nulibrary

১৮৫৩ সালের সনদ আইনের প্রধান ধারাগুলো উল্লেখপূর্বক এই আইনের সাংবিধানিক গুরুত্ব নির্ণয় কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন হলো ব্রিটিশ সরকারের সাথে কোম্পানির চুক্তি। কোম্পানি কর্মচারীদের দুর্নীতি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম ১৭৯৩ সালে সনদ আইন পাস হয়। ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের ২০ বছর পূর্ত হলে ১৮১৩ সনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পুনরায় সনদ আইনের দাবি উঠে। ফলে ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২য় সনদ আইন পাস হয় ।

→ ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ : নিম্নে ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কোম্পানির ক্ষমতা নির্দিষ্টকরণ : কোম্পানির ক্ষমতা ও অধিকার আগের মতোই রাখা হয় ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে। তবে এই সনদটি ২০ বছরের জন্য মঞ্জুর করা হয়নি। কোম্পানিকে ভারতীয় সাম্রাজ্যে শাসন করার অধিকার দেওয়া হয় । সনদে ইংল্যান্ডের রানি ও তার উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে । কোম্পানি শাসন ভারতে ততদিন বহাল থাকবে যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্টে অন্য ব্যবস্থা না হয় ।

২. বেতন সংক্রান্ত : এই আইনে বলা হয়েছে যে, Board of control-এর সদস্যদের এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিবে কোম্পানি। রাজা কর্তৃক তাদের বেতন নির্ধারিত হবে। আইনে আরো বলা হয় রাষ্ট্র সচিবের বেতনের চেয়ে বোর্ড সভাপতির বেতন কম হবে না। পূর্বের বেতন সংক্রান্ত সব আইন বাতিল করা হয় ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ।

৩. ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস : পূর্বে ডাইরেক্টর সভা কোম্পনির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ করবে। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। Board of control-এর মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। লর্ড মেকলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে এই কাজ সম্পাদনের জন্য ।

৪. লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদ সৃষ্টি : বাংলার গভর্নরের দায়িত্ব পূর্বে ছিল গভর্নর জেনারেলের উপরে। এতে করে গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তাই গভর্নর হেনারেলের উপর কাজের চাপ কমাতে তাকে বাংলার গভর্নর এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যার জন্য গভর্নর জেনারেলের জায়গায় নতুন পদ লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদ সৃষ্টি করা হয়।

৫. গভর্নর জেনারেলের পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ১৮৩৩ সালের সনদে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩ জন। ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৪ জন সদস্য করা হয় শাসন পরিষদে। এর সাথে গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদকে স্থায়ী করা হয় ।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্যাবলি পৃথক : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে প্রথমবারের মতো গভর্নর জেনারেলের পরিষদের আইন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পৃথক করা হয়। গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদ গঠিত হয় ১২ জন সদস্য নিয়ে। ৭ জন উপস্থিত হলে কাজ করা যাবে। গভর্নর জেনারেল পরিষদের বিলে সম্মতি প্রদান না করলে তা আইনে পরিণত হতো না। এইগুলো আইন হতো তার অনুমতিতে।

৭. আইন পরিষদের কার্যাবলি : এই আইনে আইন পরিষদের কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতোই ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। পরিষদের সদস্যদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা ও সরকারের নীতির উপর আলোচনা করা ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। আইন পরিষদের পরামর্শ বড়লাট ইচ্ছা করলে গ্রহণ বা বর্জন করতে পারতো।

৮. নতুন প্রদেশ গঠন : ডাইরেক্টর সভাকে নতুন প্রদেশ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ডাইরেক্টর সভা নতুন যে প্রদেশ গঠন করবে এগুলোর সীমানা ও নির্ধারণ করবে। এছাড়া দরকার হলে নতুন প্রদেশগুলোর সীমারেখা পরিবর্তন করা যাবে। ডাইরেক্টর সভা ১৮৫৯ সালে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে পাঞ্জাব প্রদেশ গঠন করে।

৯. আইন কমিশন গঠন : ইংল্যান্ডের রাজাকে বলা হয় একটি পরিষদ গঠন করতে। এই আইন কমিশন ভারতীয় আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইনে খসড়া প্রস্তুত করবে। একই সাথে কী আইন প্রণয়ন করা যায় তার সুপারিশ প্রদান করবে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধি আইনে পরিণত হয় ।

১৮৫৩ সালের সনদ আইনের সাংবিধানিক গুরুত্ব : নিচে ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের সাংবিধানিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাবসান : ১৭৭৩ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনের সনদ ২০ বছর করে নবায়ন করলেও ১৮৫৩ সালে এসে কোম্পানির শাসনের সনদ নবায়ন করেনি, বরং ব্রিটিশ ভারতকে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে রেখে কোম্পানিকে শাসন করার অধিকার দেওয়া হয়। যেখানে কোনো সীমারেখা ছিল না। বলা হয় পার্লামেন্টের পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোম্পানির শাসন বহাল থাকবে।

২. ভারতে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার প্রচলন : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানি শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে পার্লামেন্টারি শাসন ও আইন ব্যবস্থার প্রচলনের ব্যবস্থা করেন। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় ডাইরেক্টর সভার সদস্য কমিয়ে ১৮ জন করেন এবং এর মধ্যে ৬ জন রাজা কর্তৃক মনোনয়নের ব্যবস্থা করা হয় ৷

৩. ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা : এ আইনের মাধ্যমে কোম্পানিতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। এ সময় লোক নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয় বোর্ড অব কন্ট্রোলের অধীনে। সরকারি চাকরিতে লোক নিয়োগের ক্ষমতা ও ডাইরেক্টর সভার কাছ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। যা এ সভার সার্বিক ক্ষমতাকে খর্ব করে ।

৪. আইন কমিশন গঠন : ১৮৫৩ সালের আইন অনুযায়ী . ব্রিটেনে আইন কমিশন গঠন করা হয়। ভারতের আইন কমিশনের সুপারিশ, অভিযোগ, তথ্য বিবেচনা ইত্যাদির জন্য এ কমিশন গঠিত হয়। যা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম পদক্ষেপ।
নিয়ন্ত্রণকারী পরিষদের সভাপতিকে ব্রিটেন এর রাষ্ট্রীয় সচিব এর ৫. বোর্ড সভাপতির মর্যাদা বৃদ্ধি : এ আইনের মাধ্যমে সমমর্যাদা ও ক্ষমতা প্রদান করা হয়। যার ফলে ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায় ।

৬. প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটে। যার সূচনা হয় বাংলায় একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগের মধ্য দিয়ে। এর ফলে বাংলার উপর গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং বাংলাকে লেফটেন্যান্ট গভর্নর এর নিয়ন্ত্রণে প্রদান করা হয়। এর ফলে বাংলার জন্য পৃথক স্থায়ী সরকার গঠিত হয়।

৭. শাসন বিভাগে ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্বের সূচনা : ১৮৫৩ সালের আইনে ‘স্থানীয় প্রতিনিধিত্বে নীতি' গ্রহণ করা হয় । যার মাধ্যমে ভারতের লোকদেরকে স্থানীয় প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া পরিকল্পনা গৃহীত হয়। গভর্নর জেনারেলের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন পরিষদে প্রদেশসমূহের বিচারপতি, কর্জ ও প্রদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের স্থান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অর্থাৎ এ আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেলের আইন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে পৃথকীকরণ করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি করা হয়।

৮. যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভারতীয়দের সরকারি চাকরি প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। অর্থাৎ যোগ্যতার ভিত্তিতে সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সম্প্রদায়ের। লোকেরা সরকারি চাকরি পাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও এর বাস্তবায়ন জোরালোভাবে ঘটেনি তবুও এর গুরুত্ব অনেক।

উপসংহার : সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৮৫৩ সালের সনদ আইন এর মধ্য দিয়ে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চূড়ান্ত বিলোপ ঘটে। যা ১৮৫৮ সালে আইনের মাধ্যমে স্বীকৃতি লাভ করে ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram