১৯০৯ সালের সংস্কার আইনের পটভূমি লিখ ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ভারতবর্ষে ১৮৯২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার যে সকল আইন প্রবর্তন করে সেগুলো ভারতবাসীর আশা- আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতীয়দের দাবিদাওয়া আরো জোরদার হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ভারতীয়দের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ১৯০৯ সালে ভারত শাসন আইন প্রবর্তন করে যা ইতিহাসে মর্লি-মিন্টো আইন নামে পরিচিত। এই আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হলেও ভারতীয়দের রাজনৈতিক ইতিহাসে শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

— ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি : ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন মূলত ভারতীয়দের ক্ষোভ প্রসমনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছিল । নিম্নে পটভূমি আলোচনা করা হলো :

১. ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের ব্যর্থতা : ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ভারতীয়রা রাজনৈতিকভাবে ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে উঠে এবং তাদের দাবিদাওয়ার আন্দোলন জোরদার করে। ফলে ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় কাউন্সিল আইন প্রবর্তন করে। কিন্তু এই আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণ হয়। যার ফলে ভারতীয়রা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায় ।

২. স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন : ১৮৯২ সালের আইনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের কথা আকারে ইঙ্গিতে প্রকাশ করলেও সার্বিকভাবে তা বাস্তবে রূপ দেননি । বিশেষ করে লর্ড কার্জনের শাসনকার্য ভারতীয়দের নিকট গ্রহণীয় ছিল না। কারণ তিনি ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন ফলে ভারতীয়রা তাদের স্বায়ত্তশাসনের চালিয়ে যায় |

 ৩. সংগ্রামশীল জাতীয়বাদী আন্দোলনের প্রভাব : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয়দের আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠে । তাদের আন্দোলন এক সময় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। তারা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বদেশের আদর্শ প্রচার করতে থাকে যা সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বের নতুন পথ ও আদর্শ সর্বভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে।

৪. বিপ্লবী আন্দোলন : সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনৈতিক মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে গোপন বিপ্লবী সংঘ ও বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের রূপ বিপ্লব এবং অন্যান্য বিপ্লবে প্রভাবে ভারতীয় বিপ্লবে আন্দোলন গতিশীল হয়ে উঠে। এমনকি ভারতের বাইরেও বিপ্লবী সংঘ গড়ে উঠে।

৫. মুসলমানদের পৃথক দাবিদাওয়ার আন্দোলন : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলা তথা ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ১৯০৬ সালে আগাখানের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় তৎকালীন ভারতের বড়লাট মিন্টোর নিকট ভারতের ভবিষ্যৎ সাংবিধানিক ব্যবসায় মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া জোরালোভাবে উত্থাপন করে। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের দাবিদাওয়া আরো জোরদার হয়ে উঠে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন ব্যর্থ হয় তবুও এ আইন ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ও প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সর্বোপরি এই আইন ছিল ভারতবর্ষে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram