nulibrary

১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবসমূহ কী কী?

Reading Time: 1 minute

অথবা, ১৯৪৬ সালের কেবিনেট মিশন সাংবিধানিক ব্যবস্থার জন্য যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল তা বর্ণনা কর ।

ভূমিকা ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতীয়রা তাদের প্রতি অসন্তোষ ছিল এবং প্রথম থেকেই নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। পরবর্তীতে এ আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে তখন ব্রিটিশ সরকার এর স্থায়ী সমাধানের ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন। এ মিশন ভারতে এসে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাথে বৈঠক করেন তবে তারা ঐক্যমত্যে পৌছাতে পারেননি। যার কারণে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানিক রূপরেখা সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। পরবর্তীতে এ মিশন নিজেরাই এর সমাধানের জন্য পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এটাই কেবিনেট মিশন বা মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা বলে পরিচিত।

→ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবসমূহ : এটি ছিল ভারতের সাংবিধানিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরিকল্পনা। তাদের এ পরিকল্পনার ধারা বা প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপ

১. ভারতীয় ইউনিয়ন : ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে ভারতবর্ষে একটি ভারতীয় ইউনিয়ন গঠিত হবে বলে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনাতে উল্লেখ করা হয়। যেই ইউনিয়নে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের উপর দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনার ভার অর্পিত থাকবে। সেইসাথে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য অর্থসংগ্রহের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। আর এই ভারতীয় ইউনিয়ন গঠন ছিল মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রধান একটা প্রস্তাব ।

২. দেশীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় বলা হয় যে, দেশরক্ষা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক ছাড়া বাকি বিষয়গুলো প্রাদেশিক ও দেশীয় রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকবে ।

৩. গ্রুপি ব্যবস্থা : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় রাজ্যগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ‘ক’ গ্রুপে মধ্যপ্রদেশ, যুক্তপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, মাদ্রাজ ও মুম্বাই এ ৬টি প্রদেশ ও উত্তর সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু, পাঞ্জাব এ তিনটি প্রদেশ মিলে ‘খ’ গ্রুপ এবং বাংলা ও আসাম মিলে গ' গ্রুপ করা হয় এবং প্রত্যেকটি গ্রুপ স্বতন্ত্র সরকার গঠন ও সংবিধান রচনা করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।

৪. ভারতীয় ইউনিয়নের আইন ও শাসন বিভাগ : ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশসমূহের ও দেশীয় রাজ্যসমূহের সমন্বয়ে যে ইউনিয়ন গঠন হবে বলে উল্লেখ করা হয় সেখানে উক্ত ইউনিয়নের আইন ও শাসন বিভাগ থাকবে এবং যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

৫. সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ : আইনসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত গণপরিষদের সদস্য বা প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ভারতীয় ইউনিয়ন গণপরিষদ বা সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ গঠিত হবে। আর এ পরিষদই ভারতীয় ইউনিয়নের সংবিধান রচনা করবে।

৬. গ্রুপ সরকারের বৈশিষ্ট্য : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় যে গ্রুপিং ব্যবস্থা করা হয় তার প্রত্যেক গ্রুপে একটি আইনসভা ও শাসন বিভাগ থাকবে এবং শাসনতন্ত্রে কি কি বিষয় থাকবে তা নির্ধারণ করা হয়।

৭. দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা : ভারতীয় ইউনিয়ন গঠিত হওয়ার পর দেশীয় রাজ্যের উপর ব্রিটিশদের ক্ষমতার অবসান তথা দেশীয় রাজ্যের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায় এবং প্রত্যেক রাজ্য স্বাধীনভাবে চলতে শুরু করে।

৮. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : ভারতের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গভর্নর জেনারেল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয় যা সংবিধান রচনা পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

৯. রাজ্যগুলোর ক্ষমতা : মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় গঠিত গ্রুপিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গঠিত প্রদেশগুলো আইনসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক যেকোনো প্রদেশ তার গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। যেখানে তাদের স্বাধীনতা দেয়া হয়।

১০. গণপরিষদ গঠন : গণপরিষদ গঠন পদ্ধতির ব্যাপারে জনসংখ্যানীতি গ্রহণ করে এ পরিকল্পনা গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের জনগণ পরিষদ গঠনের গঠনের ব্যবস্থা করা হয় ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় ভারতীয়দের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করে। এ পরিকল্পনায় বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি হিন্দু ও মুসলিম লীগের পারস্পরিক আস্থাহীনতা প্রভৃতির কারণে শেষ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং ভারত বিভক্তির পথ সুগম হয়। যার কারণে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ছিল ভারতের ইতিহাসে অনন্য অধ্যায় ৷

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram