nulibrary

১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, ১৮৫৩ সালের চার্টার আইনের ধারাসমূহ বিশ্লেষণ কর ।

ভূমিকা : ইংরেজি ইস্ট কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় দেওয়ানি লাভ করে। এতে করে কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত হয়। তবে তারা এর সাথে ব্যাপকহারে দুর্নীতি ও কুশাসন শুরু করে দেয়। যার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং আইন পাস করে। যার মেয়াদ ছিল ২০ বছর। এরপর ১৭৯৩ সালে চার্টার আইন পাস করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮১৩ সালে পূর্বের আইনের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় আইন করে ব্রিটিশ সরকার এর ১৮৩৩ সালে আবার আইন করে। সর্বশেষ ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে সনদ আইন প্রদান করে ।

— ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ : ভারতীয়দের বিভিন্ন আবেদনের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট সদস্য আর্ল অব ডারবি ভারতে কোম্পানির কাজকর্ম অনুসন্ধানের জন্য একটি Select committee গঠন করে। যার প্রেক্ষিতে ১৮৫৩ সালের সনদ আইন রচিত হয়। নিম্নে ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কোম্পানির ক্ষমতা নির্দিষ্টকরণ : কোম্পানির ক্ষমতা ও অধিকার আগের মতোই রাখা হয় ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে । তবে এই সনদটি ২০ বছরের জন্য মঞ্জুর করা হয়নি। কোম্পানিকে ভারতীয় সাম্রাজ্যে শাসন করার অধিকার দেওয়া হয়। সনদে ইংল্যান্ডের রানি ও তার উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে । কোম্পানি শাসন ভারতে ততদিন বহাল থাকবে যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্টে অন্য ব্যবস্থা না হয় ।

২. বেতন সংক্রান্ত : এই আইনে বলা হয়েছে যে, Board of control-এর সদস্যদের এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিবে কোম্পানি। রাজা কর্তৃক তাদের বেতন নির্ধারিত হবে। আইনে আরো বলা হয় রাষ্ট্র সচিবের বেতনের চেয়ে বোর্ড সভাপতির বেতন কম হবে না। পূর্বের বেতন সংক্রান্ত সব আইন বাতিল করা হয় ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ৷

৩. ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস : পূর্বে ডাইরেক্টর সভা কোম্পনির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ করবে। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। Board of control-এর মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। লর্ড মেকলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে এই কাজ সম্পাদনের জন্য।

৪. লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদ সৃষ্টি : বাংলার গভর্নরের দায়িত্ব পূর্বে ছিল গভর্নর জেনারেলের উপরে। এতে করে গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তাই গভর্নর হেনারেলের উপর কাজের চাপ কমাতে তাকে বাংলার গভর্নর এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যার জন্য গভর্নর জেনারেলের জায়গায় নতুন পদ লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদ সৃষ্টি করা হয়।

৫. গভর্নর জেনারেলের পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ১৮৩৩ সালের সনদে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩ জন। ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় । ৪ জন সদস্য করা হয় শাসন পরিষদে। এর সাথে গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদকে স্থায়ী করা হয়।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্যাবলি পৃথক : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে প্রথমবারের মতো গভর্নর জেনারেলের পরিষদের আইন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পৃথক করা হয়। গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদ গঠিত হয় ১২ জন সদস্য নিয়ে। ৭ জন উপস্থিত হলে কাজ করা যাবে। গভর্নর জেনারেল পরিষদের বিলে সম্মতি প্রদান না করলে তা আইনে পরিণত হতো না। এইগুলো আইন হতো তার অনুমতিতে |

৭. আইন পরিষদের কার্যাবলি : এই আইনে আইন পরিষদের কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতোই ১ ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। পরিষদের সদস্যদের প্রশ্ন ত জিজ্ঞাসা করা ও সরকারের নীতির উপর আলোচনা করা ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। আইন পরিষদের পরামর্শ বড়লাট ইচ্ছা করলে গ্রহণ বা বর্জন করতে পারতো।

৮. নতুন প্রদেশ গঠন : ডাইরেক্টর সভাকে নতুন প্রদেশ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ডাইরেক্টর সভা নতুন যে প্রদেশ গঠন করবে এগুলোর সীমানা ও নির্ধারণ করবে। এছাড়া দরকার হলে নতুন প্রদেশগুলোর সীমারেখা পরিবর্তন করা যাবে। ডাইরেক্টর সভা ১৮৫৯ সালে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে পাঞ্জাব প্রদেশ গঠন করে ।

৯. আইন কমিশন গঠন : ইংল্যান্ডের রাজাকে বলা হয় একটি পরিষদ গঠন করতে। এই আইন কমিশন ভারতীয় আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইনে খসড়া প্রস্তুত করবে। একই সাথে কী আইন প্রণয়ন করা যায় তার সুপারিশ প্রদান করবে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধি আইনে পরিণত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৩ সালের সনদ আইন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে। এতে করে কোম্পানির দৌরাত্ম্যর অবসান, শাসনবিভাগের সম্প্রসারণ, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ, গুরুত্বপূর্ণ আইন কমিশন, প্রশাসনিক পরিবর্তন, বোর্ড সভার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা খর্ব হয়। এতে করে ভারতীয় জনগণ অনেক সুবিধা-অসুবিধা পায়। কেননা এতে কোনো ভারতীয়দের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও কোম্পানির আধিপত্য কমে যাওয়ায় ভারতের জনগণের অনেক উপকার হয় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram