nulibrary

অথবা, ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান হয়েছিল কেন? বর্ণনা কর।

ভূমিকা : ভারতে কোম্পানি শাসন বলতে বুঝায় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট- ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন । ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হলে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে ক্ষমতা চলে যায়। এরপর তারা ভারতবর্ষে শোষণ ও নির্যাতন আরম্ভ করেন। বাংলার জনসাধারণ দীর্ঘ ১০০ বছরের অসন্তোষের কারণে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেন। যার ফলে আরম্ভ হয় সিপাহি বিদ্রোহ। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে।

→ ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসানের কারণ : নিয়ে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসানের কারণ বর্ণনা করা হলো :

১. ভারতবাসীর প্রথম গৌরবময় বিদ্রোহ : ভারতবর্ষে সিপাহি বিদ্রোহ ছিল এক গৌরবময় বিদ্রোহ। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ শুরু থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকে তেমন কোন প্রতিবাদ ছাড়াই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু কোম্পানি এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের একের পর এক অন্যায় নীতির বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। এ সময় কোম্পানির শাসনের প্রতি অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় এক পর্যায়ে তা আগুনে রূপ নেয়। যার ফলে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। অবশ্য শেষপর্যন্ত সিপাহি বিদ্রোহ সফল হয়নি। কিন্তু এই ঘটনা ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটায় ।

২. কোম্পানি শাসনের অবসান : সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার মনে করে ভারতে আর কোম্পানি শাসন চলতে দেওয়া উচিত না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইন্ডিয়া অ্যাক্ট বা ভারত শাসন আইন পাশ করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ভারতের শাসনভার সরাসরি রানির হাতে চলে যায়।

৩. মহারানির ঘোষণাপত্র প্রকাশ : মহারানি ভিক্টোরিয়া ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর এক ঘোষণাপত্র জারি করেন। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় ৷

(ক) মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রে বলা হয় ভারতীয়দের ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না।

(খ) মহারানির রাজকীয় ঘোষণায় স্বত্ববিলোপ নীতির বাতিল করা হয়।

(গ) যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতের সবাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ লাভ করবে।

(ঘ) ভারতীয়রা ধর্মীয় স্বাধীনতা লাভ করবে।

(ঙ) ব্রিটিশ সরকার রাজনীতির নীতি পরিত্যাগ করবে এবং অভ্যন্তরীণ রাজ্যের বিষয়ে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না ।

(চ) সিপাহি বিদ্রোহের সময় প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি ছাড়া সকলকে শাস্তির হাত থেকে রেহাই দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয় ।

৪. সামরিক নীতি পরিবর্তন : ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসানের একটি অন্যতম কারণ হলো সামরিক নীতির পরিবর্তন। কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় ও আঞ্চলিক জাতিগোষ্ঠী থেকে সিপাহি নিয়োগের নীতি গ্রহণ করে। এতে করে অযোধ্যায় বেঙ্গল সৈনিকরা ব্যাপক অসন্তষ্ট হন। এছাড়া সেনাবাহিনীতে ইউরোপীয় বৃদ্ধি করা হয় এবং গোলান্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ বন্ধ করা হয়। এসব কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের পতন ঘোষণা করে।৫. বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির আইন প্রণয়ন ক্ষমতা পুনর্বহ : ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে গভর্নর জেনারেল ও পরিষদের হাতে হি | মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পণ করা পর হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৬১ সালের সনদ আইনে মাদ্রাজ ও বোম্বাই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পুনবহাল করা হয়। এসব আইনের ফলে ধীরে ধীরে কোম্পানি শাসন পতনের দিকে ধাবিত হয়।

৬. মুঘল সাম্রাজ্যের পতন : ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসানের একটি অন্যতম কারণ হলো মুঘল সাম্রাজ্যের পতন। ইংরেজরা মুঘল সুলতান দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গনে নির্বাসন দেন। এতে করে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

৭. কোম্পানির ব্যর্থতা : ভারতে যখন কোম্পানি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় তখন ব্রিটিশ সরকার তাদের হাত থেকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এর জন্য ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট এবং ১৭৮৪ সালের উইলিয়াম পিটের ইন্ডিয়া অ্যাক্টের মাধ্যমে কোম্পানি ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ভারতে কোম্পানি শাসনের ঘটে।

৮. ভূমিকর বৃদ্ধি : ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে ভারতের অর্থনীতি খুব নাজুক হয়ে পড়ে। কৃষির উন্নয়নের জন্য কোনো বিনিয়োগ না করে কোম্পানি ভূমিকর বাড়াতে থাকে। যার ফলে ভারতের বিভিন্ন অসন্তোষ লক্ষ করা যায়। যার ফলে জনগণ কোম্পানি শাসনের অবসান কামনা করে ।

৯. অর্থনৈতিক সংকট : ভারতে কোম্পানি শাসনের পতনের আরেকটি কারণ হলো অর্থনৈতিক সংকট। কারণ এ সময় কৃষির উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে কোম্পানির আয়ও কমতে থাকে। কিন্তু কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য তাদের বড় অর্থের খরচ বহন করতে হতো। যা মেটাতে গিয়ে কোম্পানির লাভের পরিমাণ একেবারেই তলানির দিকে যেতে থাকে। একারণে ভারতে কোম্পানির শাসন ধীরে ধীরে পতনের দিকে ধাবিত হয়।

১০. দুর্নীতিপরায়ণ : ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পতনের অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। একদিকে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ার ফলে এবং অন্যদিকে কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে কোম্পানি তার জৌলুস হারাতে থাকে। দুর্নীতির কারণে ভারতে কোম্পানি শাসনকে পতনের দিকে ধাবিত করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে মহাবিদ্রোহ নামে পরিচিত। এটা ভারতের বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ। বিদেশি শাসকদের উৎখাত করার জন্য সিপাহিদের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এ বিদ্রোহে ভারতীয়রা জয়লাভ করতে না পারলেও সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার ভারতে কোম্পানি শাসনের পতন ঘটান। এরপর ১৮৫৮ সাল থেকে ভারতে সরাসরি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতে থাকে ।

অথবা, ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ক্তি কার্যকর না হওয়ার কারণ আলোচনা কর।

ভূমিকা : ১৯৪৬ সালের ১৬ মে মূলত মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা পেশ করা হয়। মূলত ব্রিটিশ আসন শুরু হওযার পর নর থেকেই ভারতীয়রা নানা দাবিতে আন্দোলন করতো। এসব আন্দোলন দমিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার নানা আইন প্রণয়ন করতেন। যার -৫ মধ্যে সর্বশেষ পরিকল্পনাই ছিল ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা মে তবে বেশি কিছু কারণে এ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

→ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণ : নিম্নে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :

 ১. সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা : এ পরিকল্পনায় দেশীয় ল রাজ্যগুলোতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো ড. ব্যবস্থা করা হয়নি, বরং ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে তাদের উপর ক্ত ব্রিটিশ সর্বময় কর্তৃত্বের অবসান ঘটানোর কথা বলা হয়। মূলত । ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনায় নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল অগণতান্ত্রিক ।

২. কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা : দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের মূল কারণ হলো কেবিনেট মিশন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সীমিত ক্ষমতা প্রদান করে। কিন্তু সেসময় প্রয়োজন ছিল একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের। যার ফলে এ পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৩. গণপরিষদ অসার্বভৌম : এ পরিকল্পনায় যে গণপরিষদ গঠন করা হয় তা ছিল অসার্বভৌম ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হলে গণপরিষদে গঠিত সংবিধান কার্যকর হতো না। আর এ অসার্বভৌমত্বের কারণেই এটা ব্যর্থ হয় ।

৪. বিভাজন নীতিতে ত্রুটি : জনগণের মতামত ব্যতীত এ পরিকল্পনায় ভারতকে ৩টি ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়। যার ফলে একধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর এ জটিল বিভাজন নীতিই ছিল এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ ।

৫. অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে ত্রুটি : ক্যাবিনেট মিশন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কোনো সুব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, বরং তা ১৯৩৫ সালের সাংবিধানিক নীতি চালু রেখেছিল । যা ছিল ব্যর্থতার অন্যতম একটি কারণ ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা বেশকিছু কারণ সৃষ্টি হলেও এবং ভারতের রাজনীতিতে ইহা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বেশি কিছু ত্রুটির কারণে এটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯৪৬ সালে মন্ত্রিমিশনকে কেন্দ্র করে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে যে দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয় তা ভারত | বিভক্তিকে ত্বরান্বিত করেছিল।

অথবা, “ভারত ছাড়” আন্দোলন সম্পর্কে কী জান?

ভূমিকা : ১৯৪২ সালের “ভারত ছাড়” আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পূর্বে সংঘটিত অসহযোগ আন্দোলন কিংবা আইন অমান্য আন্দোলনের তুলনায় “ভারত ছাড়” আন্দোলনের প্রস্ততি ছিল আরও ব্যাপক। ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে ভারতবাসীর মধ্যে প্রবল হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং জাপানের অভাবনীয় সাফল্যের ফলে ভারতের নিরাপত্তা সম্পর্কে ভারতবাসীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনা ব্যর্থ হলে গান্ধীজি পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে “ভারত ছাড়” আন্দোলন এর ঘোষণা দেন।

'ভারত ছাড়' আন্দোলন : ১৯৪২ সালে ২৬ এপ্রিল গান্ধীজি ‘হরিজন' পত্রিকায় প্রথম ‘ভারত ছাড়' পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন এবং ব্রিটিশ সরকারকে এ মর্মে অনুরোধ জানান যে, তারা স যেন ভারতের স্বার্থে ভারতের দায়িত্বভার ছেড়ে দিয়ে ভারত থেকে চলে যান। কিন্তু তদানীন্তন পরিস্থিতিতে গান্ধীজি এ প্রস্তাব র সম্বন্ধে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত হন। এ অবস্থায় র্চ গান্ধীজি প্রস্তাব করেন যে, ভারতের কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে র ব্রিটিশ সেনানিবাস থাকতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা ত ভারতীয়দের হাতে থাকা চাই । গান্ধীজি স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেন

যে, যদি তার এ প্রস্তাব কংগ্রেস গ্রহণ না করে, তাহলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করবেন এবং স্বতন্ত্রভাবে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট জাতীয় কংগ্রেসের মুম্বাই অধিবেশনে ঐতিহাসিক 'ভারত ছাড়” প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ প্রস্তাবে বলা হয় যে, ভারতকে স্বাধীন করা হলে ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি সাময়িক সরকার গঠন করা পর্যায় হবে এবং এ সরকার ভারতের সকল শ্রেণির গ্রহণযোগ্য একটি আলোচ শাসনতন্ত্র রচনা করবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, 'ভারত ছাড়’ আন্দোলন | ছিল ভারতবাসীর পুঞ্জীভূত ক্ষোভের সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত | প্রতিফলন। 'ভারত ছাড়' আন্দোলনের মাধ্যমে যে জন-বিস্ফোরণ ব্যর্থ হয়। সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করতে পারে যে, সতর্কবা= ভারতীয়দের স্বাধীনতা প্রদান করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই ।

ভূমিকা : ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনটি দল অংশগ্রহণ করেছিল তার মধ্যে মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজাপার্টি অন্যতম। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলীম লীগ পার্টির প্রধান ছিলেন। অন্যদিকে শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক কৃষক প্রজা পার্টির প্রধান ছিলেন। একে ফজলুল হক খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তার জনপ্রিয়তাই ছিল কৃষক প্রজাপার্টির মূলধন |

অপরদিকে মুসলিম লীগ ছিল জমিদার ও ব্যবসায়ী শ্রেণির প্রতিষ্ঠান । সাধারণ মানুষের সাথে তাদের তেমন সম্পর্ক ছিল না। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম

→ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব : নিম্নে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :

১. জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের অধিকার লাভ : ১৯৩৭ থম সালের নির্বাচনে জনগণ প্রথম প্রত্যক্ষ ভোটপ্রদানের অধিকার লাভ করেন। এর পূর্বে কখনো এভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটপ্রদানের অধিকার লাভ করার জন্য ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের গুরুত্ব অত্যধিক।

২. কৃষক প্রজা পার্টির জনপ্রিয়তা : ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল । কারণ সাধারণ জনগণ একে ফজলুল হককে খুব পছন্দ করতেন। এ পার্টির উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। কৃষক প্রজাপার্টির অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে অনেক হিন্দু নেতা ও তার দলকে সমর্থন করেছিল।

৩. নতুন নতুন রাজনৈতিক আদর্শ : ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল তারা নতুন নতুন রাজনৈতিক আদর্শ জনগণের কাছে প্রকাশ করেছিল যা হক তৎকালীন রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যেসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছিল তা প্রকৃতপক্ষে অনেক অর্থবহ ছিল ।

৪. হিন্দু মুসলিম ঐক্য : ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে হিন্দু হয়। মুসলিম ঐক্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ এই ধারা নির্বাচনের পরে যেসব মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল তাতে মুখ্যমন্ত্ৰী সভা ছাড়া ১০ জনের মধ্যে ৫ জন হিন্দু মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এতে করে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল । এদিক থেকে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অধিক ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিমের মধ্যে কোয়ালিশন সরকার গঠিত বরে হয়েছিল। একে ফজলুল হক অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করছিল। কিন্তু মুসলিম লীগের প্রধান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর যে সাথে কিছু বিষয় নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হলে কোয়ালিশন টকে সরকার ভেঙ্গে যায়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচন বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

অথবা, আলীগড় আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লিখ ৷

অথবা, আলীগড় আন্দোলনের ধারণা দাও ।

ভূমিকা : মুসলমান পরিচালিত অতীতের কিছু বিদ্রোহ মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছিল। দুইশত বছরের শাসনকালে ইংরেজদের নীতির মধ্যে অন্যতম ছিল ইসলামী সংস্কৃতি বিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের অত্যাচার যেমন বেড়ে ওঠে, তেমনি ইংরেজ সৃষ্ট হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার এবং নির্বিচার জুলুম তাদের সামাজিক জীবনে দুর্বিসহ অবস্থা সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় স্যার সৈয়দ আহমদ খান ব্যথিত হন এবং তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় আলীগড় আন্দোলন ।

→ আলীগড় আন্দোলন : আলীগড় আন্দোলন হচ্ছে আলীগড়ভিত্তিক সমাজ সংস্কারমূলক আন্দোলন। ব্রিটিশশাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে যেসব মনীষী পশ্চাৎপদ মুসলমানদের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অথনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ খান অন্যতম। তিনি তৎকালীন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নবজাগরণের অন্যতম পথনির্দেশক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত উত্তর ভারতের আলীগড়ভিত্তিক সংস্কার আন্দোলন ইতিহাসে আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। স্যার সৈয়দ আহমদ খান ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় মুসলমানদের শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবেলা করে অধপতিত মুসলমানদের মর্যাদা সহকারে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন। এটি ছিল প্রত্যক্ষসংগ্রামের পরিবর্তে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে সহযোগিতাধর্মী সম্পর্ক স্থাপনের সংস্কার আন্দোলন। ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে ভারতের মুসলমানরা সে সময় চরম দুর্দিনের মধ্যে জীবনযাপন করতে থাকে। স্যার সৈয়দ আহমদ তার বাস্তব চিন্তা। ও দূরদর্শিতার দ্বারা সামাগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বুঝতে পারে যে, ইংরেজ ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনই অধঃপতিত মুসলমানদের উন্নতির একমাত্র লক্ষ্য। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন। মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন বাড়িয়ে দেয়া। আর এভাবেই আলীগড় আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলন একটি বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ থেকে সারা ভারতবর্ষের | মুসলমানদের দায়িত্ব এবং অধিকার সম্পর্কে সজাগ করেছিল। যা মুসলমানদের অবস্থার ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। অন্যভাবে বলা যায় যে, এ আন্দোলন মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়নি। বস্তুত ১৭৫৭ সালের পলাশী থেকে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ পর্যন্ত সুদীর্ঘ একশত বছরের ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, উৎপীড়ন, শোষণ এবং নির্যাতনের চরম বহিঃপ্রকাশ এই সিপাহী বিদ্রোহ।

→ সিপাহী বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণসমূহ : ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. এনফিল্ড রাইফেলের প্রবর্তন ও সিপাহীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : ১৮৫৭ সালে সেনবাহিনীতে ‘এনফিল্ড রাইফেল' নামে এক ধরনের অস্ত্রের প্রচলন করা হয়। এই রাইফেলের কার্তুজ পশুর চর্বি মিশ্রিত ছিল যা দাঁত দিয়ে কেটে দে রাইফেলে ঢুকাতে হতো। ভারতীয় সিপাহীদের মধ্যে একথা ছড়িয়ে পড়ে যে গরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত কার্তুজের প্রচলন নি করে ব্রিটিশ সরকার হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সৈন্যদের ধর্মনাশের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অধিকন্তু ব্রিটিশ রা সামরিক কর্তৃপক্ষ সিপাহীদের পক্ষে কপালে তিলক কাটা, দাঁড়ি য রাখা ও পাগড়ি পরিধান নিষিদ্ধ করে ভারতীয় সিপাহীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানে। ফলে বিক্ষুদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বী চি সিপাহীরা প্রত্যক্ষভাবে বিদ্রোহের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।

২. মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ : ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনানিবাস থেকে মঙ্গল পান্ডে নামে এক ব্রাহ্মণ সিপাহী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে সমগ্র ভারতে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ভারতীয় জনগণ এর সাথে যোগ দিলে সামরিক বিদ্রোহ পরিণত হয় মহাবিদ্রোহে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর . অভিযোগ ও অসন্তোষই এই বিদ্রোহের মূল কারণ নয়; বরং এ বিদ্রোহের মূলে ছিল সর্বস্তরের মানুষের গভীর অসন্তোষ ও হতাশা। একে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা- হাঙ্গামাও বলা যায় না। ব্যাপকভাবে এ আন্দোলন ছিল। রাজনৈতিক এবং এর লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসন ও শোষণের কবল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করা।

ভূমিকা : ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ভারতের উত্তর- পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত নয়। এটিই লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত। মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক।

লাহোর প্রস্তাবের বিষয়বস্তু : লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তু হলো : ১. ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

২. এসব অঞ্চলকে প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যাতে ভারতবর্ষে উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সে অঞ্চলসমূহে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় ।

৩. স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যে সমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম ।

প্রথম প্রস্তাব : প্রথম প্রস্তাবে বলা হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এ অধিবেশনের সুনিশ্চিত অভিমত এই যেকোনো সাংবিধানিক পরিকল্পনা এ দেশে প্রয়োগ করা যাবে না। যা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি তা নিম্নরূপ মুলনীতির উপর পরিকল্পিত না হয় ।

দ্বিতীয় প্রস্তাব : দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয় এসব অঞ্চলের সংখ্যালগুদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে করে যথোপযুক্ত কার্যকরী যে বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা | শাসনতন্ত্রে করতে হবে। ভারতবর্ষের মুসলমানগণ যেসব স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক শাসনতান্ত্রিক |

এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পত্তি | পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকরি ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের দেশ ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে করতে হবে। এছাড়া প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র ংশে যোগাযোগ ও প্রয়োজনমত অন্যান্য বিষয়ে সর্বক্ষমতা সংশিষ্ট অঞ্চলগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে।

১. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট : ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু এই মুসলমানদের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব মৌলিক। তারপরে ও হিন্দু মুসলিম এক সাথে অখণ্ড ভারতের স্বায়ত্তশাসনের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে আসছিলেন। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ফলে হিন্দু রাষ্ট্র মুসলিমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

২. পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম : সকল বন্ধন ছিন্ন করে ও সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। লাহোর প্রস্তাবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ একাধিক রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ত্যাগ করে একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন ।

৩. স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ বপন : লাহোর প্রস্তাবই স্বাধীন স্তাব বাংলাদেশের বীজ বপন করা হয়েছিল। কেননা লাহোর প্রস্তাবে মার্চ বলা হয় যে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে। তবে পরবর্তীকালে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের দ্বীন কারণে মাধ্যমে একাধিক জায়গায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়। কিন্তু বাংলার মুসলমানরা সর্বদাই লাহোর প্রস্তাবের লী স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন করতে থাকে। পন নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৪. ভারত বিভক্ত : লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারত বিভক্তির ল পথ অনেকটা সহজ হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার আগ পর্যন্ত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ অখণ্ড ভারতের জন্য একসাথে আন্দোলন করে | করেছিলেন। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে তার ছেদ পড়ে যায়। ব্রিটিশ সরকার ও লাহোর প্রস্তাবের ফলে উপলব্ধি করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের কে একই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় রাখা হবে নির্বুদ্ধিতার শামিল।

৪. নবদিগন্তের সূচনা : ভারতবর্ষের রাজনীতিতে লাহোর প্রস্তাব নবদিগন্তের সূচনা করে। কেননা এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই লম | ভারতবর্ষ তার হাজার বছরের ইতিহাস ছিন্ন করে বিভক্ত হয়ে নক | পড়ে আর ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়া মুসলমানরা তাদের অধিকার দর | প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটা মুসলমানদের ইতিহাসেও ব্যাপক তাৎপর্যময় ঘটনা। ১৯৪০ বং সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে রে অসামান্য। এই প্রস্তাব আন্দোলনরত মুসলমান জাতির মধ্যে এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। তাই বলা যায় যদি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব না হতো তাহলে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির কল্পনাই করা যেতো না |

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।

ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ২ আগস্টের ভারত শাসন আইন ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বস্তুত ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ, রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ এবং ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের ব্যর্থতার ফলশ্রুতি হলো ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন। বলাবাহুল্য এ আইনই পরবর্তীকালে ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির এবং ১৯৪৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের মূল ভিত্তি রচনা করে।

→ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মূল ধারাসমূহ : নিচে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান প্রধান ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ভারতে সর্বপ্রথম একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র (All Indian Fedaration) গঠনের প্রস্তাব করে। এ আইনে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ এবং করদ মিত্র রাজ্যসমূহের সমন্বয়ে এক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব ছিল।

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : এ আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নীতিগতভাবে স্বীকৃত হয়। প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত বিষয়গুলো যেমন আইন-শৃঙ্খলা, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় শাসন ইত্যাদির ওপর প্রাদেশিক সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকার করা হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রের হস্তক্ষেপের ফলে স্বায়ত্ত্বশাসন পূর্ণতা লাভ করেনি।

৩. কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন প্রবর্তন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রদেশে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটায়। কিন্তু কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করে। কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এ দুভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয় যেমন- দেশরক্ষা, বৈদেশিক নীতি, ধর্মীয় বিষয় প্রভৃতি গভর্নর জেনারেল তিনজন উপদেষ্টার সাহায্যে পরিচালনা করবেন। আর হস্তান্তরিত বিষয়গুলো গভর্নর দশ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সাহায্যে পরিচালনা করবেন ।

৪. শাসন সংক্রান্ত বিষয়ের শ্রেণিবিভাগ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় । যথা : (ক) কেন্দ্রীয় বিষয় (Federal subjects) (খ) প্রাদেশিক বিষয় (Provincial subjects) (গ) যুগ্ম বিষয় (concurrent subject)

৫. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদ : এ আইনে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট রাখা হয়। প্রথম কক্ষের নাম ছিল ব্যবস্থাপক সভা (Federal Assembly) এবং দ্বিতীয় কক্ষের নাম রাষ্ট্রীয় সভা (Council of States)।

৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। এ যুক্তরাষ্ট্রিীয় আদালতে শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যাদান এবং কেন্দ্র ও প্রদেশসমূহের মধ্যে উদ্ভূত কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারত। কিন্তু এ আইনে ব্রিটেনের প্রিভি কাউন্সিলের বিচার কমিটিই আপিলের চূড়ান্ত আদালত হিসেবে থেকে যায় ।

৭. নতুন প্রদেশ সৃষ্টি : এ আইনে ব্রহ্মদেশকে ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় । উড়িষ্যা ও সিন্ধু প্রদেশের সৃষ্টি করা হয় ।

৮. রাজপ্রতিনিধিদের নতুন পদ : এ আইনে রাজপ্রতিনিধির একটি পদ সৃষ্টি করা হয় (Crown repreesntative)। রাজ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দেশীয় রাজ্যগুলোর উপর রাজার সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যবহার করবেন। অবশ্য একই ব্যক্তি গভর্নর যু জেনারেল ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি হতে পারতেন।

৯. প্রাদেশিক গভর্নর : এ আইন অনুসারে প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার একজন গভর্নরের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে শাসন পরিচালনা করবেন। কিন্তু গভর্নরের প্রচুর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেয়া হয়। তিনি মন্ত্রীদের উপদেশ উপেক্ষা করতেও পারতেন।

১০. পৃথক নির্বাচন : এ আইন অনুসারে মুসলমানদেরকে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার স্বীকৃতি চালু করা হয়। এর সাথে কেন্দ্রীয় আইনসভায় এক তৃতীয়াংশ মুসলিম প্রতিনিধ প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়।

১১. সংশোধন ব্যবস্থা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পরিবর্তন ও সংশোধনের ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওপর ন্যস্ত হয় । ১২. উপদেষ্টা পরিষদ গঠন : এ আইনে ঐতিহাসিক ভারতীয় উপদেষ্টামণ্ডলী রহিত হয়। ফলে অধিকতর কার্যকর ও স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা সংস্থা (Advisory Board) স্থাপিত হয়।

১৩. ভারত সচিবের ক্ষমতা হ্রাস : এ আইনে ভারত সচিবের ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস করা হয়। তবে তিনি বিভিন্ন ভাবে ভারত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। অপরদিকে ভাইসরয়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় ।

১৪. কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে একটি রিজার্ভ ব্যাংক চালু করা হয়। এ ব্যাংককে কেন্দ্রীয় আইন সভার নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ধারাসমূহের বিশেষ গুরুত্বের কারণে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্ম হবার পূর্বপর্যন্ত ভারতে প্রবর্তিত ছিল। কিন্তু আইনের বিভিন্ন ধারা হিন্দু ও মুসলমান নেতৃবৃন্দ কর্তৃক যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। তথাপিও এ আইনের বহুধারা পরবর্তীকালে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে গৃহীত হয় ।

ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে ১৯০৫ সালের ১৩ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। তবে এ ধারণাটি কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সাল পরবর্তী বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাসহ সরকারি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অনেক বড় হয়ে যায়। ফলে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই, আবার ১৯১১ সালে তা রহিত হয় । যার ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

→ বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দু-মুসলমানের প্রতিক্রিয়া : ১৯০৫ সালের ঘোষিত বঙ্গভঙ্গের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের ১৯০৫ সালের ঘোষিত বঙ্গভঙ্গের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় । নিম্নে বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো-

১. মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু ও বর্ণ হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া : মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুসম্প্রদায় ১৯০৩ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা শুরু করে । কলকাতা কেন্দ্রিক সকল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা বিশেষ করে জমিদার, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও সাংবাদিক সবাই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা বঙ্গভঙ্গকে জাতীয় সংহতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি আঘাত বলে অভিহিত করেন। হিন্দু নেতৃবৃন্দ একে বাঙালি বিরোধী, জাতীয়তাবাদ বিরোধী ও বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ প্রভৃতি বিশেষণে আখ্যায়িত করেন। তারা মনে করেন এর দ্বারা মুসলমানদের প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে এজন্য যেকোনো মূল্যে হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গকে রুখে দিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন এবং তাদের দাবির মুখে ১৯১১ সালে মাত্র ৬ বছরের মাথায় ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ।

২. নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া : উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করলেও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানায়। বাংলায় হিন্দুসম্প্রদায়ের মধ্যে নমশূদ্র ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ । হিন্দু ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও কায়স্থদের ঘৃণার ফলে তারা ছিল । অনগ্রসর। বর্ণ হিন্দুদের রাজনৈতিক অভিলাষের মধ্যে তারা কোনো স্বার্থ খুঁজে পায়নি। তাই তারা বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে ।

৩. মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া : বাংলার মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানান। এটি ছিল এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। ১৯০৫ সাল থেকে যখন হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধ প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে তখন ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে মুসলিম জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন। মুসলিম নেতৃবৃন্দ লক্ষ্য করলেন যে হিন্দু নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কখনো মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করবে না। এজন্য ১৯০৬ সালে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলায় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। ঢাকা নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় সেখানে অফিস, আদালত ও সুরম্য অট্টালিকা গড়ে উঠে। বিভিন্ন শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়। শিক্ষাদীক্ষার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। বলতে গেলে ঢাকা কলকাতার সমকক্ষতা অর্জন করে। বাংলার সামগ্রিক উন্নতির ফলে বাংলার জনসাধারণ বঙ্গভঙ্গকে স্বাদরে গ্রহণ করেন।

→ বঙ্গভঙ্গের ফলাফল : ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর লর্ড কার্জন কর্তৃক ঘোষিত বঙ্গভঙ্গ বাংলার জনগণের জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্ত কারী পরিবর্তন এনে দেয়। এজন্য বাংলার জনগণ বঙ্গভঙ্গকে স্থানরে গ্রহণ করে। ১৯০৬ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ইস্টার্ন বেঙ্গল এন্ড আসামের 'ইরা' পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গের ৮টি সুবিধার কথা উল্লেখ করে। সেগুলো নিম্নরূপ :

১. ঢাকা নগরের পুনর্জন্ম ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি ।

২. নদী ও খালগুলোর উন্নতি, রেললাইনের সম্প্রসারণ, চট্টগ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন ।

৩. নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হওয়ার ফলে জমিদার ও সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিদের পক্ষে জনসাধারণের অভাব অভিযোগের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ-সুবিধা। ৪. সুষ্ঠু শাসন ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ।

৫. পূর্ব বাংলার শিক্ষিত ও সভ্য লোকদের সংস্পর্শে আসায় অনুন্নত আসামের অধিবাসীদের উপকার ।

৬. পূর্ব বাংলার জন্য কর্মদক্ষ পুলিশ বাহিনী গঠন।

৭. বাংলা প্রদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন ।

৮. দেশের জনসাধারণ প্রদেশের প্রধান কর্মকর্তার সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গের উদ্যেগ প্রথমে ছিল প্রশাসনিক পরে রাজনৈতিক কারণই প্রাধান্য লাভ করে। বঙ্গভঙ্গ বাংলার জনগণের জন্য আশির্বাদস্বরূপ ছিল। এর ফলে বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়। বঙ্গভঙ্গ ও এর রদ মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে। মুসলমানরা উপলব্ধি করে যে ব্রিটিশ সরকারের হাতে মুসলমানদের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে না । বঙ্গভঙ্গ ও এর রদ বাংলার মানুষকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শিক্ষা দেয় ৷

ভূমিকা : ঊনিবিংশ শতাব্দীতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা, ব্রিটিশ শাসনের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ভারতীয়রা তাদের বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে, ব্রিটিশ সরকার ও ভারতীয়দের দমন করার লক্ষ্যে একের পর এক পদক্ষেপ ও বিভিন্ন আইন পাস করতে থাকে। এতে দেখা যায় ভারতীয়দের আশার তেমন কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে ভারতীয় নেতারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা ছাড়া আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন। একপর্যায়ে অবসর প্রাপ্ত সিভিলিয়ান অ্যালন অক্টাভিয়ান হিউম ও লর্ড ডাফরিনের যৌথ প্রচেষ্টায় সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

→ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পটভূমি : ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলেও অনেক আগ থেকে তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজের সকল সচেতন মহলে আলোচনা হয়। নিম্নে যে অবস্থার প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় তা আলোচনা করা হলো ::

১. শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রেরণ : যদিও কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে, কিন্তু একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের তোড়জোড় শুরু হয় অনেক আগ থেকেই। ঊনবিংশ শতকের সত্তর দশক থেকেই ভারতীয়রা তাদের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে। এ সময় ভারতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এক শ্রেণির মধ্যবিত্তের উত্থান হয়। এ মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। তারা ভারতে প্রতিনিধিত্ত্বমূলক সরকার বা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থাকে কার্যকরী করার জন্য যে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার তা ভারতে ছিল না, তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে ইন্ডিয়া লীগ নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। তবে এ সংস্থা পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।

২. I.C.S পরীক্ষার নিয়ম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন : কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষা এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ সাধনে ‘ভারত সভা' নামে একটি সংস্থা গঠন সুরেন্দ্রনাথের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে না ভারতসভা ভারতীয় IC.S পরীক্ষা সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের নীতির ল ঘোরতর বিরোধিতা করে। এতে ব্রিটিশ সরকারের নির্ধারিত । বয়ঃসীমা ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করার যে চক্রান্ত তার কঠোর শ সমালোচনা ভারত সভার মাধ্যমে করা হয়। এ আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ।

3. Vernacular press Act ও Arms Act পাসের প্রতিবাদ : ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির জন্য জাতীয় আন্দোলন র দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। এছাড়া গণ অসন্তোষও দেখা দেয়। কারণ র ১৮৭৮ সালে লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রকে

নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Vernacular press Act ও Arms Act পাস করেন, যা শিক্ষিত ভারতীয়রা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া ব্রিটিশ সরকার Arm Act পাস করেন, যার কোনো দরকার সে মুহূর্তে ছিল না, তাই এ সকল আইন পাস করার ফলে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠে, আর প্রতিবাদের মাধ্যমেও তখন শিক্ষিত ভারতীয়রা বুঝতে পারে।

৪. ব্রিটিশ ও ভারতীয়দের মধ্যে বৈষম্যের অবসান : ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সমকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকারের নীতির কারণে জাতিগত বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে এ বৈষম্যমূলক নীতির কারণে ইংরেজ ও ভারতীয়দের সম্পর্কের অবনতি হয়। ১৮৮৩ সালে হলবার্ক বিলকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সরকারের আচরণ ভারতীয়দের নিকট পরিষ্কার হয়। এ বিলের মাধ্যমে ভারতবাসীর যে আন্দোলন তা ছিল বিচারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তার অবসান করার। এক পর্যায়ে লর্ড ইলবার্টের নেতৃত্বে একটি আইন প্রণয়ন করা হলেও ইউরোপীয় নেতাদের চাপে তা আবার সংশোধন করা হয়। তাই এ কার্যকলাপের ফলে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয়রা তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলে এসব ঘটনাবলির মাধ্যমে তারা একটি স্থায়ী সিদ্ধান্তে এ উপনীতি হন যে, স্থায়ী কোনো সংগঠন ছাড়া ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হওয়া যাবে না। ফলে তারা একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য জোর তৎপরতা চালান ।

৫. প্রথম জাতীয় সম্মেলনের আহ্বান/ সিদ্ধান্ত : কলকতায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৮৩ সালে এক আর্ন্তজাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু বিশিষ্ট নেতা এ সময় কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকতায় এক জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতাধিক প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগ দেয়, এ সভায়শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা, বৃহত্তর কার্যসংস্থান বিচার ব্যবস্থার পৃথকীকরণ ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সম্মেলনের সফলতা ছিল অনেক যার ফলে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়।

৬. দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত : ১৮৮৩ সালের প্রথম জাতীয় সম্মেলন সফল হলে ১৮৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের আহ্বান করা হয় কলকতায়। এ সভার আলোচ্য বিষয় ছিল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সংস্কার একযোগেইংল্যান্ড ও ভারতে পরীক্ষা গ্রহণ, অস্ত্রআইন রহিতকারণ, বিচার ও শাসন বিভাগের পৃথকীকরণ, সামরিক ও সাধারণ প্রশাসন বিভাগের ব্যয়ভার কমানো হয়। এসব বিষয়ে আলোচনার অন্ত রালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতীয় নেতারা চেষ্টা চালান। ফলশ্রুতিতে এ সম্মেলনে কংগ্রেস গঠন করার পূর্ণ মনোভাব নিয়ে ১৮৮৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় অধিবেশন সমাপ্ত হয় ।

৭. অক্টাভিয়ান হিউমের অবদান : জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সিভিলিয়ান অ্যালন অক্টাভিয়ান হিউম। তিনি ভারতীয়দের স্বার্থে নিজেকে জড়িত করেন । তিনি ভারতীয়দের মনোভাব বুঝে তাদের অসন্তোষ প্রশমিত করার জন্য চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ১৮৮৩ সালের ১ মার্চ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকবাদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠিতে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, মানসিক ও নৈতিক ’ উৎকর্ষ লাভের জন্য একটি স্থায়ী সংগঠন গঠনের উপদেশ দেন। এছাড়া লর্ড ডাফরিনও অনুকূল মনোভাব দেখান । ১৮৮৪ সালে হিউম ডাফরিনের সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর পরিকল্পনার কথা বললে ডাফরিন হিউমের কথার সমর্থন করেন। এক পর্যায়ে ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাসে মোম্বাই শহরে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে ভারতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ।

→ কংগ্রেসে ভাঙ্গন ঘটার কারণ : ১৮৮৫ সারে ইংরেজ সিভিলিয়ান অ্যালান অষ্টাভিয়ান হিউমের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের মুম্বাই শহরে কংগ্রেস গঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং ভারতীয়দের কিছু দাবি-দাওয়া আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আদায় করা। পরবর্তীতে কংগ্রেস সরকারের গঠনমূলক সমালোচনাও শুরু করে। তবে তা ছিল খুবই সীমিত ।

কিন্তু কংগ্রেসের এ অবস্থা বেশি দিন চলেনি। ব্যাপকভাবে শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি কংগ্রেসে যোগ দিতে থাকে। ফলে এটি একটি সর্বভারতীয় সংগঠন পরিণত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে কংগ্রেসে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে। কংগ্রেস দুটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক অংশ সরকারি কর্মকাণ্ড সমর্থন করার পক্ষপাতি এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ের কৌশলে বিশ্বাসী ছিল। এদেরকে বলা হত মডারো বা উদারপন্থি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গোখেলে, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, দাদা ভাই নওরোজী, ফিরোজ শাহ, মেহেততা, রাসবিহারী ঘোষ এবং বদরুদ্দিন তৈয়বজী প্রমুখ । এরা উগ্রপন্থি ছিলেন না, এরা ছিলেন সংস্কারবাদী।

কংগ্রেসের অপর অংশ ছিল বয়সে তরুণ। তারা বিবর্তন বা সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন না। তারা স্বশাসনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাদের নীতি ছিল আন্দোলন সংগ্রাম করা। তারা বয়কটেও বিশ্বাসী । ছিলেন। ফলে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে কংগ্রেসের মধ্যে বিভক্তি সুস্পষ্ট হযে ওঠে। কংগ্রেসের এ পর্যায়ে যারা নেতা ছিরেন তারা হলেন বালগঙ্গধর তিলক, লালালাজপত রায়, এ্যানি বেসান্ত, বিপিনচন্দ্র পার, অরবিন্দ ঘোষ প্রমূখ। এরা ছিলেন উগ্রপন্থি। এরা কঠোর হিন্দুত্ববাদীও ছিলেন। এ কারণে অনেক মুসলিম নেতা । কংগ্রেসে যোগ দেননি। এই সংস্কারবাদী ও উগ্রবাদী দুই দলের বিরোধের কারণে ১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেস দুইভাগে বিভক্ত হয় বা কংগ্রেসের ভাঙ্গন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৮৫ সালে যে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয় তা যদি ও ভারতবাসীর রাজনৈতিক সচেতনতার ফসল ছিল না। তথাপিও ভারতবর্ষের শাসনকেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ দেখা যায় . যে, ভারতের শিক্ষিত জনসাধারণ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে যে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন তা ছিল সীমাবদ্ধ পরিসরে, এগুলো তেমন ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। অতএব বলা যায়, সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শিক্ষিত ভারতবাসী 1 আশার আলো দেখতে পান ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram