nulibrary

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।

ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ২ আগস্টের ভারত শাসন আইন ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বস্তুত ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ, রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ এবং ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের ব্যর্থতার ফলশ্রুতি হলো ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন। বলাবাহুল্য এ আইনই পরবর্তীকালে ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির এবং ১৯৪৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের মূল ভিত্তি রচনা করে।

→ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মূল ধারাসমূহ : নিচে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান প্রধান ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ভারতে সর্বপ্রথম একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র (All Indian Fedaration) গঠনের প্রস্তাব করে। এ আইনে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ এবং করদ মিত্র রাজ্যসমূহের সমন্বয়ে এক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ছিল।

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : এ আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নীতিগতভাবে স্বীকৃত হয়। প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত বিষয়গুলো যেমন আইন-শৃঙ্খলা, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় শাসন ইত্যাদির ওপর প্রাদেশিক সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকার করা হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রের হস্তক্ষেপের ফলে স্বায়ত্ত্বশাসন পূর্ণতা লাভ করেনি।

৩. কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন প্রবর্তন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রদেশে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করে। কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এ দুভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয় যেমন- দেশরক্ষা, বৈদেশিক নীতি, ধর্মীয় বিষয় প্রভৃতি গভর্নর জেনারেল তিনজন উপদেষ্টার সাহায্যে পরিচালনা করবেন। আর হস্তান্তরিত বিষয়গুলো গভর্নর দশ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সাহায্যে পরিচালনা করবেন ।

৪. শাসন সংক্রান্ত বিষয়ের শ্রেণিবিভাগ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় । যথা : (ক) কেন্দ্রীয় বিষয় (Federal subjects) (খ) প্রাদেশিক বিষয় (Provincial subjects) (গ) যুগ্ম বিষয় (concurrent subject)

৫. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ : এ আইনে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট রাখা হয়। প্রথম কক্ষের নাম ছিল ব্যবস্থাপক সভা (Federal Assembly) এবং দ্বিতীয় কক্ষের নাম রাষ্ট্রীয় সভা (Council of States)।

৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। এ যুক্তরাষ্ট্রিীয় আদালতে শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যাদান এবং কেন্দ্র ও প্রদেশসমূহের মধ্যে উদ্ভূত কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারত। কিন্তু এ আইনে ব্রিটেনের প্রিভি কাউন্সিলের বিচার কমিটিই আপিলের চূড়ান্ত আদালত হিসেবে থেকে যায় ।

৭. নতুন প্রদেশ সৃষ্টি : এ আইনে ব্রহ্মদেশকে ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় । উড়িষ্যা ও সিন্ধু প্রদেশের সৃষ্টি করা হয় ।

৮. রাজপ্রতিনিধিদের নতুন পদ : এ আইনে রাজপ্রতিনিধির একটি পদ সৃষ্টি করা হয় (Crown repreesntative)। রাজ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দেশীয় রাজ্যগুলোর উপর রাজার সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যবহার করবেন। অবশ্য একই ব্যক্তি গভর্নর যু জেনারেল ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি হতে পারতেন।

৯. প্রাদেশিক গভর্নর : এ আইন অনুসারে প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে শাসন পরিচালনা করবেন। কিন্তু গভর্নরের প্রচুর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেয়া হয়। তিনি মন্ত্রীদের উপদেশ উপেক্ষা করতেও পারতেন।

১০. পৃথক নির্বাচন : এ আইন অনুসারে মুসলমানদেরকে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার স্বীকৃতি চালু করা হয়। এর সাথে কেন্দ্রীয় আইনসভায় এক তৃতীয়াংশ মুসলিম প্রতিনিধ প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়।

১১. সংশোধন ব্যবস্থা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পরিবর্তন ও সংশোধনের ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওপর ন্যস্ত হয় । ১২. উপদেষ্টা পরিষদ গঠন : এ আইনে ঐতিহাসিক ভারতীয় উপদেষ্টামণ্ডলী রহিত হয়। ফলে অধিকতর কার্যকর ও স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা সংস্থা (Advisory Board) স্থাপিত হয়।

১৩. ভারত সচিবের ক্ষমতা হ্রাস : এ আইনে ভারত সচিবের ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস করা হয়। তবে তিনি বিভিন্ন ভাবে ভারত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। অপরদিকে ভাইসরয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় ।

১৪. কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে একটি রিজার্ভ ব্যাংক চালু করা হয়। এ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় আইন সভার নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ধারাসমূহের বিশেষ গুরুত্বের কারণে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্ম হবার পূর্বপর্যন্ত ভারতে প্রবর্তিত ছিল। কিন্তু আইনের বিভিন্ন ধারা হিন্দু ও মুসলমান নেতৃবৃন্দ কর্তৃক যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। তথাপিও এ আইনের বহুধারা পরবর্তীকালে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে গৃহীত হয় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram