nulibrary

১৭৮৪ সালের পিটের ভারত শাসন আইন পর্যালোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রোধে পিট সরকার ১৭৮৪ সালে পিট ভারতীয় আইন প্রয়োগ করেন। পিটের ভারতীয় আইন ভারতীয় উপমহাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনা করেন। সমকালীন ভারতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই আইনটি ছিল সময়োপযোগী ।

পিটের ভারত আইন পটভূমি : হঠাৎ করেই কোনো শাসনকার্য পরিবর্তিত হয় না, এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের শাসন ক্ষমতার অবক্ষয়ের কারণ। নিম্নে পিটের ভারত আইন প্রণয়নের কার্যগুলো দেওয়া হলো :

১. রেগুলেটিং অ্যাক্টে গভর্নর জেনারেল : ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্টে গভর্নর জেনারেলকে নামেমাত্র ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হতো তার কাউন্সিল পরিষদের সদস্যবর্গের দ্বারা। যার ফলে তার একক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হতো না। এতে করে রাজ্য অস্থিরতা আরো প্রকাপ হয় । এই অবসানকল্পেই পিটের ভারত আইন প্রণয়ন করা হয় ৷

২. রেগুলেটিং অ্যাক্টে সুপ্রিমকোর্ট ও গভর্নর জেনারেলের বৈপরীত্য : রেগুলেটিং অ্যাক্টে সুপ্রিম কোর্ট ও গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতার কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়নি। যাতে করে সুপ্রিম কোর্ট ও গভর্নর জেনারেলের মধ্যে স্পষ্ট বৈপরীত্য দেখা দেয়। যার ফলে পিটের ভারতীয় আইনের প্রয়োজন হয় ।৩. রেগুলেটিং অ্যাক্ট ও কাউন্সিল সদস্যবর্গের বিরোধ : রেগুলেটিং অ্যাক্টে নাগরিক দ্বারা স্পষ্টভাবে ইংরেজ নাগরিককে বুঝানো হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। তাই দেখা এই অ্যাক্টে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট | নাগরিকদের সকল বিচারকার্য পরিচালনা করবেন কিন্তু কাউন্সিল | সদস্যবর্গের সিদ্ধান্ত হলো শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের বিচারকার্য সুপ্রিম কোর্ট পরিচালনা করবে। আর অন্য ইংরেজ নাগরিকদের

সকল কার্যাদি কাউন্সিল সদস্যবর্গ পরিচালনা করবে।

৪. বিচারকার্যে দক্ষতার অভাব : বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইংরেজ বিচারকদের নিয়োগ দেন। তাই দেখা যায় ইংরেজ বিচারকরা ইংরেজদের শাসনকার্যাদি সম্পর্কে অভিজ্ঞ হলেও ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনকার্য পরিচালনা অনভিজ্ঞ । তাই রাজ্যের সকল বিচারাদি সম্পূর্ণভাবে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে পারতো না। এতে করেই পিটের ভারতীয় আইনের আবির্ভাব ত্বরান্বিত হয় ।

৫. মূল পটভূমির প্রেক্ষাপট : ১৭৭৩ সাল থেকে দীর্ঘ নয় বছর পরিচালনার পর রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটি-বিচ্যুতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের দৃষ্টিগোচর হয়। ১৭৮৩ সালে ব্রিটেনে ফক্স এবং নর্থ যেহেতু জন্মবিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন সেহেতু বিলটি পার্লামেন্টে ওঠার সাথে সাথে বাতিল হয়ে যায়। তাই ১৭৮৩ সালের ১৮ নভেম্বর ফক্স তার বিখ্যাত বিলটি ভারত পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। এই বিলে ইংল্যান্ডস্থিত কোম্পানি মালিকসভা এবং ডাইরেক্টর সভার বিলোপ সাধন করে ৭ জন সদস্য নিয়ে বোর্ড অব কমিশনারস গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

বিলে বলা হয়, ভারতে কোম্পানির প্রশাসন এবং রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্ব বোর্ড অব কমিশনারস এর হাতে ন্যস্ত থাকবে। কমিশনারগণ পার্লামেন্ট কর্তৃক মনোনীত হবেন এবং এদের কার্যকালের মেয়াদ হবে ৪ বছর। ফক্সের বিলটি ২০৮ ভোটে পাস হয়। বিলের বিপক্ষে ভোট পড়ে ১০৮টি। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জের ব্যক্তিগত বিরোধিতার জন্য পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডস সভায় প্রত্যাখ্যাত হয় ।

লর্ডস সভায় এই পরাজয়ের অন্য কারণ ছিল ফক্স ও নর্থ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার জনপ্রিয়হীনতা। ১৭৮৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফক্সের জোট সরকারের পতন হয় এবং রাজা তৃতীয় জর্জ, পিটকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানায়। তাই পিট ১৭৮৪ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত বিষয়ক এই বিলটি উত্থাপন করেন। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয় । আর ইতিহাসে তাই পিটের ভারত আইন নামে পরিচিত।

→ পিটের ভারত আইন : রেগুলেটিং অ্যাক্টের পরম্পরায় ব্যর্থতার জেরবশত ফক্স ও নর্থ এর কোয়ালিশন সরকার নতুন ভারত পার্লামেন্ট আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। কিন্তু তা তৃতীয় রাজার বিরোধিতার জেরবশত বিলুপ্ত হয়। সর্বশেষ তাদের অদক্ষতার ফলশ্রুতিতে জনপ্রিয়হীনতার কারণে তাদের  সরকারের পতন হয়। তখন রাজা তৃতীয় জর্জ পিটকে সরকার গঠনের নিয়ন্ত্রণ জানান। তাই পিট ১৭৮৪ সালে ব্রিটিশ জন্য পার্লামেন্টে ভারতীয় শাসনের রূপরেখা নিয়ে বিল উত্থাপন | ১৭৮৬ করেন। যা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে জয়ী হয়। আর ইহাই পিট অব পরেই ইন্ডিয়া অ্যাক্ট নামে পরিচিতি ।

→ পিটের ভারত আইনের ধারাসমূহ : ফক্স সরকারের পতনের পর পিট সরকার গঠন করেই ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ঘোষণ ক্ষমতা রাষ্ট্রীয়করণের উপর নজর দেন। তাই তিনি ১৭৮৪ সালে পিট ভারতীয় আইন প্রয়োগ করেন। যার রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা । নিম্নে তা আলোকপাত করা হলো :

১. বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন : সিনিয়র সদস্যকে প্রধান করে সর্বোচ্চ ৬ জন পার্লামেন্ট সদস্য। নিয়ে একটি বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠিত হবে। এর কাজ হবে ইস্ট ইন্ডিজ কোম্পানির রাজ্য পরিচালনার কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করা। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স একটি গোপন কমিটি গঠন যার কাজ হচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ও কোর্ট অব ডাইরেক্টস এর প্রেসি মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা |

২. গভর্নর জেনারেল কাউন্সিল গঠন : তিনজন সদস্য নিয়ে গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল গঠিত হবে। (পূর্বে ছিল চারজন) । ভূমি এদের মধ্যে একজন থাকবেন ভারতবর্ষে রাজার সেনাবাহিনীর মানি কমান্ডার-ইন-চিপ। কাউন্সিল সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে সদস্যগণ সমান দু'ভাগে বিভক্ত হলে গভর্নর জেনারেল তার নিজের ভোট ছাড়া ও নির্ণায়ক ভোট প্রদান করতে পারবেন।

৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রয়োগ : ব্রিটিশ সরকারকে রাজস্ব প্রশাসন নিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে পরিমিত হারে রাজস্ব চাহিদার বিনিময়ে জমিদারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে হবে। নতুন রাজ্য শাসনের জন্য সরকারকে অবশ্যই স্থায়ী বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৪. যাবতীয় সম্পদের হিসাব জারি : ব্রিটিশ সরকারের অধীন ে সামরিক ও বেসামরিক সকল কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগ দানের ি দু'মাসের মধ্যে ভারতবর্ষে ও ব্রিটেনে তাদের যাবতীয় সম্পদের একটি পূর্ণ তালিকা কোর্ট অব ডাইরেক্টস-এর নিকট পেশ করতে হবে।

৫. শাস্তির বিধান প্রয়োগ : দুর্নীতির দায়ে সাব্যস্ত এমন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাদের অপরাধের ভিত্তিতে সমাপ্তি বাজেয়াপ্তকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ ও কারাদণ্ডসহ গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৬. উপঢৌকন গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা : ব্রিটিশ কোম্পানি ও ইংরেজ শাসকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করা হয় । বলা হয় রাজা, জমিদার ও অন্যান্য ভারতীয়দের নিকট থেকে নগদ টাকায় বা দ্রব্যে ভেট, পুরস্কার বা উপঢৌকন গ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। এ সকল অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিচারের সম্মুখীন হবেন। ৭. কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ : পিট ভারতীয় আইন বাস্তবায়নের জন্য পার্লামেন্ট লর্ড কর্নওয়ালিশকে সরাসরি নিয়োগ দান করেন। ১৭৮৬ সালে গভর্নর জেনারেল হিসেবে যোগদানের অব্যবহিত পরেই কর্নওয়ালিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক অর্পিত সংস্কারমূলক দায়িত্ব পালনে তৎপর হন। ১৭৯৩ সালে তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন একটি বিচার বিষয়ক কার্যবিধি ঘোষণা করেন এবং প্রমাসনিক ও পুলিশ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ।

→ ভারত আইনের শাসনতান্ত্রিক গুরুত্ব : পিটের ভারত আইনের কিছু অভিনব ধারা ভারতের শাসনতন্ত্র গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। নিম্নে এ আইনের শাসনতান্ত্রিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. পিটের ভারত আইনের ৩৯নং ধারায় আছে, প্রেসিডেন্সিগুলোর সরকার যদি স্বপরিষদ গভর্নর জেনারেলের নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাদের সাময়িক বরখাস্তের অধিকার গভর্নর জেনারেল ও পরিষদের থাকবে। এ ধারাবলে মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির উপর কলকাতা প্রেসিডেন্সির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয় প্রশাসনের উপর স্ব- পরিষদ গভর্নর জেনারেলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।

২. এ আইনের ফলে বোর্ড অব কন্ট্রোল ভারতে সর্বাধিনায়কের । ভূমিকার অবতীর্ণ হয়। কোম্পানি প্রশাসনের উপর ইংল্যান্ডস্থিত র মালিক সভার পরিবর্তে বোর্ড অব কন্ট্রোলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৩. পিটের ভারত আইনের বলে গভর্নর জেনারেলের পরিষদ হতে একজন সদস্যকে বাদ দেয়া হয় । এর ফলে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তিনি যেকোনো বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় যেকোনো কর্মপরিচালনা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়ে যায়।

৪. এই আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মালিক সভার য়ী রাজনৈতিক ক্ষমতার বিলুপ্তি। পূর্বে ভারতের কোম্পানি প্রশাসনের উপর ইংল্যান্ডস্থ মালিক সভার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। এ আইন বলে দ্বীন কোম্পানি প্রশাসনসহ ভারতের সামরিক এবং বেসামরিক সকল নের | বিষয়ে মালিক সভার হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ হয়।

৫. পিটের ভারতের আইনের আরেকটি ধারা মতে ভারতে ইংরেজ অপরাধীদের বিচারের জন্য ইংল্যান্ড পৃথক আদালত স্থাপন এমন করা হয়। এ আদালতে ভারত থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের ধের অভিযোগে অনেক লর্ডদের বিচার হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৭৮৪ সালের পিটের ভারত আইন আধুনিক ভারতের শাসনতন্ত্র রচনায় অন্যান্য পথ প্রদর্শক। এ আইনের মাধ্যমে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি শাসনতন্ত্রে নতুন ও অত্যাধুনিক কিছু ধারার সংযোজন ঘটে। কোম্পানির গঠনতন্ত্রের জন্য এ আইন প্রণয়ন হলেও বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রভাব বিস্তৃত। এ আইন শাসনতন্ত্রের রচনায় ভারতকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram