১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের ধারাগুলো আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় । উপমহাদেশের শাসনতান্ত্রিক ক্রমবিকাশের ধারায় এই বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের জনগণ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারা ভারতে বিদ্রোহের জন্য কোম্পানিকে দায়ী করে এবং ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে। অন্যদিকে তীব্র বিরোধিতা করেন।

→ ভারত শাসন আইনের ধারা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে ভারত শাসন আইন একটি অতীব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। নিম্নে ভারত শাসন আইনের প্রধান প্রধান ধারাসমূহ আলোচনা করা হল :

১. ব্রিটিশ রাজ্যের ক্ষমতা : ভারত শাসন আইনে ভারত শাসনের ক্ষমতা কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজ্যের হাতে অর্পিত হয়। ফলে এখন থেকে ভারত মহামান্য রানির নামে শাসিত হবে। এ আইন বলে ইংল্যান্ডের রাজা বা রানি কোম্পানির স্থল ও নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হল ।

২. বোর্ড অফ কন্ট্রোল ও ডিরেক্টর সভার বিলোপ : ভারত শাসন আইনে বোর্ড অফ কন্ট্রোল এবং ডিরেক্টরস সভার বিলোপ সাধন করা হয় এবং এর দায়িত্বসমূহ ভারত সচিব ও তার ভারত পরিষদ এর হাতে অর্পণ করা হয়। ভারত সচিব ইংল্যান্ডের রাজারা বা রানির নামে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন বলে স্থির হয়।

৩. কাউন্সিল গঠন : ভারত সচিবকে সাহায্য করার জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। এই ১৫ জনের মধ্যে ৮ জন ব্রিটিশরাজ কর্তৃক নিযুক্ত এবং ৭ জন ডাইরেক্টরস সভা কর্তৃক নির্বাচিত হন। আইনে উল্লেখ আছে যে, কাউন্সিলের অন্তত ৯ জন সদস্য ভারত সম্পর্কে অভিজ্ঞ হবেন।

৪. শূন্য আসন পূর্ণ : ভারত সচিবের কাউন্সিলে ডিরেক্টরদের ন্য মনোনীতি কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে রাজা বা রানি কর্তৃক তা ন পূরণ হবে। কাউন্সিলের সদস্যগণ সদাচরণকাল পর্যন্ত নিজ নিজ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন। পার্লামেন্টের সুপারিশকল্পে রাজা বা রানি কর্তৃক তারা অপসারিত হবেন।

৫. বেতন ভাতা : এ আইনে কাউন্সিলের প্রতিটি সদস্যকে ক ভারতীয় রাজস্ব থেকে বার্ষিক ১২০০ পাউন্ড বেতন দেয়া হবে। কাউন্সিল প্রতি সপ্তাহে একবার মিলিত হবে। ৫ সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠকের কোরাম হতো ।

৬. ভারত-সচিবের ক্ষমতা : ভারত সচিব কাউন্সিলের সব অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন। কোনো বিষয়ে কাউন্সিল সমান দুভাগে বিভক্ত হলে সেক্ষেত্রে ভারত সচিব অতিরিক্ত ভোট দিতে পারবেন। তার অনুপস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার হলে তার লিখিত অনুমোদন প্রয়োজন ছিল ।

৭. ভারত-সচিবের স্বাক্ষর : ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারত সরকারের স্বাক্ষর পাঠানো হতো। অনুরূপভাবে ভারত সরকার কর্তৃক ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রেরিত সকল চিঠিপত্রে ভারত সচিবের নামে প্ররিত হতো।

৮. অধিবেশনে সভাপতিত্ব : ভারত সচিবকে তার অনুপস্থিতিতে কাউন্সিলের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার জন্য কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য হতে একজন সহ-সভাপতি নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করা হয় ।

৯. বার্ষিক বিবরণ : ভারত সচিবকে পার্লামেন্ট ভারতের রাজস্ব ও ব্যয় সম্পর্কে বার্ষিক বিবরণী পেশ ও ভারতীয়দের নৈতিক ও বৈষয়িক অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করা হতো।

১০. সিভিল সার্ভিস : ভারত শাসন আইনে ভারতের সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান তৈরির দায়িত্ব ভারত সচিবের উপর অর্পণ করা হয় ।

১১. কোম্পানির উত্তরাধিকার : ভারত শাসন আইনে কোম্পানির সমস্ত চুক্তি, আদান-প্রদান, দায়-দায়িত্ব কোম্পানির উত্তরাধিকার হিসেবে ভারত সচিবের উপর অর্পিত হয়।

→ কোম্পানি সরকারের প্রতিক্রিয়া : ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৮৫৮ সালে গঠিত ভারত শাসন আইনের বিরুদ্ধে কোম্পানি তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করে এবং ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত রদ করার জন্য তৎপর হয় । তাদের বক্তব্য নিম্নরূপ :

১. কোম্পানির দায় অস্বীকার : ১৮৫৭ সালে ভারতে ইংরেজবিরোধী যে বিদ্রোহ হয়েছে এর জন্য ইংরেজ সরকার কোম্পানিকে দায় করে । কিন্তু কোম্পানি দায় অস্বীকার করে বিদ্রোহের জন্য এককভাবে কোম্পানিকে দায়ী করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।

২. তাদের প্রশ্ন : কোম্পানি প্রশ্ন রাখেন যে, ভারতের বিদ্রোহ যদি কোম্পানির ব্যর্থতার কারণে হয় তাহলে আমেরিকার উপনিবেশগুলো ব্রিটিশ সরকার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থেকেও সেখানে কেন বিদ্রোহ দেখা দিল এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পেল ।

৩. কোম্পানির ভিন্ন যুক্তি : কোম্পানি এ আইনের বিরোধিতা করে আরো যুক্তি দেখান যে, ১৮৩৩ সালের সনদ আইনের পর হতে ভারতীয় সাম্রাজ্যের শাসনের পরোক্ষ দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করেছিলেন । সুতরাং ভারতীয় সাম্রাজ্যের শাসনের বিচ্যুতির জন্য এককভাবে শুধু কোম্পানিকে দায়ী করা উচিত নয় এবং এ আগ্রাসী আইন বাতিল করা উচিত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৮ সালের কোম্পানির শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন আইন পাশ করেন। কোম্পানি সরকার এদেশের জনসাধারণের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন করতো এ আইনের মাধ্যমে তা কিছুটা লোপ পায় । ভারতীয় জনগণ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পায় ৷ ধর্মীয় সহিষ্ণু নীতি অনুসরণ করা হয়। দেশীয় নৃপতিদের সাথে ইংরেজ শাসকদের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram