nulibrary

বেঙ্গল প্যাক্ট-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

Reading Time: 1 minute

অথবা, সংক্ষেপে বেঙ্গল প্যাক্টের বিবরণ দাও ।

অথবা, সি.আর দাসের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখপূর্বক ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি, শর্তাবলি ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

অথবা, বেঙ্গল প্যাক্ট সম্বন্ধে যা জান লিখ ৷

ভূমিকা : রাজনৈতিক সংকট নিরসনে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে তাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, আর এটাই বা এই চুক্তিই ইতিহাসে বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি নামে পরিচিত। এটা মূলত ১৯২০ সালে অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলে নতুনভাবে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত একটা রাজনৈতিক চুক্তি করা হয় আর এটাই বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি নামে পরিচিত।

→ বেঙ্গল প্যাক্ট : ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন বেঙ্গল প্যাক্ট তাদের জন্য আশার আলো বয়ে আনে যার নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি মুসলমানদের সহযোগিতা লাভের আশায় মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চিত্তরঞ্জন দাসের লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে

খন পড়া মুসলমানদের কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে হিন্দুদের ড়ে সমকক্ষ করা। আর এ কারণেই তিনি সমঝোতায় আসেন এবং ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন। যা ১৯২৩ সালে স্বাক্ষরিত এ াই | রাজনৈতিক চুক্তিই ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্ট নামে অভিহিত হয়।

→ ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি : ব্রিটিশ ভারতের ক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসমূহের মধ্যে ১৯২০-২১ সালের র মহাত্মা গান্ধী এর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন স্ত সর্বপ্রথম সমর্থন লাভে সক্ষম হয় এবং ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের শক্তি ও প্রশাসনিক যোগ্যতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু না কতিপয় উগ্রপন্থী ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চৌরিচিরিয়াতে টি পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দিলে ২২ জন পুলিশ মারা যায়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তর নির্বাচনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯২১ সালের পর ১৯২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, চিত্তরঞ্জন দাসের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয় কংগ্রেসীরা নির্বাচন আমলাগুলো দখল করে সরকারী নীতির বিরোধিতা করবে। ১৯২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাস চন্দ্র বসু সভাপতি ও কর্মসচিব নির্বাচিত হন। স্বরাজ পার্টির পক্ষে সমর্থন গোছাতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাস তার মুসলিম সহযোগী বাংলার মৌলভী আব্দুল করিম, মাওলানা আকরাম খা, মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী এবং মৌলভী মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন যা ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্টর নামে পরিচিত ।

→ ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের ধারাসমূহ : ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট বা বঙ্গীয় চুক্তির প্রধান প্রধান ধারা বা শর্তসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো :

১. আইনসভা গঠন : এ চুক্তিতে বলা হয় বঙ্গীয় আইনসভায় হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ।

২. প্রতিনিধি নির্বাচন : এ চুক্তির ধারা অনুযায়ী বঙ্গীয় আইনসভায় ১৯০৯ সালের আইন প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ আইনসভার প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে স্বতন্ত্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে ।

৩. স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৬০ ভাগ এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৪০ ভাগ প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

৪. চাকরিতে সমতা : সরকরি পদসমূহের শতকরা ৫৫ ভাগ পূরণ করবে মুসলমান সম্প্রদায় এবং যতদিন পর্যন্ত ঐ সংখ্যায় না পৌঁছাবে ততদি পর্যন্ত শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত থাকবে।

৫. সরকরি চাকরি : চাকরির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সমতা অর্জনের পর থেকে মুসলমান জনগণ চাকরির শতকরা ৪৫ ভাগ পাবে এবং অমুসলমানগণ শতকরা ৪৫ ভাগ পাবে এবং অন্তর্বর্তীকলীন সময় হিন্দু জনগণ ২০ ভাগ চাকরি পাবেন ।

৬. ধর্মীয় অনুভূতি : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোন আইন সংসদে পাস করা যাবে না। ধর্ম সংক্রান্ত আইন পাস করতে হলে আইনসভায় নির্বাচিত % অংশ সদস্যদের সমর্থন থাকতে হবে।

৭. ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা : বলা হয় এ চুক্তিতে কোনো মসজিদ অতিক্রম করার সময় কোন শোভাযাত্রা সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ । কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মুসলমানদের গো-হত্যা নিষেধ করা যাবে না। তবে উন্মুক্ত স্থানে তা না করাই ভালো। এ চুক্তির প্রায় সবগুলো শত আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের অনুকূলে ছিল । চিত্তরঞ্জন দাস আইনসভায় বলেন, স্বরাজ্যের বুনিয়াদ রচনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। স্বরাজ লাভের পর আমাদের সরকার না মুসলমান সরকারে না হিন্দু সরকার এরূপ কোন সংশয় মতে আমাদের মনে জাগ্রত না হয় সেজন্য আমরা এ চুক্তিতে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করি ।

→ হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা : ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো বেঙ্গল প্যাক্ট। ব্রিটিশ শাসন বিলোপের জন্য এদেশের হিন্দু-মুসলমানদের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সম্মিলিত আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব করেন। ঠিক এসময়ের স্বাক্ষরিত লক্ষৌ চুক্তি হলো ভারতীয় প্রধান দুটি সম্প্রদায়ের এ রকম সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো বেঙ্গল প্যাক্ট। এ চুক্তিতে মুসলমানদের প্রতি সদাচারণ, তাদের নায্য অধিকার ও ধর্মীয় মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয় যা থেকে তারা এতদিন বঞ্চিত ছিল। বেঙ্গল প্যাক্টের ফলে স্বরাজ দল বাংলার ব্যবস্থাপক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে। এর ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্যের অবসান হয় ৷

→ বেঙ্গল প্যাক্ট-এর মূল্যায়ন : বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি আন্তরিকতা দেখালেও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আন্তরিকতার ছাপ এতটা স্পষ্ট হয়নি। যদিও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের এগিয়ে হিন্দুদের সমকক্ষ করা কিন্তু এতে তিনি সমালোচনার স্বীকার হন। তবে তিনি সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান । তবে তার মৃত্যুর পর তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বেঙ্গল প্যাক্টের মূল লক্ষ্যই ছিল রাজনৈতিক অবসান ঘটানো এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি করা। চিত্তরঞ্জন দাস এর একান্ত ও নিরলস প্রচেষ্টায় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে সম্প্রীতি গড়ে উঠে এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি হয়। এবং এর মধ্যে সকল নতুন আশার আলো তৈরি হয় ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram