nulibrary

সিরিয়া ও লেবাননে ফরাসি ম্যান্ডেটরি শাসনের বিবরণ দাও।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লন্ডন যে রকম অনেকগুলো দেশ দখল করে সেখানে তাদের ম্যান্ডেট শাসন। প্রতিষ্ঠা করে, ঠিক তেমনি ফ্রান্স দখল করে নেয় সিরিয়াকে বিশ্বসভ্যতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিরিয়া। এখানে ফ্রান্স বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। সিরিয়া ফ্রান্সের হাতে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে প্রধানত কারণগুলো ছিল আবর জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। শরীফ হোসেনের বিশ্বাসঘাতকতা, হুসাইনের ম্যাকমোহন পত্রালাপসহ অনেকগুলো কারণ পরিলক্ষিত হয়।

→ সিরিয়ায় ফ্রান্সের ম্যান্ডেটরি শাসন : তুর্কি ওসমানীয় প্রশাসনে সিরিয়া মানে লেবানন ও প্যালেস্টাইনকে বুঝাত। এদেরকে একসাথে Levant বলত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথমে আরব জনগণ ফারটাইল ক্রিসেন্টের জনগণের তুর্কি বিরোধী মনোভাব, যুদ্ধের প্রথম বছরগুলোতে তুর্কি তিনজন শাসকের একজন সদস্য, জামালপাশা তুর্কির প্রধান থাকাকালে অনেক নিষ্ঠুর ব্যবহার করে এ ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণে সিরিয়া ফ্রান্সের হাতে চলে যায়। নিম্নে ফ্রান্স ম্যান্ডেটরি শাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে রাজনৈতিক অবস্থা : প্রাচীন ও মধ্যযুগে সিরিয়ায় অনেক রাজা শাসন করেন। রাজনৈতিক ইতিহাসের খেলায় ১৫ থেকে ১৮ শতকে সিরিয়ার অঞ্চলগুলো লিভন্টি নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩১ সাল থেকে শুরু করে নয় বছর পর্যন্ত সিরিয়া ছিল মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলীর নিয়ন্ত্রণে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হওয়ায় সিরিয়া চলে যায় ফ্রান্সের হাতে। পরবর্তীতে এটি বাথ পার্টির নিয়ন্ত্রণে আসে ১৯৪৬ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর।

→ সিরিয়ায় ফ্রান্সের শাসন : সিরিয়ায় ফ্রান্সের শাসন সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. প্রেক্ষাপট : ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তি সিরিয়াকে প্রস্তাব দেয় যে, যদি সিরিয়া তুরস্ককে ছেড়ে মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয় তবে তারা যুদ্ধের পর সিরিয়াকে স্বাধীনতা দেবে। যুদ্ধের শেষের দিকে সিরিয়া তুরস্ককে ত্যাগ করলেও যুদ্ধ শেষে মিত্রশক্তি সিরিয়াকে স্বাধীনতা দেয়নি। বরং তারা তাদের Sykes picot Agreement অনুযায়ী সিরিয়া ও লেবাননকে ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয়।

২. ফ্রান্সের ম্যান্ডেট অধিকার : ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে রেমো সম্মেলনের মাধ্যমে সিরিয়ার উপর ফ্রান্সের ম্যান্ডেট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় সিরিয়া জেব এল দ্রুজ ও লাতাকিয়া অঞ্চলে ফ্রান্সের সরাসরি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জেব এল দ্রুজের শাসনকর্তা করবিলেটের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ফ্রান্স তা কঠোর হস্তে দমন করে। এর ফলে সমগ্র সিরিয়ায় ফারসি বিরোধী মনোভাব বিরাজ করলেও ফ্রান্সের একক কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৩. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যাপকতা : ফরাসীদের দমননীতি সিরিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে আরো ব্যাপকতা দান করে। তারা কামান ব্যবহার করে দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে স্বীয় আধিপত্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৩ সালে ফ্রান্স সিরিয়ার শাসনতন্ত্র বাতিল করে ফরাসি শাসন প্রতিষ্ঠা করে সামরিক দমননীতির দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। এতে সিরিয়রা আগের চেয়ে বেশি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং তারা ফরাসি পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু করে।

৪. ভাগকর ও শাসনকর নীতি : ফ্রান্স সিরিয়ায় ভাগকর ও শাসনকর নীতি গ্রহণ করে যাতে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তারা শিয়া সুন্নির মধ্যে একটি তিক্ত সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। ফ্রান্স শিয়াদেরকে ব্যাপকভাবে সরকারি উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ দেয়।যার দ্বারা কৌশল করে চাকরি ও প্রশাসন থেকে সুন্নিদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়। নুসাইরী শিয়াদের সাথে খ্রিষ্টানদের ভাল সম্পর্ক ১ থাকায় তারা আলাদা সুবিধা ভোগ করত। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করার জন্য সিরিয়াকে মনমত কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে।

৫. অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় : সিরিয়ায় ম্যান্ডেট শাসনের সময় এ দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা বললেও ত বাস্তবে এর বিপরীত ফল পাওয়া যায়। এ সময় সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। ফরাসিগণ সিরিয়াকে তাদের পণ্যদ্রব্যে পরিণত করে এবং তারা নিজেদের কৃষ্টি, সভ্যতা, ভাষা ও সংস্কৃতি সিরিয়দের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়। যার ফলে ত সিরিয়া তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করে ।

৬. ফ্রান্স-সিরিয়া চুক্তি : ইতোপূর্বে ফ্রান্স সিরিয়ার সাথে মীমাংসার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। তাই ১৯৩৬ সালে তাদের মধ্যে মীমাংসামূলক আলোচনার কারণে সিরিয়দের সাথে ফ্রান্সের একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ফারসী সরকার সিরিয়দের স্বাধীনতা মেনে নেয়। দ্রুজ ও আলওয়াই অঞ্চলের সিরিয়দের সাথে সংযুক্ত এবং ফরাসি সরকারের সাথে অন্য একটি চুক্তির মাধ্যমে সিরিয়ায় ফরাসি সৈন্য ও ঘাটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৭. ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : ১৯৩৬ সালের সিরিয়া-ফ্রান্স চুক্তি অনুযায়ী জামিল মর্দানের নেতৃত্বে এক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ফ্রান্স সরকার এ চুক্তির বাস্তবায়নে বিলম্ব করতে থাকে। এ সময় ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটলে তাতে ভীত হয়ে ফ্রান্স পার্লামেন্টে এটি নাকচ করে দেয় ৷

৮. সিরিয়দের অসন্তোষ ও ফরাসি সরকারের পুনঃদখল : এ চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় সিরিয়রা প্রচন্ড ব্যথিত হয়। তাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে সমস্ত সিরিয়বাসী আন্দোলন শুরু করে। এ পরিস্থিতি তাদের নিয়মের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফরাসী হাই কমিশনার দমননীতি গ্রহণ করে। তারা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দামেস্ক দখল করে। এ সময় ফরাসি সরকার মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়ে সিরিয়ার উপর পুন:আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সিরিয়া : সিরিয়ায় ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দুই বছর ফরাসি শাসন বজায় ছিল। পরবর্তীতে সময় অতিবাহিত C হওয়ার সাথে সাথে সিরিয়ায় রাজনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে :
(i) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথমে জার্মানির নিকট ফ্রান্সের ি পরাজয় ঘটলে জার্মানির আওতায় চলে যায় সিরিয়া ।
(ii) জার্মানির কাছ থেকে মিত্র বাহিনী আবার সিরিয়াকে নি পুনরায় দখল করে এবং তাদেরকে স্বাধীনতার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। ফ্রান্সের জেনারেল কাতরিয়ো সিরিয়ায় জাতীয়তাবাদীদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে এবং সিরিয়াকে তাদের হাতে হস্তান্তর করবে বলে ঠিক করে। ১৯৪১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দ্যা-গলে সিরিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিলেও তাদের ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্য প্রত্যাহার করেনি। যা সিরিয়ার স্বাধীনতার অন্তরায়।
(iii) অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৪ সালে সিরিয়ার স্বাধীনতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেয় ।
(iv) ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ সিরিয়া আরবলীগে যোগ দেয়।
(v) সিরিয়া জার্মান ও জাপানের বিরুদ্ধে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর পুরস্কার স্বরূপ ইয়াল্টা কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে সিরিয়ার প্রতিনিধি যথাযোগ্য আসন লাভ করে ।

১০. জাতিসংঘের অধিবেশনে সিরিয়ার অভিযোগ : ১৯৪৪ সালে সিরিয়া স্বাধীন হলেও সেখানে ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যেরা অবস্থান ছিল। ১৯৪৬ সালে সিরিয়া জাতিসংঘের নিকট অভিযোগ দেয়। এতে ফ্রান্স ব্রিটেন তাদের সৈন্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা পরিষদকে জানায়। যার ফলে ৩১ ডিসেম্বর ফ্রান্স ও ব্রিটেন সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে। যার ফলে সিরিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে ১ জানুয়ারী ১৯৪৭ সালে ।

উপসংহার : সবকিছুর পর্যালোচনা করে আমরা প্রতীয়মান হই যে, সিরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে ফ্রান্সের ম্যান্ডেটরি শাসন ছিল একটি দুঃখজনক অধ্যায়। এটি সিরিয়ার কৃষ্টি, সামাজিক, অর্থনৈতিক সবকিছুর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যার ফলে তাদের অত্যাচার অবিচারে অতিষ্ঠ হয়ে সিরিয়ার জনগণ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। যার ফলে অনেক কষ্টের মাধ্যমে সিরিয়াবাসী প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৭ সালে।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram