nulibrary

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন মজবুত ও স্থায়ী করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে অনেক আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়েছিল। যদিও কোনো আইন-ই ভারতীয় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনও ঠিক তেমনি একটি আইন পূর্ববর্তী আইনসমূহের ব্যর্থতা ঢাকতে ও শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতেই মূলত এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করলে ব্রিটিশ সরকার এক নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া ঐ সময়টায় বৃটেন ১ম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারতীয়দের সহযোগিতা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের সক্রিয় সহযোগিতা ও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তৎকালীন ভারত সচিব মন্টেগু ও গভর্নর জেনারেল চেমসফোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

→ ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন নানা দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. দ্বিস্তর বিশিষ্ট আইনসভা : ১৯১৯ সালের মন্ডেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন তথা ভারত শাসন আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের প্রয়াস। এ আইনসভা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ এ দুটি কক্ষে বিভক্ত ছিল। উচ্চকক্ষের নাম ছিল রাজ্যসভা (Council of State) ও নিম্নকক্ষের নাম ছিল ব্যবস্থাপনা পরিষদ (Legislative Assembly) ।

২. গভর্নর জেনারেলের অসীম ক্ষমতা : ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আইন পরিষদ ও শাসন পরিষদের সকল কর্মকাণ্ড গভর্নকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হতো। এ দুই পরিষদের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ছিল না। গভর্নর যেকোনো আইন প্রণয়ন, কার্যকর করার ক্ষমতা রাখতেন। সামরিক সরকারি ঋণ ও রাজস্বসহ কতকগুলো বিষয়ে তার অনুমতি ছাড়া কোনো বিল আইনসভায় উত্থাপন করা যেতো না। সকল আইন প্রণয়নের সময় তিনি ভেটো দেবার ক্ষমতা রাখেন।

৩. হাই কমিশনার নিয়োগ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে ভারতীয় স্বার্থ দেখাশুনা ও তত্ত্বাবধানের জন্য একজন হাইকমিশনার নিয়োগ দান করা হয়।

৪. প্রাদেশিক আইনসভা সংস্কার : ভারত শাসন আইনের পূর্বে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে একটি গুছালো আইনসভা ছিল না। ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রদেশে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিটি প্রদেশেরই একটি করে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করে শাসনব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করে। এ আইনসভার ৭০% সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত হতো এবং বাকি ৩০% সরকার কর্তৃক মনোনয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হতো ।

৫. ভিন্ন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন : ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রদেশ এবং কেন্দ্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে জনগণ আরো সহজভাবে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ লাভ করে ।

৬. প্রতিনিধিত্বমূলক কেন্দ্রীয় আইনসভা : এ আইন দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভা আরো বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে উঠে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং সদস্য নির্বাচনে স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা পূর্বে থেকে বাড়িয়ে ৬০ জনে করা হয়। এর মধ্যে ৩৪ জন নির্বাচিত ও বাকি ২৬ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন। নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা ১৪৫ জনে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ১০৫ জন নির্বাচিত বাকি ৪০ জনের ২৬ জন সরকারি ও ১৪ জন বেসরকারিভাবে মনোনীত হতেন ।

৭. কেন্দ্রীয় শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য অন্তর্ভুক্তিকরণ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন পরিষদে ৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় সদস্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। এর ফলে ভারতীয় সদস্য সংখ্যা পূর্বাপেক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিনিধিত্বের আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয় ।

৮. জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতি : এ আইনের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশ কোথাও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন হয়নি। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক এ দুই জায়গার শাসন ক্ষমতা গভর্নর জেনারেল ও তার শাসন পরিষদের হাতে ন্যস্ত ছিল । কিন্তু গভর্নর সর্বেসর্বা হবার কারণে আইনসভার নিকট তিনি দায়ী ছিলেন না। অতএব দেখা যায় যে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার ব্যাপক অনুপস্থিতি ছিল ।

৯. ক্ষমতার সুষম বণ্টন : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সুষম ক্ষমতা বণ্টন ছিল ভারত শাসন আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরকারি দপ্তরসমূহকে দুইভাগে ভাগ করে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ব্যাংক, বাণিজ্য, ডাক, তার রেলওয়ে ইত্যাদি । আর প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, রাজস্ব আইন-শৃঙ্খলা বন সেচ, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি।

১০. দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা : দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বলেই গণ্য করা হয়। এ ব্যবস্থার অধীনে সরকারের বিষয়সমূহকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- সংরক্ষিত বিষয় এবং হস্তান্তরিত বিষয়। সংরক্ষিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা, ভূমি, রাজস্ব, বিচার, জেল ইত্যাদি এ বিষয়গুলোর দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় প্রাদেশিক গভর্নরের উপর। অপরপক্ষে, হস্তান্তরিত বিষয় যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি ইত্যাদি দেখাশুনা করতেন গভর্নর কর্তৃক নিয়োগকৃত মন্ত্রিপরিষদ ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন নানান দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এ আইনে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পূর্বে প্রণীত অন্যান্য আইনে ছিল না। ভারতীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি ও বৃটেনের বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারতীয়দের সমর্থন লাভের আশায় মূলত এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের শাসনব্যবস্থায় ভারত শাসন আইন ব্যাপক বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram