nulibrary

১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির ধারণাসমূহ পর্যালোচনা কর ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : সভ্যতায় মিশরের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। শতাব্দী কাল ধরে মিশরীয় সভ্যতা গৌরবের সহিত নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখানে বিদেশি শাসনের হাতছানি দেয়। বিদেশীরা প্রায় শতাব্দীর পর শতাব্দী এখানে শাসন করেন। আর মিশরে যেসব বিদেশি শক্তি শাসন করেছে তাদের মধ্যে ব্রিটেন অন্যতম। ওয়াবী পাশার নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধকে প্রতিহত করতে গিয়ে তারা জয়লাভ করে মিশর দখল করে। এর ফলে মিশরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। আর আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯৩৬ সালে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়।

→ ইঙ্গ-মার্কিন চুক্তির পটভূমি : ১৯৩৬ সালে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তিতে বিভিন্ন ঘটনা কাজ করেছিল। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। নিম্নে ১৯৫৫ সালে ইঙ্গ-মার্কিন চুক্তির রচিত হওয়ার পটভূমি আলোচনা করা হলো :

১. ইতালীবাসীর ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন : ১৯৩৫ সালে আবিসিনিয়া ইতালির অভিযানের ফলে ইঙ্গ-মিশরীয় সম্পর্কের ধারা পরিবর্তন হয়। ব্রিটেন সুয়েজ খালের নিরাপত্তা নিয়ে বিব্রত হয় ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ মিশরে ইতালিয়দের ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন প্রবল হয় । এরূপ পরিস্থিতিতে মিশরের সাথে ব্রিটেন একটি চুক্তি সম্পাদন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ।

২. ওয়াফাদ পার্টি গঠন : ফুয়াদ স্বাধীন মিশরের রাজা হন এবং সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে ওয়াফাদ পার্টি গঠন করেন । ১৯২৪ সালে মিশরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ওয়াফদ পার্টি বিজয় লাভ করে। অতঃপর জগলুল পাশা মিশরের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯২৭ সালে জগলুল পাশার মৃত্যুর পর ফুয়াদ পাশা রাজা নির্বাচিত হন।

৩. ইতালির ইথিওপিয়া আক্রমণ : ফুয়াদ পাশার মৃত্যুর পর তার পুত্র ফারুক পাশা রাজা নির্বাচিত হন এসময় সাম্রাজ্যবাদী ইতালি মিশরের ইথিওপিয়া আক্রমণ করে। ফলে মিশরের রাজনীতি বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির ক্ষেত্র তৈরি হয় ৷

৪. ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তি : সুয়েজ খালের নিরাপত্তা নিয়ে ইঙ্গ- মিশরীয় সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনার জন্য নাহাদ পাশার নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ব্রিটিশদের পক্ষে মাইলস নেতৃত্ব প্রদান করেন । ১৯৩৬ সালের ২৬ আগস্ট লন্ডনের একটি বিশেষ বৈঠকে নাহাদ পাশার নেতৃত্বে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। এটি ইতিহাসে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির নামে পরিচিত।

৫. ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তির ধারা : ১৯৩৬ সালে ইংরেজ ও মিশরীয়দের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল তার ধারাসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো ।
৬. প্রতিনিধিত্ব : মিশর ব্রিটেনের এবং ব্রিটেন মিশরের প্রতিনিধিত্ব করবে যথাক্রমে ব্রিটেন ও মিশরের রাষ্ট্রদূত।
৭. সামরিক দখলের অবসান : এ চুক্তি ধারার মাধ্যমে মিশরে ব্রিটিশ সামরিক দখলের অবসান ঘোষণা করে। ফলে মিশরে সামরিক দখলের অবসান হয়।
৮. জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ লাভে সহায়তা : সদস্য পদ লাভ করার জন্য মিশর আবেদন করবে আর ব্রিটেন এ ব্যাপারে সহায়তা করবে।
৯. বৈদেশিক নীতি গ্রহণ নিষেধ : কোনো পক্ষই এমন কোনো বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করবে না যা তাদের মৈত্রী চুক্তি ও খসড়া চুক্তির বিপরীত হয় ।
১০. যুদ্ধ নিষেধ : দুপক্ষের কোনো পক্ষই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না। জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হলে অন্য পক্ষ কালবিলম্ব না করে মিত্র হিসেবে সাহায্য করবে।
১১. সুয়েজখালের নিরাপত্তা : মিশরে সামরিক বাহিনী সুয়েজ খালের আন্তর্জাতিক বিবেচনান্তে এটা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় না করা পর্যন্ত অত্র এলাকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রাখতে পারবে।
১২. চুক্তির মেয়াদ : এ চুক্তি ২০ বছর বহাল থাকবে। ২০ বছর পর ব্রিটিশ বাহিনীর উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
১৩. বিচার ও শুল্ক : সুয়েজখাল এলাকায় ব্রিটিশ বাহিনীর বিচার ও শুল্কের ব্যাপারে যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে- তা সরকারের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে স্থির হবে।
১৪. বিদেশীদের নিরাপত্তা প্রদান : মিশরে বসবাসরত বিদেশীদের জীবন ও সম্পদের রক্ষণভার মিশরীয় সরকারের উপর করা হবে ।
১৫. সেনাবাহিনী প্রত্যাবর্তন : সুদানে মিশরীয় বাহিনী প্রত্যাবর্তন করবে এবং সুদানে বাধাহীনভাবে মিশরীয় বসতি আইন সংযুক্ত করা হবে ।
১৬. মিশরীয় শাসন : ১৮৯৯ সালের ব্রিটিশ মিশরীয় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা সুদানে বহাল থাকবে, গভর্নর জেনারেলের ব্যাপক ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকবে ।
১৭. সম্পাদনের সময় সীমা : এ চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পাদিত হয়। তবে ২০ বছর পর তা আবার অবশ্য পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখা হয় ।
১৮. ব্রিটেন মিশর বিভিন্ন কাজে সহায়তা : মিশরে বিদেশী শক্তিসমূহতে বিশেষ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুযোগ লাভ করে তা অবসানের জন্য মিশরীয় প্রচেষ্টাকে ব্রিটেন সমর্থন করবে।
১৯. মিশরীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ : একটি ব্রিটিশ সামরিক মিশন মিশরীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। কোনো মিশরীয়দের প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হলে তা ব্রিটেনে পাঠানো হবে।
২০. বন্দর ব্যবহার : এ চুক্তি সম্পাদনের অন্তত ৮ বছর পর মিশরীয় নৌ বাহিনী আলেকজান্দ্রিয়া পোতাশ্রয় ব্যবহার করতে পারবে ।
২১. কূটনীতিবিদদের মর্যাদা : মিশরে নিযুক্ত অন্যান্য কূটনীতিবিদদের তুলনায় ব্রিটেনের কূটনীতিবিদরা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে।
২২. মিশর কি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেছিল কিনা : চুক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইঙ্গ-মিশরীয় দ্বারা মিশর পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। কারণ চুক্তির দ্বারা মিশরের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা হয়। তাছাড়া ব্রিটিশ এলাকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী নিযুক্ত ছিল। তাছাড়া আলেকজান্দ্রিয়া যুদ্ধ জাহাজ থাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন যা মিশরীয়দের অজানা ছিল না। তাছাড়া স্বাধীন দেশ বলতে এমন একটি দেশকে বুঝায়, যেখানে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। কিন্তু মিশরে সে রকম কোন ব্যবস্থা এ চুক্তির মাধ্যমে করা হয় নি। ব্রিটিশ সরকার মিশরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা প্রদান করলেও মিশরের বেশ কিছু কর্তৃত্ব নিজেদের যাতে রেখে দেবে। যেমন- মিশরের সুয়েজ খাল প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশদের হাতে রেখে দেয়। তাই বলা যায়, এটি মিশরীয় পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ ছিল না।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক মিশরের ইতিহাসে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৩৬ সালে চুক্তির মাধ্যমে মিশরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পথ পরিষ্কার না হলেও মিশর পূর্বাপেক্ষা বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। তারা জাতীয় মর্যাদার অধিকারী হয়। নিজ দেশে মিশরীয়রা যে হীনমন্যতায় ভুগছিল তার অবসান ঘটে। যা সমকালীন মিশরীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram