nulibrary

ভূমিকা : ইতিহাস পরিবর্তনশীল। আর ইতিহাসের পরিবর্তনের ধারায় ১৭৬৫-১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজদণ্ড প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহই ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইনের প্রত্যক্ষ | তবে ইতিহাসে কোনো কিছুই একদিনেই সংঘটিত হয় | দিক না, তেমনি ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইনের পেছনে সক্রিয় | ঐক্য ছিল ইংরেজ শাসনের সুদীর্ঘ সময়কালের শোষণ-নির্যাতন।

১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইনের পটভূমি : ১৮৫৮ | মূর্তিগ সালে ভারত শাসন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি । শাসনের অবসানে ঘটে এবং ব্রিটিশরাজ ভারতের শাসনভার সরাসরি নিজ হাতে গ্রহণ করেন। ভারত শাসনের ব্যাপারে মহারানিকে সাহায্য করার জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন ভার সদস্যকে ভারত সচিব নিযুক্ত করা হয়। স্যার চার্লস উড প্রথম ধর্মা ভারত সচিবের পদ অলংকৃত করেন। তাকে সাহায্য করার জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। ভারতের বড়লাট ভাইসরয় বলে অভিহিত হয়। নিম্নে এই আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হলো :

১. ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতীয়দের অনীহা : ১৭৫৭ সালের পর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একের পর এক ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে থাকেন। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব দেখা দেয়। এছাড়া কোম্পানি শাসনের মোড়ল হিসেবে ভারতবর্ষে এমন অনেকের আবির্ভাব হয়েছিল যাদের কেউ ছিলেন নি ভারতবাসীর প্রতি নামমাত্র উদার, কেউ কঠোর, কেউ নি সাম্রাজ্যবাদী প্রভৃতি প্রকৃতির। সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ডালহৌসির | স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে সাতারা, ঝাঁসি, নাগপুর, সম্বলপুর ি প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। কর্ণাটক, অযোগ্যা, মারাঠা। শাসকবর্গ ও ক্ষমতাচ্যুত হন। এভাবে ক্রমে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ভারতীয়দের তীব্র অনীহা দেখা দেয়।

২. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক শোষণ : ব্রিটিশ | শাসনের পূর্বে এদেশ ছিল কৃষি ও শিল্পে সমৃদ্ধ। কিন্তু কোম্পানির শাসনে এদেশে শুরু হয় লাগামহীন শোষণের পালা। চিরস্থায়ী | বন্দোবস্তের মাধ্যমে কৃষকরা জমিহারা হয়। তদুপরি অতিরিক্ত করভার তাদেরকে নিঃস্ব করে দেয়। স্থানীয় শিল্পের ধ্বংসের পাশাপাশি নীলচাষের মাধ্যমে দেশীয় জমি হয়ে উঠে অনুর্বর। এছাড়াও কোম্পানির অন্যায়মূলক রাজস্বনীতির ফলে এদেশের সমৃদ্ধ কৃষককুল সহায়সম্বল হারিয়ে পথে বসেন। ফলে শাসক শাসিতের ব্যবধান বেড়ে যায় বহুগুণ।

৩. সামাজিক বৈষম্য : ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের মূলে ছিল ব্রিটিশ ভারতীয়দের মধ্যকার সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা। বিজিত ভারতবাসীর প্রতি বিজেতা ব্রিটিশদের ঘৃণার মনোভাব ভারতীয়দের মনে বেদনার সৃষ্টি করেছিল। সামাজিক দিক থেকে কখনও ভারতীয়দের সাথে কোম্পানির কোনো ঐক্যভাব গড়ে উঠেনি। ইংরেজরা ভারতবাসীকে বর্বর বলে অভিহিত করতো এবং খ্রিস্টান ধর্মযাজকগণ প্রকাশ্যে হিন্দুদের মূর্তিপূজা ও সামাজিক সংস্কারবাদির নিন্দা করতো ।

৪. ধর্মীয় অপব্যাখ্যা : ভারত শাসন আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের ধর্মরক্ষার ব্যাপারে ইংরেজদের প্রতিশ্রুতিদান ভারতে খ্রিস্টান মিশনারীদের তৎপরতায় ভারতীয়দের মনে এ আশঙ্কা জন্মায় যে, ইংরেজ শাসনে তারা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য। এছাড়া মন্দির বা মসজিদ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট ভূমি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর করারোপের সরকারি নীতি ভারতীয় জনগণের ধর্মীয় চেতনায় চরম আঘাত হানে। তদুপরি ১৮৫০ সালে সরকার এমন একটি আইন করে যে, খ্রিস্টধর্ম অবলম্বনকারীকে তার পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এর ফলে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই নিজ নিজ ধর্মের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রমাদ গুণে |

৫. ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ : ভারত শাসন আইনের পটভূমিতে রয়েছে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ । প্রত্যক্ষ পটভূমিতে ভারতীয়দের যদিও পূর্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হতো তাদের প্রতি প্রদর্শিত হতো চরম বৈষম্য। ভারতীয়দেরকে নিগার, শুয়োর ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করা হতো। তদুপরি সিপাহিদের কপালে তিলককাটা নিষিদ্ধকরণ, দাঁড়ি কামানো, পুরানো পাগড়ির ব্যবহারের জন্য চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি ভারতীয় সিপাহিদের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল। এভাবে সিপাহিদের মনে যখন রাজনৈতিক অসন্তোষ বিরাজমান তখন ব্রিটিশ সরকার এনফিল্ড নামক এক প্রকার রাইফেলের ব্যবহার শুরু করে। এতে এক প্রকার গুজব উঠল যে, এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বি মাখানো আছে এ চর্বি দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকে পুরতে হতো। এতে সিপাহিরা বিদ্রোহ শুরু করলেন। ক্রমে এ বিদ্রোহ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এই ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে ব্রিটিশ কোম্পানির শাসনের টনক নড়ে ওঠে।

৬. ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিল প্রণয়ন : পরিবর্তনের হাওয়া পূর্ব থেকে শুরু হলেও ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকারকে কোম্পানির স্থলে নিজ হাতে শাসন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোন এ সম্পর্কিত একটি বিল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। পামারস্টোন বোর্ড অব কন্ট্রোল এবং কোর্ট অব ডাইরেক্টরসের পরিবর্তে লন্ডনে একজন প্রেসিডেন্ট এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিলের প্রস্তাব করেন। ভারতে বেসামরিক সামরিক ও রাজস্ব সংক্রান্ত সমস্ত কার্যক্রম এই কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যেসব ব্যক্তি কোম্পানির ডাইরেক্টর ছিলেন অথবা ভারতে যারা কোম্পানির রাজকর্মচারী ছিলেন তাদেরকে এই কাউন্সিলের সদস্য বলে অভিহিত করেন। কিন্তু বিলপাসের আগেই পামারস্টোনের স্থলাভিষিক্ত হন লর্ড ডারবি। তিনি ডিজরেইলীকে নিযুক্ত করেন এই বিষয়ে। হাউস অব কমন্সে তীব্রভাবে সমালোচিত হওয়ায় ডিইরেইনী প্রত্যাহত হন। পরবর্তীতে বোর্ড অব কন্ট্রোলের প্রেসিডেন্ট লর্ড স্টনেলি একটি নতুন বিল পাস করেন যেখানে পামারস্টোনের সকল প্রস্তাবই অন্তর্ভুক্ত ছিল । জন স্টুয়ার্ট মিল কোম্পানির পক্ষ হয়ে এই সময় পার্লামেন্টের উভয় হাউজে প্রস্তাব পেশ করেন। যাতে তিনি কোম্পানির পক্ষে যুক্তি দেখান। কিন্তু তা ধোপে টিকেনি। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে কোম্পানির ভাগ্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট লর্ড স্টানলির এই বিল পার্লামেন্টে রাজকীয় অনুমোদন লাভ করে। ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানির স্বপক্ষে এক ঘোষণাপত্র জারি করেন। ১৮৫৮ সালের এই “ভারত শাসন আইন” ভারতকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্রিটিশ রাজ্যের শাসনাধীন নিয়ে আসে ।

— ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইনের শর্তাবলি : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ফলে ভারতের কেবলমাত্র কোম্পানির অবসান হয়নি ভারতের শাসন ব্যবস্থায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। ১৮৫৮ সালে যে আইন দ্বারা ভারতের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় তা ছিল ভারতের উন্নত ধরনের শাসন প্রবর্তনের আইন। এ আইনের দ্বারা ভারতের শাসনের ব্যাপারে ভাতের সচিব সর্বেসর্বা হয়ে উঠেন। আইনগত তিনি পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত সম্পর্কে উদাসীন ছিল। কিন্তু এই আইনের দ্বারা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। সেগুলো হলো-

১. আইন পরিষদে ভারতীয়দের গ্রহণ;
২. রাজস্ব বিভাজন;
৩. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন;
৪. ভারতে ব্রিটিশ পুঁজির অনুপ্রবেশের ব্যাপকতা;
৫. সামরিক বিভাগের পরিবর্তন;
৬. মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে সরকারি নীতি অবলম্বন এবং
৭. সরকারি ও সমাজ সংস্কার নীতির ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রভৃতি ।
→ মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র : ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর = মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র মারফত ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে এই ঘোষণাপত্র জারি করেন । এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে-
১. ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোনো ব্যাপার কোম্পানি আর
হস্তক্ষেপ করবে না;
২. প্রত্যেক ভারতবাসী ধর্মীয় স্বাধীনতা গ্রহণ করবে; ৩. জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতাসম্পন্ন সকল ভারতবাসী সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে।
এছাড়া ও এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে,
১. স্বত্ববিলোপনীতি পরিত্যাগ করতে হবে;
২. দেশীয় রাজাদের দত্তক গ্রহণের অধিকার দিতে হবে এবং বলা হয় যে, সরকার ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী নয় এবং
৩. দেশীয় রাজাদের বলা হয় যে, কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত তাদের সমস্ত চুক্তি ও সন্ধিগুলোকে মেনে চলতে হবে ।
— ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইনের ত্রুটিসমূহ : ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন ও মহারানির ঘোষণাপত্র কেবল কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ ছিল। মহারানির ঘোষণাপত্রে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের সমান আচরণ ও অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। যেমন-
১. জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চাকরি ক্ষেত্রে বড় বড় কথা বলা হলেও উচ্চ পদগুলোতে ভারতবাসীদের সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি ।
২. ভারতবাসী যেন সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সেজন্য ব্রিটিশ সরকার মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে বিভেদ নীতি অবলম্বন করেন।
৩. বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের জাতি গোষ্ঠী ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষভাবাপন্ন করে তোলা হয় ।
৪. শিক্ষিত ভারতীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ কোনো সম্পর্ক স্থাপন না করে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় রাজা-মহারাজা, জমিদার, ভূস্বামী প্রভৃতিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি করেন।
৫. এছাড়াও পরবর্তীকালে ভারতবাসীর সমাজ ও ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে ব্রিটিশদের উদাসীনতা দেখা দেয়। তবে এই উদাসীনতা তারা সর্বদাই বজায় রাখতে পারনি।
১৮৫৮ সালের আইন বা মহারানির ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতিগুলো মুহূর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। শাসক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হতাশা ও ঘৃণার সঞ্চার হয় এবং ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদী চেতনা সঞ্চারিত করেছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৮ সালের আইনের মাধ্যমে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং এর বদলে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল । যদি ও বিপ্লব ব্যর্থ হয়, তথাপি এটি ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসনে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়নে সমর্থ হয় ।

অথবা, চার্টার এ্যাক্ট প্রবর্তন করার কারণ কী?

ভূমিকা : ১৭৭৩ সালে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও দায়িত্বকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রণীত আইনকেই রেগুলেটিং অ্যাক্ট বলে। বাংলা জয়ের পূর্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভবান ছিল কিন্তু জয়ের পর লোকসান কোম্পানি খেতে থাকে। এমতাবস্থায় কোম্পানির শাসনকে নতুন
করে সাজানোর জন্য রেগুলেটিং অ্যাক্টের প্রণয়ন হয় ।
→ রেগুলেটিং এ্যাক্ট প্রবর্তনের কারণ : রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রবর্তনের কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১. দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা প্রচলন : বাংলা জয়ের পর থেকে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে নিম্নপদস্থ কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই নিজে লাভবান হবার তাগিদে চরমভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। যাতে করে কোম্পানি চরম লোকসান খায়। যার থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য এ আইন পাস হয় ।

২. কোম্পানির উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাধান্য বৃদ্ধি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্বাধীনভাবে ভারতে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতো। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য এ আইন পাস করা হয়।

৩. স্বেচ্ছাচারী কর্মচারীদের বরখাস্ত : দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের ফলে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যেটা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। এটার জন্য ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির কর্মচারীদের বল্গাহীন ও অরাধ শোষণকে দায়ী করে। ফলে এ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বরখাস্ত করার জন্য এ আইন পাস করা হয়।

৪. কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালকদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করা : বাংলা জয়ের পর থেকে কোম্পানির শাসনের রূপরেখা পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী ও অংশীদারদের মাঝে ভালো সম্পর্ক যাচ্ছিল না। এ সম্পর্ক উন্নতির জন্য এ আইন পাস করা আবশ্যক হয়ে ওঠে।

৫. বোম্বে ও মাদ্রাজ কুঠির সঙ্গে বাংলার সম্পর্কের উন্নয়ন : বোম্বে ও মাদ্রাজ কুঠি বাংলা কোম্পানি শাসনের অধীনে আসার পূর্বে স্ব-পরিষদ ছিল। এই দুই পরিষদের সাথে বাংলার সম্পর্ক উন্নয়নও এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ভারতের প্রতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করার লক্ষ্যেই ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট প্রণীত হয় ।

ভূমিকা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দেরকে উদারতার বাণী শোনান। যে উদারতার বাণী ভারতীয়রা ইতোপূর্বে শুনেছিল কিন্তু কাজ হয়নি। তাই ১৯০৯ সালে ভারতীয়দের প্রতি উদারতার মনোভাব পোষণ করে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টো। এ উদারতার মানসিকতার প্রেক্ষিতে তারা একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা চালান। যা ১৯০৯ সালের বাস্তবায়িত হয়। এটি ইতিহাসে মলি মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত। এ আইন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রণয়ন করা হয়। এ আইন সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ এর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

—১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন : ১৮৯২ সালের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়। কংগ্রেসের নিয়োগ নেতৃত্বে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে নতুন উপাদান যোগ করে। ব্রিটিশ প্রশাসন বিরোধী মনোভাবে উদ্রেক রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সক্রিয় হয়। যার আইনে ফলে ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে। আগাখানের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধি দল লর্ড মিন্টোর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া পেশ করে। এমন পরিস্থিতির। প্রেক্ষাপটে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ব্রিটিশ পরিষ পার্লামেন্টে ১৯০৯ সালে একটি আইন পাশ হয়। যা মর্লি মিন্টো | কার্য সংস্কার আইন' বা ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন বলে।
১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য বা ধারা : ভারত ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন একটি সংশোধনী মুসি আইন। এ আইনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা | ১৯০ হয়নি। নিম্নে ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা বা ভার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : সুপ পরি ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল পূর্বে ছিল ১৬ জন। ১৯০৯ সালের আইনে ৬৯ করা হয়। এ আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। বড় বড় প্রদেশে শাসনতান্ত্রিক সুবিধার জন্য ৫০ জন অতিরিক্ত সদস্য এবং ছোট প্রদেশগুলোতে ৩০ জন সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদেশের আইনসভায় বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়া হয়।

২. নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি প্রদান : ১৯০৯ সালের আইনের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সদস্যদের ভোটাধিকার সীমিত করা। পৌরসভা, লোকাল বোর্ড, বণিক সমিতি প্রভৃতিই ভোটাধিকার লাভ করে । কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার নীতি স্বীকৃত হয় ।

৩. মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা : এ আইনের দ্বারা সর্বপ্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া । অ হয়। কেননা ব্রিটিশ ভারতে অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। এই আইনের দ্বারা প্রথম মুসলমান প্রতিনিধিগণ মুসলমান ভোটার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে ।

৪. আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে আইন পরিষদের সদস্যরা যেকোনো প্রশ্ন এবং সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার লাভ করে। এমনকি সরকারের সমীপে সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারতো।

৫. আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত : আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হলে আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত রাখা হয়। এক্ষেত্রে আইন পরিষদের সদস্যরা সরকারের নিকট সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তুব উত্থাপন করতে পারলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পরিষদ সভাপতির হাতেই ন্যস্ত রাখা হয়।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগ : এ সংস্কার আইনে গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে একজন ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা গৃহীত হয় ।

৭. শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : ১৯০৯ সালের সংস্কার আইনে শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪জনে উন্নীত করা হয়।

৮. বাংলা প্রদেশে কার্য নির্বাহ পরিষদ গঠন : এ আইনে ভারত শাসন অনুযায়ী ছোটলাট শাসিত প্রদেশেও কার্যনির্বাহ পরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় সেই মোতাবেক বাংলায় একটি কার্য নির্বাহক পরিষদ গঠন করা হয়।

→ ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব : ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবাদ বঙ্গবঙ্গ বিরোধী আন্দোলন মুসলিম লীগের দাবি ও বিপ্লবী আন্দোলনের উদ্ভবের ফল হিসেবে ১৯০৯ সালের আইন প্রবর্তন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগ, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যাবৃদ্ধি, বাজেট পরিকল্পনায় ভারতীয়দের সুপারিশের ক্ষমতা দান ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়। তবে এসব সংস্কার সত্ত্বেও এই আইনের সাম্প্রদায়িক নীতি, বড়লাটের আধিপত্য, দায়িত্বশীল শাসনের অভাব, ক্ষমতাহীন জনপ্রতিনিধি প্রভৃতি ধারাসমূহ আইনটিকে ত্রুটিপূর্ণ করে তুলেছে। তবে এই সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও এই আইনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। নিম্নে এই আইনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. এই আইনে ভারতে প্রথম কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাতে বেসরকারি সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় ।
২. বড়লাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে প্রথম ভারতীয় সদস্য নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ হয় ।
৩. ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ।
৪. এই আইনে ভারতে সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রচলন ও আইনের শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।
৫. সর্বোপরি, ভারতের শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতির ওপর এর গভীর প্রভাব পড়েছিল ।

সুতরাং, মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতের সাংবিধানিক ক্রমবিকাশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। ভারত সচিব জন মর্লি এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টোর মুক্ত চিন্তার বাস্তবায়ন ঘটে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে। এ সংস্কারের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য ছিল মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী গঠন। সংস্কারের এ ব্যবস্থা থেকেই মুসলমানদের মধ্যে পৃথক রাজনীতির উদ্ভব ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৯ সালের সংস্কার আইন একটি গুরুত্ব স্থান দখল করে আছে। এ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কিছু রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করলেও সমগ্র ভারত কর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।

অথবা, ১৮৫৩ সালের চার্টার আইনের ধারাসমূহ বিশ্লেষণ কর ।

ভূমিকা : ইংরেজি ইস্ট কোম্পানি ১৭৬৫ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় দেওয়ানি লাভ করে। এতে করে কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত হয়। তবে তারা এর সাথে ব্যাপকহারে দুর্নীতি ও কুশাসন শুরু করে দেয়। যার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং আইন পাস করে। যার মেয়াদ ছিল ২০ বছর। এরপর ১৭৯৩ সালে চার্টার আইন পাস করে ব্রিটিশ সরকার। ১৮১৩ সালে পূর্বের আইনের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় আইন করে ব্রিটিশ সরকার এর ১৮৩৩ সালে আবার আইন করে। সর্বশেষ ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে সনদ আইন প্রদান করে ।

— ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ : ভারতীয়দের বিভিন্ন আবেদনের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট সদস্য আর্ল অব ডারবি ভারতে কোম্পানির কাজকর্ম অনুসন্ধানের জন্য একটি Select committee গঠন করে। যার প্রেক্ষিতে ১৮৫৩ সালের সনদ আইন রচিত হয়। নিম্নে ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কোম্পানির ক্ষমতা নির্দিষ্টকরণ : কোম্পানির ক্ষমতা ও অধিকার আগের মতোই রাখা হয় ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে । তবে এই সনদটি ২০ বছরের জন্য মঞ্জুর করা হয়নি। কোম্পানিকে ভারতীয় সাম্রাজ্যে শাসন করার অধিকার দেওয়া হয়। সনদে ইংল্যান্ডের রানি ও তার উত্তরাধিকারীদের অনুকূলে । কোম্পানি শাসন ভারতে ততদিন বহাল থাকবে যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্টে অন্য ব্যবস্থা না হয় ।

২. বেতন সংক্রান্ত : এই আইনে বলা হয়েছে যে, Board of control-এর সদস্যদের এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিবে কোম্পানি। রাজা কর্তৃক তাদের বেতন নির্ধারিত হবে। আইনে আরো বলা হয় রাষ্ট্র সচিবের বেতনের চেয়ে বোর্ড সভাপতির বেতন কম হবে না। পূর্বের বেতন সংক্রান্ত সব আইন বাতিল করা হয় ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ৷

৩. ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস : পূর্বে ডাইরেক্টর সভা কোম্পনির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মচারী নিয়োগ করবে। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনে ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। Board of control-এর মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। লর্ড মেকলের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে এই কাজ সম্পাদনের জন্য।

৪. লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদ সৃষ্টি : বাংলার গভর্নরের দায়িত্ব পূর্বে ছিল গভর্নর জেনারেলের উপরে। এতে করে গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তাই গভর্নর হেনারেলের উপর কাজের চাপ কমাতে তাকে বাংলার গভর্নর এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যার জন্য গভর্নর জেনারেলের জায়গায় নতুন পদ লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদ সৃষ্টি করা হয়।

৫. গভর্নর জেনারেলের পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ১৮৩৩ সালের সনদে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩ জন। ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে গভর্নর জেনারেলের শাসন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় । ৪ জন সদস্য করা হয় শাসন পরিষদে। এর সাথে গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদকে স্থায়ী করা হয়।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্যাবলি পৃথক : ১৮৫৩ সালের সনদ আইনে প্রথমবারের মতো গভর্নর জেনারেলের পরিষদের আইন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম পৃথক করা হয়। গভর্নর জেনারেলের আইন পরিষদ গঠিত হয় ১২ জন সদস্য নিয়ে। ৭ জন উপস্থিত হলে কাজ করা যাবে। গভর্নর জেনারেল পরিষদের বিলে সম্মতি প্রদান না করলে তা আইনে পরিণত হতো না। এইগুলো আইন হতো তার অনুমতিতে |

৭. আইন পরিষদের কার্যাবলি : এই আইনে আইন পরিষদের কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতোই ১ ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। পরিষদের সদস্যদের প্রশ্ন ত জিজ্ঞাসা করা ও সরকারের নীতির উপর আলোচনা করা ছিল আইন পরিষদের কার্যাবলি। আইন পরিষদের পরামর্শ বড়লাট ইচ্ছা করলে গ্রহণ বা বর্জন করতে পারতো।

৮. নতুন প্রদেশ গঠন : ডাইরেক্টর সভাকে নতুন প্রদেশ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ডাইরেক্টর সভা নতুন যে প্রদেশ গঠন করবে এগুলোর সীমানা ও নির্ধারণ করবে। এছাড়া দরকার হলে নতুন প্রদেশগুলোর সীমারেখা পরিবর্তন করা যাবে। ডাইরেক্টর সভা ১৮৫৯ সালে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে পাঞ্জাব প্রদেশ গঠন করে ।

৯. আইন কমিশন গঠন : ইংল্যান্ডের রাজাকে বলা হয় একটি পরিষদ গঠন করতে। এই আইন কমিশন ভারতীয় আইন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইনে খসড়া প্রস্তুত করবে। একই সাথে কী আইন প্রণয়ন করা যায় তার সুপারিশ প্রদান করবে। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধি আইনে পরিণত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৩ সালের সনদ আইন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে। এতে করে কোম্পানির দৌরাত্ম্যর অবসান, শাসনবিভাগের সম্প্রসারণ, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ, গুরুত্বপূর্ণ আইন কমিশন, প্রশাসনিক পরিবর্তন, বোর্ড সভার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ডাইরেক্টর সভার ক্ষমতা খর্ব হয়। এতে করে ভারতীয় জনগণ অনেক সুবিধা-অসুবিধা পায়। কেননা এতে কোনো ভারতীয়দের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও কোম্পানির আধিপত্য কমে যাওয়ায় ভারতের জনগণের অনেক উপকার হয় ।

ভূমিকা : চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন হলো ব্রিটিশ সরকারের সাথে কোম্পানির চুক্তি। কোম্পানি কর্মচারীদের দুর্নীতি | অভিযোগের প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম ১৭৯৩ সালে সনদ আইন পাস | হয়। ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের ২০ বছর পূর্ত হলে ১৮১৩ | সনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পুনরায় সনদ আইনের দাবি উঠে। ফলে ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ২য় সনদ আইন পাস হয়।
→ ১৮১৩ সালের সনদ আইনের ধারাসমূহ/ বৈশিষ্ট্যাবলি : ১৮১৩ সালের ধারা বা বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

১. উন্মুক্ত বাণিজ্যের অনুমোদন : ১৮১৩ সালের আইনে বিি ইংল্যান্ডের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্যও উপমহাদেশে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। ইতোপূর্বে এখানে কোম্পানি | ধর্ম একচেটিয়াভাবে বাণিজ্য করতো। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও স ছিল । যেমন- চা বাণিজ্যে কোম্পানির একক আধিপত্য করতো।

২. মিশনারী কার্যক্রমের অনুমোদন : ১৮১৩ সনের সনদ আইনে ভারতীয় উপমহাদেশে মিশনারীদের আগমন অনুমোদন দেয় এবং একই সাথে এখানে মিশনারী কার্যক্রমের অনুমতি দেয়। এর ফলে খ্রিস্টান মিশনারীরা উপমহাদেশে ব্যাপকহারে 4. আগমন করে এবং এখান খ্রিস্টধর্মের প্রচার কাজ করে।

৩. কোম্পানির রাজস্ব ব্যবহার নীতি : এ সনদে ভারত থেকে সংগৃহীত রাজস্ব কোন খাতে কীভাবে ব্যবহার করবে তা উল্লেখ করা আছে। এ রাজস্ব থেকে সেনাবাহিনীর ভরণপোষণ, কোম্পানির ঋণবাবদ সুদ পরিশোধ এবং ভারতীয় কোম্পানির সমস্ত বেসামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যয় নির্বাহের খরচ বহন করবে।

৪. গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা : এ আইনে গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেয়া এবং বাতিল করার ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল ও স্থানীয় সরকারের অবাধ হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দেয়া হয় ।
৫. ভৌগোলিক বিবরণ সংরক্ষণ : এ অঞ্চলে অবাধে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানিকে বাণিজ্যিক ও ভূখণ্ডগত বিবরণ আলাদাভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয় ৷

৬. বোর্ড অব কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা : এ আইনে প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতাকেন্দ্রিক প্রেসিডেন্সিগুলোতে Board of Control-এর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ।

৭. Justice of peace নিয়োগ : এ আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো Justice of peace নিয়োগ । ভারতে কোনো ব্রিটিশ কর্মচারী যদি অপরাধ করে তার বিচারের জন্য ব্রিটেনে আলাদা আদালত স্থাপন করা হয় এবং সেখানে তাদের বিচার হয় ।

৮. সামরিক বিষয়াবলি সম্পর্কে ধারা : ১৮১৩ সালের সনদে সামরিক বিষয়াবলির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করা হয়। এই সনদে কোম্পানি ও ভারতীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ প্রণয়ন বিশেষ নিয়মকানুন প্রণীত হয়। যা কোম্পানির পরিচালনাকে নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে ।

৯. স্থানীয় সরকারের করারোপের নির্দেশ : ১৮১৩ সালের আইন স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় কর ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা প্রদান করেন। তাদের রাজস্ব ও অর্থবিষয়ক তথ্য প্রেসিডেন্সিতে সার্বক্ষণিক প্রদানের কথা বলা হয়। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ খাতের কেন্দ্রে অবস্থান করে ।

১০. শিক্ষা বিস্তার : এই আইনে শিক্ষা বিস্তারের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করা হয়। এক লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ।

১১. ধর্মীয় উন্নয়ন : এ আইনের দ্বারা ভারতে ইউরোপীয় ধর্মীয় দর্শন বিস্তারের পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ সময় বিভিন্ন প্রদেশে চার্চ ও বিশপ নিয়োগ ও তাদের উপযুক্ত বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের নিম্নস্তরের অনেক লোক খ্রিস্টীয় ধর্মে দীক্ষা লাভ করে ।

১২. কোম্পানির কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ : এ আইন কোম্পানির কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে । এই পদক্ষেপ কোম্পানির কর্মচারীদের দক্ষ ও নিপুণ করে গড়ে তোলে। কোম্পানির প্রশিক্ষণ ও সংগঠনের প্রভাবে দক্ষ এক শ্রেণির কর্মচারী গড়ে তোলে যারা ভারতীয় প্রশাসনে বিশেষ ভূমিকা বিস্তার করে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট ভারতে শাসনতান্ত্রিক সুশাসন এবং কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২০ বছর সনদ প্রদানের কথা বলা হয়। আর ১৮১৩ সালের সনদ আইন প্রণয়ন ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানি ও ব্রিটিশ সরকারের কার্যপ্রণালি এই আইন দ্বারা গৃহীত হয় ।

অথবা, ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের পটভূমি আলোচনা কর ।

ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০০ সালে ভারতবর্ষে আসে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তবে ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশ সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল । এজন্য কোম্পানি ১৭৯৩-১৮৫৭ সাল পর্যন্ত কয়েকটি সনদের মাধ্যমে ভারতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে The Charter Act 1793' বা সনদ আইন ১৭৯৩'।


১৭৯৩ সালের সনদ আইনের পটভূমি : ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৩ সালে ২০ বছর মেয়াদি একটি সনদ প্রদান করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে। যার মাধ্যমে সরকার ভারতবর্ষে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার বিধান ঠিক করে দিয়েছিল। ১৭৯৩ সালে এ সনদের মেয়াদ শেষ হয়। তাই ১৭৯৩ সালে পূর্বের সনদ নবায়নের জন্য পার্লামেন্ট এ বিষয়টি পেশ করা হয়। তখন খুব সহজেই সনদ বিলটি পার্লামেন্টে পাস হয়। যার প্রধান কারণ দুটি। যথা-
১. পার্লামেন্টের সদস্যরা কোম্পানির সনদ নবায়নের পক্ষে ছিল ।
২. এ সময় ফ্রান্সে বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলে, ব্রিটেন ফ্রান্সের আক্রমণের আশঙ্কা করে। তাই কোম্পানির সাথে কোনো বিরোধিতা করেনি। কারণ এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হয়নি।
পাশাপাশি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী। যার কারণে সরকার সনদ নবায়নের ব্যাপারে কোনো বিরোধিতা করেনি। যার ফলে খুব সহজেই ১৭৯৩ সালে পার্লামেন্ট সনদ বিলটি পাস হয়। যা 'The Charter Act, 1793 বা সনদ আইন ১৭৯৩ হিসেবে পরিচিত।


সনদ আইন ১৭৯৩ : ১৭৯৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে পূর্বের সনদের মেয়াদ ২০ বছর বৃদ্ধি করা হয়। বোর্ড অব কন্টোলের সদস্যদের বেতন ভারতের রাজস্ব থেকে দেওয়া হয়। বোম্বে ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিকে সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে কোম্পানির সদস্যদের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। এটি ছিল পিটার ভারত শাসন আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও নিশ্চিতের জন্য তৈরিকৃত বিধান।


উপসংহার : সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৭৯৩ সালের সনদ আইন ভারতে কোম্পানির আধিপত্য অনেকটা হ্রাস করেছিল। কারণ ব্রিটিশ সরকার সনদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কোম্পানির ক্ষমতা হ্রাস করার চেষ্টা করে। এজন্য সনদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন ও প্রেসিডেন্সিগুলোকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। যার ফলে কোম্পানির ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তৃতি হ্রাস পায় ৷

অথবা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপর টিকা লিখ ।

ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে লর্ড কর্নওয়ালিশ একজন উল্লেখযোগ্য শাসক। তার শাসনকাল ছিল ব্রিটিশ শাসনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তিনি যখন গভর্নর জেনারেল হয়ে বাংলায় আসেন তখন বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থায় মারাত্মক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। এই সমস্যার সমাধানে তিনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাই ইতিহাসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত হয়ে আছে।


→ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ১৭৬৪ সালে ব্রিটিশরা বিজয়ী : হওয়ার পর ১৭৬৫ সালে তারা বাংলার দিওয়ানি লাভ করে এবং দ্বৈতশাসনের প্রবর্তন করেন। কিন্তু দ্বৈতশাসনের অব্যবস্থার ফলে ১৭৬৯-'৭০ সালে বাংলায় ভয়াবহ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয় এবং বাংলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস এসে এই অরাজকতাকে পুনরুদ্ধারের জন্য পঞ্চসালা বন্দোবস্তের অনুমোদন দেন। কিন্তু কিছুদিন পর এই পঞ্চসালা বন্দোবস্ত ও ব্যর্থ হয়। এদিকে ১৭৮৪ সালে House od communce এ pitt india act আইন পাশ করেন। এই Act এর ৩৯ নং ধারায় স্থানীয় আইন ও প্রথার ভিত্তিতে চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্তের নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় ১৭৭৫ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন এবং তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান। তিনি ১৭৯০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে একটি পঞ্চসনা বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন এবং ঘোষণা দেন কোম্পানির ডাইরেক্টর সভার অনুমোদন দিলে পরে তিনি এই পঞ্চসনা ব্যবস্থাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রুপ দান করবেন। পরে নানা বিতর্ক ও আলোচনা পর্যালোচনার পরে কোম্পানির ডাইরেক্টর সভা ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অনুমতি দান করেন। ফলে পূর্বের পঞ্চসনা বন্দোবস্ত ব্যবস্থাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রুপ পরিগ্রহ ও করে। লর্ড কর্নওয়ালিশের এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্যেই ছিল কোম্পানির রাজস্ব নির্দিষ্ট করা। এই ব্যবস্থা ও প্রবর্তনের ফলে কোম্পানি তাব রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব তাদের তাঁবেদার জমিদার শ্রেণির হাতে অর্পণ করে চিন্তামুক্ত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থার ফলে বাংলার সাধারণ কৃষকগণ চরম নির্যাতন- নিপীড়নের মুখোমুখি পতিত হয় ।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যদিও একটি ভালো উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রবর্তন করা হয় কিন্তু তার মুলে ছিল কোম্পানির রাজস্ব প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ফলে কোম্পানির দাসানুদাস জমিদাররা রাজস্ব আদায়ের জন্য কৃষক-প্রজাদের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন।

অথবা, এলাহাবাদ সন্ধি ১৭৬৫ সংক্ষেপে লিখ। অথবা, এলাহাবাদ সন্ধির ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দাও ।

ভূমিকা : কোম্পানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা চিন্তা করে দিল্লির সম্রাট শাহ আলম এবং অযোধ্যার সম্রাট সুজাউদ্দৌলা সঙ্গে মিত্রতা নীতি অনুসরণ করেন। ক্লাইভ প্রথমে
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে অযোধ্যার নবাবের সঙ্গে দিল্লির এলাহাবাদের চুক্তি করেন। এলাহাবাদের সন্ধিতে রবার্ট ক্লাইভের রিচয় অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। এলাহাবাদে পরপর
দুইটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
→ এলাহাবাদের প্রথম সন্ধির ধারা : নবাব সুজাউদ্দৌলা কল | এবং ক্লাইভের সাথে এলাহাবাদের প্রথম সন্ধি আগস্টে ১৭৬৫
২৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়। ধারাগুলো হলো :
১. সুজাউদ্দৌলাকে অযোধ্যার নবাব পদে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ২. এর বিনিময়ে নবাব কোম্পানিকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা দিতে স্বীকৃত হন।
৩. নবাব কোম্পানিকে তার রাজ্য থেকে এলাহাবাদ ও কারা জেলা দু'টি প্রদান করেন ।
৪. নবাব কোম্পানির সঙ্গে আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা স্থাপন করেন
৫. নবাব কোম্পানিকে তার রাজ্যে বিনাশুল্কে ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করেন।

→ এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধির ধারা : এরপর লর্ড ক্লাইভ ল মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে একই বছরে এলাহাবাদের ব দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ধারাগুলো হলো :
১. মুঘল সম্রাট শাহ আলমকে দিল্লির সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় ।
২. কোম্পানি অযোধ্যার নবাবের কাছ থেকে প্রাপ্ত এলাহাবাদ ও কারা জেলা দু'টি শাহ আলমকে প্রদান করেন। এর বিনিময়ে মুঘল সম্রাট এক ফরমান বলে কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা ইংরেজ কোম্পানির হাতে তুলে দেন।
৩. দেওয়ানি লাভের বিনিময়ে ইংরেজরা শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দিতে অঙ্গীকার করে। ক্লাইভ বাংলায় গভর্নর হয়ে আসার আগেই কলকাতা কর্তৃপক্ষ বাংলার নবাব মীর জাফরের পুত্র নাজিম-উদ-দৌলার সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন।


৪. কোম্পানি সম্রাটকে সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন । .


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এলাহাবাদের সন্ধি, | ইংরেজ প্রভুত্ব স্থাপনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এলাহাবাদের সন্ধির মধ্য দিয়ে কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে। এবং এর ফলে একদিকে যেমন কোম্পানির অধিকার আইনত | স্বীকৃত হয়, অপরদিকে বাংলার নবাব কোম্পানির উপর অর্থের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কতখানি প্রাদেশিক শায়ত্ব শাসন প্রদান করা হয়েছিল ?

ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ব্রিটিশ ভারতে যুক্তরাষ্টীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্টীয় ব্যবস্থা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনকে উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের উপর শাসন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ অর্পণ করা হয়। প্রদেশে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাতিল করে গভর্নর ও মন্ত্রিসভার উপর প্রদেশের শাসনভার দেয়া হয়। প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী করা হয়।

→ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন । প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনকে একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তবে সাধারণত প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন বলতে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রদেশগুলো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে স্বতন্ত্রভাবে আইন প্রণয়ন ও শাসন কার্য পরিচালনা করার ক্ষমতাকে বুঝায় । অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণযুক্ত হয়ে প্রদেশের সরকার স্বতন্ত্রভাবে আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করবে। আইন পরিষদের নিকট প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা দায়ী থাকবে এবং আইনসভা প্রাদেশিক গভর্নরের কর্তৃত্বযুক্ত থাকবে। এছাড়া প্রাদেশিক গভর্নর শুধু নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। Nc. Roy এর মতে, Provincial Autonomy was regarded as the cornerstone of the new constitution of India. I

→ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রকৃতি ও কার্যকারিতা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন শুরুর কিছুদিন পর থেকে ভারতীয়রা প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে। এ স্বায়ত্ত্বশাসনকে বাস্তবিক রূপ দেয়ার জন্য মন্টেগু চেমসফোর্ট তাদের রিপোর্টে অভিমত ব্যক্ত করেন। পরে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে আংশিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। যদিও তা বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি। পরে ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশনের রিপোর্টে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হলে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক বিষয় সুস্পষ্টভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। পরে প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে কেন্দ্ৰীয় বিষয়সমূহ হতে আলাদা করে দেয়া হয়। এছাড়া প্রাদেশিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, ভারত সচিব ও ভারত  সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা হয়। গভর্নর শাসিত প্রদেশে দ্বৈত শাসন রহিত হয়। প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়িত্বশীল হওয়ার বিধান দেয়া হয়। ফলে তত্ত্বগত ধারণায় ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল তা বলা যায়।

তবে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন স্বীকার করে নেয়া হলেও নিম্নলিখিত কারণে তা কার্যকরী হয়নি যথা— ১. প্রাদেশিক গভর্নর নিয়মতান্ত্রিক প্রধান ছিলেন না : সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় প্রাদেশিক গভর্নর নিয়মতান্ত্রিক শাসকে পরিণত হন। প্রকৃতক্ষমতা ন্যস্ত থাকে নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারের হাতে। কিন্তু ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক নিয়মতান্ত্রিক প্রধান ছিলেন না। গভর্নরগণ ছিলেন প্রকৃত শাসন। তাদের ক্ষমতা ছিল অসীম এবং অনিয়ন্ত্রিত। গভর্নরগণ যে কোনো সময় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত আগ্রাহ্য করতে পারতেন।

২. গভর্নরের নিয়োগ পদ্ধতি : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন · আইনানুযায়ী গভর্নরগণ ছিলেন ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধি। তাঁরা ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক মনোনীত ও নিযুক্ত হতেন এবং শাসন ক্ষমতা সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ । লাভ করতেন। এরূপ নিয়োগ পদ্ধতি ছিল স্বায়ত্তশাসন নীতির

৩. গভর্নরের সীমাহীন ক্ষমতা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনানুযায়ী প্রাদেশিক গভর্নরের হাতে প্রভূত পরিমাণ ক্ষমতা দেয়া হয় । যথা-

(ক) আইন সভার উপর নিয়ন্ত্রণ : এ আইন অনুসারে প্রাদেশিক গভর্নর তার সেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে আইন পরিষদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিতে পারতেন। আইনসভা প্রণীত বিল গভর্নরের কাছে প্রেরিত হলে তিনি এতে ভেটো প্রয়োগ করতে পারতেন। অথবা বিলটি গভর্নর জেনারেলের বিবেচনার জন্য সংরক্ষিত রাখতে পারতেন। গভর্নর প্রাদেশিক আইনসভার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গভর্নরের আইন ও অধ্যাদেশ জারি করতে পারতেন ৷

(খ) আইনসভার আর্থিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশে প্রাদেশিক সরকারের আয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে গভর্নরগণ আইনসভার উপর প্রাধান্য সৃষ্টি করতে পারতেন। প্রাদেশিক আইনসভা কর্তৃক বাতিলকৃত কোনো ব্যয় বরাদ্দপূর্ণ বহাল করার ক্ষমতা গভর্নরদের প্রদান করা হয়েছিল

(গ) মন্ত্রিসভার উপর গভর্নরের নিয়ন্ত্রণ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশে সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি অনুযায়ী মন্ত্রিসভার হাতেই প্রকৃত শাসনক্ষমতা ন্যস্ত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গভর্নর মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। বিশেষ দায়িত্ব পালনের অজুহাতে গভর্নর মন্ত্রিসভার কোনো পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারতেন। অথচ মন্ত্রীসভাকে গভর্নর ও আইনসভা উভয়ের কাছে দায়ী থাকতে হতো। এমনকি গভর্নর মন্ত্রীসভাকে ভেঙ্গেও দিতে পারতেন ।

৪. গভর্নর জেনারেলের অপ্রতিহত ক্ষমতা : গভর্নরের ক্ষমতার ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য দিক ছিল । যথা-

(ক) গভর্নর জেনারেল কর্তৃক গভর্নরদের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ : যে সমস্ত ক্ষেত্রে গভর্নরগণ স্বীয় বিচারবুদ্ধি বলে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতেন এবং স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করে কাজ করতেন। সেসব ক্ষেত্রে গভর্নরগণ সরাসরি গভর্নর জেনারেলের নিয়ন্ত্রাণাধীন থেকে কাজ করতে বাধ্য ছিলেন।

(খ) গভর্নরদের উপর গভর্নর জেনারেলের নির্দেশ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ১২৬ ধারায় বলা হয় যে, ভারতবর্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্য গভর্নর জেনারেল গভর্নরদের কাছে নির্দেশ পাঠাতে পারবেন। গভর্নরদের জন্য এসব নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল। এর ফলে শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টের অজুহাতে গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক শাসনকার্যে যে কোনো মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন ।

(গ) গভর্নর জেনারেল কর্তৃক জরুরি অবস্থা ঘোষণা : গভর্নর জেনারেল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে কেন্দ্ৰীয় আইনসভা প্রাদেশিক বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারত। শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির অজুহাতে গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা ও আইনসভা ভেঙে দিয়ে প্রদেশের শাসনক্ষমতা স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারতেন।

(ঘ) গভর্নর জেনারেলের উপদেশাবলি : গভর্নর তার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেলের কাছ থেকে উপদেশাবলি পেতেন। এসব উপদেশাবলিকে গভর্নর আদেশের মতই মান্য করতেন ।

 ৫. প্রাদেশিক আইনসভার সীমাবদ্ধতা : আইনসভা সব বিষয়ে আইন করতে পারত না। যেমন ব্রিটিশ জনগণের বাণিজ্যিক স্বার্থের প্রতি হুমকি বা বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে এরূপ বিষয়সহ আরও কতিপয় বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রাদেশিক আইনসভার এখতিয়ার বহির্ভূত রাখা হয় ।

৬. যুগ্ম তালিকার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রদেশের উপর অর্পণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ের উপর প্রাদেশিক সরকারের কোনো ক্ষমতা ছিল না বললেই চলে। কেননা, যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মতানৈক্য ঘটলে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন বা অভিমতই বলবৎ থাকত ।

৭. প্রাদেশিক বিষয়ে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ : এ আইনে বলা হয় যে, ব্রিটিশ সরকার নির্দেশনামা জারির মাধ্যমে ভারতবর্ষের যে কোনো প্রাদেশিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, যা ছিল স্বায়ত্ত্বশাসন ব্যবস্থার পরিপন্থি।

৮. প্রাদেশিক সরকারের সীমিত প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা : | প্রাদেশিক প্রশাসনে নিযুক্ত আই.সি.এস. আ.পি.এস প্রভৃতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ভারত সচিব নামক ব্রিটিশ মন্ত্রী কর্তৃক | নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। ভারত সচিব তাদের চাকরির শর্তাদিও নির্ধারণ করতেন। এসব উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ ভারত সচিব, ninety গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ভারত হতেন এবং তাদের নির্দেশ মেনে চলতেন। অথচ প্রাদেশিক সালের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ছিল মন্ত্রিসভার উপর। অধিকাংশ তাবে ক্ষেত্রেই এসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার ত্রুটি সিদ্ধান্ত ও আদেশ নির্দেশের প্রতি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা বা দায়িত্ব অবহেলা প্রদর্শন করতেন।

৯. গভর্নরের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ : | উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা সীমাহীন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশ শাসন বিভাগের অভ্যন্তরীণ সংগঠন ও প্রদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার | ভারত বিষয়ে মন্ত্রিসভার পরিবর্তে গভর্নরের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি হওয়ায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মূলনীতির বিনষ্ট হয়েছিল ।

এছাড়াও প্রদেশে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পথে আরও মান কতিপয় বাধা ছিল, যথা- কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে | উদে বিরোধ। কারণ দেখা যায়, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ | অনে পরাজিত হলে প্রাদেশিক আইনসভাগুলোতে মুসলিম লীগ | স্বায় নানাভাবে কংগ্রেস মন্ত্রিসভার বিরোধিতা করতে থাকেন। তাদের অভিযোগ কংগ্রেস মন্ত্রিসভা মুসলমানদের নিরাপত্তা রক্ষার পরিবর্তে হিন্দুদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত। এসব কারণে প্রাদেশিক সরকারগুলো যথাযথভাবে কাজ কাজ করতে পারেননি এবং প্রদেশগুলোতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা কার্যকর হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় জনগণের সম্মতি না নিয়ে সরকারের যুদ্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রদেশের কংগ্রেস মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেস শাসনের অবমানান্তে মুক্তি দিবস পালন করেন। এভাবে প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রাদেশিক স্বাতন্ত্র্যের যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল তার অবসান ঘটে।

সমালোচনা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রয়োগের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তা প্রয়োগ না করায় এতে পূর্ণ বা প্রকৃত শাসন এর নামগন্ধ ছিল না। তাই দেখা যায়, প্রাদেশিক গভর্নর ও গভর্নর জেনারেলের ন্যায় প্রভাবশালী কর্তার কর্তৃত্বের মুখে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্থহীন | হয়ে পড়ে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৯৩৫ সালের এ আইনকে দাসত্বের এক নতুন অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন। যদিও। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হয়, তথাপিও বাস্তবে তা ছিল অসম্পূর্ণ ও অর্থহীন এবং হাস্যকর স্বায়ত্তশাসন। IC.S এবং I.P.S কর্মচারী সুবিধা অধিকারের। মুখেও গভর্নরের বিশেষ দায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এটা অবাস্তব | হয়ে পড়ে। অনেকের মতে, এটা ছিল প্রহসন, বাস্তবতা বিবর্জিত । এবং চতুরতাপূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, It was two percent of autonomy and ninety eight percent of safe guarcis. এছাড়া তৎকালীন ভারত সচিব লর্ড জেটল্যান্ড নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৩৫ সালের আইনে প্রদেশসমূহে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত্বশাসন প্রবর্তিত হয়নি। তাবে বলা যায়, ১৯৩৫ সালের আইনে অনেক অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি থাকলেও ভারতের প্রদেশগুলোতে সীমাবদ্ধ আকারে হলেও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। আর এ অভিজ্ঞতা ভারতবাসীর জন্য কাজে দিয়েছিল। এ শিক্ষা থেকে ভারতীয়রা পরে অগ্রসর হন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যে প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা বলা হয় তা ছিল ভারতবাসীর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় । কিন্তু এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্য যেমন ব্রিটিশ সরকার চাতুরতা দায়ী ছিল অনুরূপভাবে এদেশীয় জনসাধারণের মানসিকতাও দায়ী ছিল। ফলে দেখা যায়, ব্রিটিশ সরকারের যে উদ্যোগ তা ব্যর্থ হয় । তবে বলা যায় যে, এতে ভারতবাসীর জন্য অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। তাই এ প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের মূল্য ভারত ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ।

ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন মজবুত ও স্থায়ী করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে অনেক আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়েছিল। যদিও কোনো আইন-ই ভারতীয় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনও ঠিক তেমনি একটি আইন পূর্ববর্তী আইনসমূহের ব্যর্থতা ঢাকতে ও শাসনব্যবস্থাকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতেই মূলত এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করলে ব্রিটিশ সরকার এক নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তাছাড়া ঐ সময়টায় বৃটেন ১ম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারতীয়দের সহযোগিতা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের সক্রিয় সহযোগিতা ও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তৎকালীন ভারত সচিব মন্টেগু ও গভর্নর জেনারেল চেমসফোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

→ ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন নানা দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. দ্বিস্তর বিশিষ্ট আইনসভা : ১৯১৯ সালের মন্ডেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন তথা ভারত শাসন আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের প্রয়াস। এ আইনসভা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ এ দুটি কক্ষে বিভক্ত ছিল। উচ্চকক্ষের নাম ছিল রাজ্যসভা (Council of State) ও নিম্নকক্ষের নাম ছিল ব্যবস্থাপনা পরিষদ (Legislative Assembly) ।

২. গভর্নর জেনারেলের অসীম ক্ষমতা : ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আইন পরিষদ ও শাসন পরিষদের সকল কর্মকাণ্ড গভর্নকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হতো। এ দুই পরিষদের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ছিল না। গভর্নর যেকোনো আইন প্রণয়ন, কার্যকর করার ক্ষমতা রাখতেন। সামরিক সরকারি ঋণ ও রাজস্বসহ কতকগুলো বিষয়ে তার অনুমতি ছাড়া কোনো বিল আইনসভায় উত্থাপন করা যেতো না। সকল আইন প্রণয়নের সময় তিনি ভেটো দেবার ক্ষমতা রাখেন।

৩. হাই কমিশনার নিয়োগ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে ভারতীয় স্বার্থ দেখাশুনা ও তত্ত্বাবধানের জন্য একজন হাইকমিশনার নিয়োগ দান করা হয়।

৪. প্রাদেশিক আইনসভা সংস্কার : ভারত শাসন আইনের পূর্বে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে একটি গুছালো আইনসভা ছিল না। ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রদেশে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিটি প্রদেশেরই একটি করে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করে শাসনব্যবস্থার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করে। এ আইনসভার ৭০% সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত হতো এবং বাকি ৩০% সরকার কর্তৃক মনোনয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হতো ।

৫. ভিন্ন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন : ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে প্রদেশ এবং কেন্দ্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে জনগণ আরো সহজভাবে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ লাভ করে ।

৬. প্রতিনিধিত্বমূলক কেন্দ্রীয় আইনসভা : এ আইন দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভা আরো বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে উঠে। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় এবং সদস্য নির্বাচনে স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা পূর্বে থেকে বাড়িয়ে ৬০ জনে করা হয়। এর মধ্যে ৩৪ জন নির্বাচিত ও বাকি ২৬ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন। নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা ১৪৫ জনে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ১০৫ জন নির্বাচিত বাকি ৪০ জনের ২৬ জন সরকারি ও ১৪ জন বেসরকারিভাবে মনোনীত হতেন ।

৭. কেন্দ্রীয় শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য অন্তর্ভুক্তিকরণ : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন পরিষদে ৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় সদস্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। এর ফলে ভারতীয় সদস্য সংখ্যা পূর্বাপেক্ষ বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিনিধিত্বের আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয় ।

৮. জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতি : এ আইনের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশ কোথাও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন হয়নি। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক এ দুই জায়গার শাসন ক্ষমতা গভর্নর জেনারেল ও তার শাসন পরিষদের হাতে ন্যস্ত ছিল । কিন্তু গভর্নর সর্বেসর্বা হবার কারণে আইনসভার নিকট তিনি দায়ী ছিলেন না। অতএব দেখা যায় যে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার ব্যাপক অনুপস্থিতি ছিল ।

৯. ক্ষমতার সুষম বণ্টন : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সুষম ক্ষমতা বণ্টন ছিল ভারত শাসন আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরকারি দপ্তরসমূহকে দুইভাগে ভাগ করে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ব্যাংক, বাণিজ্য, ডাক, তার রেলওয়ে ইত্যাদি । আর প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, রাজস্ব আইন-শৃঙ্খলা বন সেচ, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি।

১০. দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা : দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বলেই গণ্য করা হয়। এ ব্যবস্থার অধীনে সরকারের বিষয়সমূহকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- সংরক্ষিত বিষয় এবং হস্তান্তরিত বিষয়। সংরক্ষিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা, ভূমি, রাজস্ব, বিচার, জেল ইত্যাদি এ বিষয়গুলোর দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় প্রাদেশিক গভর্নরের উপর। অপরপক্ষে, হস্তান্তরিত বিষয় যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি ইত্যাদি দেখাশুনা করতেন গভর্নর কর্তৃক নিয়োগকৃত মন্ত্রিপরিষদ ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন নানান দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এ আইনে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পূর্বে প্রণীত অন্যান্য আইনে ছিল না। ভারতীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবি ও বৃটেনের বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারতীয়দের সমর্থন লাভের আশায় মূলত এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনের মধ্যে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের শাসনব্যবস্থায় ভারত শাসন আইন ব্যাপক বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিল ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram