nulibrary

গোল টেবিল বৈঠক (১৯৩০-৩২) কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল? গোল টেবিল বৈঠকের কারণ ও ফলাফল পরীক্ষা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, গোলটেবিল বৈঠকের (১৯৩০-৩২) কারণ ও ফলাফল লিখ।

ভূমিকা : ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে গোল টেবিল বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বৈঠক ভারতবর্ষের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য সংঘটিত হয়েছিল। সাইমন কমিশনের রিপোর্ট যখন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মনঃপুত হয়নি তখন ব্রিটিশ সরকার একটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন। যদিও গোল টেবিল বৈঠক সফলতার মুখ দেখেনি তবু ও এটি ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

গোলটেবিল বৈঠক : গোলটেবিল বৈঠক তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয় । নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো :

প্রথম গোলটেবিল বৈঠক : ১৯৩০ সালের ১২ নভেম্বর প্রথম গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে। অধিবেশন চলে ১৯৩১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই অধিবেশনে কংগ্রেস ব্যতীত সবাই অংশগ্রহণ করে। মুসলমানদের পক্ষে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আগা, খান মাওলানা মুহাম্মাদ আলী-একে ফজলুল হক এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। হিন্দুদের পক্ষে জয়াকর চিন্তা মহিমনিসহ স্যার তেজ বাহাদুর শাহ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড এই অধিবেশনে কতগুলো প্রস্তাব দেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠন। প্রাদেশিক দায়িত্বশীল সরকার এবং কেন্দ্রে আংশিক দায়িত্বশীল কংগ্রেসে সম্পূর্ণরূপে এই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে েমহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন নেমে পড়ে। হরতাল বিক্ষোভ বিলেতি দ্রব্য বর্জন ইত্যাদি। অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার ও দমননীতি চালু করেন। মহাত্মা গান্ধীসহ কংগ্রেসের অনেক নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার ফলে প্রথম গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয় ।

দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক : প্রথম গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে ১৯৩১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় গোল টেবিল অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশন চলে ১৯৩১ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই অধিবেশনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহাত্মা গান্ধী যোগ দেন। প্রথম অধিবেশনে মুসলিম প্রতিনিধিগণ পুনরায় যোগ দেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী বৈঠকের শুরু থেকেই মুসলমানদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে । তিনি মুসলমানদের দাবিদাওয়াকে গুরুত্বহীন বলে মনে করেন। এমনকি তিনি কংগ্রেসকে একমাত্র ভারতের প্রতিনিধি ধর্মীয় সংস্থা মনে করে এবং তারাই একমাত্র ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। তারা যে মত দিবে তাই হবে সমগ্র ভারতের মত। কিন্তু গান্ধীর এরকম মতের প্রতিবাদ করেন স্যার মোহাম্মদ শফি ও এ. কে ফজলুল হক। গান্ধীর দাবি ছিল কেন্দ্র ও প্রদেশে একই সাথে দায়িত্বশীল সরকার গঠন। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ের উপর কেন্দ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন। তিনি আর ও বলেন সাম্প্রদায়িক সমস্যাকে ভ্রক্ষেপ না করেই সংবিধান রচনা করতে হবে। পরবর্তীতে বিচার বিভাগীয় একটি ট্রাইবুনাল গঠন করে সাম্প্রদায়িক সমস্যার নিষ্পত্তি করতে হবে। কংগ্রেসের এরকম সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অন্যান্য সম্প্রদায় এক সাথে একটি বিবৃতি তৈরি করে এবং কংগ্রেসের মতের বিরুদ্ধে একটি জোড়ালো পদক্ষেপ নেয়। সাম্প্রদায়িক বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়াই গান্ধীজি দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক ত্যাগ করেন। যার ফলে ১৯৩১ সালের ১ ডিসেম্বর অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে।

তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক : প্রথম ও দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৩২ সালের ১৭ নভেম্বর তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এমনকি এই বৈঠকে হিন্দু তফসিলী সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। মহাত্মা গান্ধী তফসিলী সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের জন্য আমরণ অনশন শুরু করেন। তফসিলী হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এক সমঝোতায় আসেন। এর ফলে পুনা প্যাক্ট তৈরি হয়। এ প্যাক্ট দ্বারা তফসিলী সম্প্রদায়ের জন্য বেশি সংখ্যাক আসন সংরক্ষিত হয় এই বৈঠকে কংগ্রেস উপস্থিত ছিল না। বৈঠকে উপস্থিত ৮৮ জন প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্রিটিশদের সংখ্যা ছিল ৪৬ জন। এই বৈঠকে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক ১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সমাপ্তি ঘটে। এই বৈঠক ও ব্যর্থ হয় ।

গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফল : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে গোলটেবিল বৈঠক ফলপ্রসু হয়নি। একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ ছিল এর ফলাফল। নিম্নে গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফল তুলে ধরা হলো :

১. ১৯৩৫ সালর আইন পাশ হয়েছিল গোল টেবিল বৈঠকের কারণে । এটি ছিল গোল টেবিল বৈঠকের অন্যতম ফলাফল ।

২. গোলটেবিল বৈঠক ভারতকে মোডিনিয়ন স্টেটস না দিলেও এটি ভারতকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়েছিল ।

৩. এই বৈঠকের ফলে ব্রিটিশ সরকার ও ভারতীয় জনপ্রতিনিধিরা একত্রিত বয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন। যার ফলে তাদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সুযোগ হয়েছিল। যা তাদেরকে রাজনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করেছিল ।

৪. গোলটেবিল বৈঠকের ফলে ব্রিটিশ ভারতে সংশোধনীর গণতন্ত্র প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, দায়িত্বশীল সরকার ও নারীরা ভোটের অধিকার লাভ করেন। এ কারণে ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে গোলটেবিল বৈঠকের তাৎপর্য অপরিসীম ।

৫. ১৯৩২ সালের গোলটেবিল বৈঠকের ফলে ১৯৩৫ সালে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এ কারণে এই বৈঠকের গুরুত্ব ছিল অত্যধিক ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবর্ষের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানকল্পে ১৯৩০-৩২ সালের মধ্যে তিনটি গোলটেবিল বৈঠক ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। হিন্দু ও মুসলমানদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে গোলটেবিল বৈঠকের অধিবেশন পরিচালিত হয়। যদিও অধিবেশন সফল হয়নি তবুও ব্রিটিশ সরকার হিন্দু ও মুসলমানদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে জানতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন পাশ হয়। সেই আইনে এই অধিবেশনের দাবিদাওয়া স্থান পায়। ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram