রাশিয়ার ভূমিদাস প্রথা সম্পর্কে টীকা লিখ ।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : উনিশ শতকের এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল রাশিয়ার শাসনতন্ত্রের ইতিহাসে ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দাস ছিল স্লাভরা জাতিগোষ্ঠী। যদিও স্লাভরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, জাতিগোষ্ঠী জারতান্ত্রিক রুশ সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে। ভূমি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান চালিকার শক্তি ছিল এই দাসরা। কিন্তু নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো মনিবের অধীনে থাকা এই দাসরা। এদের মানবিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। সাধারণত স্বামীর স্বার্থকে কেন্দ্র করে এদের জীবন আবর্তিত হতো। মানব অধিকার পশ্চিম ইউরোপে বিভিন্ন উদারবাদী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল জারতান্ত্রিক রাশিয়া।

ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা : প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার অভিজাত শ্রেণি বিদ্যমান ছিল রাশিয়া জুড়ে। তারা অধিকাংশই ছিল সম্পদশালী। পরিবারে অধীনস্থ সার্ফ বা ভূমিদাস শ্রেণির সংখ্যা অনুপাতে তাদের বিত্তের পরিমাণ নির্ধারিত হতো। মধ্যবিত্ত বলতে কোনো শ্রেণির অস্তিত্বই ছিল না রাশিয়া সমাজে। অভিজাত শ্রেণিদের জন্য বরাদ্দ ছিল রাষ্ট্রের সকল প্রকার সুযোগ- সুবিধা, সরকারি চাকরি ও। কিন্তু নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হতো ভূমিদাসদের উপর। কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের চলাফেরা এবং ব্যক্তিগত সামান্য সম্পত্তির উপর। সার্ফ প্রথা এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে রাশিয়ার ইতিহাসে। সাধারণত ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা বলতে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় দাস বা সার্ফদের বেগার খাটানোর পদ্ধতিকে বোঝায়। রাজার জমিদারিতে বসবাসরত সার্ফদের অর্থাৎ ভূমিদাসদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় ব্যক্তি বিশেষের অধীনস্থ ভূমিদাসের তুলনায় তাদের (mir) মির নামক গ্রামীণ সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা হয়েছিল ভূমিদাসদের বিভিন্ন সংঘকে একত্রিত করার মাধ্যমে। জমিদারদের হাতেই ন্যস্ত ছিল যেকোনো ধরনের দণ্ড এবং নির্বাসন দেয়ার অধিকার। যদিও মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছিল সার্ফ। কিন্তু মানবিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না সার্ফদের। তাদেঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালাত জমিদার শ্রেণি ।

রাশিয়ার সমাজ জীবনকে গ্রাস করে ফেলেছিল মারাত্মক ব্যাধির ন্যায় এই সার্ফ প্রথা। তারা প্রভুর সন্তুষ্টি বিধানে বাধ্য ছিল নির্যাতন সহ্য করার পাশাপাশি অর্থ এবং শ্রম দিয়েও। কর প্রদান ও জোরপূর্বক শ্রম গ্রহণের বিরুদ্ধে ভূমিদাস শ্রেণির অভিযোগ থাকলেও জমির মালিকদের পক্ষে ছিল দেশের সকল আইন- কানুন। রাশিয়াতে প্রায় ৭১টি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৮২৬ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত। সার্ফ প্রথার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে অর্থনৈতিক অবনতি, ব্যাপক বিদ্রোহের সম্ভাবনা প্রভৃতি পরিস্ফুট হয় উঠে। দেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে যদি এ প্রথার অবসান না হয়। আর জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এসব কারণে তা অনুধাবন করেন। তাই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সার্ফদের মুক্তিদানের আহ্বান জানান অভিজাত সম্প্রদায়ের কাছে। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের সাড়া তাদের নিকট থেকে পেলেন না। তাই তিনি মুক্তি ঘোষণা ( Edict of Emancipation) নামে এক ডিক্রি জারি করেন ১৮৬১ সালে। আর এভাবেই মুক্তিপ্রাপ্ত হয় সার্ফরা। অবশেষে এই সার্ফপ্রথা বিলুপ্ত হয় জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময়ে ৷

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় ভূমিদাস বা কৃষকদের উন্নয়নের ব্যাপারে পিটার কিছু নীতি গ্রহণ করলে ও সাফল্যের মুখ দেখেনি সেগুলো। জমিদাররা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ভূমিদাস শ্রেণিকে মনে করতো। তাছাড়া রাশিয়ার শাসকগণ রাশিয়ার শিল্পোন্নয়নের ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ছিল সেগুলো। পরবর্তীতে এই সার্ফ প্রথার বিলুপ্তি ঘটে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময়ে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram