nulibrary

১৮৮৫ সালে ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর।

Reading Time: 0 minutes

ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আলোচনা কর।

অথবা, ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

ভূমিকা : ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা একটি একটির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই রাজনৈতিক দল ভারতের মানুষের দাবিদাওয়া ব্রিটিশদের নিকট পৌঁছে দিত। ভারতের সার্বিক কল্যাণে এই দলটি নিয়োজিত থাকত। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতীয়দের অধিকার অনেকাংশে খর্ব হত। জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধী প্রত্যেকটি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : নিম্নে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো :

কংগ্রেসের লক্ষ্য : কংগ্রেস নামক এ রাজনৈতিক দলটির বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য অর্জনের চিন্তাধারা থাকলেও মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য বস্তু। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(ক)কংগ্রেসের রাজনৈতিক লক্ষ্য : কংগ্রেস রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় কাজ করে গেছেন। নিম্নে রাজনৈতিক অধিকারগুলো তুলে ধরা হলো :

১. জাতীয় ঐক্য স্থাপন : ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গড়ে তোলাই ছিল কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। জাতি, ধর্ম, নতৃবর্গ বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক হওয়ার আহ্বান জানায় কংগ্রেস। জাগরণ | প্রাদেশিকতার সংকীর্ণতা দূর করে সবার মধ্যে জাতীয় ঐক্য স্থাপনই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য ।

২. পরিচয় ও সৌহার্দ স্থাপন : ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ একে অন্যের সাথে আন্তরিক পরিচয় ঘটানো ছিল এই সংগঠনের অন্যতম একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য । এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আলোচনার মাধ্যমে তাদের সৌহার্দ স্থাপন হত। তারা একে অন্যের প্রতি আন্তরিক হয়ে উঠত। জাতীয় কোনো দাবিতে তারা সকলেই এক হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলত। ৩. রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন : জাতীয় কংগ্রেসের আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের রাজনৈতিক দুঃখ, দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়া। বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথকে প্রশস্ত করা ।

৪. সংস্কার সাধন : সংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ছিল শিক্ষিত শ্রেণির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে ভারতের ঐতিহ্যকে সুসংহত করা। ভারতের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে কুসংস্কার বাসা বেধেছে তা দূর করা। এভাবেই কংগ্রেস সামাজিক সংস্থার সাধনের জন্য চেষ্টা করতেন।

৫. কেন্দ্রীয় আইনসভায় নির্বাচিত ভারতীয়দের নির্ম্মিত করা য়িত : কংগ্রেসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় আইনসভায় যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের গ্রহণে ইংরেজদের চাপ সৃষ্টি করা। ভারতীয়রা তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে ।

৬. সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত দাবি : ইংরেজরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স ২১ থেকে ১৯ বছরে করেছিল। কংগ্রেস প্রথমে এটিকে বাতিল করে এবং ব্রিটিশদের চাপ সৃষ্টি করে যেন ইংল্যান্ড ও ভারতে একযোগে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করে ।

৭. প্রশাসনিক পদে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ অধিক করা : রাধী | ভারতে জাতীয় কংগ্রেসে আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক পদে ভারতীয়দের অধিক হারে নিয়োগ। কংগ্রেস এ দাবির পক্ষে তাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরে।

৮. পরামর্শ সভার বিলোপ : কংগ্রেসের অন্যতম আরেকটি টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পরামর্শ সভার বিলোপ। অর্থাৎ যেকোনো বিষয়ে সেটা যদি ন্যায্য দাবিও হয় তাহলেও পরামর্শ সভার পরামর্শ নিতে হতো কিন্তু এটি ছিল দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ফলে কংগ্রেস ভারত সচিবের পরামর্শ সভার বিলোপসাধন করার জন্য কাজ করে ।

৯. সামরিক ব্যয় হ্রাস করা : ইংরেজরা তাদের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আরও শক্তিশালী ও দখলদারিত্বের জন্য সামরিক ক বাহিনীতে অনেক বেশি ব্যয় করতেন যা ভারতীয়দের কাছ থেকে আদায় করা হতো। কিন্তু এই সামরিক বাহিনী ভারতীয়দের কাজে আসত না। ফলে কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভারতের সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।

১০. আইনসভা স্থাপন করা : কংগ্রেসের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম প্রদেশে আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা এমনকি এই আইনসভার সদস্যবৃন্দের অ অধিকাংশ হবে ভারতীয় ।

১১. জাতীয়তাবোধ উদ্বুদ্ধ করা : সর্বোপরি কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করা। তাদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বজায় রাখা। যেকোনো দাবিতে ভারতীয়রা যেন সবাই একাত্মতা পোষণ করে। এছাড়া ঐক্যের মাধ্যমে যেকোনো রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে নেয়া।

(খ) কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্য : নিম্নে জাতীয় কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্য আলোচনা করা হলো :

১. কৃষকদের অবস্থার উন্নতি : ইংরেজরা সবসময় শোষণের শ্রেণি হিসেবে কৃষককেই বেছে নিত । তারা অধিক হারে কর ধার্য করে কৃষকদের শোষণ করতো। ফলে কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষকদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করা ।

২. অবাধ বাণিজ্যনীতি বিরোধী : অবাধ বাণিজ্যনীতির কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। কংগ্রেস তাই ভারতীয় শিল্পের সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য অবাধ বিচ বাণিজ্যনীতি বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে নেমেছিল ।

৩. আধুনিক শিল্পায়ননীতি গ্রহণ : ভারতের জনগণের অর্থনৈতিক দূরবস্থা দূরকরণের জন্য আধুনিক শিল্পায়নের প্রতি জোর দিয়েছিল। কৃষি থেকে শিল্পকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিল এমনকি মনবতার আমলে শিল্পায়ন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আধুনিক শিল্পের প্রয়োগ ঘটানোর লক্ষ্য ছিল ।

৪. বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের স্বার্থ রক্ষা : কংগ্রেসে শুধু অভিজাত শ্রেণিদের স্বার্থ রক্ষা লক্ষ্য ছিল না; বরং একজন শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ আদায়ের ব্যাপারে সচেতন ছিল। কৃষক, কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল । দিনমজুর, বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ তাদের সকল অধিকার আদায়ও

৫. অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করা : ইংরেজদের শাসন ও শোষণের কারণে ভারতীয়দের অর্থনৈতিক ভিত্তি একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক দাবি নিয়ে তারা ইংরেজদের নিকট পেশ করতেন

৬. বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ : কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রাদেশিক শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ভারতীয় বাজেট আলোচনায় ও বাজেট সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন তোলার অধিকারের কথা জানানো হয়। অর্থাৎ বাজেট যেন কোনোভাবেই ভারতীয়দের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায় ।কংগ্রেসের উদ্দেশ্য : নিম্নে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য আলোচনা

করা হলো :

(ক) সরকারের নীতির সমালোচনা : পৃথিবী প্রত্যেকটি | রাজনৈতিক দল অন্যান্য দলের বিভিন্ন নীতির গঠনমূলক | সমালোচনা করে থাকে। কংগ্রেস সরকারের বিভিন্ন নীতির | সমালোচনা করার উদ্দেশ্য ছিল। যাতে সরকার কোনো ধরনের অপনীতির আশ্রয় নিতে না পারে। তাছাড়া দেশবাসীর দুর্ভোগ ও দারিদ্র্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করানোও কংগ্রেসের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ।

(খ) সংস্কার দাবি উত্থাপন : ভারতীয়দের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কংগ্রেসের কতিপয় সংস্কার দাবি ছিল গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য এ সকল সংস্কার দাবি নিম্নরূপ :

১. ভারত সচিবের পরামর্শ সভা বিলুপ্তি করা।

২. কেন্দ্র ও প্রদেশে প্রতিনিধিত্বমূলক কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বীয় শাসনের প্রসার ।

৩. ভারত প্রশাসনের তদন্তের মধ্যে একটি রাজকীয় সমিতি নিয়োগ দেয়া ।

৪. কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষার প্রসার ।

৫. ভারতীয়দের সামরিক শিক্ষা দান ও সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।

৬. কেন্দ্রীয় আইনসভায় ভারতীয় সদস্যদের গ্রহণ করা । ৭. ফৌজদারি বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে কার্য নির্বাহক ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ।

৮. ইংল্যান্ডের ন্যায় ভারতেও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণ। ৯. প্রশাসনিক পদে অধিক হারে ভারতীয়দের নিয়োগ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শক্তিশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যখন ভারতবর্ষকে গ্রাস করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়েছিল তারই ফলশ্রুতি সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশদেরনিকট থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram