nulibrary

মর্লে-মিন্টো কে ছিলেন? ১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : লর্ড মিন্টো একজন ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় ছিলেন। তিনি ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত হন। লর্ড মিন্টো ১৯০৫ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।

→ লর্ড মিন্টোর পরিচয় : লর্ড মিন্টো ১৮৪৫ সালের ৯ জুলাই ইংল্যান্ডে রাজধানী লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল প্রথম লর্ড মিন্টো। তিনি রক্ষণশীল দলের একজন সদস্য থাকা অবস্থায় ভারতে আসেন। তিনি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি দ্বিতীয়

 আফগান যুদ্ধ মিশর ও কানাডয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। শাসক ন হিসেবে লর্ড মিন্টো নানারকম বাধার মুখোমুখী হতে হয়েছিল। ন প্রথমত সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সরকারে অংশীদারিত্ব দাবি

করছিল। দ্বিতীয়ত একটি নতুন দেশপ্রেমিক শ্রেণি আত্মপ্রকাশ করেছিল। যারা ছিল বয়সে তরুণ এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এদের অধিকাংশ ছিল ক্ষতি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ঐ স্বাধীনতা অর্জনে বিশ্বাসী। বোমা পিস্তলের ব্যবহার শিখে তারা | স্বাধীনতা, অর্জনের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। এমনকি লর্ড ও লেডি মিন্টো যখন আহমেদাবাদে একটা সরকারি সফরে গেলে তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু তারা কোনো রকম প্রাণে বেঁচে যায়। পরে মিন্টো কঠোর আইন প্রবর্তন ও পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ভারত সচিব মর্লি ও গভর্নর জেনারেল মিন্টো উভয় উপলব্ধি করেন যে অনুগতদের উৎসাহিত এবং পুরষ্কৃত করা উচিত। তারা সিমলা ডিপুটেশন এর মাধ্যমে উপস্থাপিত মুসলমান সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া বিবেচনা করে ১৯০৯ সালে ভারতীয় কাউন্সিল আইন প্লাস করেন। এটা সাধারণ মর্লি মিন্টো সংস্কার নামে পরিচিত। লর্ড মিন্টো ১৯১০ সালে দেশে ফিরে যান। এরপর ১৯১৪ সালের ১ মার্চ ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন ।

• ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য বা ধারা : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন একটি সংশোধনী আইন। এ আইনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়নি। নিম্নে ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল পূর্বে ছিল ১৬ জন। ১৯০৯ সালের আইনে ৬৯ করা হয়। এ আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। বড় বড় প্রদেশে শাসনতান্ত্রিক সুবিধার জন্য ৫০ জন অতিরিক্ত সদস্য এবং ছোট প্রদেশগুলোতে ৩০ জন সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদেশের আইনসভায় বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়া হয়।

২. নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি প্রদান : ১৯০৯ সালের আইনের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সদস্যদের ভোটাধিকার সীমিত করা। পৌরসভা, লোকাল বোর্ড, বণিক সমিতি প্রভৃতিই ভোটাধিকার লাভ করে । কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার নীতি স্বীকৃত হয় ।

৩. মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা : এ আইনের দ্বারা সর্বপ্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। কেননা ব্রিটিশ ভারতে অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। এই আইনের দ্বারা প্রথম মুসলমান প্রতিনিধিগণ মুসলমান ভোটার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে ।

৪. আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে আইন পরিষদের সদস্যরা যেকোনো প্রশ্ন এবং সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার লাভ করে। এমনকি সরকারের সমীপে সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারতো ।

৫. আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত : আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হলে আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত রখা হয়। এক্ষেত্রে আইন পরিষদের সদস্যরা সরকারের নিকট সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তুব উত্থাপন করতে পারলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পরিষদ সভাপতির হাতেই ন্যস্ত রাখা হয় ।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগ : এ সংস্কার আইনে গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে একজন ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা গৃহীত হয় ৷

৭. শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : ১৯০৯ সালের সংস্কার আইনে শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪জনে উন্নীত করা হয়।

৮. সহযোগিতার নীতি : ১৯০৯ সালের এ সংস্কার আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সহযোগিতার নীতি গ্রহণ। জনস্বার্থের খাতিরে সরকারে সাথে উপযুক্ত ভারতীয় নেতৃবর্গের সহযোগতার নীতি গৃহীত হয় ।

৯. বাংলা প্রদেশে কার্য নির্বাহ পরিষদ গঠন : এ আইনে ভারত শাসন অনুযায়ী ছোটলাট শাসিত প্রদেশেও কার্যনির্বাহ পরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় সেই মোতাবেক বাংলায় একটি কার্য নির্বাহক পরিষদ গঠন করা হয়।

১০. রাজনৈতিক অযোগ্যতা : ১৯০৯ সালের এ সংস্কার আইনে রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তবে সরকার প্রধানকে এ জাতীয় অযোগ্যতা পরিহার ক্ষমতাও দেওয়া হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৯ সালের সংস্কার আইন একটি গুরুত্ব স্থান দখল করে আছে। এ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কিছু রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করলেও সমগ্র ভারত কর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram