nulibrary

১৯৩০ সালের ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর বিবরণ দাও ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ১৯২০ সালে লীগ অব নেশনসের অনুমোদনক্রমে ব্রিটেন অটোমান সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত ইরাকে তার ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ইরাকিরা লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম শেষে অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালের ৩০ জুন ইরাক সরকারের সাথে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা ইতিহাসে ইঙ্গ ইরাকি চুক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। এই চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল ব্রিটেন কর্তৃক ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং ইরাকের লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়ে সুপারিশকরণ। যদিও এই চুক্তির মাধ্যমে ইরাকের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল কিন্তু কূটনৈতিক মার প্যাচে ব্রিটিশ সরকার ইরাকের সার্বভৌমত্ব নিজেদের হাতে কুক্ষিগত ফেলেছিল। ফলে চুক্তির অল্প কিছুদিন পরই ইরাকি জাতীয়তাবাদীরা এই চুক্তির প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় আন্দোলনে নামে ।

→ ১৯৩০ সালের ইঈ-ইরাকি চুক্তির ধারা বা বৈশিষ্ট্য ইরাকের স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৩০ সালের ৩০ জুন সম্পাদিত ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল। নিম্নে এই চুক্তির প্রধান প্রধান ধারা বা বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি : ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার ফ্রান্সিস হ্যামফ্রিস এবং ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাইদের মধ্যে ১৯৩০ সালের ৩০ জুন ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন প্রথমবারের মতো ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতির দান করে। যদিও তখনো ইরাকে ম্যান্ডেটরি শাসন অক্ষুণ্ণ ছিল তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার সুকৌশলে ইরাকের সার্বভৌমত্বের অধিকার ও কুক্ষিগত করে রাখে ।

২. পররাষ্ট্রনীতি : ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তির ১নং ধারায় বলা হয় যে, ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। তাছাড়া দু'পক্ষের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে ব্রিটেনের সহায়তায় ইরাক তার পরারাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। তাছাড়া দু'পক্ষ এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেনা যার কারণে অন্যপক্ষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

৩. কূটনৈতিক বিষয়সমূহ : এই চুক্তির ২নং ধারায় উল্লেখ আছে ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পরিবর্তে একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হবে। যিনি ইরাকে নিযুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূত অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান হবেন। আর ইরাক ও তার রাষ্ট্রদূত ব্রিটেনে প্রেরণ করতে পারবে।

৪. পারস্পরিক সহযোগিতা : এই চুক্তির ৩নং ধারায় উল্লেখ ছিল যদি কোনো পক্ষ তৃতীয় কোনো দেশ দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত হয় অথবা তৃতীয় কোনো দেশে আক্রমণ করে তাহলে দুই দেশ পরস্পর সৈন্য অর্থ ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াবে। এই ধারাটি ছিল ইরাকি স্বার্থ পরিপন্থি কারণ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া বা তৃতীয় কোনো দেশে আক্রমণের সম্ভাবনা ব্রিটেনেরই ছিল বেশি।

৫. প্রতিরক্ষায় ব্রিটিশ কর্তৃত্ব : এই চুক্তির ৪নং ধারায় বলা হয় যদি কোনো যুদ্ধ হয় বা ইরাক আক্রান্ত হয় তবে ব্রিটেন তার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেবে। এক্ষেত্রে ইরাক তার জল, স্থল, রেলপথ ও বিমানবন্দর ব্রিটেনকে ব্যবহারের অধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমে মূলত ব্রিটেন কূটনৈতিক কৌশলে ইরাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন করে ফেলে ।

৬. ঘাঁটি ও ট্রানজিট অধিকার : এই চুক্তি সবচেয়ে অবমাননাকর ধারা ছিল । ৫নং ধারা এই ধারা মোতাবেক ব্রিটেন ইরাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য বসরার নিকটবর্তী শুয়াইবার এবং ইউফ্রেটিসের পশ্চিমে অবস্থিত হাবাবানিয়া স্থানে ব্রিটিশ বিমান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ইজারা লাভ করে। তাছাড়া চুক্তিতে বলা হয় এই দুই অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও অবস্থান করতে পারবে। পাশাপাশি ব্রিটেন ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর মসুদ ও হিনাইদিতে অনধিক বছরের জন্য সৈন্য রাখার অধিকার লাভ করে ।

৭. সামরিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নির্ভরশীলতা : চুক্তির ৬ নং ধারা | মোতাবেক সামরিক প্রশিক্ষণ ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বিষয়ে ইরাককে পুরোপুরিভাবে ব্রিটেনের উপর নির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল। এতে বলা হয়, ইরাকি সৈন্যরা যদি উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে চায় তবে শুধু ব্রিটেনে যেতে পারবে। আর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করতে চাইলে কেবল ব্রিটেনের কাছ থেকেই ক্রয় করতে হবে। তাছাড়া ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যে সকল অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেন ইরাকি সৈন্যরা সে সকল অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না ।

৮. বিরোধ নিষ্পত্তি : এই চুক্তির ১০ নং ধারা মোতাবেক চুক্তির কোনো ধারা নিয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয় তবে তা সমাধানের জন্য দুই দেশ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবে। আর তারপরও সমাধানে আসতে ব্যর্থ হলে তখন লীগ অব নেশনসের সহায়তায় উক্ত মতবিরোধের সমাধান করা হবে।

৯. ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান : ১৯৩০ সালের এই ইঙ্গ- ইরাকি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা এটি। এতে বলা হয় যে, ব্রিটেন ইরাকের লীগ অব নেশনসের সদস্য পদ প্রাপ্তির জন্য সুপারিশ করবে আর যেদিন ইরাক সুপারিশ লাভ করবে সেইদিন থেকে ইরাকে ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান ঘটবে।

১০. চুক্তির কার্যকারিতা ও মেয়াদকাল : এই চুক্তির ১১ নং ধারায় বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব উভয় পক্ষই চুক্তিটি অনুমোদন করবে আর যেদিন লীগ অব নেশনস ইরাকের সদস্যপদ প্রদান করবে, সেদিন থেকে চুক্তিটি কার্যকর হবে। চুক্তিটি কার্যকর থেকে এর মেয়াদকাল ২৪ বছর। তবে দুই পক্ষ চাইলে ২০ বছর পর নতুন একটি চুক্তি করবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯২০ সালে ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইরাকি জাতীয়তাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে থাকে। দীর্ঘ আন্দোলন শেষে ১৯৩০ সালে ইঙ্গ- ইরাক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে ব্রিটেন সরকার ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতিদান এবং লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ প্রাপ্তি বিষয়ে সুপারিশের অঙ্গীকার করে। যদিও সামরিক বিবিন্ন বিষয়ে চুক্তির বলে ব্রিটিশ সরকার ইরাককে তাদের উপর নির্ভরশীল করে ফেলে।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram