nulibrary

সৌদি রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আব্দুল আজিজ ইবনে আস সউদের নামানুসারে সৌদি আরবের নামকরণ করা হয়। কেননা সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া তিনি সৌদি আরবের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আধুনিক করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। সোদি আরবে আধুনিক কোনো প্রশাসন ব্যবস্থা | ছিল না। গোত্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা সেখানে বিদ্যমান ছিল । দীর্ঘ | মক্কা দ পথ পরিক্রমার পর সউদ বংশের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে | আকর্ষণ সৌদি আরব রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বিশাল ভূমিকা পালন | ওয়াহাি করেন আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে সউদ ।

→ সৌদি আরব রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পটভূমি : দীর্ঘকাল বিরুদ্ধে পরিক্রমায় নানা চড়াই-উত্রাই ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৌদি রাজবংশ। যা মধ্যপ্রাচ্যের অভিযা ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নিম্নে সৌদি আরব রাজ্যের ওয়াহা প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করা হলো :

১. সউদ বংশের প্রতিষ্ঠা ও ওয়াহাবি মতবাদ : আব্দুল দ্বিতীয় আজিজ ইবনে সউদের নেতৃত্বে পূর্বপুরুষগণ খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ সউদ শতাব্দীর মধ্যভাগে আল হাসা হতে নজদের ওয়াদি হানিফায় এসে অপর বসবাস শুরু করে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে তারা মধ্য আবের ১৮১ দারিয়ার একটি ক্ষুদ্র আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭২০ সালে সউদ | দরি ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মাকরান এ আমিরাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রের তার নাম হতেই সৌদি রাজবংশের নামকরণ হয় এবং পরবর্তীতে সৌদি আরব রাজ্যের নামকরণ হয়। ১৭২৫ সালে তার মৃত্যুর পর যায় তার পুত্র মুহাম্মদ ইবনে সউদ আমীর হন। তার সময়েই নজদের উয়ায়নার মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব একটি আন্দোলন শুরু করেন। তার নামানুসারেই এ আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন নামে পরিচিত হয়। সত্যিকার ইসলাম প্রচার ঈমানের বিশুদ্ধকরণ এবং কুসংস্কার ও ধর্মদ্রোহিতা থেকে মুসলিম জাতিকে রক্ষা করাই ছিল এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য। ১৯৪০ সালে আব্দুল ওহাব দরিয়ায় আগমন করেন এবং ইবনে সউদের আশ্রয় গ্রহণ করেন এরই প্রেক্ষিতে ১৭৪৪ সালে মুহাম্মদ ইবনে সউদ এবং আব্দুল ওহাব | . সম্মিলিতভাবে এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন যা । ইসলামের মূলনীতি অনুসারে পরিচালিত হবে। আর তখন থেকেই সৌদি আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠা একটি রাজনৈতিক ভিত্তি লাভ করে এবং রাজ্য প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি হতে শুরু করে।

২. রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ : ওয়াহাবি মতবাদ জোরদার হলে হাসার যুবরাজ এ আন্দোলনের বিরোধিতা করেন। ফলে ইবনে সউদ তাকে পরাজিত করেন। এতে করে সৌদি রাজত্ব পশ্চিম দিকে বিস্তার লাভ করে। ইবনে সউদের মৃত্যুকালে অর্থাৎ ১৭৬৫ সাল নাগাদ নজদের অধিকাংশ অঞ্চল ওয়াহাবিদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মুহাম্মদ ইবনে সউদের মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল আজিজ ইবনে মুহম্মদ ইবনে সউদ ১৭৬৫ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি পিতার সম্প্রসারণ নীতি অনুসরণ করেন। ১৭৮৮ সালে সউদি রাজত্ব কুয়েত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ওয়াহাবি আন্দোলনের শুরুর দিকে মক্কার শরীফ হুসেনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিরোধ দেখা দিয়েছিল। ফলে উভয় রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা যায়। ১৮০৩ সালে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে এবং সউদ হিজাজ অভিমুখে যাত্রা করেন এবং মক্কা দখল করে নেন। তার সময়ে রাজ্যের সীমানা সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ওমান পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

৩. আব্দুল আজিজ ইবনে সউদের প্রচেষ্টা : ১৮০৩ সালে সউদ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি মক্কা শরীফকে তার অধীনে রাজ্য শাসনের অনুমতি দেন। মক্কা দখলের পর সউদি রাজ্য সারা বিশ্বের মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৮০৪ সালে ওয়াহাবিরা মদিনা দখল করে। ওয়াহাবিদের এ দ্রুত বৃদ্ধিতে তুর্কি সুলতান সেলিম কিছুটা বিস্মিত হন । তিনি মিশরের শাসক মুহাম্মদ আলী পাশাকে সুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ১৮১১ সালে মুহামমদ আ পাশা তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তুসুন পাশার নেতৃত্বে সউদ বংশের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। তুসুন পাশা বদর প্রান্তরে ওয়াহাবিদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১৮৮২ সালে মক্কা ও তায়েফ পুনরায় তুর্কি শাসনাধীনে আসে। ১৮১৪ সালে দ্বিতীয় ইবনে সউদ মৃত্যবরণ করলে তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে সউদ ক্ষমতাসীন হন। ১৮১৫ সালে মুহাম্মদ আলী পাশা তার অপর পুত্র ইব্রাহিম পাশাকে আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। ১৮১৬ সালে ইব্রাহিম পাশা মদিনা জয় করেন। ১৮১৮ সালে তিনি দরিয়া দখল করেন এবং আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে ইস্তাম্বুলে প্রেরণ করেন। সেই বছর ইস্তাম্বুলে তাকে হত্যা করা হয়। এভাবে মুহাম্মদ ইবনে সউদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আরবীয় উপদ্বীপে সউদ বংশের অধীনে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ।

৪. রাজ্য প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় পদক্ষেপ : প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ১৮২৪ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। ১৮১৮ থেকে ১৮২৪ সাল পর্যন্ত নজদে ওসমানীয় নিয়ন্ত্রণ ছিল। ওসমানীয় নিয়ন্ত্রণের নিদর্শনস্বরূপ। এ সময় নজদে কিছু সেনা ছাউনিও গড়ে উঠে। এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনে সউদের বংশধররা আবারো সংগঠিত হয়ে দারিয়াসহ নজদের বিভিন্ন অংশের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। ১৮২৪ সালে তুর্কি, ইবনে সউদ নজদে একটি আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বে ওয়াহাবিরা রিয়াদ দখল করে নেয়। ১৮৩৪ সালে তুর্কি ইবনে সউদ আততায়ীর হাতে নিহত হলে তার পুত্র ফয়সল ইবনে সউদ বংশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । তিনি মুহাম্মদ আলী পাশার আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ১৮৩৮ সালে মিশরীয় বাহিনী নজদ আক্রমণ করে তা দখল করে নেয় এবং ফয়সলকে বন্দি করে নিয়ে যায়। পাঁচ বছর বন্দি জীবন কাটানোর পর তিনি কায়রো থেকে পালিয়ে নজদে চলে আসতে সক্ষম হন। তিনি নজদ ও হাসার অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকে পরিণত হন। অতঃপর ১৮৬৫ সালে ফয়সালের মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল নিয়ে তার পুত্রদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।

৫. আব্দুর রহমান ইবনে ফয়সালের প্রচেষ্টা : ১৮৬৫ সালে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হলে হাইলের শাম্মার গোত্রের নেতা মুহাম্মদ বিন রশীদ শক্তি সঞ্চয় করে নজদের অধিকাংশ অঞ্চলের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭১ সাল নাগাদ তিনি হাসা দখল করে নেন। এ সময় ফয়সালের তৃতীয় পুত্র আব্দুর রহমান ইবনে ফয়সল শুধুমাত্র রিয়াদকে কেন্দ্র করে সউদ বংশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু রিয়াদের উপর তার এ নিয়ন্ত্রণ স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। ১৮৯১ সালে হাইলের রশীদী বংশ রিয়াদ দখল করে নিলে তৎকালীন সউদ শাসক সপরিবারে কুয়েতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এভাবে দ্বিতীয়বারের মতো সউদ বংশ কর্তৃক একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৬.রাজ্য প্রতিষ্ঠার তৃতীয় পদক্ষেপ : ১৮৯৭ সালে রশীদী বংশের শাসনকর্তা মুহাম্মদ ইবন রশীদ মৃত্যুবণ করলে সুদ রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আসে। ১৯০২ সালের ১৫ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে মাত্র ৬০/৭০ জন অনুসারী নিয়ে আব্দুর রহমানের পুত্র আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে সউদ য়িািদ নগরে প্রবেশ করে রশীদী বংশের ওয়ালি আজলানকে হত্যা করে পুরাতন সউদি রাজতন্ত্রের রাজধানী রিয়াদ দখল করেন। তিনি শুধু তার পূর্বপুরুষের রাজ্য পুনরুদ্ধার করেই ক্ষান্ত হননি বরং তা আরো বিস্তৃত করেন। ১৯০৫ সালে তিনি সমগ্র নজদের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৫ সালের পর থেকে রশীদী বংশের সাথে আব্দুল আজিজের ক্রমাগত সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ প্রেক্ষিতে আব্দুল আজিজ ১৯২১ সালে রশীদী বংশকে পরাজিত করে হাইল দখল করে নেন। রশীদী বংশের পরাজয়ের ফলে আরবীয় উদ্বীপে ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। আব্দুল আজিজের রাজ্য ইরাকের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। ১৯২২ সালে ব্রিটেনের উপস্থিতিতে ইরাক ও কুয়েতের সঙ্গে আব্দুল আজিজের রাজ্যের সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯২৪ সালে আব্দুল আজিজ হিজাজ আক্রমণ করেন এবং তায়েফ শহর দখল করে নেন। ১৯২৫ সালে মদিনাসহ সমগ্র হিজাজের উপর আব্দুল আজিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধান প্রধান শহরের নাগরিকদের সমর্থন লাভ করে আব্দুল আজিজ নিজেকে 'হিজাজের বাদশাহ' এবং নজদ ও তার আশ্রিত রাজ্যসমূহের সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। পরের মাসেই আব্দুল আজিজ সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯২৭ সালের জানুয়ারি মাসে হিজাজ এবং নজদ একত্রিত হয়ে Kingdom of Hejaj, Nejd and there dependencies নাম ধারণ করে ।

৭. সউদী আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠা : ১৯৩২ সালে আব্দুল আজিজ সমগ্র আরব উপদ্বীপের মোট আয়তনের প্রায় চার- পঞ্চমাংশ এলাকা নিয়ে সউদী আরব রাজ্য নামে এক বিশাল রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বরকে সউদি আরবের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবে আব্দুল আজিজের অসাধারণ কৃতিত্বে সৌদি আরব রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ১৯৫৮ সালের এই ফরমানের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয়। কিন্তু এ আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রথম চেষ্টা চালান আব্দুল আজিজ ইবনে আস সউদ। বিভিন্ন চড়াই-উৎড়াই পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব রাজ্যটি ১৯৩০-এর দশকে এসে আব্দুল আজিজের দৃঢ়তায় বিশ্বের ইতিহাসে রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা ১৯৩২ সালে "The Kingdom of Saudi Arabia" নামে পরিচিতি লাভ করে ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram