nulibrary

১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের পটভূমি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ১৮৬১ সালে ভারতীয় কাউন্সিল আইনের দ্বারা। আইন পরিষদগুলোতে ভারতীয় সদস্য গ্রহণের যে প্রস্তাব পাস করা হয় তা ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন দ্বারা আরো সম্প্রসারণ করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন হয়। তাছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনতান্ত্রিক ক্রমবিকাশের ধারায় ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনে একটি অন্যতম পদক্ষেপ ছিল বলে মনে করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে কাউন্সিলগুলোর সদস্যদের অধিকার বৃদ্ধি করায় সরকারের নানামুখী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার অধিকার লাভ করে।

→ ১৮৯২ সালের আইনের ধারা বা বৈশিষ্ট্যসমূহ : ভারতীয় কাউন্সিল আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ সম্প্রসারণ : তৎকালীন সময়ে ভারতীয় কাউন্সিল আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় পরিষদে সর্বনিম্ন ১০ জন এবং সর্বোচ্চ ১৬ জন সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে ১৬ জন অতিরিক্ত সদস্যর মধ্যে বেসরকারি সদস্য থাকবেন ১০ জন। ১০ জনের মধ্যে ৪ জন প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য দ্বারা, একজন কলকাতা চেম্বার অব কমার্স এবং পাঁচ জন গভর্নর জেনারেল কর্তৃক বিভিন্ন শ্রেণি হতে নিয়োগ হবেন।

২. গভর্নর জেনারেলকে ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ : ভারতীয় কাউন্সিল আইনের দ্বারা গভর্নর জেনারেলকে সদস্য মনোনয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়। তবে ভারত সচিবের অনুমোদন সাপেক্ষে গভর্নর জেনারেলকে এ ক্ষমতা প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয় ।

৩. আইন পরিষদ সদস্যদের সমালোচনার সুযোগ : ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের দ্বারা আইন পরিষদের সদস্যদের কিছু শর্তসাপেক্ষে সরকারের অর্থনৈতিক রিপোর্ট সমালোচনা বা সমালোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি তাদেরকে সমালোচনা করার সুযোগ দিলেও তারা এ রিপোর্ট সংশোধন করতে পারে না ।

৪. প্রাদেশিক আইন পরিষদের ক্ষমতা : ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের গভর্নর জেনারেলের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে প্রাদেশিক আইন পরিষদকে নতুন আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা এবং পুরাতন আইন বাতিল করার ক্ষমতা দেয়া হয়। তবে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকে ।

৫. আইন পরিষদের সদস্যদের জনস্বার্থ বিষয়ক আলোচনা করার অধিকার : ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের দ্বারা আইন পরিষদের সদস্যদের জনস্বার্থ বিষয়ক প্রশ্ন তথা আলোচনা করার অধিকার দেয়া হয়। গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের দ্বারা প্রণীত বিধি অনুযায়ী সদস্যদের প্রশ্ন করার কথা বলা হয়। তবে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট কোনো কারণ ছাড়াই যেকোনো প্রশ্ন বাতিল অথবা জনস্বার্থের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এ অজুহাতে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দানে অসম্মতি জানাতে পারেন ।

৬. মুম্বাই ও মাদ্রাজ আইন পরিষদের সদস্য বৃদ্ধি: আইনের মাধ্যমে মুম্বাই ও মাদ্রাজ আইন পরিষদগুলোর সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৮ জন আর সর্বোচ্চ ২০ জন করা হয়। প্রদেশে জেলাবোর্ড, পৌরসভা, পরিষদের আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট এবং চেম্বার অব কমার্সের দ্বারা নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা হয়। মাদ্রাজ আইন পরিষদের ২০ জন অতিরিক্ত সদস্যদের মধ্যে ৪ জন বেসরকারি ৯ জন সরকারি এবং অপর ৩ জন মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাজ কর্পোরেশন ও চেম্বার অব কমার্স হতে নির্বাচন করা হয় ।

৭. বাজেট সম্পর্কে সমালোচনা : কাউন্সিলের সদস্য বা কাউন্সিলের সভায় সরকারের আয় ব্যয় বা বাজেট সম্পর্কে সমালোচনা করার অধিকার লাভ করে। যার মাধ্যমে কাউন্সিলের সদস্যরা এক ধরনের ক্ষমতা লাভ করে ।

→ ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের পটভূমি : নিম্নে ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের পটভূমি আলোচনা করা হলো :

১. মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্মেষ : ১৭৫৭ সাল থেকে ইংরেজ শাসনাধীন ভারতে ধীরে ধীরে ইংরেজি শিক্ষার অনুপ্রবেশ ঘটে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে ভারতে ইংরেজী শিক্ষিত একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্মেষ ঘটে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমেই ভারতীয়দের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। প্রশাসনিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ১৮৯২ সালের আইন প্রবর্তিত হয় ।

২. ১৮৬১ সালের আইনের সীমাবদ্ধতা দাবিপূরণে ১৮৬১ সালের কাউন্সিল আইন প্রবর্তিত হলেও তা ভারতীয়দের মনের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়। এই আইনের মাধ্যমে আইন সংক্রান্ত কাজের সাথে ভারতীয়দের সংযুক্তি। তবে এই আইনে গভর্নর জেনারেলকে অধ্যাদেশ তৈরির ক্ষমতা দিয়ে। আইনটিকে তার ইচ্ছাধীন পরিচালিত করতে সহায়তা করে। তদুপরি আইনসভা পরিষদগুলোকে পরিণত করা হয় কথার দোকানে। এছাড়া এই আইনে ভারতীয়দের মনোনয়নের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধানও ছিল না ।

৩. ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসের ভূমিকা : ব্রিটিশ ভারতে ভারতীয়দের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদেই ১৮৮৫ সালের সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সূচনা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্র সম্পর্ক স্থাপন, বর্ণ, ধর্ম, প্রদেশ নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের অ অনুভূতি ও মনোভাবের বিকাশ ও সংহতি সাধন সরকারের কাছে হ জনসাধারণের দাবি পেশ, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনমত গঠনে উদ্যোগী করাই হবে কংগ্রেসের লক্ষ্য। এছাড়া কংগ্রেসের মূল দাবি ছিল কেন্দ্রীয় আইনসভায় নির্ধারিত আইনে ভারতীয় সদস্যদের গ্রহণ করা।

৪. লর্ড ডাফরিনের ভূমিকা : জাতীয় কংগ্রেসের প্রচেষ্টাতে ইংল্যান্ডের উদারপন্থি সরকারের মতানুসারে এবং ব্রিটিশ ভারতের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লর্ড রিপন (১৮৮০-১৮৮৪) ১৮৮২ সালে ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তদুপরি জনগণের দাবি পূরণের সম লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডাফরিন কর বিতর্কিত বিষয় ও রিপোর্টসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই ১৯৮২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন প্রণীত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিচেনা করা হলেও তা ভারতবাসীর পূর্ণ আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সমর্থ 'হয়নি। তবে এ আইনের বেশকিছু ত্রুটি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এ আইনের দ্বারা ভারতীয়রা কতটুকু অধিকার লাভ করে তার উপর ভিত্তি করেই অধিকার আদায় একান্ত প্রয়াসী হয়ে উঠেন।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram