ভূমিকা : ১২৮৮ সালে ওসমানীয় সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর্যায়ক্রমে আরব ভূখণ্ডসমূহ ওসমানীয় সালতানাতের অধীনে চলে আসে। কিন্তু আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে দুর্বল ওসমানীয় সুলতানদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তুর্কি শাসনের বিরুদ্ধে আরব জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চার হয়। এ সময় কিছু খ্রিস্টান মিশনারীদের সাহায্যে গুপ্ত সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়ে তারা আরব জাতীয়তাবাদের প্রসাবে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকে। নাসিফ ইয়াজিজী আরব জাতীয়তাবাদ বিকাশের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
নাসিফ ইয়াজিজীর পরিচয় : নাসিফ ইয়াজিজী ১৮৮০ সালে বর্তমান লেবাননের একটি ক্ষুদ্র গ্রামের খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অতি বাল্যকাল থেকেই ইয়াজিজীর ছিল প্রচণ্ড জ্ঞান স্পৃহা। ফলে পরিবারের সীমিত জ্ঞান সাধনা তাকে পরিতৃপ্ত করতে পারেনি। তাই জ্ঞানার্জনের তাড়নায় তিনি গীর্জার লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত বই ও পাণ্ডুলিপি অধ্যায় শুরু করেন। তার জ্ঞানার্জনের স্পৃহা দেখে গির্জার পুরোহিত তাকে বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দান করেন। ফলে অল্প বয়সেই তিনি প্রচুর বই অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন। প্রচণ্ড মেধা ও স্মৃতি শক্তির অধিকারী হওয়ায় তিনি প্রভূত জ্ঞানার্জনে সক্ষম হন। এ সময় নাসিফ আরবি সাহিত্য অধ্যায়নে বিশেষ মনোযোগী হয়ে ন উঠেন। আরবি ভাষায় বিশাল সাহিত্য ভান্ডার তাকে মুগ্ধ করে তোলে। তখন তিনি আরবি ভাষার পুনর্জাগরণের আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় তিনি আরবি ভাষায় ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা অলংকার শাস্ত্র বিষয়ে প্রস্তুত রচনা শুরু করেন। তার এসব লেখা সাহিত্যের ছাত্র শিক্ষক সবার কাছেই সমানভাবে সমাদৃত হয়। পুস্তক রচনার পাশাপাশি কর্মজীবনের অবসর সময়ে তিনি তার বাসায় আরবি ভাষায় সাহিত্য চর্চার আলোচনার আসর বসাতেন। এ সময় আরব জনগণ নিজ মাতৃভাষা ও সাহিত্য জানার জন্য দলে দলে এই সাহিত্য আসবে জমায়েত হতে থাকে। আর এসকল সাহিত্য আলোচনা চক্রের মাধ্যমে আরব জনগণ বিশাল আরবি সাহিত্যের ভাণ্ডার সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এসব সাহিত্য সভায় নাসিফ জনগণকে মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপের উপদেশ দিতেন। ফলে ধীরে ধীরে আরব জনপদগুলোতে নাসিফ খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।জনগণ তুর্কি ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের পরিবর্তে আরবি ভাষা ও সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হয়ে ওঠে । এভাবে র ধীরে ধীরে আরব জনগণের মাঝে তুর্কি শাসনের বিরোধিতা ও । আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লেবাননের এক ক্ষুদ্র গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নাসিফ ইয়াজিজী তার জ্ঞান প্রজ্ঞা ও | কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তায় পরিণত হন। । তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে আরব অঞ্চলের জনগণের মধ্যে আরবি ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। ফলে জনগণ | ধীরে ধীরে আরব জাতীয়তাবাদী চিন্তায় মননে আকৃষ্ট হয়ে উঠে।