ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট (১৮৭৮) কী?

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে ভারতের নানা ধরনের উন্নয়ন ও কল্যাণের কথা বললেও তা করা হয়নি, বরং নানা ধরনের অনিয়ম, অত্যাচার, শোষণ, ঘৃণা ও বৈষম্য শুরু হয়। এসব বিষয় যখন ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারিত হতে থাকে তখন ব্রিটিশ সরকার ভারতে সংবাদ পত্র আইন বা Vernacular Press Act নামে একটি আইন পাস করে।
ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট, ১৮৭৮ : ১৮৫৮ সালে ভারতের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা, বৈষম্যমূলক আচরণ, শোষণ ইত্যাদি ধীরে ধীরে প্রকাশ। হতে থাকে। রেল, স্টিমার, হোটেল, খেলার মাঠ, ক্লাব, রাজপথ, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে ভারতীয় এবং ইংরেজদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রকাশ ঘটে। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বিবেচনায় ভারতীয়রা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপমান ও লাঞ্ছনার স্বীকার হতে থাকে। পাশাপাশি ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের বাজারে পরিণত করা হয় এবং ভারতীয় কাঁচামাল ব্রিটেনে পাচার করা শুরু হয়। এছাড়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হয়। আর এ বৈষম্য পুঞ্জীভূত হয়ে ধীরে ধীরে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, নাটক ইত্যাদিতে প্রকাশিত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট পাস করেন। বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচার প্রচারণা রোধের জন্য ব্রিটিশ সরকার ব্রিটিশ সরকারের অনিয়ম, অত্যাচার, বৈষম্য ও শোষণ যখন চরম পর্যায়ে চলে আসে তখন বিভিন্ন সংবাদপত্র, যেমন- সোমপ্রকাশ, সুলভ সমাচার হালিশহর পত্রিকা, ভারত মিহির, অমৃতবাজার পত্রিকা, ঢাকা প্রকাশ ইত্যাদিতে তা প্রকাশিত হতে থাকে। তাই ভাইসরয় লর্ড রিপন ১৮৭৮ সালের ১৪ মার্চ ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট পাস করান। এর মাধ্যমে পত্রিকাগুলোতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণাকে রাজদ্রোহ বলে অভিযোগ করা হয় । লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রকে কুচক্রী বাজে লেখকদের প্রকাশ্য রাজদ্রোহী প্রচারণা” বলে অভিযুক্ত করেন। এ আইনে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেমন-

১. সরকার বিরোধ কোনোপ্রকার খবর বা লেখনী সংবাদপত্রে আওতায় আনা হবে। প্রকাশ করা যাবে না। এর জন্য সম্পাদককে ও আইনের মোকদ্দমা ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হবে ।
২. বিদ্রোহাত্মক ও সরকারি বিরোধী লেখার অপরাধে মামলা দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে বুদ্ধিজীবী মহল এর তীব্র সমালোচনা করে এবং এ আইনকে ‘শ্বাসরোধ আইন' বলে অবহিত করে। এ আইনের ফলে বাংলায় প্রকাশিত ‘অমৃতবাজার পত্রিকা' ইংরেজিতে প্রকাশিত হতে থাকে এবং দ্বারকানাথ বিদ্যাকৃষণ ‘সোমপ্রকাশ' পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। ‘সন্ধ্যা' পত্রিকার সম্পাদক এ আইন লঙ্ঘন করলে তাকে বিচারের আওতায় নিলে তিনি নির্ভীক কণ্ঠে বলেন যে, ভারতীয় অভিযুক্তদের বিচারের এক্তিয়ার বিদেশি বিচারকদের নেই।

উপসংহার : সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে,ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট প্রেস অ্যাক্ট লর্ড রিপন-এর সময়ে সবচেয়ে সমালোচিত একটি আইন। যার মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয় এবং বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়। সকল সম্প্রদায়ের লোক এ আইনের প্রতি তীব্র নিন্দা করেন এবং এ আইনকে অবৈধ ও অযৌক্তিক বলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি চলতে থাকে। তাই শেষ পর্যায়ে লর্ড রিপন এ আইনকে প্রত্যাহার করে নেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram