nulibrary

ফিলিস্তিনী সংকট সংক্ষেপে বর্ণনা কর । এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘের পদক্ষেপকে কি তুমি যথার্থ মনে কর?

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : বিশ শতাব্দীর শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এ ষড়যন্ত্র সফলতা লাভ করে এবং ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল নামক সন্ত্রাসবাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। ফিলিস্তিনিদের বুকে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা ছিল বিগত শতাব্দীর বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিষয়। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে শুরু এক দীর্ঘ সংকট। মধ্যপ্রাচ্যে দেখা দেয় অস্থিরতা। অস্থিরতা। সে কারণেই ইসরাইলকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া। নিম্নে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে ফিলিস্তিনে যে সংকট তৈরি হয় তার স্বরূপ এবং এ সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা তুলে ধরা হলো :

→ ফিলিস্তিন সংকট : নিম্নে ফিলিস্তিন সংকট সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সংকটের শুরু : উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের শুরু করে। জায়নবাদী আন্দোলনের মূল কথা ছিল ফিলিস্তিনে বিশেষত পূর্ব ইউরোপের নির্যাতিত ইহুদিরা জায়নবাদী আন্দোলন। ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্যে ইহুদিরা | তৎকালীন পরাশক্তিসমূহের সাথে লবিং শুরু করে। প্রথম ফে বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয় এবং আরব জাতীয়তাবাদী | | আন্দোলনকে পুজি করে ব্রিটিশরা ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব [ বিস্তার করে। সে সময় ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের স চূড়ান্ত বিজয় সাপেক্ষে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় যা ব্যালফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। | ফিলিস্তিন সংকটের সূচনা সেখান থেকেই ।

২. সংকটের বিস্তার : বিশ শতাব্দীর শুরু থেকে পূর্ব ব ইউরোপ বিশেষত পোল্যান্ড ও রাশিয়ার ইহুদিরা ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনে অভিভাসন নিতে শুরু করে। ১৯১৭ সালে ব্যালফোর ঘোষণার পরে এ অভিবাসন প্রক্রিয়া আরো জোরদার হয়। দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। ফলে ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘর্ষ তৈরি হয়। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু এবং জার্মানিতে ইহুদি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে ইহুদি মানবিক দিককে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে।

৩. সংকট : অবশেষে ১৯৪৮ সালে আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থনে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিল জাতিসংঘে পাস হয়। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ইসরাইল নামক স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি বৈধতা লাভ করে। জাতিসংঘের রেজুলেশনে ফিলিস্তিনে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও ইসরাইল মূলত সমগ্র ফিলিস্তিনের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফলে শুরু ফিলিস্তিন সংকট।

৪. সংকটের স্বরূপ ও পরিধি : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে আরব দেশগুলো এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। শুরু হয় প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধ। ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে মোট ৪টি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয় এবং প্রত্যেকটি যুদ্ধে আরবরা ইসরাইলের কাছে পরাজয় বরণ করে। ইসরাইলও ধীরে তার সীমানা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। ঘনীভূত হতে থাকে ফিলিস্তিন সংকট।

৫. সংকটের বর্তমান অবস্থা : বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরবদের একতায় ফাটল লক্ষ করা যায়। ১৯৭৩ সালে মিশর ইসরাইল স্বীকৃতি প্রদান করে। পরবর্তীতে। জর্ডান ও মিশরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। ১৯৯৩ সালে আসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফলে এ সময়টাতে ইসরাইলের কূটনৈতিক বিজয় লাভ করে। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় মুসলিম দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। জাতিসংঘের ভূমিকা ও তার যথার্থতা : নিম্নে জাতিসংঘের ভূমিকা ও তার যথার্থতা আলোচনা করা হলো-

১. জাতিসংঘের আমেরিকা ঘেঁষা নীতি : ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর সদর দপ্তর অবস্থিত নিউইয়র্কে। জাতিসংঘের সিংহভাগ চাঁদা প্রদান করে আমেরিকা । ফলে জাতিসংঘের সকল নীতি আমেরিকার স্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে আমেরিকায় সংরক্ষক। প্রত্যক্ষ সাহায্যে। ইসরাইল হলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার স্বার্থের ফলে আমেরিকা যেহেতু ইসরাইলের পক্ষে অবলম্বনকারী রাষ্ট্র, সেহেতু জাতিসংঘ কখনো ইসরাইলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দূর অবস্থান নিতে পারে না ।

২. ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও জাতিসংঘের ভূমিকা : ব্যালফোর ঘোষণা, আলিয়া, ফিলিস্তিনি ইহুদি সংঘাত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ইহুদি নিধন এবং ফিলিস্তিনে ব্যাপক ইসরাইলী অভিভাসন সমস্যা সমাধানকল্পে অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি ব্যর্থ হলে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে ইসরাইল ইস্যুটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উঠে এবং ১৯৪৮ সালের মে মাসে বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে জাতিসংঘে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিল পাস হয়। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

৩. ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের যে রেজুলেশন পাস হয় তাতেই সে অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের জন্যও একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে হলেও জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যদিও সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে তথাপি সেটা স্বাধনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থনের সমকক্ষ নয় ।

৪. জাতিসংঘের নতজানুনীতি : ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে জাতিসংঘ কখনো শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। এক্ষেত্রে তারা আমেরিকা ইসরাইলের সামনে নতজানু হয়ে থেকেছে। ইসরাইল ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, জমি, জমা দখল করে অন্যায়ভাবে বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখলেও জাতিসংঘ কখনো এর প্রতিবাদ করেনি এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেনি। ৫. আরব ইসরাইল যুদ্ধ ও জাতিসংঘ : সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এবং আরবদের আপত্তি সত্ত্বেও জাতিসংঘের ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া ছিল একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩ সালে মোট ৪টি আরব ইসরাইল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ইসরাইল অন্যায়ভাবে অনেক আরব ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। তবুও জাতিসংঘ ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইসরাইল রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলিকে জাতিসংঘ পিছন থেকে সমর্থন দিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত ইসরাইল ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সেখানকার মানুষের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করছে নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। অবরোধ আরোপ করছে কিন্তু এসব বিষয়ে জাতিসংঘ নির্বিকার। ফিলিস্তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা প্রদান এবং ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে সে অঞ্চলের মানুষদের রক্ষার জন্য জাতিসংঘ কখনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায় যে, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে জাতিসংঘ পুরোপুরি ব্যর্থ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram