nulibrary

১৯৪২ সালের “ক্রিপস মিশন” সম্পর্কে আলোচনা কর। ক্রিপশন মিশন ব্যর্থ হয়েছিল কেন?

Reading Time: 1 minute

অথবা, ক্রিপস মিশন কাকে বলে? ক্রিপস মিশন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

ভূমিকা : ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল ক্রিপস মিশন। ১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার আলোচনার প্রেরণ করেন। যা তার নামানুসারে ক্রিপস মিশন নামে পরিচয়।

ক্রিপস মিশন : ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস আটটি প্রদেশে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং মন্ত্রিসভা গঠন করে। তারা শাসনের নামে মুসলমানদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক মুসলমানদের অধিকারের কথা বিবেচনা করে ভারতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্ত াব দেন। অন্যদিকে, ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণা করে জাপান কর্তৃক পার্ল হারবার আক্রমণ ব্রিটেনকে স্ত ম্ভিত করে তোলে । এর ফলে ব্রিটেন ভারতীয়দের সাহায্য কামনা করে। আমেরিকা ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এমতাবস্থায় ভারতীয়দের অসহোযোগিতা ব্রিটিশদের চরম বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করে। অন্যদিকে, আমেরিকার চাপ ও ভারতীয়দের সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ব্রিটিশ সরকার স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে একটি পরিকল্পনা সংবলিত প্রস্তাব দিয়ে ভারতে প্রেরণ করেন। অতঃপর ১৯৪২ সালের ২৯ মার্চ স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতীয়দের নিকট ঐ প্রস্তাবটি প্রেরণ করেন। নিম্নে ক্রিপস মিশনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আলোচনা করা হলো-

১. ১৯৪২ সালে ক্রিপস মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল ভারতের ডোমিনিয়নের মর্যাদা দান ।

২. এ প্রস্তাবে আরও বলা হয় ভারবর্ষে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন গঠন করার কথা বলা হয় এবং ভারতবর্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়নে থাকবে কী থাকবে না এটিই তারাই নির্ধারণ করবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন ইচ্ছা করলে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ত্যাগ করতে পারবে।

৩. ১৯৪২ সালের ক্রিপস প্রস্তাবে আরও বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভারতের সাধারণ জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ন একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হবে। সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হবে। প্রাদেশিক নির্বাচিত সদস্য ও দেশীয় রাজ্যসমূহের প্রতিনিধিদের দ্বারা গণপরিষদ গঠন করা হবে।

→ ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণ : নিম্নে ক্রিপস মিশনের ব্যথতার কারণগুলো আলোচনা করা হলো :

১. ব্রিটিশদের কপটতাপূর্ণ মনোভাব : এ মিশন ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল ব্রিটিশদের কপটতাপূর্ণ মনোভাব। ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়ার কথা বললেও নির্দিষ্ট কোনো সময়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দান করা ব্রিটিশ সরকারের অভিমত ছিল না। সত্যিকার অর্থে ভারতবাসীকে একটি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে পাওয়া মুখ্য লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের।

২. কংগ্রেস কর্তৃক ক্রিপস মিশন প্রত্যাখ্যান : ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ক্রিপস প্রস্তাবের শুরু থেকেই এই মিশনের বিরোধিতা করে। তারা বুঝতে পারে ক্রিপস মিশন মূলত ব্রিটিশদের তৈরি করা একটি রাজনৈতিক ফাঁদ। কংগ্রেস প্রধান মহাত্মা গান্ধী ক্রিপস মিশনকে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকের সাথে তুলনা করেছে এবং এটিকে একটি মূল্যহীন প্রস্তাব বলেন ।

৩. মুসলিম লীগ কর্তৃক ক্রিপস মিশন প্রত্যাখ্যান : ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক মুসলিম লীগও ক্রিপস মিশনকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ভারতের রাজনৈতিক সংকট আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মুসলিম লীগ শুরু থেকেই পৃথক আবাসভূমির দাবি জানিয়ে আসছে এবং তাদের মৌলিক অধিকারের দাবিও উল্লেখ করেছে। কিন্তু ক্রিপস মিশনে মুসলমানদের দাবিগুলো তোয়াক্কা করা হয়নি। এছাড়া দেশীয় রাজ্যগুলোকে গণপরিষদে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ক্রিপস প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে মুসলিম লীগের নিকট ক্রিপস মিশনের অসারতা প্রমাণিত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সমস্যার কারণে ব্রিটিশরা ক্রিপস প্রস্তাব পেশ করেন। ভারতীয়রা প্রায় দুশত বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত হয়। ভারতের স্বাধীনতার প্রথম ও প্রধান ধাপ ছিল ক্রিপস মিশন। ভারতীয়রা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে নেয়। ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন সময়ে যুদ্ধকালীন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক কুটিলতার আশ্রয় নেয়। ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এই ক্রিপস প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। তবে প্রস্তাবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। তবুও ভারতবাসীর সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। ফলে ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হয় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram