যাচার অবিচারে অতিষ্ঠ হয়ে সিরিয়ার জনগণ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। যার ফলে অনেক কষ্টের মাধ্যমে সিরিয়াবাসী প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৭ সালে।

ভূমিকা : আরব উপদ্বীপস্থ উসমানীয় সুলতানের প্রাদেশিক শাসনকর্তা শরীফ হোসেন ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরব উপদ্বীপের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা লাভের জন্য গোপনে মিত্রশক্তি তথা ব্রিটেনের সাথে হাত মেলায়। তিনি মিশরে নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হেনরী ম্যাকমোহনের সাথে ক্ষমতা লাভের ব্যাপারে আলাপ- আলোচনার জন্য পত্র বিনিময় করেন। এ পত্র ছিল স্বাধীন আরব সরকার গঠনসহ আরব উপদ্বীপের সীমানা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। এ পত্র বিনিময় চলাকালেই ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার সাইকাস-পিকো নামক আরেকটি গোপন চুক্তি সম্পাদন করে নিজেদের মধ্যে আরব উপদ্বীপ ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য দলিলপত্র সাক্ষর করেন যা ছিল হোসেন ও ম্যাকমোহন পত্রালাপের পরিপন্থী। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

→ হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ : ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মধ্যপ্রাচ্যে ফরাসি ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের র জন্য যে গোপন চুক্তি সম্পাদন করা হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় চুক্তির একটি অংশ হচ্ছে হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ ।
শরীফ হোসেন আরবদের পক্ষে হেনরী ম্যাকমোহন সাথে

→ হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপের বিষয়বস্তু : আরবদের লা পক্ষে হোসেন এবং ব্রিটিশদের পক্ষে ম্যাকমোহনের যে পত্রালাপ হয় তার বিষয়বস্তু নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. হোসেনে পত্র ও আরব ভূখণ্ডের সীমানা : শরীফ হোসেন আরব ১৯১৫ সালে আরব উপদ্বীপের পক্ষে ব্রিটিশদের সহযোগিতার পিকো আশ্বাস দেন এবং তিনি সমস্ত আরব ভূখণ্ডের সীমানা উল্লেখ করে দেন। আরব উপদ্বীপের সীমানা হচ্ছে উত্তরে মার্কিন আদানা হতে ৩৭০ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং সেখান হতে বিরোজিক উরফা- মারডিন মিদিয়াত হাজিরাত ইবন উমর-আমাদিয়া হয়ে পারস্য সীমানা পর্যন্ত চিহ্নিত করেন। পূর্বে পারস্যের সীমানা হতে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত দক্ষিণে এডেন ব্যতীত ভারত মহাসাগর পর্যন্ত । পশ্চিমে লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগর হতে পুনরায় মার্সিন পর্যন্ত।

২. স্বাধীন আরব রাষ্ট্র গঠনের কামনা : শরীফ হোসেন ১৯১৫ সালের প্রথম পত্রে যুদ্ধের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেনের সমর্থন লাভের বাসনা করেন। ফলে ম্যাকমোহন কায়রোর প্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক স্যার রোলান্ড স্টার্সের পরামর্শে শরীফ। হোসেন প্রথম পত্রের নিম্নোক্ত উত্তর প্রদান করেন ।
(ক) মার্লিনা ও আলেকজান্দ্রেত্তা জেলা দুটি দামেস্ত, হিমস, হামা ও আলেপ্পো জেলাসমূহের পশ্চিমে অবস্থিত সিরীয় ভূখণ্ডে প্রকৃতপক্ষে আরব বলে আখ্যায়িত করা যায় না। এ এলাকা প্রস্তাবিত আরব রাষ্ট্রের বাইরে থাকবে ।
(খ) ব্রিটেন যেকোনো বিদেশি আক্রমণ হতে ইসলামের পবিত্র স্থানগুলো হেফাযত করবে।
(গ) প্রস্তাবিত আরব ভূখণ্ডে এক বা একাধিক সরকার কে প্রতিষ্ঠা ও আনুষঙ্গিক কাজে ব্রিটেন আরবদের সাহায্য করবে।
(ঘ) বৈদেশিক আক্রমণ হতে রক্ষা, স্থানীয় জনগণের সার্বিক উন্নতি ও ব্রিটেনের স্বার্থরক্ষা করার জন্য বাগদাদ ও বসরা ভিলায়েতে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু থাকবে ।

৩. সাইকাস-পিকো চুক্তি : শরীফ হোসেন ও ম্যাকমোহনের এ- মধ্যে পত্রালাপ বন্ধ হওয়ার প্রায় ৬ মাস পর সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু আরবদের দেয় সকল প্রতিশ্রুতিই প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশ সরকার। তার এটা ছিল গোপন ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের একটি অংশ বিশেষ। আরবগণ এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। অন্যদিকে ম্যাকমোহনের আশ্বাসে আরবগণ ১৯১৬ সালের ৫ জুন তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন শাহজাদা ফয়সাল। ফলে ফয়সাল ও তার সৈন্যগণ ১৯১৮ সালের ১ অক্টোবর বিজয়ীবেশে দামেস্কে প্রবেশ করে। কিন্তু ব্রিটেন সাইকাস-পিকো চুক্তির ভিত্তিতে ফয়সালের কাজে বাধা প্রদান করে। তবে ফয়সাল একটি স্বাধীন সার্বভৌম শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠনের ঘোষণা করলে ১৯১৮ সালের ২৯ অক্টোবর তুর্কিগণ মরেজ দাবিকের প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করে। হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ চলাকালেই ১৯১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র । দপ্তরে ব্রিটেনের পক্ষে স্যার মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের জর্জ পিকো |
আরব উপদ্বীপ নিয়ে যে গোপন চুক্তি সম্পাদন করে তাই পিকো চুক্তি নামে খ্যাত বা পরিচিত।

৪. হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ ও সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা : সাইকাস-পিকো চুক্তি হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপের বিরোধী কি-না অথবা দুটি চুক্তি পরস্পর বিরোধী কি- না এ নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন-
(i) পক্ষে মত : কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপকালে কোনো চুক্তিই সম্পাদিত হয়নি। সুতরাং চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রশ্ন অবান্তর।
(ii) মধ্যপন্থি মত : কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে, হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তি ও সাইকাস-পিকো চুক্তির মধ্যে খুব বেশি বিরোধ নেই। তাদের মতে, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল বাদে সিরিয়ার আরবদের যে স্বাধীন রাজ্যের কথা হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপে বলা হয়েছিল সাইকাস-পিকো চুক্তিতেও সে ধরনের বা একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে।
. মূল্যায়ন : মূল্যায়নে বলা যায় যে, সাইকাস-পিকো চুক্তি হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপকে অনেকাংশে ব্যাহত করেছিল। যেমন-
(i) ফরাসি স্বার্থের প্রশ্নে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া সমগ্র আরব ভূখণ্ডে নীতিগতভাবে আরবদের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে মাত্র মধ্য সিরিয়ায় A এবং B চিহ্নিত এলাকায় এক বা একাধিক আরব রাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল ।
(ii) হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তিতে নীতিগতভাবে মেসোপটেমিয়া স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। ব্রিটেন এখানে যে শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল তা হোসেন সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে এ এলাকার উপর ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণের কোনো সময় সীমা উল্লেখ করা হয়নি
(iii) প্যালেস্টাইন হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তিতে আরব ভূখণ্ডের অংশ ছিল। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তি চলাকালেই ব্রিটেন ও ফ্রান্স সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পাদন করে আরবদের সাথে যে বেইমানী করেছেন তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ দুটি চুক্তি ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি কূটনৈতিক কৌশলমাত্র। নীতি আদর্শ বিবর্জিত সাইকাস-পিকো চুক্তিটি পরবর্তীতে আরব ভূখণ্ডের জনসাধারণের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

ভূমিকা : আরব উপদ্বীপস্থ উসমানীয় সুলতানের প্রাদেশিক শাসনকর্তা শরীফ হোসেন ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরব উপদ্বীপের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা লাভের জন্য গোপনে মিত্রশক্তি তথা ব্রিটেনের সাথে হাত মেলায়। তিনি মিশরে নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হেনরী ম্যাকমোহনের সাথে ক্ষমতা লাভের ব্যাপারে আলাপ- আলোচনার জন্য পত্র বিনিময় করেন। এ পত্র ছিল স্বাধীন আরব সরকার গঠনসহ আরব উপদ্বীপের সীমানা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। এ পত্র বিনিময় চলাকালেই ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার সাইকাস-পিকো নামক আরেকটি গোপন চুক্তি সম্পাদন করে নিজেদের মধ্যে আরব উপদ্বীপ ও অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য দলিলপত্র সাক্ষর করেন যা ছিল হোসেন ও ম্যাকমোহন পত্রালাপের পরিপন্থী। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

→ হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ : ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মধ্যপ্রাচ্যে ফরাসি ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের র জন্য যে গোপন চুক্তি সম্পাদন করা হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় চুক্তির একটি অংশ হচ্ছে হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ ।
শরীফ হোসেন আরবদের পক্ষে হেনরী ম্যাকমোহন সাথে

→ হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপের বিষয়বস্তু : আরবদের লা পক্ষে হোসেন এবং ব্রিটিশদের পক্ষে ম্যাকমোহনের যে পত্রালাপ হয় তার বিষয়বস্তু নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. হোসেনে পত্র ও আরব ভূখণ্ডের সীমানা : শরীফ হোসেন আরব ১৯১৫ সালে আরব উপদ্বীপের পক্ষে ব্রিটিশদের সহযোগিতার পিকো আশ্বাস দেন এবং তিনি সমস্ত আরব ভূখণ্ডের সীমানা উল্লেখ করে দেন। আরব উপদ্বীপের সীমানা হচ্ছে উত্তরে মার্কিন আদানা হতে ৩৭০ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং সেখান হতে বিরোজিক উরফা- মারডিন মিদিয়াত হাজিরাত ইবন উমর-আমাদিয়া হয়ে পারস্য সীমানা পর্যন্ত চিহ্নিত করেন। পূর্বে পারস্যের সীমানা হতে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত দক্ষিণে এডেন ব্যতীত ভারত মহাসাগর পর্যন্ত । পশ্চিমে লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগর হতে পুনরায় মার্সিন পর্যন্ত।

২. স্বাধীন আরব রাষ্ট্র গঠনের কামনা : শরীফ হোসেন ১৯১৫ সালের প্রথম পত্রে যুদ্ধের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেনের সমর্থন লাভের বাসনা করেন। ফলে ম্যাকমোহন কায়রোর প্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক স্যার রোলান্ড স্টার্সের পরামর্শে শরীফ। হোসেন প্রথম পত্রের নিম্নোক্ত উত্তর প্রদান করেন ।
(ক) মার্লিনা ও আলেকজান্দ্রেত্তা জেলা দুটি দামেস্ত, হিমস, হামা ও আলেপ্পো জেলাসমূহের পশ্চিমে অবস্থিত সিরীয় ভূখণ্ডে প্রকৃতপক্ষে আরব বলে আখ্যায়িত করা যায় না। এ এলাকা প্রস্তাবিত আরব রাষ্ট্রের বাইরে থাকবে ।
(খ) ব্রিটেন যেকোনো বিদেশি আক্রমণ হতে ইসলামের পবিত্র স্থানগুলো হেফাযত করবে।
(গ) প্রস্তাবিত আরব ভূখণ্ডে এক বা একাধিক সরকার কে প্রতিষ্ঠা ও আনুষঙ্গিক কাজে ব্রিটেন আরবদের সাহায্য করবে।
(ঘ) বৈদেশিক আক্রমণ হতে রক্ষা, স্থানীয় জনগণের সার্বিক উন্নতি ও ব্রিটেনের স্বার্থরক্ষা করার জন্য বাগদাদ ও বসরা ভিলায়েতে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু থাকবে ।

৩. সাইকাস-পিকো চুক্তি : শরীফ হোসেন ও ম্যাকমোহনের এ- মধ্যে পত্রালাপ বন্ধ হওয়ার প্রায় ৬ মাস পর সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু আরবদের দেয় সকল প্রতিশ্রুতিই প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশ সরকার। তার এটা ছিল গোপন ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের একটি অংশ বিশেষ। আরবগণ এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। অন্যদিকে ম্যাকমোহনের আশ্বাসে আরবগণ ১৯১৬ সালের ৫ জুন তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন শাহজাদা ফয়সাল। ফলে ফয়সাল ও তার সৈন্যগণ ১৯১৮ সালের ১ অক্টোবর বিজয়ীবেশে দামেস্কে প্রবেশ করে। কিন্তু ব্রিটেন সাইকাস-পিকো চুক্তির ভিত্তিতে ফয়সালের কাজে বাধা প্রদান করে। তবে ফয়সাল একটি স্বাধীন সার্বভৌম শাসনতান্ত্রিক সরকার গঠনের ঘোষণা করলে ১৯১৮ সালের ২৯ অক্টোবর তুর্কিগণ মরেজ দাবিকের প্রস্তাবে আত্মসমর্পণ করে। হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ চলাকালেই ১৯১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র । দপ্তরে ব্রিটেনের পক্ষে স্যার মার্ক সাইকস ও ফ্রান্সের জর্জ পিকো |
আরব উপদ্বীপ নিয়ে যে গোপন চুক্তি সম্পাদন করে তাই পিকো চুক্তি নামে খ্যাত বা পরিচিত।

৪. হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপ ও সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা : সাইকাস-পিকো চুক্তি হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপের বিরোধী কি-না অথবা দুটি চুক্তি পরস্পর বিরোধী কি- না এ নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন-
(i) পক্ষে মত : কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপকালে কোনো চুক্তিই সম্পাদিত হয়নি। সুতরাং চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রশ্ন অবান্তর।
(ii) মধ্যপন্থি মত : কোনো কোনো ঐতিহাসিকদের মতে, হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তি ও সাইকাস-পিকো চুক্তির মধ্যে খুব বেশি বিরোধ নেই। তাদের মতে, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল বাদে সিরিয়ার আরবদের যে স্বাধীন রাজ্যের কথা হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপে বলা হয়েছিল সাইকাস-পিকো চুক্তিতেও সে ধরনের বা একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে।
. মূল্যায়ন : মূল্যায়নে বলা যায় যে, সাইকাস-পিকো চুক্তি হোসেন-ম্যাকমোহন পত্রালাপকে অনেকাংশে ব্যাহত করেছিল। যেমন-
(i) ফরাসি স্বার্থের প্রশ্নে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া সমগ্র আরব ভূখণ্ডে নীতিগতভাবে আরবদের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে মাত্র মধ্য সিরিয়ায় A এবং B চিহ্নিত এলাকায় এক বা একাধিক আরব রাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল ।
(ii) হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তিতে নীতিগতভাবে মেসোপটেমিয়া স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। ব্রিটেন এখানে যে শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল তা হোসেন সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে এ এলাকার উপর ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণের কোনো সময় সীমা উল্লেখ করা হয়নি
(iii) প্যালেস্টাইন হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তিতে আরব ভূখণ্ডের অংশ ছিল। কিন্তু সাইকাস-পিকো চুক্তিতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হোসেন-ম্যাকমোহন চুক্তি চলাকালেই ব্রিটেন ও ফ্রান্স সাইকাস-পিকো চুক্তি সম্পাদন করে আরবদের সাথে যে বেইমানী করেছেন তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ দুটি চুক্তি ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি কূটনৈতিক কৌশলমাত্র। নীতি আদর্শ বিবর্জিত সাইকাস-পিকো চুক্তিটি পরবর্তীতে আরব ভূখণ্ডের জনসাধারণের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram