nulibrary

ফিলিস্তিনী সমস্যা সংক্ষেপে বর্ণনা কর । ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বশেষ পরিস্থিতির উপর মন্তব্য কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধত্তোর সময়ে ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানরা জার্মানির পক্ষে অক্ষশক্তিতে যোগদান করে এবং পরাজিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের ফলে মধ্যপ্রাচ্য তাদের হাত ছাড়া হয়। ব্রিটিশরা এসময় ফিলিস্তিনসহ আরবের অনেক অঞ্চল দখল করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ফিলিস্তিন সংকটের শুরু সেখান থেকেই। নিম্নে ফিলিস্তিন সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

→ প্যালেস্টাইন সংকট : উনিশ শতকের শেষদিকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে নির্যাতিত ইহুদির জায়ানবাদী আন্দোলন শুরু করে। যে আন্দোলনের মূল কথা ছিল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। জায়ানবাদী আন্দোলনের সূত্র ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালের মে মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেষে অবস্থিত ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয় জায়নবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল মূলত ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনের আদি জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনে যে দুর্দশা নেমে আসে তাকে ফিলিস্তিন সংকট নামে অভিহিত করা হয়।

→ ফিলিস্তিন সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি : ব্রিটিশ সরকার ব্যালফোর ঘোষণার পর সৃষ্টি হওয়া ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলেন ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করা হয়। জাতিসংঘ আমেরিকা ও মিত্র শক্তিবর্গের সমষ্টি সংগঠন হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই ইহুদি স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে। ফলে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে ভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার পক্ষে জাতিসংঘ রায় দেয়। জাতিসংঘের পক্ষপাতমূলক এ রায়ের বিরুদ্ধে আরব ইসরাইল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৪৮ সালে মিত্র আমেরিকার সহযোগিতায় ইহুদি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হয়নি, বরং তা আরো তীব্রতর হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. আরব-ইসরাইল যুদ্ধ : ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই আরব এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এরপর ১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৫৬ সালে মোট ৪টি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়। প্রতিটি যুদ্ধেই আরবরা পরাজিত হয় এবং বিশাল বিশাল ভূখণ্ড ইসরাইলের হস্তগত হয় ।

২. প্রথম ইন্তিফাদা : ইসরাইলী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরবদের ক্রমাগত পরাজয় হলেও ইতোমধ্যে জেগে উঠে ফিলিস্তিনের জনগণ। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা জ্বলে উঠতে শুরু করে। ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনিদের জ্বলে উঠার সূত্র ধরে শুরু হয় প্রথম ইন্তিফাদা। এটি ইসরাইলীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের জনগণের সর্বাত্মক গণআন্দোলন। এটি ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়

৩. আসলো চুক্তি : সশস্ত্র আন্দোলনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখে। একই সাথে তারা আপোষ রফার মাধ্যমেও ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় আসলো চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইয়াসির
আরাফাত।

৪. দ্বিতীয় ইন্তিফাদা : এতো কিছুর পরও ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এসব ব্যর্থতা ফিলিস্তিনিদের আবারও জাগিয়ে তুলে। ২০০০ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্তিফাদা যা সর্বাত্মক আন্দোলনের মাঝে চলতে থাকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত । এর মধ্যে দিয়েই চলতে থাকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আন্দোলন ।

৫. বিভক্তি : ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনিরা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে একটি হলো ফাতাহ অপরটি হাস্যস। ফাতাহ কূটনৈতিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করলেও দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ব্যর্থতার দরুন হামাস শুধুমাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ফিলিস্তিনেদের অধিকার আদায় সম্ভব বলে বিশ্বাস করে। ২০০৬ সালে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হলেও তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয় ।

৬. জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক : বর্তমানে রাষ্ট্র হিসেবে নয় ভূখণ্ড হিসেবে ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করেছে। তবে গাজার চিত্র ভিন্ন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা এবং পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব ইসরাইল যেনে নিতে চায় না । অথচ ফিলিস্তিনের জনগণ চায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

৭. ফিলিস্তিনিদের বর্তমান দাবি : ফিলিস্তিনি জনগণের বর্তমান দাবি হচ্ছে ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের আগে ফিলিস্তিনিদের দখলে যতটুকু ভূমি ছিল সেই সীমারেখা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ এবং জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের আকাঙ্ক্ষী। যা সর্বশেষ যদিও UNESCO জাতিসংঘকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সদস্য পদ দিয়েছে।

৮. ইসরাইলের বর্তমান নীতি : ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে নীতিগতভাবে এর বিরোধিতাই ছিল আরবদের কূটনীতির মূল কথা। কিন্তু সম্প্রীতি ইসরাইল আমেরিকার মধ্যস্থতায় আরব রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে উঠে পড়ে লেগেছে। ইতোমধ্যে মিশর ও জর্ডান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি আরব আমিরাত ও বাহরাইনও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও এসব উদ্যোগকে ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে ফিলিস্তিন সংকট একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের ক্রমাগত আগ্রাসন বসতি স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, ফিলিস্তিনের আরব মিত্রগুলো একে একে সবাই যোগ দিচ্ছে ইসরাইল ব্লকে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় দেশ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই অবস্থায় ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান সুদূরপরাহত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram