nulibrary

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে একে ফজলুল হকের অবদান লিখ৷


উত্তর : ভূমিকা : ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই দশ বছর বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । একে ফজলুল হক ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক। তিনি বাংলার শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। একে ফজলুল

হক মনে করেন যে, শিক্ষা ছাড়া বাঙালি জাতির উন্নয়ন ও মুক্তি সম্ভব নয়। এজন্য তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রি ও শিক্ষামন্ত্রি ম থাকা অবস্থায় এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ।

→ শিক্ষাক্ষেত্রে একে ফজলুল হকের অবদান : নিম্নে শিক্ষাক্ষেত্রে একে ফজলুল হকের অবদান বর্ণনা করা হলো-

১.বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা : একে ফজলুল হক একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন। নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ফজলুল হক ক্ষমতা গ্রহণ করেই প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেন। এজন্য তিনি প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুসারে স্কুল বোর্ড গঠন করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করার ফলে অনেক গরিব ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ লাভ করেছিল ।

২. আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন : ১৯১২ সালে একে ফজলুল হক মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলার গভর্নরের কাছ থেকে বৃত্তি ও আর্থিক সাহায্যের পণ্য মেন্টাল ন্যাশনাল মোহামেডান এডুকেশনাল এসোসিয়েশন গড়ে তোলেন। তিনি ১৯২৪ সালে শিক্ষামন্ত্রি নিযুক্ত হলে মুসলিম এডুকেশন ফান্ড গঠন করে। এ দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মুসলমানরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ |লাভ করতে আগ্রহী ভূমিকা পালন করে।

৩. মাধ্যমিক শিক্ষা বিল উত্থাপন : একে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট মাধ্যমিক শিক্ষা বিল উত্থাপন করেন। কারণ পূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সমগ্র বাংলার  মাধ্যমিক শিক্ষা পরিচালিত হতো। কিন্তু তারা বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তেমন গুরুত্ব দিত না। এজন্য তিনি আলাদা শিক্ষা বোর্ড গঠন করার কথা বলেন।

৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস নির্মাণ : একে ফজলুল হক বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রবাস নির্মাণ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরিশালে চাখার কলেজ, আদিনা কলেজ, মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ অন্যতম। এছাড়া তিনি মুসলমানদের স্ত্রী শিক্ষার প্রসাবের জন্য কলকাতায় লেডি ব্রেবোন কলেজ ও ঢাকায় ইডেন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রবাসের মধ্যে কলকাতার বেকার হোটেল, কারমাইকেল হোস্টেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছিল ।

৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে সকল বাঙালি ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে একে ফজলুল হক অন্যতম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের সাথে সাক্ষাৎ করেন । তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একে ফজলুল হক শিক্ষা বিস্তারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি ১৯২৪ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত যে কয়েকবার শিক্ষামন্ত্রি ও মুখ্যমন্ত্রি হওয়ায় প্রতিবারই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিজ দায়িত্বে রেখেছিলেন। ১৯০৬ সাল থেকে তিনি মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের অন্যতম সংগঠন ছিলেন। শিক্ষা । বিস্তারে উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে বাংলার ইতিহাসে ফজলুল হক অমর হয়ে আছেন।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালের ভারতের অন্যান্য প্রদেশের ন্যায় বাংলা প্রদেশে ও | প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন মধ্যবিত্ত শ্রেণির কৃষক প্রজা পার্টি . অভিজাত শ্রেণির মুসলিম লীগ মুসলিম আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম কোয়ালিশন সরকার গঠন করে।

→ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের ফলাফল : ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ১১৯টি আসনের জন্য বাংলার মানুষ কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম লীগ দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নির্বাচনে পটুয়াখালীতে কৃষক প্রজা পার্টির নেতা একে ফজলুল হকের নিকট মুসলিম লীগ নেতা খাজা নাজিমউদ্দিন পরাজয় বরন করেন। নাজিমউদ্দিনের জামানত ও বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। তবে নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ইনামুল হক ও এম. এ রহিমের মতে মুসলিম লীগ ৪০টি কৃষক প্রজা পার্টি ৩৮টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪১টি আসন পায়। কৃষক প্রজাপার্টির নেতা মনসুর আহমদের মতে মুসলিম লীগ ৩৮ কৃষক প্রজা পার্টি ৪৩টি এবং বাকি আসন অন্যরা পায়। মিলা সেনের মতে মুসলিম লীগ ৩৮টি কৃষক প্রজা পার্টি ৩৬টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৩টি আসন পায়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দুটি আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নাজিমদ্দিনকে একটি আসন ছেড়ে দেন। সাধারণ আসনগুলোর পক্ষে কংগ্রেস ৬০টি আসন লাভ করেন। বাকি আসনগুলো স্বতন্ত্র বর্ণবিন্দু, তফসিলী হিন্দু এবং ইউরোপীয় প্রার্থীরা পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পাটিতে যোগদান করে। যার ফলে মুসলিম লীগের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯ এ এবং কৃষক প্রজা পার্টির সদস্য দাঁড়ায় ৫৫টি-তে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে ১৯৩৭ সালের নির্বাচন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই নির্বাচনে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হওয়ায়  বাংলার কৃষক প্রজা সাধারণের কল্যাণ অনেকাংশে ত্বরান্বিত হয় এবং বাংলায় মুসলিম লীগের রাজনৈতিক শক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় ।

অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ।

অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল সংক্ষেপে আলোচনা কর।


উত্তর : ভূমিকা : বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি গৌরবজনক অধ্যায়। বাংলার মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে নানা বাধা-বিঘ্ন, চড়াই-উৎরাই পেরুনো এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস । যা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গুরুত্বের আসনে আসীন করেছে।

→ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস : নিম্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করা হলো :

১. প্রতিষ্ঠার কারণ : ভারতবর্ষে শিক্ষাদীক্ষা ছড়িয়ে পড়লেও বঙ্গভঙ্গের পূর্ব পর্যন্ত বাংলার শিক্ষাদীক্ষায় সরকার তেমন দৃষ্টিপাত করেনি। সব স্কুল কলেজ ও শিক্ষাসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ছিল কলকাতা

ও তার আশেপাশে। বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববাংলার সাধারণ জনগণের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা উঠে আসে এবং সেই সময় এদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার।

২. সরকারের নিকট প্রস্তাব : ১৯০৬ সালে নওয়াব সলিমুল্লাহ নওয়াব আব্দুল লতিফসহ বাংলার প্রথিতযশা শিক্ষিত প্রভাবশালী মহল ইংরেজ সরকারের নিকট পূর্ব বাংলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন। সেমতে নতুন প্রদেশ গভর্নর স্যার ব্যামফিল্ড কুলার একটি পরিকল্পনাও হাতে নেন। কিন্তু ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে বাংলার মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার হয় এবং যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন।

৩. হিন্দুদের বিরোধিতা : ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার থেকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি ঘোষণা দেওয়া হলে কলকাতার হিন্দু সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে। বাংলার চাষাভূষাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অর্থহীন বলে সংবাদপত্র, সভা-সমিতি, সেমিনারে উপহাস করতে থাকে। বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে অনড় থাকে ।৪. নাথান কমিশন গঠন : ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য অধ সরকার ২৭ মে ১৯১২ সালে রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে একটি কমিটি  গঠন করেন । যাকে বলা হয় নাথান কমিশন। এই কমিশন ঢাকায়  একটি আঞ্চলিক ও আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের রূপরেখা  প্রণয়ন করে সুপারিশ করে। তবে সরকারে অর্থ বরাদ্দে ঘাটতি ও নস বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রতিষ্ঠার কাজে বিলম্ব ঘটে।

৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভায় উত্থাপিত হলে ১৯২০ সালে রে সেটিকে আইনে পরিণত করা হয়। এই আইনের বলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর স্যার ফিলিপ জি হার্টজ-এর হাত ধরে সৈ বাংলার আপামর জনতার স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনার ফলে এটি সারা পূর্ব বাংলার জ্ঞান- বিজ্ঞানের কেন্দ্রভূমি হয়ে ওঠে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে বি পারি যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার মতো বিশাল অংশে বি সরকারের দৃষ্টিপাত ঘটে এবং এর মাধ্যমেই এখানে একটি  বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের চিন্তার সূত্রপাত ঘটে। বঙ্গভঙ্গ রদের পরে বাঙালি মুসলমানদের ভাঙ্গা মনের ক্ষত সারাতে হিন্দুদের বিরোধিতা সত্ত্বেও অবশেষে ১৯২১ সালে ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে এ বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে যখন যেভাবে  প্রয়োজন সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। নীতিতে, শিক্ষায়, আদর্শে আজও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে নি মাথা উঁচু করে সগর্বে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ।

অথবা, বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাবগুলো লিখ ।


উত্তর : ভূমিকা : খিলাফত আন্দোলন ভারত উপমহাদেশের স্বতঃস্ফূর্ত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন । হিন্দু ও মুসলমানরা একই মঞ্চে এসে এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশ নেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত আন্দোলন সফল

জাগ্রত হয় তা পরবর্তীকালে বহু আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত বাংলায় খিলাফত আন্দোলন একটি গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।

এবং হিন্দু ও মুসলমানরা এতে অংশগ্রহণ করে।

→ বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাব : নিম্নে বাংলায়

খিলাফত আন্দোলনের প্রভাব তুলে ধরা হলো-

১. হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যমত : বাংলায় খিলাফত আন্দোলনে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যমতের ভিত্তিতে আন্দোলন পরিচালনা করেন। এ আন্দোলনই প্রথম হিন্দু ও মুসলমান ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশরা ভাগ কর ও শাসনকর হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল যা খিলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে দূরীভূত হয়। এজন্য বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাব ছিল অত্যধিক ।

২. রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি : বাংলায় খিলাফত আন্দোলন হিন্দু ও মুসলমান এক সাথে আন্দোলন করার ফলে রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। যার ফলে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে তাদের দমন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. বাংলায় খিলাফত নেতৃবৃন্দ : বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব প্রদান করেছিল তাদের মধ্যে মাওলানা আকরাম খা, মুহাম্মাদ আব্দুল বাকী ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, ও একে ফজলুল হক। মাওলানা আকরাম খা ও ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ব্যাপক সফর করেন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে খিলাফত সভা সংঘটিত করেন।

৪. মুসলিম জাতীয়তাবাদের উত্থান : মুসলিম জাতীয়তাবাদের র্য উত্থানে বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাব ছিল ব্যাপক।  খিলাফত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এক বিরাট সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আন্দোলনের প্রথম দিকে অহিংস হলেও ১৯২২ সালর উত্তর প্রদেশের চৌরাচৌরা থানায় ৩০০০ ব্যক্তি আক্রমণ চালিয়ে একজন ইনসপেক্টর ও ২৫ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারেন। এ সময় তুরস্কে মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্ক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে ১৯২৪ সালে খলিফা তুলে নেওয়ার পর ভারতীয় উপমহাদেশে খিলাফত পন্থিরা বিচলিত হয়ে পরেন।

বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান শর্তাবলি বর্ণনা কর। অথবা, বেঙ্গল প্যাক্টের ধারাগুলো আলোচনা কর।


উত্তর : ভূমিকা : ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে হিন্দু, মুসলিম বিরোধ ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য এ দুই সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ছিল এক অপরিহার্য বাস্তবতা। গভীর আত্মোপলব্ধি থেকেই হিন্দু মুসলিম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সময়ে ১৯১৬ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২০ সালের খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলে। বেঙ্গল প্যাক্ট ছিল হিন্দু মুসলমান দ্বন্দ্ব নিরাময়ের এক উদারনৈতিক পদক্ষেপ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের একান্ত উদ্যোগ প্রচেষ্টায় ও বেঙ্গল প্যাক্ট নামক হিন্দু, মুসলিম, ঐক্যের ঐতিহাসিক চুক্তিটি রচিত হয়েছিল।

→ ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের ধারাসমূহ : ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট বা বঙ্গীয় চুক্তির প্রধান প্রধান ধারা বা শর্তসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো :

১. আইনসভা গঠন : এ চুক্তিতে বলা হয় বঙ্গীয় আইনসভায় হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে

২. প্রতিনিধি নির্বাচন : এ চুক্তির ধারা অনুযায়ী বঙ্গীয় আইনসভায় ১৯০৯ সালের আইন প্রবর্তিত পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা  অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ আইনসভার প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত স্বতন্ত্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে হবে

৩. স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে  সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৬০ ভাগ এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়ের শতকরা ৪০ ভাগ প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

৪. চাকরিতে সমতা : সরকরি পদসমূহের শতকরা ৫৫ ভাগ পূরণ করবে মুসলমান সম্প্রদায় এবং যতদিন পর্যন্ত ঐ সংখ্যায় না পৌঁছাবে ততদি পর্যন্ত শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত থাকবে ।

৫. সরকরি চাকরি : চাকরির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সমতা অর্জনের পর থেকে মুসলমান জনগণ চাকরির শতকরা ৪৫ ভাগ পাবে এবং অমুসলমানগণ শতকরা ৪৫ ভাগ পাবে এবং অন্তর্বর্তীকলীন সময় হিন্দু জনগণ ২০ ভাগ চাকরি পাবেন ।

৬. ধর্মীয় অনুভূতি : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোন আইন সংসদে পাস করা যাবে না। ধর্ম সংক্রান্ত আইন পাস করতে হলে আইনসভায় নির্বাচিত – অংশ

সদস্যদের সমর্থন থাকতে হবে।

৭. ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা : বলা হয় এ চুক্তিতে কোনো মসজিদ মুস অতিক্রম করার সময় কোন শোভাযাত্রা সঙ্গীত বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ । কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মুসলমানদের গো-হত্যা নিষেধ করা যাবে না । তবে উন্মুক্ত স্থানে তা না করাই ভালো। এ চুক্তির প্রায় সবগুলো শত আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের অনুকূলে ছিল । চিত্তরঞ্জন দাস আইনসভায় বলেন, স্বরাজ্যের বুনিয়াদ রচনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। স্বরাজ লাভের পর আমাদের সরকার না = মুসলমান সরকারে না হিন্দু সরকার এরূপ কোন সংশয় মতে । আমাদের মনে জাগ্রত না হয় সেজন্য আমরা এ চুক্তিতে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করি

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার হিন্দু মুসলিম  রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা স্থাপনের ক্ষেত্রে বেঙ্গল  প্যাক্টের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ চুক্তিতে মুসলমানদের প্রতি  সদাচরণ, ন্যায্য অধিকার, ধর্মীয়ভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। চিত্তরঞ্জন দাসের শর্ত টিকিয়ে রাখলে সৃষ্টি হতো না হিন্দু মুসলিম দু'টি সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের ।

অথবা, মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি লিখ । অথবা, মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি আলোচনা কর ।


উত্তর : ভূমিকা : ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও এটা মূলত হিন্দুদের রাজনৈতিক সংগঠন। কাজেই মুসলমানগণ তাদের নিজ স্বার্থেই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে ।

→ মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি : ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলেও মূলত এটা ছিল একটি হিন্দুদের রাজনৈতিক সংগঠন। কারণ কংগ্রেসের কিছুসংখ্যক নেতার সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে “বালগঙ্গাধর তিলকের' উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণা কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মুসলমানদের সন্দিহান করে তোলে। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর সিমলায় আগা খানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী মুসলিম প্রতিনিধি দল বড়লাট লর্ড মিন্টোর নিকট পৃথক নির্বাচনের দাবি জানালে তিনি নীতিগতভাবে মেনে নেন। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে উপস্থিত

নেতৃবৃন্দ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রশ্নে আলাপ আলোচনা করেন। স্যার সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগে নবাব ভিকার-উল-মূলকের সভাপতিত্বে একটি করে ঘরোয়া আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মহসিন-উল-মূলক 'মুসলিম লীগ' নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রস্তাব  অভি উপস্থাপন করেন এবং হেকিম আজমল খাঁ তা সমর্থন করেন। মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র রচনার ভার অর্পিত হয় নবাব ভিকার- উল-মূলক ও মহসিন-উল-মূলকের উপর। ১৯০৭ সালে মহসিন- উল-মূলকের মৃত্যুর পর নবাব ভিকার-উল-মূলক একাই মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র রচনার কাজ শেষ করেন। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত আগা খান এ সংগঠনের স্থায়ী সভাপতি ছিলেন । ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘মুসলিম লীগের' জন্মের সময় এ তিনটি লক্ষ বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেগুলো হলো-

১. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্য বৃদ্ধি এবং সরকারের নীতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে সরকারের সাথে মুসলিম জনগণের ভুল ধারণা দূর করা।

২. ভারতীয় মুসলিম জনগণের অধিকার ও স্বার্থের সংরক্ষণ এবং উন্নতি সাধনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় ও আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বিনয়ের সাথে সরকারের নিকট পেশ করা।

৩. এ দুইটি উদ্দেশ্য পূরণ করার পাশাপাশি ভারতীয় অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে মুসলিম জনগণের সম্প্রীতিবোধের পথে ছিল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এ সংগঠনের তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া'।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবাদের বিকাশ – মুসল ধারায় মুসলমানদের ন্যায্য দাবি আদায়ের প্রেক্ষিতে গঠিত হয় মুসলিম লীগ । তাই ভারতের ইতিহাসে মুসলিম লীগের গুরুত্ব অপরিসীম ।

স্বদেশী আন্দোলনের কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর । ডি : এই বইয়ের ১১ পৃষ্ঠার ১.১৫ নং

অথবা, স্বদেশি আন্দোলনের কারণ কী ছিল?


উত্তর : ভূমিকা : উনিশ শতকের শেষের দিক ভারতে যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জন্ম হয় তার বিকাশ ঘটে স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদীরা সর্বপ্রথম স্বদেশি আন্দোলনের সূচনা করে বঙ্গভঙ্গের চরম বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য তারা ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের অংশ হিসাবে বয়কট নীতি বিলাতি পণ্য বর্জনসহ নানা ধরনের কর্মপন্থা অবলম্বন করে যেগুলো স্বদেশি আন্দোলনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। স্বদেশি আন্দোলনের ফলে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের জয় হলেও সর্বভারতীয়দের এ আন্দোলনে শরীক করে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের কবজা থেকে ভারতে স্বাধীন করতে হিন্দু নেতৃবৃন্দ চরমভাবে ব্যর্থ হন। স্বদেশি আন্দোলন মূলত এতদঞ্চলের মানুষের মাঝে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল

→ স্বদেশি আন্দোলনের কারণ : ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন কর্তৃক প্রশাসনিক কাজের সুবিধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ব বিশাল সম্রাজ্যের বাংলাকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়। বাংলার অখণ্ডতা বজায় রাখতে ভারতে হিন্দু নেতৃত্বের মাধ্যমে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ইতিহাসে তা স্বদেশি আন্দোলন হিসাবে খ্যাত। নিম্নে স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো :

১. বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করা : স্বদেশি আন্দোলন সৃষ্টির অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিলো বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করা। ১৯০৫ সালে তৎকালীন ভারতে নিযুক্ত গভর্নর লর্ড কার্জন প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ও বিশাল বাংলায় সুষম উন্নয়নের জন্য বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে গঠিত নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয় ঢাকাকে। তখন থেকে ঢাকায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন, অফিস-আদালত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। যার ফলে রাজধানী হিসাবে কলকাতার প্রভাব কমতে থাকে। এজন্য কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতার ফলস্বরূপ স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায় ।

২. বঙ্গভঙ্গ বাতিল ঘোষণা করা : স্বদেশি আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল ঘোষণা করা। বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার পর থেকেই কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য উঠে পড়ে লাগে। কলকাতার রাজনীতিবিদ, আইনজীবী থেকে শুরু করে সাংবাদিক ব্যবসায়ী, র শিক্ষিত মহল সকলে এর রদের জন্য সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এর অন্যতম কারণ ছিল নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। ঢাকা কেন্দ্রিক প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কখনো ভালো চোখে দেখেনি ৷

৩. বয়কট আন্দোলন : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হলে ভারতীয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কর্তৃক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বয়কট ভ আন্দোলন ঘৃণীত হয় । বয়কট প্রস্তাবে বলা হয়, যত দিন পর্যন্ত ও বঙ্গভঙ্গ রদ করা না হবে ততদিন পর্যন্ত বয়কট আন্দোলন এ চলবে। আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিলাতি পণ্য বর্জন করা হয়। বিভিন্ন অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেকে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ত্বরান্বিত করে । বিভিন্ন উপাধি বর্জন করে

৪. স্বশাসন কায়েম করা : স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম একটি কারণ ছিল ভারতে স্বদেশি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে পড়ে উপমহাদশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। এজন্য ব্রিটিশ রাজশক্তিকে হটিয়ে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। যেটি পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে

৫. দেশজ কলকারখানার নবজীবন দান : ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্য নীতির ফলে ভারতের দেশীয় শিল্প ব্রিটিশদের একচেটিয়াভাবে এদেশে সুঁতিবস্ত্রের ব্যবসা চালিয়ে যায়। ঢাকার বিখ্যাত মসলিন কাপড়ও ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। দেশীয় কলকারখানাকে এমন দুর্গতি থেকে বাঁচাতে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারত রাজনৈতিক  ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ১৯০৫ .সালের বঙ্গভঙ্গবক কেন্দ্রকার ও আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সময়ের পালাবদল এটি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। প্রথমে হিন্দু-  মুসলিম বিভেদকরী করলেও পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল স্বদেশি আন্দোলন। এ আন্দোলন ভারতের পরবর্তী সব আন্দোলন প্রভাববিস্তার ও সাহস যুগিয়েছিল।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

[বিএ (অনার্স) চতুর্থ বর্ষ; পরীক্ষা-২০১৬ (অনুষ্ঠিত-০৯/০৯/২০১৭)]

(ইতিহাস বিভাগ)

বিষয় কোড : 1584

বিষয় : বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭)


ক-বিভাগ

(ক) বঙ্গভঙ্গ কারার ক্ষেত্রে বাংলার কোন নেতার নাম সংশ্লিষ্ট রয়েছে?

উত্তর : নওয়াব সলিমুল্লাহ্ ।

(খ) লর্ড কার্জন কে ছিলেন?

উত্তর : লর্ড কার্জন বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় ছিলেন ।

(গ) মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তর : নবাব ভিকার-উল-মূলক ।

(ঘ) বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন কে?

উত্তর : সম্রাট পঞ্চম জর্জ

(ঙ) কত সালে কলকাতা থেকে দিল্লীতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হয়?

উত্তর : ১৯১১ সালে ৷

(চ) খিলাফত আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তর : ডেভিট লয়েড জর্জ

(ছ) মহাত্মা গান্ধীর পূর্ণনাম লিখ ।

উত্তর : মহাত্মা গান্ধীর পূর্ণনাম নাম মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী।

(জ) চিত্তরঞ্জন দাসের উপাধি কি ছিল?

উত্তর : দেশবন্ধু ।

(ঝ) কৃষকপ্রজা পার্টি কত সালে গঠিত হয়?

উত্তর : ১৯৩৬ সালে ৷

(ঞ) লাহের প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?

উত্তর : শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক

(ট) ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত বাংলায় কয়টি মন্ত্রিসভা ছিল?

উত্তর : ৪টি

(ঠ) ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন?

উত্তর : খাজা নাজিমুদ্দিন ।

খ-বিভাগ

২। স্বদেশী আন্দোলনের কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

অথবা, স্বদেশি আন্দোলনের কারণ কী ছিল?

 ৩। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর ।

 অথবা, মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি লিখ । অথবা, মুসলিম লীগ গঠনের পটভূমি আলোচনা কর ।

৪। বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান ধারাগুলি কি কি?

  বেঙ্গল প্যাক্টের প্রধান শর্তাবলি বর্ণনা কর। অথবা, বেঙ্গল প্যাক্টের ধারাগুলো আলোচনা কর।

৫। বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাব বর্ণনা কর।

অথবা, বাংলায় খিলাফত আন্দোলনের প্রভাবগুলো লিখ ।

 ৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণগুলো আলোচনা কর।

অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লিখ। অথবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল সংক্ষেপে আলোচনা কর

 ৭। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা কর।

 ৮। শিক্ষাক্ষেত্রে এ. কে. ফজলুল হকের অবদান মূল্যায়ন কর।

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে একে ফজলুল হকের অবদান লিখ৷

৯। ১৯৪৭ সালে অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াস ব্যর্থ হয় কেন?

গ-বিভাগ

১০। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণ কি ছিল? এতে হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?

অথবা, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কেন হয়েছিল? এর কর পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া আলোচনা কর।

 ১১। বাংলায় মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব আলোচনা কর।

অথবা, ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও ।

১২। ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।

অথবা, বেঙ্গল প্যাক্টের (১৯২৩) পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

১৩। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।

অথবা, ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের উপর একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা কর

১৪। বাংলায় ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা কর।

অথবা, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ কর ।

 ১৫। সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার (১৯৪৬-৪৭) গঠন ও কার্যক্রম পর্যালোচনা কর।

অথবা, সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভার (১৯৪৬-৪৭) গঠন ও কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।

 ১৬। ১৯৪০-৪৭ সময়কালে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৪০-৪৭ সময়কালে বাংলায় হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক পর্যালোচনা কর ।

 ১৭। ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভক্তির কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভক্তির কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram