nulibrary

১৭৯৩ সালের সনদ আইনের পটভূমি ও ধারাসমূহ আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের পটভূমি বর্ণনা কর।

ভূমিকা : ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। এতে করে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত হয় । একই সাথে তারা রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় শুরু করে। তবে কোম্পানির কর্মচারীরা এসময় ব্যাপকহারে দুর্নীতি ও কুশাসন শুরু করে দেয়। এতে করে ব্রিটিশ সরকার তার রাজনৈতিক স্বার্থ ভালোভাবে পূরণ করতে পারছে না। যার জন্য ১৭৭২ সালে নিজ হাতে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে। তবুও কর্মচারীদের দুর্নীতি ও কুশাসন কমেনি। তাই ব্রিটিশ সরকারে পুরাতন নীতির পরিবর্তন করে। অবশেষে ভারতের ইতিহাসে ১৭৯৩ সালে। ব্রিটিশ সরকার প্রথম সনদ আইন প্রবর্তন করেন।

→ ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনের প্রেক্ষাপট : বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিওয়ানি ক্ষমতা কোম্পানি নিলেও সরকার তেমন নিয়োগ লাভবান হয়নি। এজন্য ১৭৭৩ সালে কোম্পানিকে ২০ বছরের জন্য রেগুলেটিং অ্যাক্ট কোম্পানিকে বাণিজ্য সংক্রান্ত ধারণা নিয়োে দেওয়া হয়। তাই পার্লামেন্টে কোম্পানির সকল কিছু নবায়নের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তখন ভারতবর্ষের জন্য কোম্পানিকে চার্টার আইন প্রদান করা হয়। ১৭৭২ খ্রি. কোম্পানি নিজ হাতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনভার গ্রহণ করলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন না ঘটায় ব্রিটিশ সরকার তার কোম্পানির নীতির পরিবর্তন ঘটায়। আর এ সূত্র ধরে কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট | Bo ১৭৯৩ সালে যে সনদ আইন প্রবর্তন করেন তাই ভারতের ইতিহাসে প্রথম সনদ আইন।

→ ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনের বৈশিষ্ট্য/ধারাগুলো : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারা প্রবর্তন করা হয়। যা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাস হয়। নিম্নে ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনের ধ
১. গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের ক্ষমতা : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরদেরকে তাদের পরিষদের মতামত অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ গভর্নর জেনারেল পরিষদের উপরে কথা বলতে পারবে। বড়লাট লর্ড কর্নওয়ালিশকে
১৭৮৬ সালের আইনে এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয় ।

২. গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি : গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় ১৭৯৩ সালের আইনে বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্টির এর সাথে গভর্নর জেনারেলকে মাদ্রাজ ও বোম্বাই পরিষদে সভাপতিত্ব করার অধিকার দেওয়া হয়। কোম্পানির যেকোনো কর্মচারীর উপর গভর্নর জেনারেল আদেশ জারি করতে পারবে। গভর্নর জেনারেলকে প্রেসিডেন্টির সব বিশেষ কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়।

৩. সহ-সভাপতি নিয়োগ : গভর্নর জেনারেল অনেক সময় বাংলা প্রেসিডেন্সির বাহিরে গেলে তার অনুপস্থিতিতে একজন সহ-সভাপতি নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়। আর এই সহ- সভাপতি গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করবে। গভর্নর জেনারেল তার পরিষদ থেকে সহ-সভাপতি নিয়োগ করতে পারবেন।

৪. ডাইরেক্টর সভার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা : এই আইনে বলা হয়েছে যে, ডাইরেক্টর সভার অনুমতি ছাড়া গভর্নর জেনারেল, গভর্নর, প্রধান সেনাপতি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ভারতের বাহিরে যেতে পারবে না। একই সাথে তারা যখন ভারতের বাইরে থাকবেন তখন তাদের জন্য অনুপস্থিত ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। কোনো কর্মকর্তা অনুমতি ছাড়া ভারতের বাহিরে গেলে তিনি পদচ্যুত হবেন ।

৫. বিচারক নিয়োগ : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে বিকার নিয়োগ করতে বলা হয়। কেননা প্রেসিডেন্সিগুলো শান্তি বজায় রাখতে গভর্নর জেনারেল ও পরিষদকে ইংল্যান্ডে রাজার নামে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী বা ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে থেকে বিচারক নিয়োগ করতে হবে ।

৬. Board of Control-এর সদস্যদের বেতন নির্ধারণ : Board of Control-এর সদস্যদের কোনো বেতন দেওয়া হতো না। ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে Board of Control-এর সদস্যদের জন্য বেতন নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদেরকে বেতন দেওয়া হবে ভারতের রাজস্ব থেকে। ১৯১৯ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা টিকে ছিল। বেতন নির্ধারণ করাতে Board of Control এর সদস্যদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায় ।

৭. অর্থসংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে কোম্পানির অর্থসংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ১২ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৪১ পাউন্ড কোম্পানির রাজস্ব উদ্বৃত্ত ধরা হয়। এই রাজস্বের মধ্যে কোম্পানির ঋণ পরিশোধের জন্য ৫ লক্ষ পাউন্ড দেওয়া হয়। এর সাথে ৫ লক্ষ পাউন্ড ব্যবসায়ের লভ্যাংশ হিসেবে কোম্পানিকে দেওয়া হয়।

৮. ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া : ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হয় ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যা ব্যবসায়ীদের অনুকূলে ছিল না । তাই তারা শেষ পর্যন্ত এই সুযোগ গ্রহণে উৎসাহ দেখায়নি। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তেমন সুবিধা লাভ করেনি।

৯. কর্মচারীদের পদমর্যাদা নির্ধারণ ও নিয়োগ পদ্ধতি : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে কোম্পানির সিনিয়র লোকদের বেশি ে পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের ভিত্তিতে উচ্চপদে প্রতিশ্রুতির ব্যবস্থা করা হবে। আর ে কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে কোনো প্রেসিডেন্সিতে পদ খালি হলে। এতে করে শূন্য পদ পূরণ হয়ে যাবে।

মূল্যায়ন : ১৭৯৩ সালের চার্টার আইনে আগের অনেক আইন বাতিল করে নতুন আইন চালু করা হয়। এ প্রসঙ্গে A.B. Keith বলেছেন, "It was essentially a consolidating measure andits altercation stnck at points of detail.' Dr. Banerjee বলেছেন, "No great consitutional change was introduced by this statute of consolidaration." এই আইনের কিছু সমালোচনা করা হয়। যেমন ব্যবসায়ীদেরকে সুযোগ | প্রদান করার প্রয়োজন ছিল না।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ইস্ট ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৩ সালের চার্টার আইন প্রণয়ন করেন। যদিও এটি সব উদ্দেশ্যে পূরণ করতে পারেনি। তবুও অনেকাংশেই এই আইনের ধারাগুলো সফল হয়েছিল। যা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অন্যতম একটি সফলতা। এটি ছিল ব্রিশি সরকারের অন্যতম একটি পদক্ষেপ। যার জন্য কোম্পানির দুর্নীতি ও কুশাসন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল |

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram