nulibrary

লর্ড লিটনের সংস্কারগুলো পর্যালোচনা কর।

Reading Time: 0 minutes

অথবা, লর্ড লিটনের সংস্কারগুলো ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি লর্ড নর্থব্রুকের পর ভাইসরয় নিযুক্ত হয়ে ভারতে আসেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সুদক্ষ শাসক ছিলেন। লর্ড লিটন একজন সাম্রাজ্যবাদী শাসক ও ছিলেন। লর্ড লিটনের শাসনামলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন হয়েছিল। তিনি একজন সংস্কারমনা শাসক ছিলেন। লর্ড লিটন তার সংস্কারমূলক কার্যাবলির জন্য ব্রিটিশ ভারতের একটি উলেখযোগ্য স্থান দখল করে আছেন ।

→ লর্ড লিটনের সংস্কারসমূহ : নিম্নে লর্ড লিটনের সংস্কারসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. সিভিল সার্ভিস পরিক্ষার্থীদের বয়স কমানো : লর্ড লিটন তার আমলে ভারতে যেসব সংস্কার সাধন করেন তারমধ্যে প্রধান হলো সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স কমানো তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করেন। তিনি তার সাম্রাজ্যবাদী কার্যক্রম চরিতার্থ করার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করেছিলেন। এতে করে ভারতের জনগণ লিটনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তারা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স বৃদ্ধির কথা বলেন। এছাড়া তারা ইংল্যান্ড ও ভারতে একই সাথে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করেন।

২. সংবাদপত্রের দমন আইন প্রবর্তন : লর্ড লিটনের সংস্কারসমূহের মধ্যে আরেকটি অন্যতম হলো সংবাদপত্রের দমন আইন প্রবর্তন। তিনি এই সংবাদপত্র আইন প্রবর্তন করে ভারতের জনগণের নিকট ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন দেশীয় ভাষায় লেখা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা| ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করবে। তিনি ১৮৭৮ সা দেশীয় সংবাদপত্র আইন পাশ করেন যা ভার্নাকুলার প্রেস অ্যা নামে পরিচিত। এই আইনের দেশী ভাষায় সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই আইনে বলা হয় সরকার বিরোধী কোনো খবর সংবাদপত্রে জারি করা যাবে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করাই এই আইনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। তাছাড়া এই আইনে কোনো মামলা মোকাদ্দমা ছাড়াই সরকার বিরোধী লেখার অপরাধে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদককে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়েছিল । তিনি ভারতের সকলের জন্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা উন্মুক্ত দেন।

৩. অস্ত্র আইন সংস্কার : লর্ড লিটনের আরেকটি অন্যতম প্রধান সংস্কার হলো অস্ত্র আইন সংস্কার। তার অস্ত্র আইন সংস্কার ছিল লিটনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির একটি অংশ। তিনি ১৮৭৮ সালে আর্মস অ্যাক্ট বা অস্ত্র আইন পাস করে বিনা লাইসেন্সে অস্ত্র রাখা ভারতীয়দের নিষিদ্ধ করেন। এতে করে ভারতীয় শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তবে ইউরোপীয়দের অস্ত্র রাখার ক্ষেত্রে কোন বাধা ধারা নিয়ম ছিল না ।

৪. দুর্ভিক্ষ নীতির সংস্কার : লর্ড লিটনের রাজত্বকালে ভারতে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর ফলে বহুলোক মারা যায়। এছাড়া তার সময় ১৮৭৬ সাল থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত দুই বছর মাদ্রাজ, বোম্বাই, হায়দ্রাবাদ এবং মহীশূরসহ দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব জায়গা জুড়ে পছন্দ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। এই দুর্ভিক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। লর্ড লিটনের সরকার রিচার্ড স্ট্যাচির নেতৃত্বে দুর্ভিক্ষের কারণ ও জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্য একটি ত্রাণ কমিশন নিয়োগ করেন।

কমিশনের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে একটি দুর্ভিক্ষ কোড ভারতে তৈরি করা হয়। এতে করে ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য ইংল্যাে কয়েকটি আইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এগুলো হলো :

ক. প্রত্যেক প্রদেশে দুর্ভিক্ষ তহবিল গঠন করা হবে। খ. দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার জন্য প্রতি বছর রাজস্ব থেকে দেড় কোটি টাকা নির্দিষ্ট করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

গ. ত্রাণকার্য বিতাড়নের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হবে।

ঘ. দুর্ভিক্ষের সময় লোকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে । ঙ. দুর্ভিক্ষ এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. অবাধ বাণিজ্য নীতি গ্রহণ : লর্ড লিটনের একটি অন্যতম সংস্কার হলো অবাধ বাণিজ্য নীতি গ্রহণ। তিনি বাণিজ্য ক্ষেত্রে অবাধ বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ভাইসরয় হয়ে আসার পূর্বে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন রকম বাণিজ্যনীতি প্রচলিত ছিল । তিনি এসব বাণিজ্য নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছিল। যার ফলে তার অবাধ বাণিজ্য নীতি অনেকটা সফল হয়েছিল ।

৬. চিনির শুল্ক সংস্কার : লর্ড লিটন চিনির শুল্ক সংস্কার সাধন করেন। তিনি চিনির উপর শুল্ক হার কমান। তার রাজত্বকালের পূর্বে চিনির উপর শুল্ক কর অধিক বেশি ছিল।

৭. লবণ কর বিষয়ক সংস্কার : লর্ড লিটন লবণ কর বিষয়ক সংস্কার করেন। তার সময়ে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন হারে লবণের উপর কর আদায় করা হতো। এজন্য তিনি বিভিন্ন প্রদেশে লবণ করের মধ্যে সমতা আনার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য তিনি রিচার্ড স্ট্রাচির সহায়তায় বিভিন্ন প্রদেশের লবণ কর একই হারে আদায় করার ব্যবস্থা করেন।

৮. বস্ত্র শিল্পের উপর শুল্ক সংস্কার : লর্ড লিটনের আমলে কোয়ে যেসব দ্রব্যের উপর শুল্ক ব্যবস্থা প্রচলিত সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মোটা কাপড়। তিনি ২৯টি পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক আলী প্রত্যাহার করেন। এছাড়া মুক্ত বাণিজ্যের নামে লন্ডনের নির্দেশক্রমে তিনি সুতি বস্ত্রের উপর শুল্ক রহিত করেন। এতে করে ভারতের বস্ত্র শিল্প ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড লিটন একজন বাস্ত বধর্মী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসক ছিলেন। তিনি জনগণের মঙ্গলের বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন এবং এগুলোর মধ্যে কিছু সংস্কার জনগণের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না। তার আমলে কিছু ত্রুটির কারণে জনজীবনে দুভোগ নেমে এসেছিল। তারপর ও লর্ড লিটন বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের জন্য ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram