বাংলায় মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব আলোচনা কর।

অথবা, ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও ।

 উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসনামলের পূর্বে মোগল আমল থেকে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার পতনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু ব্রিটিশরা মুসলমানদেরকে পরাজিত করে শাসনভার গ্রহণ করেছে। তাই প্রথম থেকেই তারা মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। মুসলমানদেরকে ব্রিটিশদের কোণঠাসা থেকে উদ্ধার করতে কিছু মুসলিম মনীষী কাজ শুরু করেন। এদেরকে শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলা হতো ।

→ বাংলায় শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান : পলাশি যুদ্ধের মাধ্যমে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্যদিয়ে ১৭৫৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের পতন ঘটে। ব্রিটিশরা প্রথম থেকে মুসলমানদের কোণঠাসা করে রাখতে শুরু করে। তারা মুসলমানদেরকে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। ব্রিটিশরা মুসলমানদের উপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করত। ব্রিটিশদের এসকল অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য মুসলমানদের মধ্য থেকে কিছু শিক্ষিত মুসলিম মনীষী এগিয়ে আসেন। তাদের মাধ্যমে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয় যেটি শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্যতম ব্যক্তিবর্গ ছিলেন স্যার সৈয়দ আমীর আলী খান, নবাব আব্দুল লতিফ, হাজী শরীয়তুল্লাহ, দুদু মিয়া, তিতুমীর প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। তারা কেউ ব্রিটিশদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মুসলমানদের জন্য কাজ করেছেন। আবার কেউ কেউ মুসলমানদেরকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেতন করেছেন।

ব্রিটিশদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে মুসলমানদের জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্যার সৈয়দ আমীর আলী খান এবং নবাব আব্দুল লতিফ। তারা মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। মুসলমানদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসায় আরবি শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষা চালু করেন। মুসলমানদেরকে সচেতন করার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন ও মোহামেডান লিটারেরী সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে যারা ব্রিটিশদের সাথে বিদ্রোহ করে মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, দুদু মিয়া, হাজী দানেশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। তারা ব্রিটিশ বিরোধী যতগুলো আন্দোলন গড়ে তুলেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলন এবং তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আন্দোলন। এই আন্দোলনগুলো যদিও ব্রিটিশদের পরাজিত করতে পারেনি, তথাপিও এই আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদেরকে শামিল করে। এ লক্ষ্যে ১৯০৬ সালে তারা নিখিল ভারতীয় মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে। এই দলের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত মুসলিম শ্রেণি মুসলমানদের অধিকার আদায় করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের পুরানো ঐতিহ্য ফিরে না পেলেও তাদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্রিটিশ ও হিন্দুদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন। মুসলমানদের নবজাগরণের ক্ষেত্রে বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবদান অনস্বীকার্য ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram