nulibrary

ভূমিকা : সমগ্র বিশ্বে যে ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সে ঘটনা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে এ যুদ্ধ। সোভিয়েত ইউনয়ন তার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ফ্রান্স ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের পূর্ব থেকে যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্নভাবে Alliance গঠন করে।

Grand Alliance গঠন : সোভিয়েত ইউনিয়ন হিটলারের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে মৈত্রীচুক্তি করার চেষ্টা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে। কিন্তু এই চেষ্টা ব্যর্থ হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি আস্থা ছিল না পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর । এজন্য বিলম্বিত হচ্ছিল চুক্তি করতে।

হিটলারের পরিকল্পনা থেকে তারা ও দূরে নয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো ভাবতে থাকে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ১৯৯১ সালের ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবাল আক্রমণ করলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে জাপানের এই আক্রমণের প্রতিশোধ গ্রহণ কল্পে রাজি হয় এই শর্তে যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যেন জাপানের আক্রমণ প্রতিহত করে এবং জাপান আক্রমণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো মিলে জোট গঠন করে এবং আস্থা বৃদ্ধি পায় তাদের মধ্যে।
তাছাড়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো রাজি হয় রাজনৈতিক আশা- আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মৈত্রী চুক্তিতে রাজি হয় কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের জনশক্তিকে কাজে লাগানো যাবে বলে তারা জানত এবং হিটলারকে পরাভূত করা সম্ভব খুবই সহজেই জার্মান আক্রমণ করে। তাছাড়া জার্মানি আক্রমণ করা সহজ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ।

অবশেষে চার্চিলই উদ্যোগ গ্রহণ করেন সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সাথে মৈত্রী চুক্তিতে। একতাবদ্ধ হয়ে জার্মানির সাথে যুদ্ধ করার ঘোষণা দেন তিনি। এটিকে স্বীকৃতি জানান রুপভেল্ট। Grand Alliance এভাবে তৈরি হয়। চিঠিপত্রের মাধ্যমে এ জোটের পরিকল্পনা আদান-প্রদান হতো। তাছাড়া তারা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবধারার ও আলাদা আদর্শের হলে ও তখন মৈত্রী জোট বা সম্মিলিত শক্তি গঠন করা জার্মানির হিটলারের হাত থেকে রক্ষা এবং তাকে মোকাবিলা করার জন্য সময়ের দাবি ছিল। সে সময়ের দাবি পূরণ করে এবং হিটলারের পরবর্তীতে পরাভূত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন এক হয়ে। আর মৈত্রীজোটের সাফল্য এটাই ছিল ।

ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হবার পর রাশিয়া আন্ত র্জাতিক স্বীকৃতির জন্য যখন সারা বিশ্বব্যাপী তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন জার্মানিই প্রথম তাদের দিকে মৈত্রীর জন্য এগিয়ে আসে। ১৯২২ সালে রুশ-জার্মান র‍্যাপেলো নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মাধ্যমে দুই ভার্সাই বিরোধী রাষ্ট্রের মধ্যে জোট সৃষ্টি হয়। এই চুক্তির ফলে পশ্চিমা শক্তি নড়েচড়ে বসে। এতোদিন রাশিয়াকে পাত্তা না দেওয়া পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে তাদের বিবেচনায় আনতে বাধ্য হয়।

র্যাপেলো চুক্তি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগে সোভিয়েত রাশিয়া নিজের অবস্থানকে শক্ত করার জন্য ইউরোপের মধ্যে তার সাম্যবাদী আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করে । যার ফলে ইউরোপীয় সমগ্র শক্তি একযোগে রাশিয়ার উপর আক্রমণ চালাতে থাকে এবং সোভিয়েত সরকারকে উৎখাত করতে রাশিয়ার বিপ্লব বিরোধী বাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়। ফলে সোভিয়েত সরকার দ্বৈত সমস্যার মুখোমুখি হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার কারণে অর্থাৎ পশ্চিমাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তখন রাশিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ছিল পশ্চিমাদের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ১৯২২ সালের ১৫ এপ্রিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিচেরিন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াল্টার ব্যার্থেনিউ-এর সাথে র‍্যাপেলো চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির মাধ্যমে দুই ভার্সাই চুক্তি বিরোধী শক্তি জোটবদ্ধ হয়।

র্যাপেলো চুক্তির শর্তাবলি :
১. সোভিয়েত রাশিয়া তার দেশে অর্থাৎ নিজ ভূমিতে জার্মানির সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি অস্ত্র উৎপাদনেরও সুযোগ দেবে।
২. রাশিয়া ও জার্মানি দুদেশ পরসাপরকে বাণিজ্যিক সুবিধার পাশাপাশি কূটনৈতিক স্বীঅকৃতি দেবে।
এই চুক্তি পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবর্তন করতে বাধ্য থাকবে। এই চুক্তির ফলাফল বিচার করলে এর তাৎপর্য অনুধাবন করা যায় । এই চুক্তির কিছু ফলাফল নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. এই চুক্তির ফলে রুশ-জার্মান বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। ২. আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার গুরুত্ব বেড়ে যায় ।
৩. পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষভাবে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এতে শঙ্কিত ওচিন্তিত হয়ে পড়ে।
৪. ইউরোপের রাজনীতিতে উভয় দেশের শক্তি বেড়ে যায়।
৫. এই চুক্তির ফলে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি কূটনৈতিক সমীহ করে চলতে থাকে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগে সোভিয়েত রাশিয়া নিজের অবস্থানকে শক্ত করার জন্য ইউরোপের মধ্যে তার সাম্যবাদী আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করে। কিন্তু রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার কারণে রাশিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ছিল পশ্চিমাদের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ১৯২২ সালের ১৫ এপ্রিল রাশিয়া ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী র‍্যাপেলো চুক্তি স্বাক্ষর করে।

ভূমিকা : ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব। লেনিন ছিলেন এ আন্দোলনের নেতা। রাশিয়ার বলশেভিকরা অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাফল্য লাভ করে তার অনবদ্য নেতৃত্বে। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার অকৃত্রিম কর্মপ্রচেষ্টা।

→ ১৯১৭ সালের বিপ্লবে বলশেভিকদের সাফল্য লাভের কারণ : নিচে এ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হলো :
১. প্রজাতন্ত্রী সরকারের যুদ্ধনীতি : সাধারণ শ্রেণির মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল রাশিয়ার প্রজাতন্ত্রী সরকারের যুদ্ধনীতি। বলশেভিক শ্রমিকরা কৃষকরা প্রচুর নির্যাতিত হতো জমিদারি প্রথায়। তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করা হতো না । সবকিছুর লভ্যাংশ ভোগ করতো কেবলমাত্র পুঁজিপতিরাই। তা থেকে বঞ্চিত ছিল শ্রমিকরা। বলশেভিকদের দলে এ কারণে যোগদান করেছিল শ্রমিকরা।

২. পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন : পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে বলশেভিকদের আন্দোলন ছিল। যার ফলে এতে বেশি সমর্থন যুগিয়েছিল সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি। কেননা বলশেভিক পার্টিই তাদের মুক্তি দান করতে পারে বলে তাদের ধারণা ছিল

৩. ব্যাপক প্রচারকার্য : বলশেভিকগণ প্রচুর পরিমাণে প্রচারকার্য চালাতে থাকে তাদের আন্দোলনের জন্য। মানুষকে . তাদের উদ্দেশ্য বুঝাতে সমর্থ হয়। ফলশ্রুতিতে বেশি পরিমাণে | জনবল সৃষ্টি হতে থাকে তাদের পক্ষে ।

৪. সহায়ক প্রতিশ্রুতি প্রদান : বলশেভিকগণ জমি ও রুটি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কৃষক ও শ্রমিকদের। তারা পরাজিত ও হতাশাজড়িত সেনাদলকে শান্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা সকল শ্রেণির আস্থা অর্জন করে এই প্রতিশ্রুতির জন্য। যা একটি বাস্তবমুখী প্রতিমূর্তি ছিল ।

৫. শ্রমিকদের নিজ লোক হিসেবে গণ্য : শ্রমিকদের নিজেদের লোক হিসেবে গণ্য করতো বলশেভিকগণ। সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের দ্বারা তারা জার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সাথে সাথে প্রজাতন্ত্রীদেরও ক্ষমতাচ্যুত করে। যার ফলে তাদের আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার হয়।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপরের কাজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে বলশেভিকদের বিজয়ের পেছনে। এক্ষেত্রে বেশি অবদান রেখেছিল বলশেভিকদের দূরদর্শী ও বাস্তবমুখী নীতি। বলশেভিকদের জয়লাভ সহজতর হয় শ্রমিক শ্রেণির সহযোগিতার পাশাপাশি রুশ সেনাদলের সহায়তার কারণে ।

ভূমিকা : মার্কসবাদ বা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্যতমএকজন মহানায়ক হলেন ফ্রেডারিক এঙ্গেলস। তিনি কার্ল মার্কসের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মার্কসবাদ প্রতিষ্ঠা করেতে কাজ করেন। বুর্জোয়া শ্রেণিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।

ফ্রেডারিক এঙ্গেলস পরিচয় : ফ্রেডারিক এঙ্গেলস ১৮২০ সালে জার্মানির এক বিখ্যাত ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রেডারিক কার্ল মার্কসের সমসাময়িক এবং বন্ধু ছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়াও ফ্রেডারিক আন্ত র্জাতিক সর্বহারা বিপ্লবের নেতা এবং শিক্ষক ছিলেন। ১৮৪৭ সালে ফ্রেডারিক কার্ল মার্কসের সাথে যুক্ত হয়ে কমিউনিস্ট লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৮৪৮ সালে দুজন যৌথভাবে কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার প্রকাশ করেন। কার্ল মার্কস যে Das Kapital গ্রন্থ রচনা করেন ফ্রেডারিক কার্ল মার্কসের মৃত্যুর পর বইটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন। তাছাড়া মার্কসবাদী তত্ত্বকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ফ্রেডারিক অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি মার্কসবাদের বিশুদ্ধতার জন্য ভুরিং গ্রন্থ রচনা করেন। মার্কসবাদকে সমর্থন করার কারণে ফ্রেডারিককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেনে কার্ল মার্কসের সাহচর্য লাভ করেন এবং এক সাথে মার্কসবাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কসবাদের প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের গুরুত্ব অপরিসীম। কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস মিলিতভাবে সমাজতন্ত্রকে সর্বজনগ্রাহ্য করার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রবর্তন করেন। মার্কসবাদ প্রতিষ্ঠায় ফেডারিকের অবদান অনস্বীকার্য।

ভূমিকা : কার্ল মার্কস ছিলেন আধুনিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা। তিনি তার মতাদর্শ প্রচার করার সময় বিভিন্ন সময়ে অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে ১৮৬৭ সালে প্রকাশিত "Das Kapital" গ্রন্থটি সর্বশ্রেষ্ঠ। এই গ্রন্থটি কার্ল মার্কসের লেখা পুঁজিবাদীদের সমালোচনামূলক একই বই। সমাজ প্রগতির সাথে অর্থনীতির জটিল সম্পর্কে মার্কসবাদের প্রধান অংশ। কার্ল মার্কস তাঁর এই গ্রন্থটি রচনা করে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

দাস ক্যাপিটাল (Das Kapital) : Das Kapital ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো পুঁজি। এটি কার্ল মার্কসের লেখা পুঁজিবাদের সমালোচনামূলক একই বই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে। এটি কার্ল মার্কসের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি | তিনটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়। প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালে, দ্বিতীয়টি ১৮৮৫ ও তৃতীয়টি ১৮৯৪ সালে। এই গ্রন্থটিকে সমাজতন্ত্রীদের বাইবেলরূপে গ্রহণ করা হয়।
Das Kapital গ্রন্থে মার্কস যে ধারণাগুলোর উপর আলোচনা করেন সেই ধারণাগুলোর সনাতন অর্থনীতিবিদদের সূত্রেই নেওয়া। যদিও তিনি এগুলো ব্যবহার করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করতে। বিনিময়, উৎপাদন, মূল্য, শ্রম, শ্রমের সামর্থ্য বা ক্ষমতা, শ্রমবিভাগ, বিসুক্তি, সম্পত্তি, মুনাফা প্রতিটি ধারণাকেই মার্কস উপস্থিত করেছেন। এ বিষয়ে অর্থনীতির প্রবক্তাদের বা ব্যাখ্যাকারদের বক্তব্য দিয়ে এবং এরপর প্রতিটি বিষয়ের উপর নিজস্ব মতবাদ উপস্থিত করে প্রচলিত মতকে খণ্ডন করেছেন।
Das Kapital গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে কার্ল মার্কস বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েতের সম্পর্কের বিষয়বস্তু গভীরভাবে তুলে ধরেন তাছাড়া এই গ্রন্থ তিনি নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একজন অবিসংবাদিত আন্দোলনের নেতা হিসেবে কার্ল মার্কসের ‘Das Kapital' গ্রন্থটি সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এই গ্রন্থে পুঁজিতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই গ্রন্থের জন্য ১৯১৭ সালে রাশিয়াতে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয় । সর্বোপরি বলা যায়, তার গ্রন্থের ভূমিকা অনেক ।

ভূমিকা : সবার কাছে রাসপুটিন পরিচিত রাশিয়ার দ্বিতীয় নিকোলাসের দরবারে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে। রাজদরবারের অনেক কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। কারণ তার ব্যাপক প্রভাব ছিল রাজদম্পত্তির উপর। তাছাড়া রাসপুটিন ছিলেন একজন রুশ সন্ন্যাসী একজন অভিজ্ঞ পরিব্রাজক।

রাসপুটিন : তুরা নদীর তীরে পত্রভস্কায়া নামে সাইবেরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রামে ১৮৭২ সালে রাসপুটিন জন্মগ্রহণ করেন গ্রেডারি ইয়েফেমোভিট রাসপুটিন ছিল তাঁর পূর্ণনাম। তার দুইজন সহদোর ছিল বলে মৌখিক সূত্র থেকে জানা যায়। কারণ তেমন কোনো লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়নি তার শৈশব সম্পর্কে। তার বড় ভাইয়ের নাম দমিত্রি এবং বোন মারিয়া। ঘোড়ার ব্যবসা করতেন রাসপুটিনের পিতা। একবার তার কয়েকটি ঘোড়া চুরি হলো। ঘোড়া চোরদের নাম বলে দিয়েছিলেন রাসপুটিন। ছেলেটা খ্রিস্টের আশীর্বাদ পেয়েছে বলে গ্রামের লোকেরা বলাবলি করতো।

রাসপুটিনের মধ্যে ধর্মীয় পরিবর্তন আসে ১৮ বছর বয়সে। তিনি একজন পরিবর্তিত মানুষ হয়ে যায় এ সময়। তিনি বিয়ে করেন ১৮৮৯ সালে। তার সংসারে তিনটি বাচ্চা হয়। তবুও তার মন সংসারে বসেনি। ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তিনি। তিনি এভাবেই জার দ্বিতীয় নিকোলাসের দরবারে তার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। রাসপুটিনের সব কথাই শুনতেন ও মানতেন দ্বিতীয় নিকোলাসের স্ত্রীগণ । রাজদরবারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা প্রচার করার কারণে। কিন্তু অন্যান্যরা এতে খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ দ্বিতীয় নিকোলাসের দুর্বলতা রাসপুটিনের প্রভাবে আরো বেশি প্রকাশ পাচ্ছিল এবং রাজদরবারের ও ক্ষতি হচ্ছিল। রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্গতিকে জারিনা আলেকজান্ডার উপর রাসপুটিনের প্রভাবের জন্য হয়েছে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ।

পরবর্তীতে রাসপুটিনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯১৬ সালে । কারণ তিনি বহুল আলোচিত ছিলেন তার চারিত্রিক অসততা, অর্থ লোলুপতা প্রভৃতি কারণে। প্রথমে বিষ খাওয়ানো হয় তাকে। তারপরে গুলি করে নদীতে ফেলে তাকে হত্যা করা হয় । আর প্রিন্স ফেলিকস ইউসুপভ ছিলেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্যোক্তা।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, রাসপুটিনকে গুপ্তভাবে হত্যা করা হয় ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে। তাছাড়া তাকে মনে করা হতো চরিত্রহীন, লম্পট এবং তৎকালীন রাশিয়ার অনেক দুষ্কর্মের হোতা হিসেবে। রাসপুটিন তার মধ্যে অন্যতম যে কয়েকজন ব্যক্তি ইতিহাসে কুকর্মের দ্বারা কুখ্যাত পরিচয়ে পরিচিত হয়ে আছেন ।

ভূমিকা : রাশিয়ার জার শাসনামলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল নারোদনিক আন্দোলন। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শাসনামলে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। নারোদনিক আন্দোলন ছিল মূলত রাশিয়ার যুবকদের ধ্বংসাত্মক আন্দোলন ।

→ নারোদনিক আন্দোলন : রাশিয়ার জার শাসনামলের আন্দোলনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি আন্দোলন হলো নারোদনিক আন্দোলন । ষাটের দশকে যে নিহিলিস্ট আন্দোলন শুরু হয়েছিল সে আন্দোলন ক্রমান্বয়ে নারোদনিক আন্দোলনের রূপ ধারণ করে। নারোদ শব্দটি রুশ শব্দ এর অর্থ হচ্ছে জনসাধারণ। অর্থাৎ নারোদনিক আন্দোলন ছিল জনসাধারণের আন্দোলন। রাশিয়ার বুদ্ধিজীবীগণ যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন তাতে জনগণের নজর কাড়ে। জনগণ আন্দোলনে একাত্বতা ঘোষণা করে । আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ‍ই ছিল যুবক। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ আন্দোলন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের রূপ নেয় । সেটি সন্ত্রাসবাদ আন্দোলন নামে খ্যাতি লাভ করে। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন এম.এ বাকুনিন। বাকুনিনের অনুসারীরা রাশিয়ার বিভিন্ন বড় বড় শহরগুলোতে বিশেষ করে মস্কো, কিয়েভ, সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রভৃতি শহরে শ্রমিকদের মাঝে আন্দোলনের বীজ বপন করে। ফলশ্রুতিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ক্রমান্বয়ে নৈরাজ্য ও জঙ্গীবাদ আন্দোলনে পরিণত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নারোদনিক আন্দোলন রাশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই আন্দোলনের সময় সমগ্র রাশিয়া একটি নৈরাজ্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। রাশিয়ার জার শাসনের পরিসমাপ্তিতে নারোদনিক __আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।

ভূমিকা : উনিশ শতকের এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল রাশিয়ার শাসনতন্ত্রের ইতিহাসে ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দাস ছিল স্লাভরা জাতিগোষ্ঠী। যদিও স্লাভরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, জাতিগোষ্ঠী জারতান্ত্রিক রুশ সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে। ভূমি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রধান চালিকার শক্তি ছিল এই দাসরা। কিন্তু নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো মনিবের অধীনে থাকা এই দাসরা। এদের মানবিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। সাধারণত স্বামীর স্বার্থকে কেন্দ্র করে এদের জীবন আবর্তিত হতো। মানব অধিকার পশ্চিম ইউরোপে বিভিন্ন উদারবাদী বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল জারতান্ত্রিক রাশিয়া।

ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা : প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার অভিজাত শ্রেণি বিদ্যমান ছিল রাশিয়া জুড়ে। তারা অধিকাংশই ছিল সম্পদশালী। পরিবারে অধীনস্থ সার্ফ বা ভূমিদাস শ্রেণির সংখ্যা অনুপাতে তাদের বিত্তের পরিমাণ নির্ধারিত হতো। মধ্যবিত্ত বলতে কোনো শ্রেণির অস্তিত্বই ছিল না রাশিয়া সমাজে। অভিজাত শ্রেণিদের জন্য বরাদ্দ ছিল রাষ্ট্রের সকল প্রকার সুযোগ- সুবিধা, সরকারি চাকরি ও। কিন্তু নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হতো ভূমিদাসদের উপর। কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের চলাফেরা এবং ব্যক্তিগত সামান্য সম্পত্তির উপর। সার্ফ প্রথা এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে রাশিয়ার ইতিহাসে। সাধারণত ভূমিদাস বা সার্ফ প্রথা বলতে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় দাস বা সার্ফদের বেগার খাটানোর পদ্ধতিকে বোঝায়। রাজার জমিদারিতে বসবাসরত সার্ফদের অর্থাৎ ভূমিদাসদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় ব্যক্তি বিশেষের অধীনস্থ ভূমিদাসের তুলনায় তাদের (mir) মির নামক গ্রামীণ সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা হয়েছিল ভূমিদাসদের বিভিন্ন সংঘকে একত্রিত করার মাধ্যমে। জমিদারদের হাতেই ন্যস্ত ছিল যেকোনো ধরনের দণ্ড এবং নির্বাসন দেয়ার অধিকার। যদিও মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছিল সার্ফ। কিন্তু মানবিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না সার্ফদের। তাদেঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালাত জমিদার শ্রেণি ।

রাশিয়ার সমাজ জীবনকে গ্রাস করে ফেলেছিল মারাত্মক ব্যাধির ন্যায় এই সার্ফ প্রথা। তারা প্রভুর সন্তুষ্টি বিধানে বাধ্য ছিল নির্যাতন সহ্য করার পাশাপাশি অর্থ এবং শ্রম দিয়েও। কর প্রদান ও জোরপূর্বক শ্রম গ্রহণের বিরুদ্ধে ভূমিদাস শ্রেণির অভিযোগ থাকলেও জমির মালিকদের পক্ষে ছিল দেশের সকল আইন- কানুন। রাশিয়াতে প্রায় ৭১টি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ১৮২৬ থেকে ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত। সার্ফ প্রথার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে অর্থনৈতিক অবনতি, ব্যাপক বিদ্রোহের সম্ভাবনা প্রভৃতি পরিস্ফুট হয় উঠে। দেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে যদি এ প্রথার অবসান না হয়। আর জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এসব কারণে তা অনুধাবন করেন। তাই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সার্ফদের মুক্তিদানের আহ্বান জানান অভিজাত সম্প্রদায়ের কাছে। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের সাড়া তাদের নিকট থেকে পেলেন না। তাই তিনি মুক্তি ঘোষণা ( Edict of Emancipation) নামে এক ডিক্রি জারি করেন ১৮৬১ সালে। আর এভাবেই মুক্তিপ্রাপ্ত হয় সার্ফরা। অবশেষে এই সার্ফপ্রথা বিলুপ্ত হয় জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময়ে ৷

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় ভূমিদাস বা কৃষকদের উন্নয়নের ব্যাপারে পিটার কিছু নীতি গ্রহণ করলে ও সাফল্যের মুখ দেখেনি সেগুলো। জমিদাররা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ভূমিদাস শ্রেণিকে মনে করতো। তাছাড়া রাশিয়ার শাসকগণ রাশিয়ার শিল্পোন্নয়নের ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ছিল সেগুলো। পরবর্তীতে এই সার্ফ প্রথার বিলুপ্তি ঘটে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময়ে ।

ভূমিকা : বিশ্ব ইতিহাসের আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সোভিয়েত ইউনিয়ন হিটলারের আকস্মিক আক্রমণের কারণে এ যুদ্ধে প্রথমদিকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও এ বিপর্যয় খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠে। এক পর্যায়ে হিটলার কর্তৃক দখলকৃত ইউরোপের বিরাট এলাকা থেকে ক্রমান্বয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে তারা হিটলার বাহিনীকে বিতাড়ন ও বিভিন্ন দেশ মুক্ত করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বার্লিনের পতন ঘটাতে সক্ষম হয় তারা । নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ : সোভিয়েত ইতিহাসে দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ বা Great Patriotic war নামে পরিচিতি ১৯৪১ সালের ২২ জুন থেকে ১৯৪৫ সালের ৯ মে পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রশক্তির পক্ষে অক্ষশক্তির বিপক্ষে বা বিরুদ্ধে দেশপ্রেমকে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে যুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট কেন জার্মানি রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে ১৯৪১ ৮ সালের ২২ জুন রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ন্ন ইউনিয়ন আক্রমণ করে জার্মানির হিটলার স্বার্থ নিজ রক্ষার্থে এবং খুব বেশি আগ্রাসী হয়ে। দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ বা Great Patriotic war নামে অভিহিত করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ন। ১৯৪১ সালের ২২ জুন থেকে ১৯৪৫ সালের ৯ মে জার্মানির ক আত্মসমর্পণের তারিখ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন ফ্রন্টে ক সোভিয়েত লালফৌজ, কমিউনিস্ট পার্টির অগণিত নেতাকর্মী ও ক দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণ নাৎসি জার্মানি ও তার বিভিন্ন মিত্র-রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনা করে। সোভিয়েত জনগণের দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ বা Great patriotic war of the Soviet People Velikey a teachest Vennaya Voyna Sovetskoge Naroda নামে একটি শিরোনাম করে বড় প্রবন্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি পত্রিকা প্রাভদা প্রকাশ করে জার্মান কর্তৃক রাশিয়া আক্রান্ত হলে। নাৎসি জার্মানির ক আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য এ প্রবন্ধে টি সোভিয়েত জনগণকে আহ্বান জানায়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত
সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস গ্রন্থে দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ বলতে বলা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ি দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ শুরু হলো। সোভিয়েত জনগণ রক্ষা f করেছিল তাদের সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমি তাই এটা দেশপ্রেমিক = মহাযুদ্ধ। এটা হলো মহাযুদ্ধ তার কারণ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে = জীবন-মরণ সংগ্রামের নামল সোভিয়েত জনগণ। সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভবিষ্যতেই শুধু নয়, পৃথিবীর শ্রমিক শ্রেণির আর জাতীয় ি মুক্তির আন্দোলনের ভবিষ্যতে সমগ্র বিশ্বজনের ভবিষ্যৎই নির্ভর করেছিল এর পরিণতি উপর। ফ্যাসিস্ট আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত জনগণের যুদ্ধটা ছিল ন্যায়যুদ্ধ। কমিউনিস্ট পার্টি আর সোভিয়েত সংস্কার ঘোষণা করলো ফ্যাসিবাদের উপর পূর্ণাঙ্গ জয় হওয়া আবদ্ধ যুদ্ধ চালানো হয়ে। জাতীয় স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত সমস্ত পদানত মানুষকে সাহায্য করা হবে সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণকারীদের জোরাল ছুঁড়ে ফেলে দেবার জন্য ।
এ যুদ্ধের দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিভুক্ত অঞ্চলে বলা হলেও এ শব্দের ব্যবহার বাইরে সচরাচর লক্ষ করা যায় না। তাছাড়া দেশপ্রেমিক যুদ্ধ নামে পরিচিত নয়। সোভিয়েত ইউনয়নের সাথে জাপান কিংবা ১৯৩৯ সালের পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রের যুদ্ধ। রাশিয়া অভিযান বা পূর্ব ফ্রন্টের অভিযান হিসেবে পরিচিত জার্মানির এ অভিযান বা আক্রমণ ।
লাল ফৌজের পাশাপাশি সকল দেশপ্রেমিক জনগণ সমাজতান্ত্রিক মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য নাৎসি জার্মানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় সোভিয়েত সরকারের আহ্বান ও কমিউনিস্ট পার্টির আহ্বান এ সাড়া দিয়ে। তাই এটা দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধ। রাশিয়ান জনগণের আত্মত্যাগ মানব ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ছিল। এই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিশাল সেনাবাহিনী ও বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী জার্মানির পতন শুরু হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন একাকী প্রায় তিন বছর যুদ্ধ করে জার্মানির বিরুদ্ধে। এতে নিহত হয় ২৬.৬ মিলিয়ন সোভিয়েত নর নারী। সোভিয়েত দেশপ্রেমিক জনতা এ মোকাবিলার মাধ্যমে শুধুমাত্র সোভিয়েতকেই রক্ষা করেনি। তাদের অবদান সারা বিশ্বকে রক্ষার ক্ষেত্রে ছিল অন্যান্য।
সোভিয়েত সরকার জার্মানির সাথে যুদ্ধের সময় "Order of the patriotic war" পুরস্কার চালু করে বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য। কমিউনিস্ট পার্টি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা কমিটি সেরা উৎপাদনকারীর জন্য লাল পতাকা এবং বোনাস পুরস্কার চালু করেছিল
ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে মুক্তি :

১. ৫ই নভেম্বর তারিখে সোভিয়েত সৈনিকরা কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছল। সোভিয়েত বাহিনী আর জার্মান বাহিনীর মাঝে লড়াই বেঁধে গেল সেদিন রাতেই শহরের রাস্তায়। লড়াই শেষ হলো ৬ নভেম্বর সকাল ৪টা নাগাদ । ইউক্রেনের রাজধানী অবশেষে মুক্ত হলো ।
২. পেছনে সরতে থাকে জার্মান সৈন্যরা। এ সময় পোড়া মাটির নীতি গ্রহণ করে তারা। কলকারখানা, রেলস্টেশন, গবেষণাকেন্দ্র, সাধারণ ঘর বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা।
৩. তেহরান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালের শেষের দিকে। স্তার্লিং চার্চিল আর রুজভেল্ট তিন প্রধান নেতা সেখানে ছিলেন। ১৯৪৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে পশ্চিম ফ্রন্ট খোলার হবে না জার্মানিকে। আহ্বান জানান স্তার্লিং। অন্যথায় এতো দ্রুত পরাস্ত করা সম্ভব
৪. ক্রিমিয়ায় এপ্রিল মাসের গোড়ায় কামান গর্জে উঠল। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে জেনারেল ইয়েরেমস্কো আর জেনারেল তোলবুখিনের বাহিনী মুক্ত করতে এগিয়ে আসলো। কৃষ্ণসাগর ও অপোভসাগরও এর পাশাপাশি তাদের দখলে আসে। এভাবে ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি তাদের হাতে আসে কয়েকদিনের মধ্যেই। লেভাস্তপোলে অবরোধ করলো জার্মান বাহিনী। ঐ অবরোধ নষ্ট করে দেয় সোভিয়েত সৈন্যরা ৯ মে। ৬ জুন তারিখে ব্রিটিশ আর মার্কিন ফৌজ উত্তর ফ্রান্সের নর মাস্তিতে অবতরণ করে জেনারেল আইজেন হাওয়ারের নেতৃত্বে। ফরাসি প্রতিরোধ শক্তির সহায়তায় জার্মানদের ফ্রান্স থেকে সরিয়ে দিল শরৎকালে।
৫. এদিকে উত্তর পশ্চিমে ফিনল্যান্ডের দিকে অগ্রগামী হলো সোভিয়েত বাহিনী। ফিনল্যান্ডের ফৌজকে পরাস্ত করলো তারা। তখন যুদ্ধ বিরতি চাইলো ফিনল্যান্ড। ৪ সেপ্টেম্বর এ ফ্রন্টে যুদ্ধবিগ্রহ শেষ হয় ।
৬. বেলোরুশিয়ায় আক্রমণ অভিযান চালায় ১৯৪৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে। এখানে ৩৭০ মাইল ফ্রন্ট ছিল। এখানেও জার্মান বাহিনীকে পরাস্ত করা হয় বার্গামিয়ান, জাথারভ ও রকোসভস্কির নেতৃত্বে। প্রায় ৫ লক্ষাধিক সৈন্য হতাহত হয় জার্মানদের। এ সময় একটি বিশাল অংশ যুক্ত হয় বেলোরুশিয়া ও লিথুনিয়ার ।
৭. এরপর গোটা মোলদাভিয়াকে মুক্ত করে জেনারেল মালিনভাস্কি আর জেনারেল তোলবুথিনর পরিচালিত অভিযানে ২২টি জার্মান ডিভিশনকে পরাস্ত করে।
৮. সোভিয়েত বাহিনী মোলদাড়িয়ার পর প্রবেশ করে রুমানিয়ায়। যুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনীকে সাহায্য করেছিল রোমানিয়া সরকার। তাই এসময় পালিয়ে যায় রোমানিয়ার সরকার। তবে SU-কে স্বাগত জানান রোমানিয়ার কমিউনিস্টরা। আর তখন ক্ষমতা দেওয়া হয় তাদের হাতে।
৯. সোভিয়েত বাহিনী রুমানিয়ার ভেতর দিয়ে বুলগোরিয়ায় প্রবেশ করলো। এ সময় নতুন প্রেরণা পেল বুলগেরিয়ার বিপ্লবী স্বাধীনতা নেতা ও কমিউনিস্টরা। জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো তারা ।
১০. দানিয়ুব উপত্যকায় যুগোস্লাভিয়ার সামরিক বাহিনীর সাথে সোভিয়েতের পদাতিক রেজিমেন্টগুলো মিলিত হয় ২৩ মে তারিখে। তারা দালদার জার্মানদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিল তিন বছর ধরে। তবে পেরে উঠছিল না জার্মান বাহিনীর সাথে । সোভিয়েতের সহায়তায় রাজধানী শহর মুক্ত হয় ২০ সেপ্টেম্বর।
১১. পোল্যান্ডে সোভিয়েতের সৈন্যরা ঢুকে পড়ে ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মকালে। তবে সেখানে জার্মানরা সহজেই সৈন্য সমাবেশ করতে পারতো কারণ পোল্যান্ড জার্মানির কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়। এ সময় রাজধানী ওয়ারস শহরটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয় হিটলারের নির্দেশে। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ ওয়ারসে মারা যান জার্মান আক্রমণে। সোভিয়েত বাহিনী এখানে পরিকল্পনা করলো যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করার। প্রথম পর্যায়ে তারা ওয়ারেসে প্রবেশ করতে না পারলেও পরবর্তীতে এদিকে মনোযোগ দেন অন্যসব জায়গায় যুদ্ধ শেষ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সকল রাজ্য জার্মানিদের হাত থেকে মুক্ত করে ফেলে ১৯৪৪ সালের মধ্যেই। জার্মানির হাতে লাতবিনিয়ার কিছু অংশ রয়ে যায়।

যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব/বার্লিনের পতন/ সোভিয়েতের বিজয় : সোভিয়েত জানুয়ারি মাসের ২ সপ্তাহে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক আক্রমণ আরম্ভ করে। ওয়ারস মুক্ত করে সোভিয়েত বাহিনী নির্ময় ক্ষান্তিহীনভাবে দ্রুত পশ্চিমে এগিয়ে ১৭ জানুয়ারি তারিখে। তারপর পোল্যান্ডের অসভেনস্মি শহরের বাহিরে একটি বন্দি শিবির দেখে বিভীষিকার সম্মুকীন হয় সোভিয়েত সৈনিকরা। সেখানে পাওয়া যায় লক্ষাধিক মানুষে হাড় আর নারীদের চুল । প্রায় ৪০ লক্ষের বেশি মানুষকে এখানে হত্যা করছে জার্মান বাহিনী। তারপর চেকোস্লোভাকি এবং অস্ট্রিয়ায় গিয়ে ব্রাতিস্থাভা এবং ভিয়েনাকে মুক্ত করছিলো সোভিয়েত বাহিনী বুদাপেস্ট।

যুদ্ধের শেষ পর্ব চলছিল এ পর্বে। চূড়ান্ত মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল যেসব সোভিয়েত বাহিনী ওদের আর নেই যে নদী পার হয়েছিল যারা তারা বার্লিন থেকে মাত্র ৮০-৫০ মাইল দূরে ছিল। নাৎসি বাহিনী তখন ক্ষয়ক্ষতি আর দুর্গতিই বাড়াচ্ছিল পরাজয় মেনে না নিয়ে। সব ট্রেঞ্চ ব্যারিকোড আর পিলবক্স তারা সামরিক আর বেসামরিক নাগরিকদের লাগিয়ে গড়তে থাকলো। কামান স্থাপনের মঞ্চ পরিণত করলো বসতবাড়িকে। বার্লিন আক্রমণ শুরু হয় ১৫ এপ্রিল রাতে । মার্শাল জুকভের বাহিনী চললো জার্মানির রাজধানীতে ।
দক্ষিণ দিক থেকে আসে মার্শাল কোনেভের বাহিনী। উভয়পক্ষেরই বহু লোক বার্লিনে যে লড়াই ১০ দিন পর্যন্ত চলছিল তাতে হতাহত হয়। সোভিয়েত বাহিনী রাইথস্টাগের উপর লাল পতাকা উড়ায় ৩০ এপ্রিল রাতে।
জার্মান বাহিনী অবশেষে আত্মসমর্পণ করলো। সাদা পতাকা নিয়ে তারা বের হয়ে আসলো শিবির ও নানান আশ্রয়স্থল থেকে। ইউরোপের শেষ লড়াই ছিল চেকোস্লাভা রাজধানী প্রাগকে মুক্ত করার লড়াইটি। প্রাগ সোভিয়েত মুক্ত করে মে। বিধিবদ্ধভাবে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৪৫ সালের ৮ মে। সেদিন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বার্লিন শহরের কার্লসহস্টে। পরদিন বিজয় দিবস উদযাপিত হয় সোভিয়েত ইউনিয়নে ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, হিটলার এর বিরুদ্ধে চরম ও দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলে সোভিয়েত তার জনগণকে দেশপ্রেমিক মহাযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে। প্রথমত হিটলারের হাত থেকে মুক্ত করে আর সামান্য কিছু অংশ ব্যতীত পুরো ইউরোপকেই হিটলারের নিকট থেকে মুক্ত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৪ সালের মধ্যে। এ বীরত্ব কর্মের ফলে সোভিয়েতের মতাদর্শ অর্থাৎ সমাজতন্ত্র দ্রুত ছড়িয়ে যায় পূর্ব ইউরোপের দেশসহ অন্যান্য জায়গায়। ফলে আতঙ্কিত হতে থাকে পুঁজিবাদী আমেরিকাসহ অন্যান্য মিত্রশক্তি। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সোভিয়েতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ।

ভূমিকা : হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করে তার যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্র হিসেবে। যে অভিযান সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত ও দখল করার জন্য প্রেরণ করা হয় ইতিহাসে তা অপারেশন বারবারোসা হিসেবে পরিচিত। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়নের পুরোটা তার বাসনা অনুযায়ী দখল করতে না পারলেও সোভিয়েতসহ ইউরোপের অনেকাঞ্চল যুদ্ধের প্রথম দিকে হিটলার দখল করতে সফল হয়।

অপারেশন বারবারোসা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে বিদ্যুৎগতিতে ফ্রান্সসহ অনেক অঞ্চল দখল করে নেয় হিটলার। পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের রাজ্যসমূহ যখন জার্মানি দখল করে নেয় তখনই বুঝা যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে জার্মান বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের খসড়া হিটলার ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধ করার সময়ই প্রণয়ন করে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করে। সর্বাধিক কম সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোই ছিল হিটলারের এ পরিকল্পনার মূলকথা। কেননা নেপোলিয়নের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছিল হিটলার। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধকে নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট দীর্ঘায়িত করে যে মারাত্মক ভুল করেছিল সে পথে হাঁটতে চাননি হিটলার। রুশ প্রতিরোধ শীত শুরু হওয়ার পূর্বে তিন মাসের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে বলে হিটলারের সুদৃঢ় বিশ্বাস ছিল।

হিটলার ১৯৪০ সালের ১৮ ডিসেম্বর বলকান অঞ্চলে আক্রমণের সময়েই স্বাক্ষর করেন অপারেশন বারবারোসা (Operation barbarossa) কোড নামে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সিদ্ধান্তে। সিদ্ধান্তের সাথে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ না করে সিদ্ধান্তের ৬ মাস পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করা হিটলারের জন্য চরম পর্যায়ের ভুল ছিল। হিটলার রুশ জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির ২১ মাস পর এ চুক্তি ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে ১৯৪১ সালের ২২ জুন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে হিটলার এ অপারেশন বারবারোসা পরিচালনা করে ৪০,০০,০০০ সৈন্য, ৩,৩০০ ট্যাংক ৫,০০০ বোমারু বিমানসহ। বিশ্ব ইতিহাসের সর্ববৃহৎ স্থলযুদ্ধ ছিল এই অপারেশন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে হিটলার সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিচালনা করে তার এ বাহিনী নিয়ে ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে রিসক্রিজের বা বিদ্যুতের গতিতে অপারেশন পরিচালনা করবে বলে হিটলার এবং তার জেনারেলদের পরিকল্পনা ছিল। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই সোভিয়েতের লাল ফৌজ বা Red Army-কে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করা যাবে তাদের এ বিশাল বাহিনীর মাধ্যমে এবং গুড়িয়ে দেয়া যাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা এটা তাদের ধারণা ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতিগুলো জার্মানির গোলামে পরিণত হবে এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা খতম হবে।
ফ্যাসিস্ট ইতালি, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, নাৎসিপন্থী, শ্লোভাকিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জার্মানি কর্তৃক পরিচালিত এ অপারেশন বারবারোসাতে জার্মানির পাশাপাশি যোগ দেয়। হিটলারের অপারেশন বারবারোসা এভাবেই চলে ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের কারণসমূহ : সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে হিটলার তার কৌশলগত কারণে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি সম্পাদন করলেও ১৯৪১ সালে হিটলার রুশ- জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৯৪১ সালের ২২ জুন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে।

নিচে হিটলার কর্তৃক এই অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের কারণসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. একটি কৌশলগত বিষয়মাত্র ছিল হিটলারের নিকট রুশ- জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিটি। তাই এর প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন না তিনি। ঐতিহাসিক বুলকের মতামত এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তাঁর মতে, একের পর এক নীতির দ্বারা পরিচালিত হিটলার পাশ্চাত্য শক্তির পরাজয়ের পর পূর্বের দিকে ঝাঁপ দেয় অর্থাৎ তিনি রাশিয়া,আক্রমণ করেন ।
২. রুশ-জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি সামঞ্জস্যহীন ছিল হিটলারের ইহুদি, শ্লাভ ও কমিউনিজম বিরোধী রাজনীতির এবং পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে। ফলে হিটলারের পূর্ব ইউরোপে সম্প্রসারণ নীতির মূল লক্ষ্যে ফিরে আসা ছিল তার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ। হিটলার কৌশলগতভাবে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যেন সামরিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিরপেক্ষ রাখা যায়। হিটলারের রণনীতির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ অনেক বেশি সঙ্গতপূর্ণ ছিল এসব দিক পর্যালোচনা করলে জানা যায় ।
৩. সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে প্রভূত খাদ্য ও রসদ সরবরাহ করতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে। জার্মানিকে রাশিয়া দূরপ্রাচ্য থেকে রাবার, টিন, নিকেল প্রভৃতি সাইবেরিয়ার পথে এনে সরবরাহ করতো। জার্মানির সামাজিক শক্তিতে রাশিয়া ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে যখন জার্মানির হাতে পশ্চিম ইউরোপে ফ্রান্সের পতন হয়। এছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল সরবরাহ। এজন্য রাশিয়ার উপর চরম আকারে ক্ষুব্ধ হয় জার্মানি 1.
৪. সোভিয়েত ইউনিয়ন দার্দানোলিস প্রণালির উপর তাদের নৌ-আধিপত্য দাবি করলে এতে আপত্তি জানায় জার্মানি। যার কারণে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে দু'দেশ।
৫. হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণের পেছনে জড়িত ছিল অর্থনৈতিক কারণও। অনাক্রমণ চুক্তির ব্যর্থতায় প্রধান কারণ বা ব্যর্থতার জন্য দায়ী ছিল অর্থনৈতিক কারণই যা অধ্যাপক রাইডার মত প্রদান করেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে হিটলারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার সাথে হিটলারের অনাক্রমণ চুক্তি। এ অনাক্রমণ চুক্তির সুযোগ নিয়ে বাল্টিক অঞ্চলের তিনটি রাষ্ট্র এবং বেসারাবিয়া হতে সুযোগ গ্রহণ করতে থাকে স্ট্যালিন। রাশিয়ার বলকান অঞ্চলে ও তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছিল যা হিটলারের জন্য যথেষ্ট অস্থির। সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর এজন্য হিটলার চড়াও হয়। হিটলারের যুদ্ধের জন্য জরুরি বিবেচিত হয় রুমানিয়ার খনিজ তেল।
এছাড়া ইউরোপ অবরুদ্ধ জার্মানির জীবন রক্ত অনেকাংশ নির্ভরশীল ছিল। রাশিয়ার বিভিন্ন কাঁচামাল; যেমন-
১. ককেশাসের তেল ক্ষেত্র এবং
২. ইউক্রেনের খাদ্যশস্য, কয়লা ও লোহার উপর হিটলার সন্তুষ্ট হতে পারেনি যখন ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে একটি নতুন রুশ-জার্মান অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাই এসব কাঁচামালের অধিকার অর্জনের জন্য হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে।
৬. ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জার্মানির বিরাট বিমান বহর। জার্মানিকে এই সুযোগে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার বিরাট লোকবল নিয়ে পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ করবে বলে হিটলার ভেবেছিল। ফলে হিটলার অগ্রগামী হয়ে নিজে থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেন এ সম্ভাবনাকে রোধ করার জন্য।
৭. হিটলারকে রাশিয়া আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করে পশ্চিম ও পূর্ব, ইউরোপের রণাঙ্গনে ইতোমধ্যে জার্মানি সেনাবাহিনীর অভাবনীয় সাফল্য। তাছাড়া জার্মানির আশঙ্কা বাড়ে রাশিয়ার উত্তরোত্তর শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধিতে। হঠাৎই জার্মানি আক্রমণ করতে পারে এটা হিলার আশঙ্কা করেন। তাই আক্রান্ত হওয়া থেকে আক্রমণ করাই শ্রেয় বলে হিটলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।
৮. আর শেষত হিটলারের আশঙ্কা আরো বেড়ে যায় যখন ১৯৪০ সালের শেষের দিকে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের মস্কো সফল করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্রিটেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রী জোট গঠনের পূর্বেই হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করতে চেয়েছিল।

ফলাফল : জার্মান দ্বারা অবর্ণনীয় নারকীয় তান্ডব চালানো হয় সোভিয়ে দেশগুলোর সাধারণ নাগরিকের উপর। হাজারে হাজারে 'বন্দি শিবিরে আটক করে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় তাদেরকে। গণহত্যা চালানো হয় গ্রামের পর গ্রামে। সাধারণ জনগণের যানমালের প্রচুর ক্ষতি হয় উভয়পক্ষের পোড়ামাটি নীতির ফলে। প্রায় ২০ মিলিয়ন সাধারণ মানুষকে এভাবে হত্যা করা হয়।
যে ব্যাপকহারে সোভিয়েত জনগোষ্ঠী নিহত হয় তার এক বিরাট অংশ ছিল সন্তান জন্মদানে সক্ষম যুবক নাগরিক গবেষক জিওফ্রে এ হাস্কিং এর মতে ।
সোভিয়েত লোকসংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন কমে যায় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। আবার জার্মানিদের অনেকে নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয় রেড আর্মি কর্তৃক জার্মান দখল হলে ।
পূর্ব এশিয়া ও সাইলেজি রবে জার্মান জনগোষ্ঠী ওভার নাম রেকার পশ্চিম অংশে বিতাড়িত হয় ইয়াল্টা সম্মেলনের চুক্তি মোতাবেক। সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যা উপস্থাপিত হয় সোভিয়েত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রোমান রুভেনকো কর্তৃক তা হলো :

১. এ যুদ্ধে নাৎসি আক্রমণে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে ১৭১০টি নগর ও শহর ১,০০,০০০টি যৌথ এবং রাষ্ট্রীয় খামার, ৭০,০০০ এর বেশি গ্রাম বা হ্যামলেট, ২৫০৮টি শিল্প স্থাপনা, ৪০,০০০ মাইলের বেশি রেলপথ, ৪১,০০০টি রেলস্টেশন, ৪০,০০০টি হাসপাতাল, ৮৪,০০০টি স্কুল এবং ৪৩,০০০টি পাবলিক লাইব্রেরি ধ্বংস হয়
২. রাশিয়ার গৃহপালিত পশু ও অনেক নিহত হয়। ৭ মিলিয়ন ঘোড়া এবং ১৭ মিলিয়ন ভেজা ও ছাগল হত্যা করা হয়।
৩. অক্ষশক্তির আক্রমণে সোভিয়েত ইউনিয়নের যে সম্পত্তি ধ্বংস হয় তার মূল্য ধরা হয় ৬৭৯ মিলিয়ন বিলিয়ন রুবলস।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হিটলার মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে উপরের উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোর এ আক্রমণের মধ্য দিয়েই ঘুরে যায়। জার্মান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত মোটামুটিভাবে সফল ছিল কিন্তু হিটলারের জন্য সোভিয়েত আক্রমণ মোটে ও সুখকর ছিল না কারণ হিটলারের, খারাপ সময়ের সূচনা হয় এরপর থেকেই ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram