nulibrary

ভূমিকা : অটোমান সালতানাত ১২৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৬ শতাব্দী ব্যাপী ৩ মহাদেশ জুড়ে সাম্রাজ্য পরিচালনা করে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে সুলতানদের বিলাসিতা, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অটোমান সালতানাত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ইউরোপীয় ব্যক্তিবর্গ চতুর্দিক থেকে সালতানাতকে চেপে ধরে। ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষ শক্তির পরাজয়ের পর যুদ্ধের যাবতীয় দায় তুরস্কের উপর চাপিয়ে মিত্রশক্তিবর্গ অটোমান সুলতানকে অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য অপমানজনক সেভার্স চুক্তি চাপিয়ে দেয়। কিন্তু এলন। এ সময় মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী শক্তি এই লত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে নতুন লড়াই শুরু করলে মিত্র শক্তিবর্গ রে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই তুরস্কের সাথে যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর শবে করে তা হলো লুজান চুক্তি। এই চুক্তি ছিল তুরস্কের জন্য যথেষ্ট নদী সম্মানজনক ও সেভার্স চুক্তির ক্ষতিপূরণস্বরূপ।

নিম্নে প্রশ্নালোকে যার লুজান চুক্তির পটভূমি ও এই চুক্তির ফলে সেভার্স চুক্তির দুর্বলতা এর দূরীকরণ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :

১. লুজান চুক্তির পটভূমি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যাবহিত পরে গান | মিত্রশক্তি তুরস্ক ও জার্মানিকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যে কয়েকটি দ্ধে ন্যাক্কারজনক চুক্তি করে সেভার্স চুক্তি তন্মধ্যে অন্যতম। এই পর চুক্তির মাধ্যমে বিশাল অটোমান সালতানাতকে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলা হয়েছিল । তাছাড়া সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে ফেলার জন্য বিভিন্ন লজ্জাজনক শর্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। তাই এইসেভার্স চুক্তির বিরুদ্ধে মোস্তফা কামাল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ত্ব ঐক্যবদ্ধ করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে বেশকিছু হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সফল হন। ফলে শান্তির স্বার্থে এই সময় মিত্রবাহিনী নতুন বাস্তবতায় তুরস্কের সাথে নতুন একটি চুক্তির 7 প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই লক্ষ্যে ১৯২২ সালে সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে দুই পক্ষের মধ্যে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে তুরস্কের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন ইসমত ইনুন। তিনি তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার দ্বারা লজ্জাজনক সেভার্স চুক্তির অসারতা তুলে ধরেন। মিত্রশক্তির পাল্টা যুক্তিতর্কও তিনি খণ্ডন করেন। এ সময় তিনি মিত্রশক্তির প্রতিনিধিবৃন্দের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব্ব ও তাদের বলশেভিক ভীতিকে ও তুরস্কের অনুকুলে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। দীর্ঘ বিতর্ক শেষে ১৯২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অমীমাংসিতভাবে এই সম্মেলন মূলতুবি হয়ে যায়। ২৩ এপ্রিল সম্মেলন নতুন করে শুরু হলে ইসমত ইনুনু নতুন সম্মানজনক চুক্তির বিষয়ে জোরালো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ৩ মাসের দীর্ঘ আলোচনা শেষে অবশেষে তুরস্ক সরকার ও মিত্র শক্তিবর্গ ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই ঐতিহাসিক লুজান চুক্তিতে সম্মত হয়। লুজান চুক্তির ধারা ছিল মোট ১৪৩টি। এই চুক্তির প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল তুরস্কের রাজনৈতিক ভূখণ্ডগত সীমানা, সার্বভৌমত্ব ও সামরিক বিষয়াবলির সম্মানজনক সমাধান। এই চুক্তির ফলে তুরস্ক তার হৃত সার্বভৌমত্ব ফিরে পায় এবং তুরস্কের সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে তুরস্ক তার হারানো বেশকিছু অঞ্চলের মালিকানা লাভ করে বিনিময়ে তাকে ও কিছু কিছু অঞ্চলে ছাড় দিতে হয়েছিল। তুরস্কে দীর্ঘদিনের প্রচলিত ক্যাপিচুলেশন প্রথা বিলুপ্ত করা হয় । সর্বোপরি ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে অটোমান সালতানাতের উপর যে সকল অন্যায় ও অসম্মানজনক চুক্তি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল তা ১৯২৩ সালের এই লুজান চুক্তির মাধ্যমে কিছু সংশোধন করে তুরস্কের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল ।

২.সেভার্স চুক্তি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি তুরস্ককে সার্বিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার একটি চুক্তি | দোদেব চাপিয়ে দেয়। এখানে তুরস্কের সাথে কোনো আলোচনাই করা | সম্মানা= হয়নি, যুদ্ধকালীন গোপন চুক্তিগুলো বাস্তবায়নে প্যারিস, লন্ডন ও স্যান রেমো সম্মেলনে আলোচনার পর ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট | আলেব মিত্র শক্তি ও তুরস্কের মধ্যে সেভার্স চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ম্যান্ডে একটি প্রস্তাবনা এবং ৪৩৩টি ধারা ছিল। চুক্তির ১-২৬ নং ধারায় নিয়ন্ত্রি লীগ অব নেশন্সের কডেনান্টি সংযোজিত হয়েছে। চুক্তির ২৭-৩৫নং ধারায় তুরস্কের ভূখণ্ড। ৩৬-১৩৯ নং ধারায় রাজনৈতিক নেশে বিষয়াবলি যেখানে তুর্কি অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চলে তুরস্কের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। চুক্তির ১৪০-১৫১ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান। ১৫১-২০৭ নং ধারায় সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর এখতিয়ার বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও এই চুক্তিতে যুদ্ধবন্ধীদের বিচার ক্যাপিচুলেশন ও আকাশ পথ ব্যবহার, জল স্থল ও রেলপথ ব্যবহারের এখতিয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে মূলত মিত্র শক্তিবর্গ শক্তিশালী অটোমান সালতানাতকে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছিল।

৩. সেভার্স চুক্তির দুর্বলতা দূরীকরণে লুজান চুক্তি : সেভার্স এই চুক্তির মাধ্যমে অপমানজনকভাবে তুরস্ককে যেভাবে কোণঠাসা কর করে ফেলা হয়েছিল লুজান চুক্তির মাধ্যমে তার কিছুটা পরিত্রাণ তা দেয়া হয়েছিল । যেমন :

(ক) রাজনৈতিক ধারা : চুক্তির ধারা মোতাবেক তুরস্ক কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, জাপান, ইতালি, রুমানিয়া, গ্রিস ইত্যাদি রাষ্ট্রের যুদ্ধ সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। এই চুক্তিতে বা আনাতোলিয়াসহ তুর্কি অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের ভূখণ্ডগত ঐক্যের ব্য স্বীকৃতি দেয়া হয়। আর তুরস্ক ও আরব অঞ্চলসমূহের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মেনে নেয়।

(খ) ভূখণ্ডগত ধারাসমূহ : সেভার্স চুক্তির অপমানজনক ভূখণ্ডগত ধারাসমূহ সংশোধন করে লুজান চুক্তিতে কৃষ্ণসাগর ও ইজিয়ান সাগর পর্যন্ত অঞ্চলে তুরস্কের সঙ্গে বুলগেরিয়া ও গ্রিসের সীমানা, ও ভূমধ্যসাগর থেকে পারস্য পর্যন্ত তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়া ও ইরাকের সীমানা নির্ধারিত হয় এবং তা মানচিত্রে যথাযথভাবে নির্দেশ করে দেয়া হয়। তাছাড়া গ্রিসের সাথে সীমানা নির্দেশ পিলারগুলো যাতে দুই দেশ থেকে দৃশ্যমান হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ ও গ্রথিত পিলারের সংখ্যা ও অবস্থান মানচিত্রে চিহ্নিত করার কথা হয় ।

(গ) মালিকানাগত ধারা : এই চুক্তির ফলে মারিসা নদী ও এর পশ্চিম তীরস্থ কারাগার শহর পর্যন্ত সমগ্র পূর্ব থ্রেসের উপর পুনরায় তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমব্রস ও তেনেদস দ্বীপ দুটিও তুরস্ক পায়, বিনিময়ে ইজিয়ান সাগরের অন্যান্য দ্বীপের সেভার্স চুক্তি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি তুরস্ককে সার্বিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার একটি চুক্তি | দোদেব চাপিয়ে দেয়। এখানে তুরস্কের সাথে কোনো আলোচনাই করা | সম্মানা= হয়নি, যুদ্ধকালীন গোপন চুক্তিগুলো বাস্তবায়নে প্যারিস, লন্ডন ও স্যান রেমো সম্মেলনে আলোচনার পর ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট | আলেব মিত্র শক্তি ও তুরস্কের মধ্যে সেভার্স চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ম্যান্ডে একটি প্রস্তাবনা এবং ৪৩৩টি ধারা ছিল। চুক্তির ১-২৬ নং ধারায় নিয়ন্ত্রি লীগ অব নেশন্সের কডেনান্টি সংযোজিত হয়েছে। চুক্তির ২৭-৩৫নং ধারায় তুরস্কের ভূখণ্ড। ৩৬-১৩৯ নং ধারায় রাজনৈতিক নেশে বিষয়াবলি যেখানে তুর্কি অধিকৃত বিভিন্ন অঞ্চলে তুরস্কের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। চুক্তির ১৪০-১৫১ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান। ১৫১-২০৭ নং ধারায় সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর এখতিয়ার বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও এই চুক্তিতে যুদ্ধবন্ধীদের বিচার ক্যাপিচুলেশন ও আকাশ পথ ব্যবহার, জল স্থল ও রেলপথ ব্যবহারের এখতিয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে মূলত মিত্র শক্তিবর্গ শক্তিশালী অটোমান সালতানাতকে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছিল।

৩. সেভার্স চুক্তির দুর্বলতা দূরীকরণে লুজান চুক্তি : সেভার্স এই চুক্তির মাধ্যমে অপমানজনকভাবে তুরস্ককে যেভাবে কোণঠাসা কর করে ফেলা হয়েছিল লুজান চুক্তির মাধ্যমে তার কিছুটা পরিত্রাণ তা দেয়া হয়েছিল । যেমন :
(ক) রাজনৈতিক ধারা : চুক্তির ধারা মোতাবেক তুরস্ক | কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, জাপান, ইতালি, রুমানিয়া, গ্রিস ইত্যাদি রাষ্ট্রের যুদ্ধ সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। এই চুক্তিতে বা আনাতোলিয়াসহ তুর্কি অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের ভূখণ্ডগত ঐক্যের ব্য স্বীকৃতি দেয়া হয়। আর তুরস্ক ও আরব অঞ্চলসমূহের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মেনে নেয়।

(খ) ভূখণ্ডগত ধারাসমূহ : সেভার্স চুক্তির অপমানজনক ভূখণ্ডগত ধারাসমূহ সংশোধন করে লুজান চুক্তিতে কৃষ্ণসাগর ও ইজিয়ান সাগর পর্যন্ত অঞ্চলে তুরস্কের সঙ্গে বুলগেরিয়া ও গ্রিসের সীমানা, ও ভূমধ্যসাগর থেকে পারস্য পর্যন্ত তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়া ও ইরাকের সীমানা নির্ধারিত হয় এবং তা মানচিত্রে যথাযথভাবে নির্দেশ করে দেয়া হয়। তাছাড়া গ্রিসের সাথে সীমানা নির্দেশ পিলারগুলো যাতে দুই দেশ থেকে দৃশ্যমান হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ ও গ্রথিত পিলারের সংখ্যা ও অবস্থান মানচিত্রে চিহ্নিত করার কথা হয় ।

(গ) মালিকানাগত ধারা : এই চুক্তির ফলে মারিসা নদী ও এর পশ্চিম তীরস্থ কারাগার শহর পর্যন্ত সমগ্র পূর্ব থ্রেসের উপর পুনরায় তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমব্রস ও তেনেদস দ্বীপ দুটিও তুরস্ক পায়, বিনিময়ে ইজিয়ান সাগরের অন্যান্য দ্বীপের
উপর গ্রিসের মালিকানা দেয়া হয় আর তুরস্ক ইতালির অনুকুলে সম্মানায় তুর্কি সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়। দোদেকানিজ দ্বীপপুঞ্জও ত্যাগ করে। আনাতোয়ার অংশ হিসেবে

(ঘ) সিরিয়া তুরস্ক সীমান্ত নির্ধারণ : এই চুক্তির ফলে আলেকজান্দ্রেত্তা জেলাটি সিরিয়ার অংশে পড়ে। আর ইরাকের ম্যান্ডেটরি শাসনের চুক্তির ফলে ভবিষ্যতে তুরস্কের সাথে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ইরাকের সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়।

(ঙ) নাগরিকত্ব সার্বভৌমত্ব ধারা : এই চুক্তির ফলে তুরস্ক মিশর ও সুদানের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করে। তাছাড়া সাইপ্রাসের উপর ও ব্রিটিশ কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়। আর সাইপ্রাসে বসবাসরত তুর্কিরা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করবে। তবে চুক্তির ২ বছর পর্যন্ত তারা তুর্কি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে আর তা যদি গৃহীত হয় তবে ১ বছরের মধ্যে তাকে তুরস্কে ফিরে আসতে হবে। তুরস্ক থেকে বিচ্ছিন্নকৃত অঞ্চলের নাগরিকদের জন্যও উক্ত খাত কার্যকর থাকবে। চুক্তিতে আর্মেনিয়া রাষ্ট্র গঠন ও কুর্দিস্তান বিষয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয় ।

(চ) সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত ধারাসমূহ : সেভার্স চুক্তির তুলনায় এই চুক্তিতে তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি বেশি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। ক্যাপিচুলেশন প্রথা রাহিত করা হয়। বিনিময়ে তুরস্ক তার বিচারব্যবস্থায় নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগে রাজি হয় । মিত্র শক্তিসমূহ তুরস্কের উপর অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের দাবি পরিত্যাগ করে। তুর্কি সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেভার্স চুক্তিতে তা বাতিল করা হয় এই চুক্তির মাধ্যমে। তুরস্ক পুরনো মিল্লাত ব্যবস্থা বাতিলে সম্মত হয় ।

(ছ) জনসংখ্যা বিনিময় ধারা : তুর্কি ও গ্রিসের মধ্যে সম্পাদিত অন্য একটি চুক্তির মাধ্যমে তুর্কি অঞ্চলে বসবাসরত গ্রিক জনগোষ্ঠী আর গ্রিসের অংশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে কনস্ট্যান্টিনোপলে বসবাসরত গ্রিস আর থ্রেসে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকগণ এই চুক্তির বাইরে থাকবে ।

জ) সার্বভৌমত্ব পরিপন্থি ধারা : লুজান চুক্তিতে পূর্বোক্ত সেভার্স চুক্তির তুলনায় তুরস্কের সার্বভৌমত্বের মর্যাদা দিলে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র প্রণালিগুলোর উপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। অবশ্য চুক্তিতে বলা হয় লীগ অব নেশনসের তত্ত্বাবধানে একটি প্রণালি কমিশন গঠিত হবে যার সভাপতি হবে একজন তুর্কি নাগরিক, দাদানেলিস বসফরাস প্রণালির উভয় তীর এবং মর্মর সাগরস্থ দ্বীপসমূহে তুরস্ক সকল সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখবে। অবশ্য কনস্ট্যান্টিনোপল তুরস্ক ১২০০০ সৈন্য রাখার অধিকার পায় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের স্বাক্ষরিত লুজান চুক্তি তুরস্কের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের ফলে বিজয়ী মিত্র শক্তির তুরস্কের উপর সেভার্স চুক্তির মতো একটি অপমানজনক চুক্তি চাপিয়ে দিয়েছিল। যার ফলে তুরস্কের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে একবারে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছিল। পরে মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি সেভার্স চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে নতুন ও আন্দোলন শুরু করলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মিত্র শক্তি তুরস্কের সাথে অপেক্ষাকৃত উদারভাবে এই লুজান শক্তি স্বাক্ষর করে। এটি ছিল দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতামূলক চুক্তি । এই চুক্তির ফলে তুরস্কের ন্যায্য দাবিসমূহ বাস্তবায়ন ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রাপ্তি হয়েছিল। সামরিক, অর্থনৈতিক ও বিচারিক ক্ষেত্রেও তুরস্ক বৈদেশিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়। তাছাড়া এই চুক্তির ফলে মোস্তফা কামালের জাতীয়তাবাদী সরকার আন্তর্জাতিক শক্তিবর্গের ও সমর্থন লাভ করে।

ভূমিকা : ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিজয় ধরা হয় যে ঘোষণাটিকে সেটি হলো ব্যালফোর ঘোষণা। ১৯১৪ সালের ১ম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে তাদের আবাসভূমি স্থাপনের ব্যাপারে মিত্র পক্ষের অঙ্গীকার আদায়ের চেষ্টা করে। ব্রিটেন শুরুতে ইহুদিদের উগান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ড. ওয়াইজম্যানের প্রচেষ্টায় ইহুদিদের দাবির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ব্যালফোর একটি প্রস্তাব পাস করায় সে প্রস্তাবই ব্যালফোর ঘোষণা নামে পরিচিত লাভ করে ।

→ ব্যালফোর ঘোষণা : হারৎজেল, লুই ব্রান্ডাইস ও ডক্টর হাইম ওয়াইজম্যানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ইহুদিবাদী আন্দোলন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিছুটা আশার মুখ দেখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য পতনের পর ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে বসবাস করার জন্য কর্তৃপক্ষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে থাকে। ড. ওয়াইজম্যানের প্রচেষ্টায় ইহুদিরা ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদিদের সমর্থন আদায় করে। ইহুদিদের কূটনীতির প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ব্যালফোর ১৯১৭ সালে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সমর্থনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব পাস করে। লর্ড ব্যালফোর প্রচেষ্টায় প্রস্তাবটি পাস হয় বলে একে 'ব্যালফোর ঘোষণা' বলা হয়। ব্যালফোর ঘোষণার জের ধরে ড. ওয়াইজম্যান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দু'বিষয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। সেগুলো হলো, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে ইহুদিদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের ব্যবস্থা করা ও ইহুদি রাষ্ট্র ত্যাগীদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের ব্যবস্থা করা। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ইহুদিদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় বলে ব্যালফোর ঘোষণা ছিল ইহুদিদের জন্য এক মহা বিজয়। তারা ব্রিটেন ও আমেরিকার সহায়তায় ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় খুব দ্রুত এগিয়ে যায় এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়।

উপসংহার : বিশ্বের মানবতাবাদী নামধারী ব্রিটেন ও আমেরিকা বিশ্ব মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার ঘোষণা দেয়। জুলুম, নির্যাতনের জাতাকলে পিষ্ট করে অতিষ্ঠ করে তোলা হয় ফিলিস্তিনিদের। তাড়িয়ে দেয়া হয় তাদের আবাস ভূমি থেকে। পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের শস্যক্ষেত্র। চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের পালিত পশুকে। মধ্যপ্রাচ্যের কীট স্বরূপ আবির্ভূত হওয়া এ রাষ্ট্র আমেরিকা ও ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব থেকে জন্মগ্রহণ করে ।

ভূমিকা : আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব দামেস্ক প্রটোকল একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলে অটোমান সালতানাতভুক্ত পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের আরব অঞ্চলগুলোর সমর্থন লাভের আশায় এ সময় ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত মিত্রশক্তিবর্গ বিভিন্নভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু যুদ্ধে বিজয়ী মিত্র শক্তিবর্গ পরে আবার আরব অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করতে পারেন এই আশঙ্কায় আরব নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশদের সাথে দামেস্কে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তাই ইতিহাসে দামেস্ক প্রটোকল হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে ।

দামেস্ক প্রটোকল : ১৯১৪ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলে দুর্বল অটোমান সালতানাতের অধীনস্থ পশ্চিম এশিয়ার আরব ভূখণ্ডগুলো স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়। এ সময় ব্রিটিশরা তাদের সাহায্য করলে, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই সকল অঞ্চলের স্বাধীনতা প্রদান করা হবে মর্মে ব্রিটিশরা প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদী আরব নেতারা যুদ্ধে বিজয়ের পর মিত্রশক্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের আশঙ্কায় একটি সুস্পষ্ট লিখিত চুক্তিনামার দাবি জানান। ফলে সিরিয়ার দামেস্কে ব্রিটিশ সরকার ও আরব জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে ঐতিহাসিক যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাই দামেস্ক প্রটোকল। এই চুক্তির বিভিন্ন ধারার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

১. ব্রিটেন নিম্নে উল্লিখিত সীমানা নিয়ে গঠিত আরবদেশগুলো স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিবে। তা হলো- উত্তরে মার্সিন ও আদানা থেকে ৩৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে, পারস্য উপসাগরের তীর থেকে বিরোজিক, উরফা, মারডিন, সিদিয়াত, জাজিরাত, আমাদিয়া পর্যন্ত। এই অঞ্চলের পূর্বের সীমানা হবে পারস্য থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত আর দক্ষিণের সীমান্ত রেখা এডেন ব্যতীত ভারত মহাসাগর পর্যন্ত। অন্যদিকে, লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে মার্সিন অঞ্চল পর্যন্ত হবে পশ্চিমাঞ্চলের সীমানা ।

২. বিদেশিদের প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা ক্যাপিচুলেশন প্রথার অনুসারে বাতিল করা হবে।

৩. নব্য প্রতিষ্ঠিত আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ব্রিটেনের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকবে ।

৪. আর নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রিটেন আলাদা গুরুত্ব পাবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে আরব জাতীয়তাবাদীরা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা লাভের প্রতিশ্রুতিতে ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন মিত্রশক্তিবর্গকে সর্বাত্মক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দান করে। আরব জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের সাথে ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় সিরিয়ার দামেস্কে। অবশ্য যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর মিত্রশক্তি এই চুক্তি রক্ষা না করে লীগ অব নেশনসের সহায়তায় কৌশলে এই সকল আরব ভূখণ্ডে নব্য উপনেশিক ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ভূমিকা : প্রথম মহাযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) খ্রি: তুর্কি সাম্রাজ্যের উপর মারাত্মক আঘাত হানে। তার কিছুকাল আগেই এই মহান ব্যক্তির জন্ম। তিনি ছিলেন আধুনিক তুরস্কের জনক। তুরস্ক যখন ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঠিক তখনি কামাল পাশা তার নিজস্ব মেধা দিয়ে আবার তুরস্ককে নতুন জীবন দান করেন এবং তুরস্কের মানুষের মনে নতুন আশা জাগরণ করেন। নিম্নে কামাল পাশার পরিচয় আলোচনা করা হলো-

→ কামাল পাশার পরিচয় : গাজী মুস্তফা কামাল পাশার মতো অনন্য সাধারণ ব্যক্তি পৃথিবীতে খুব কমই এসেছেন। পৃথিবীতে যেসব লোক ভাগ্যবিধাতা হিসেবে এসেছেন এবং ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন মোস্তফা কামাল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। এ সুযোগ্য সন্তান ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে স্যালোনিকা নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাতা তেমন ধনী ছিল না। তার পিতা আলী রেজা স্যালোনিকার শুল্ক বিভাগের একজন সামান্য কেরানী ছিল । কামাল পাশার বয়স যখন ৭ বছর তখন তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি উন্নতির জন্য ব্যবসা আরম্ভ করেন। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু হওয়ায় তার সে আশা ভরসা সব ব্যর্থ হয়। পিতার সার্বিক অবস্থা সচ্ছল না থাকায় কামালকে তার প্রাথমিক জীবনে অতি দুঃখ কষ্টের ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়। আলী রেজার মৃত্যুর পর কামালের মাতা জোবায়দা, ছেলেকে নিয়ে মহাবিপদে পড়লেন। তিনি ছেলেকে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় উঠলেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও দূরদর্শী মহিলা ছিলেন। জোবায়দা ছেলেকে এক মসজিদ স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু কামালের এ জীবন ভালো লাগে না । ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে দেখে মাতা তাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আনলেন এবং কামালকে মনাস্তীর নামক এক পার্শ্ববর্তী শহরের মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করলেন। এ স্কুলের হোজা নামক এক আরবিয় শিক্ষক কামালকে কোন এক ছাত্রের সাথে ঝগড়া করার সময়ে বেত্রাঘাত করেন। এমন শারীরিক শাস্তি কামালের মধ্যে এক উত্তেজনা সৃষ্টি করল । তিনি চিরদিনের জন্য স্কুল ত্যাগ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দান করতে ইচ্ছা করলেন । তিনি সেখান থেকে পলায়ন করে মাতার অনুমতি ব্যতিরেকেই স্যালোনিকার এক সামরিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন । এখানে তিনি তার স্বাভাবিক পথ খুঁজে পেলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তাঁর ব্যবহার ও কার্যের দ্বারা শিক্ষকদের মন জয় করলেন। মোস্তফা কামাল প্রত্যেক পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এ স্কুলের শিক্ষক মোস্তফাই তাকে কামাল নামে ভূষিত করেন। স্যালোনিকার শিক্ষা শেষ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য সামরিক বিদ্যালয়ে যান। এ সময় তিনি ফরাসিসহ আরো অনেক ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ওয়াতনে যোগদান করেন। কামাল পাশা ১৯৩৮ খ্রি. নভেম্বর মাসে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কামাল পাশা ছিলেন তুরস্কের মডেল। তুরস্ককে তিনি অনেক বেশি উন্নত করেন। বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে তিনি তুরস্ককে রুগ্নতা থেকে মুক্তি দান করেন। তার মৃত্যু শুধু তুরস্কের নয়, শুধু প্রাচ্যের নয়, সমগ্র মুসলিম জাহানের অপূরণীয় ক্ষতি ।

ভূমিকা : সিরিয়ানরা তাদের মনোবল ও ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ধরে রেখে সিরিয়ার ফরাসি ম্যান্ডেটারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে তারা তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। সিরীয়দের স্বাধীনতা আন্দোলন দুইটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৬ সালে ।

→ সিরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন : সিরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্দোলন। এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(i) আন্দোলনের সূত্রপাত : সিরিয়ায় ম্যান্ডেটারী শাসন ব্যবস্থার প্রথম দিকে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এ সময় ফরাসি সেনাবাহিনীর তিন জেনারেল হাই-কমিশনের পদে নিযুক্ত হয়। আর তাদের আদেশই আইন হিসেবে বিবেচিত হতো। তাদের আপোষ-মীমাংসাহীন প্রবণতা সিরিয়দের আশা- আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে সিরিয়দের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বাঁধে এবং আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

(ii) ম্যান্ডেটারী শাসনের ভয়াবহতা : জাতীয়তাবাদীদের মতে, সিরিয়ার ম্যান্ডেটারী শাসন ছিল উপনিবেশিক শাসনের থেকেও ভয়ংকর। কেননা উপনিবেশিক রাষ্ট্রের ভাল-মন্দ তাদের নিজেদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। পক্ষান্তরে, ম্যান্ডেট শাসনের মন্দের ভার দেশীয় সরকারের উপর আর ভালোর দায় পড়ত ম্যান্ডেট সরকারের উপর। মূলত জনগণের অসন্তুষ্টি ও জাতীয়তাবাদী চেতনা উন্মেষের কারণে সিরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের সৃষ্টি হয় ।

→ স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্যায় : সিরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্যায় মূলত দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১ম পর্যায় :(i) জাবাল আল দ্রুজের বিদ্রোহ : ১৯২৫ সালে জাবাল আল দ্রুজের গভর্নরের স্বেচ্ছাচারিতামূলক শাসনের ফলে এ বিদ্রোহ ঘটে। ১৯২১ সালে দামেস্ক থেকে এ অঞ্চলকে আলাদা করে দেয়া হয় এবং ফরাসি কর্মকর্তাকে এর গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ফলে ফরাসিদের অত্যাচারমূলক শাসন বেড়ে যায়। এ সময় দ্রুজগণ জাতীয়তাবাদীদের সাথে মিলিত হয়ে স্থানীয় পর্যায়ের বিদ্রোহ গড়ে তোলে। যাতে করে ফরাসিরা তাদের কাছে পরাজিত হলে ১৯২৫ সালে দ্রুজের গভর্নর পরিবর্তন করা হয় ১৯২৭ সাল থেকে এ বিদ্রোহ শান্ত হয়ে আছে।

(ii) দামেস্ক ও আলেপ্পো বিরোধ : এর পরেই দামেস্ক ও আলেপ্পোতে বিদ্রোহ শুরু হয়। তারা সিরিয়া হতে বিদেশি ফরাসি পরাশক্তিকে দূর করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে এবং প্রতিবেশি অঞ্চলগুলোতে এর কঠোর প্রভাব পড়ে। ফলে ১৯২৫ সালে হাইকমিশনার নিযুক্ত করা হয় ।

(iii) জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা : জাতীয়তাবাদীরা অল্প দিনের মধ্যেই সিরিয়ার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সংসদে তাদের প্রভাব লক্ষ্যণীয় ছিল।

(iv) নতুন সংবিধান প্রণয়ন : ১৯২৮ সালের খসড়া সংবিধানের কিছু ধারা হাইকমিশনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়। তাই ১৯৩০ সালে হাইকমিশনার সংসদ বিলুপ্ত করে ফ্রান্স সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। ফলে মধ্যপ্রা আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে।

২য় পর্যায় :(i) চুক্তি স্বাক্ষর : ১৯৩৬ সালে সিরিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এর দ্বারা তাদের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বরং সিরিয়দের স্বাধীনতা আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে
(ii) ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ শাসন : ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে ফ্রান্স স্বীয় অবস্থানকে সুদৃঢ় করার জন্য সিরিয়ার ওপর প্রত্যক্ষ শাসন চালু করে। এ সময় মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে সংবিধান মূলতবী | ব্রিটি ঘোষণা করা হয় ।
(iii) জার্মানি কর্তৃক দখল : ১৯৪০ সালের জুন মাসে চুক্তি ফ্রান্সের ওপর জার্মানির দখল প্রতিষ্ঠা হলে সিরিয়া ফ্রান্সের জার্মান পরি প্রভাবিত মার্শাল পেঁতার নেতৃত্বে গঠিত ভিসি সরকারের অধীনে চলে যায়। সিরিয়দের জার্মানি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে ।

(iv) সিরিয়ার স্বাধীনতা লাভ : ১৯৪১ সাল হতে সিরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রদান করা হয়। তবে প্রকৃত স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। জাতিসংঘের এক অধিবেশনে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে ফ্রান্স তার সেন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে ১৯৪৬ সালে ১৭ এপ্রিল স্বাধীন ও স্বায়ত্ত্বশাসিত রাষ্ট্র। হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে সিরিয়ার আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্য দিয়েই | সিরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের অবসান ঘটে ও সিরিয়ার নতুন = ইতিহাস সৃষ্টি হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ সালের দীর্ঘ সময়ে সিরিয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আন্দোলন গড়ে তোলে। এতে তাদের ঐক্যবদ্ধতা ও মনোবলের মধ্য দিয়ে ১৯৪৬ সালে সিরিয়া প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে।

ভূমিকা : বিশ্ব ইতিহাসে যে কয়জন শাসক একটি দেশ বা জাতির স্রষ্টা হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন, সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ তন্মধ্যে অন্যতম । ন তিনি শুধু একজন দক্ষ সমরকুশলী যোদ্ধাই ছিলেন না; বরং একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ফলে অতি সাধারণ অবস্থা থেকে তিনি নিজ মেধা,প্রতিভা ও যোগ্যতাবলে সৌদির মতো বিক্ষিপ্ত গোত্রভিত্তিক বেদুইন অধ্যুষিত একটি অঞ্চলকে একক শাসকের অধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর দীর্ঘ ৫১ বছরের (১৯০২- ১৯৫৩) শাসনামলে পশ্চাৎপদ সৌদি আরব আধুনিকতার সোপানে উন্নীত হয়।

→ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :
১. প্রাথমিক পরিচয় : আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি ইবনে সউদ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আব্দুর রহমান। বাল্যকাল থেকেই আব্দুল আজিজ ছিলেন অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী। ও পরিশ্রমী। ফলে বয়সকালে তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল বিক্ষিপ্ত বর্বর আরবকে এক শাসকের কর্তৃত্বাধীন নিয়ে আসা।

২. ক্ষমতার কেন্দ্রে আজিজ : শৈশবকাল থেকেই আব্দুল আজিজ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। রশিদী বংশের শাসনকর্তা মোহাম্মদ ইবনে রশিদ ১৮৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করলে আব্দুল আজিজের সামনে সৌদিতে পুনরায় সউদ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ আসে। ফলে আজিজ ১৮৯৭ সালে একবার রিয়াদ দখলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হতাশ হননি। ১৯০২ সালে পুনরায় রাতের অন্ধকারে কিছু দুর্ধর্ষ বেদুইন নিয়ে রিয়াদ আক্রমণ করে তা দখল করে নেন ।

৩. শাসক মনোনীত : আব্দুল আজিজের এই চরম সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ১৯০২ সালে তাঁর পিতা আব্দুর রহমান তাঁকে নজদের আমির এবং ওহাবীদের নেতা হিসেবেও স্বীকৃতি দান করেছিলেন। তিনি রশিদী পরিবারের শেষ শাসক আব্দুল্লাহ আল আজিজ ইবনে মিতাবকে পরাজিত করে রিয়া দখল করে সৌদি বংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন ।

৪. রাজ্য বিস্তার : আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ ১৯০২- ১৯০৭ সাল পর্যন্ত সৌদি রাজবংশের মর্যাদা ও হৃতগৌরব পুনঃ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এরপর ১৯০৮ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বিধানে আত্মনিবেশ করেন। এরপর আজিজ তাঁর স্থল ও সমুদ্র বাণিজ্য সহজ করার জন্য পারস্য উপসাগরের তুর্কি অধিকৃত অঞ্চল আল হাসা আক্রমণ করে তা দখল করে নেন ।

৫. বিচক্ষণ শাসক : আব্দুল আজিজ ছিলেন একজন যুগশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক ও বিচক্ষণ শাসক। তিনি সাফল্যের সাথে মধ্যযুগীয় আরবের গোত্রতান্ত্রিকতার অবসান ঘটান। আরবের মতো বেদুইন অধ্যুষিত গোত্রতান্ত্রিক বিক্ষিপ্ত আরবকে শতধাবিভক্তি থেকে মুক্ত করে তিনি একই শাসকের ছায়াতলে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।

→ সৌদির আধুনিকায়নে আজিজ : আব্দুল আজিজ ১৯০২ সালে রিয়াদ দখলের পর পর্যায়ক্রমে মক্কা, মদিনা, হেজাজ, জেদ্দাসহ অন্যান্য আরব ভূখণ্ড দখল করে ১৯২৩ সালে স্বাধীন- সার্বভৌম সৌদি আরব রাজ্য গঠন করেন। এরপর তিনি সৌদি ম আরবের আধুনিকায়নে নানমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হল :

১. প্রশাসনিক সংস্কার : আব্দুল আজিজ ১৯২৩ সালে পায়ে | স্বাধীন-সার্বভৌম সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এর প্রশাসনিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। তিনি সৌদিতে 'গোত্রীয় শাসনের চার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় শাসন কায়েম করেন। মক্কায় ৬ জন, মদিনার ২ জন, জেদ্দায় ১ জন এবং ইয়াবুতে একজন সদস্য নিয়ে তিনি একটি জাতীয় পরিষদ গঠন করেন। তিনি প্রদেশে ওয়ালী এবং জেলায় আমির নিযুক্ত করেছিলেন।

২. বিচার বিভাগের সংস্কার : আব্দুল আজিজ হেজাজের বাদশাহ হওয়ার পূর্বে এর শাসনব্যবস্থা ছিল শেখকেন্দ্রিক। আস্তিত ক্ষমতায় এসে তাঁর পরিবর্তন করে রাজ্যে শরিয়া আইন প্রবর্তন করেন । তবে যে ক্ষেত্রে শরিয়া আইনে সমস্যার সমাধান করা যেত না, সেক্ষেত্রে বাদশাহর অধ্যাদেশই চূড়ান্ত আইন বলে গণ্য হতো। ফলে বাদশাহ ছিলেন বিচার বিভাগের শেষ আশ্রয়স্থল ।

৩. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : বাদশাহ আজিজ তাঁর উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতি আত্মনিবেশ করেন। তাই রাজ্যের সর্বত্র তিনি ফাঁকা সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া ১৯৫১ সালে দাম্মাম থেকে রিয়াদ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন এবং বিমান যোগাযোগের ব্যবস্থা কেেরন।

৪. শিক্ষা সংস্কার : আব্দুল আজিজের পূর্বে আরবে কেবল ধর্মীয় শিক্ষা প্রচলিত ছিল। তিনি ক্ষমতায় এসে দেশের সর্বত্র ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া এ সময় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি বহু ছাত্রকে বিদেশেও প্রেরণ করেন।

৫. বিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প : বাদশাহ আজিজ তাঁর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে দেশে কলকারখানার উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এ সময় তিনি কৃষির উন্নয়নের জন্য সেচ ব্যবস্থারও প্রবর্তন করেছিলেন ।

৬. সৈন্যবাহিনীর আধুনিকায়ন : বাদশাহ আব্দুল আজিজ দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধান ও বহিঃশত্রুর হামলা মোকাবেলা করার জন্য দেশের সৈন্যবাহিনীকে আধুনিকায়নের জন্য বিদেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও সামরিক বিশেষজ্ঞ এনে সৈন্যবাহিনীর আধুনিকায়ন করেন ৷

৭. প্রকাশনা ও শ্রম আইন চালু : বাদশাহ আব্দুল আজিজ বারিদ আল হেজাজ ছাড়াও কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করেন। ফলে দেশ-বিদেশের খবরাখবর জানা জনগণের পক্ষে সুবিধা হয়। তাছাড়া এসময় বাদশাহ শ্রমিকদের কল্যাণ শ্রম আইন চালুর করেন।

৮. মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা : বাদশাহ আব্দুল আজিজ এ সময় সৌদি আরবের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৩০ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ১৯৩২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া ১৯৪৪ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ১৯৫১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থাপন করেন। ফলে এ সময় সৌদি আরবের প্রশাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক গতিশীলতা আসে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্বের সেই বিরল প্রতিভাধর শাসকদেরই একজন, যারা অতি সামান্য অবস্থা থেকে নিজ মেধা, প্রতিভা ও যোগ্যতাবলে সৌদির মতো একটি বেদুইন অধ্যুষিত গোত্রভিত্তিক আরব ভূখণ্ডকে একই শাসকের অধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম সৌদি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পর এর আধুনিকায়নে ব্যাপক ও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ফলে তাঁর (১৯০২-১৯৫৩) এই দীর্ঘ ৫১ বছরের শাসনামলে সৌদি আরব উন্নতির সোপানে উন্নীত হয়েছিল।

ভূমিকা : বিশ শতাব্দীতে বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিষয় হলো ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে জোর জবরদস্তি করে ইসরাইল নামক একটি উগ্রবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমেরিকা ও ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে এ রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যে থেকে শুরু করে সমগ্র বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের সকল অশান্তির মূলহোতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেজন্যই এ দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া নামে অভিহিত করা হয়। নিম্নে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো :

ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট : নিম্নে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আলোচনা করা হলো-

১. জায়োনিস্ট আন্দোলন : ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে পূর্ব ইউরোপ শুরু হয় জায়োনিস্ট আন্দোলন। জায়োনিস্ট আন্দোলনের মূল কথা চিল ইহুদের প্রমিজ ল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার ওয়াদা। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে যে অঞ্চলটি রয়েছে সেটি হলো ঈশ্বর কর্তৃক ইহুদিদের জন্য বরাদ্দ ওয়াদাকৃত ভূমি বা প্রমিজ ল্যান্ড ।

২. ইহুদিদের ফিলিস্তিনে ফেরা : জায়োনিস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গঠিত হয় এশিয়া এই এশিয়ার মাধ্যমে কয়েকটি পর্যায়ে ইহুদিরা পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে দলে দলে আসতে থাকে। প্রথম পর্যায় (প্রথম এশিয়া) = (১৮৮২-১৯০৩)। দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় এশিয়া) = (১৯০৪-১৯১৪)। তৃতীয় পর্যায় (তৃতীয় এশিয়া) = (১৯১৯-১৯২৩)। চতুর্থ এশিয়া (১৯২৪-২৯) পঞ্চমে এশিয়া ছিল (১৯২৯- ৩৯)। পর্যায়গুলোতে যথাক্রমে ৩৫,০০০, ৪০,০০০, ৯০,০০০, ৮২,০০০, ২,৫০,০০০ জন ইহুদি ফিলিস্তিনে অভিবাসিত হয়।

৩. ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন : ইহুদিরা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। খ্রিস্টান ধর্ম মতে তাদের | ধর্মীয় নবি যিশুকে ইহুদিরাই ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। ফলে খ্রিস্টানরা ইহুদিদের উপর নানারকম নির্যাতন চালাতে থাকে। পূর্ব ইউরোপ বিশেষত জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইহুদিরা ব্যাপক আকারে ফিলিস্তিনে অভিবাসিত হয়।

৪. ব্যালফোর ঘোষণা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পতনের জেরে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের জন্য প্যালেস্টাইনে একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ১৯৯৭ সালে বা ঐতিহাসিক ব্যালফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। মূলত ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক বৈধতা দেয়া হয়। তখন থেকে আবরা ইহুদিদের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং সূচনা হয় প্যালেস্টাইন সংকটের।

৫. আমেরিকার ভূমিকা : ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা সবসময় সচেষ্ট ছিল বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্ব রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা একটি নিজস্ব এজেন্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল এবং ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমেরিকা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়।

৬. আমেরিকায় জিওনিস্ট কনফারেন্স : ইহুनিবাসী আন্দোলনের বিখ্যাত নেতা ছিলেন ড. ওয়াইজম্যান। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ড. ওয়াইজম্যান এবং আরো কয়েকজন ইহুদিবাদী নেতা নিউইয়র্কে জি World Jionist Conference করেন সেখানে একটি প্রস্তাব পাস হয় এবং সে অনুসারে ইহুদি সাধারণতন্ত্র বা Jewish Common welath হিসেবে প্যালেস্টানকে দাবি করা হয়।

৭. ১৯৪৪ সালের জিওনিস্ট কনফারেন্স : ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় যুদ্ধ চলকালীন সময়ে লন্ডনে জিওনিস্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান ইহুদি রাষ্ট্রের পক্ষে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলিকে চাপ প্রয়োগ করেন। ব্রিটিশ সরকার প্রাথমিকভাবে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও পরে তা মানতে বাধ্য হয় ।

৮. অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি : ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানে সংকট নিরসনে ব্রিটেন ও আমেরিকা একটি যৌথ কমিটি গঠন করে যা অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি নামে পরিচিত। অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি প্যালেস্টাইনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন দিক তদন্ত করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সংগ্রহ করে ইহুদিদের অভিবাসনের বিভিন্ন সমস্যা ও ইহুদিদের সাথে আরবদের দ্বন্দ্বের কারণ উদঘাটন করে। এই কমিটি ১৯৪৬ সালে সুপারিশ করে বলে যে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করা হয়।

৯. অ্যাংলো আমেরিকান কমিটির সুপারিশ প্রভাব : অ্যাংলো আমেরিকান কমিটি যে সুপারিশ প্রদান করে তা ইহুদিদের সন্তুষ্ট করলেও এ অঞ্চলের অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এ সুপারিশের ফলে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র | প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। অপরদিকে আরবরা অ্যাংলো আমেরিকান কমিটির সুপারিশে বিক্ষুব্ধ হয়। অনির্দিষ্ট কালের জন্য আরবদের উপেক্ষা করে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব খেপে উঠে।

১০. ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : অবশেষে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে প্যালেস্টাইন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পেশ করা হয়। ইতোমধ্যে ইহুদিরা ইহুদিরা প্যালেস্টাইনের একটি অংশ দখল করে নেয়। ১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটি গঠন করে। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘ এ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিনের বুকে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কতগুলো সংগঠিত প্রপোগান্ডা এবং আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসরাইল আরব বিশ্বে তথা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের স্বার্থ সংরক্ষণের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসীমূলক কাও যা যুগের পর যুগ সে অঞ্চলের ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

ভূমিকা : ১৯২০ সালে লীগ অব নেশনসের অনুমোদনক্রমে ব্রিটেন অটোমান সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত ইরাকে তার ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ইরাকিরা লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম শেষে অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালের ৩০ জুন ইরাক সরকারের সাথে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা ইতিহাসে ইঙ্গ ইরাকি চুক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। এই চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল ব্রিটেন কর্তৃক ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং ইরাকের লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়ে সুপারিশকরণ। যদিও এই চুক্তির মাধ্যমে ইরাকের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল কিন্তু কূটনৈতিক মার প্যাচে ব্রিটিশ সরকার ইরাকের সার্বভৌমত্ব নিজেদের হাতে কুক্ষিগত ফেলেছিল। ফলে চুক্তির অল্প কিছুদিন পরই ইরাকি জাতীয়তাবাদীরা এই চুক্তির প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় আন্দোলনে নামে ।

→ ১৯৩০ সালের ইঈ-ইরাকি চুক্তির ধারা বা বৈশিষ্ট্য ইরাকের স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৩০ সালের ৩০ জুন সম্পাদিত ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দলীল। নিম্নে এই চুক্তির প্রধান প্রধান ধারা বা বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি : ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার ফ্রান্সিস হ্যামফ্রিস এবং ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাইদের মধ্যে ১৯৩০ সালের ৩০ জুন ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন প্রথমবারের মতো ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতির দান করে। যদিও তখনো ইরাকে ম্যান্ডেটরি শাসন অক্ষুণ্ণ ছিল তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার সুকৌশলে ইরাকের সার্বভৌমত্বের অধিকার ও কুক্ষিগত করে রাখে ।

২. পররাষ্ট্রনীতি : ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তির ১নং ধারায় বলা হয় যে, ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। তাছাড়া দু'পক্ষের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে ব্রিটেনের সহায়তায় ইরাক তার পরারাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। তাছাড়া দু'পক্ষ এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেনা যার কারণে অন্যপক্ষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

৩. কূটনৈতিক বিষয়সমূহ : এই চুক্তির ২নং ধারায় উল্লেখ আছে ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পরিবর্তে একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হবে। যিনি ইরাকে নিযুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূত অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান হবেন। আর ইরাক ও তার রাষ্ট্রদূত ব্রিটেনে প্রেরণ করতে পারবে।

৪. পারস্পরিক সহযোগিতা : এই চুক্তির ৩নং ধারায় উল্লেখ ছিল যদি কোনো পক্ষ তৃতীয় কোনো দেশ দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত হয় অথবা তৃতীয় কোনো দেশে আক্রমণ করে তাহলে দুই দেশ পরস্পর সৈন্য অর্থ ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াবে। এই ধারাটি ছিল ইরাকি স্বার্থ পরিপন্থি কারণ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া বা তৃতীয় কোনো দেশে আক্রমণের সম্ভাবনা ব্রিটেনেরই ছিল বেশি।

৫. প্রতিরক্ষায় ব্রিটিশ কর্তৃত্ব : এই চুক্তির ৪নং ধারায় বলা হয় যদি কোনো যুদ্ধ হয় বা ইরাক আক্রান্ত হয় তবে ব্রিটেন তার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেবে। এক্ষেত্রে ইরাক তার জল, স্থল, রেলপথ ও বিমানবন্দর ব্রিটেনকে ব্যবহারের অধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমে মূলত ব্রিটেন কূটনৈতিক কৌশলে ইরাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন করে ফেলে ।

৬. ঘাঁটি ও ট্রানজিট অধিকার : এই চুক্তি সবচেয়ে অবমাননাকর ধারা ছিল । ৫নং ধারা এই ধারা মোতাবেক ব্রিটেন ইরাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য বসরার নিকটবর্তী শুয়াইবার এবং ইউফ্রেটিসের পশ্চিমে অবস্থিত হাবাবানিয়া স্থানে ব্রিটিশ বিমান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য ইজারা লাভ করে। তাছাড়া চুক্তিতে বলা হয় এই দুই অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও অবস্থান করতে পারবে। পাশাপাশি ব্রিটেন ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর মসুদ ও হিনাইদিতে অনধিক বছরের জন্য সৈন্য রাখার অধিকার লাভ করে ।

৭. সামরিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নির্ভরশীলতা : চুক্তির ৬ নং ধারা | মোতাবেক সামরিক প্রশিক্ষণ ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বিষয়ে ইরাককে পুরোপুরিভাবে ব্রিটেনের উপর নির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল। এতে বলা হয়, ইরাকি সৈন্যরা যদি উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে চায় তবে শুধু ব্রিটেনে যেতে পারবে। আর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করতে চাইলে কেবল ব্রিটেনের কাছ থেকেই ক্রয় করতে হবে। তাছাড়া ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যে সকল অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেন ইরাকি সৈন্যরা সে সকল অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না ।

৮. বিরোধ নিষ্পত্তি : এই চুক্তির ১০ নং ধারা মোতাবেক চুক্তির কোনো ধারা নিয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয় তবে তা সমাধানের জন্য দুই দেশ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবে। আর তারপরও সমাধানে আসতে ব্যর্থ হলে তখন লীগ অব নেশনসের সহায়তায় উক্ত মতবিরোধের সমাধান করা হবে।

৯. ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান : ১৯৩০ সালের এই ইঙ্গ- ইরাকি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা এটি। এতে বলা হয় যে, ব্রিটেন ইরাকের লীগ অব নেশনসের সদস্য পদ প্রাপ্তির জন্য সুপারিশ করবে আর যেদিন ইরাক সুপারিশ লাভ করবে সেইদিন থেকে ইরাকে ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান ঘটবে।

১০. চুক্তির কার্যকারিতা ও মেয়াদকাল : এই চুক্তির ১১ নং ধারায় বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব উভয় পক্ষই চুক্তিটি অনুমোদন করবে আর যেদিন লীগ অব নেশনস ইরাকের সদস্যপদ প্রদান করবে, সেদিন থেকে চুক্তিটি কার্যকর হবে। চুক্তিটি কার্যকর থেকে এর মেয়াদকাল ২৪ বছর। তবে দুই পক্ষ চাইলে ২০ বছর পর নতুন একটি চুক্তি করবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯২০ সালে ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইরাকি জাতীয়তাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে থাকে। দীর্ঘ আন্দোলন শেষে ১৯৩০ সালে ইঙ্গ- ইরাক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে ব্রিটেন সরকার ইরাকের স্বাধীনতার স্বীকৃতিদান এবং লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ প্রাপ্তি বিষয়ে সুপারিশের অঙ্গীকার করে। যদিও সামরিক বিবিন্ন বিষয়ে চুক্তির বলে ব্রিটিশ সরকার ইরাককে তাদের উপর নির্ভরশীল করে ফেলে।

ভূমিকা : কাজার বংশের শাসনে যখন ইরানের অস্তিত্ব সংকটে। বৈদেশিক শক্তি যখন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার খেলায় মত্ত তখন ইরানের ভাগ্যাকাশে রেজাশাহ-এর আগমন ঘটে। ১ম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইরানের ক্ষমতায় তার আগমন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রেজাশাহ অল্প দিনে ইরানের নিয়ন্ত্রণ নিজ কর্তৃত্বে আনতে সক্ষম হন। তিনি ইরানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে নানাবিধ সংস্কার সাধন করেন ।

১. জাতীয় ঐক্য স্থাপন : আধুনিক সমাজ নির্মাণে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রেজাশাহ ক্ষমতায় এসে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করে।রাজ্যের ঐক্য সুদৃঢ় করেন |

২. কুচিক খানকে দমন : ইরানের উত্তর জিলানে কুচিক খানের নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। রেজাশাহ কুচিক খানকে আক্রমণ করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এছাড়াও তিনি খোরাসানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নায়ক তকি খানকে দমন করার জন্য অভিযান প্রেরণ করেন। এসব অভিযানের মধ্য দিয়ে রেজাশাহ জিলান ও খোরাসানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ।

৩. খিজিস্তানের বিদ্রোহ দমন : কাজার বংশের শাসনামলে খিজিস্তান প্রায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীন অঞ্চলে ক্ষমতায় এসে খিজিস্তানের বিদ্রোহ দমন করেন । পরিণত হয়। এ সময় খিজিস্তানের শাসক ছিলেন খাজায়াল।

৪. লুবসু কাশকাই শাহসেভান ও বখতিয়ারি গোত্রের ক্ষমতা খর্ব : রেজাশাহ যে সময় ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন বিভিন্ন শক্তিশালী গোত্রের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। রেজাশাহ অত্যন্ত কৌশলে এসব গোত্রের ক্ষমতা খর্ব করে তা নিজ অধীনে আনেন। এছাড়াও তিনি আজারবাইজানে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ।

৫. অর্থনৈতিক সংস্কার : আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন এবং বিদেশীদের প্রভাবমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা রেজাশাহের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রাজস্ব ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন ।

৬. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই রেজাশাহ ক্ষমতা গ্রহণ করে ইরানের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। তিনি রাস্তা ও রেলপথ নির্মাণ করেন । তিনি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিমান পথ ও বিমান বাহিনীর উপরও গুরুত্বারোপ করেন ।

৭. শিল্পায়নে সহায়তা প্রদান : শিল্পায়নে সহায়তা করার মাধ্যমে রেজাশাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বড় কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় তাই রেজাশাহ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পদক্ষেপ নেন ।

৮. কৃষি ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন : কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে রেজাশাহ কৃষির উন্নয়নে সহযোগিতা ও সংস্কার সাধন করেন। তিনি কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি মিলি ব্যাংকের একাংশকে কৃষি ব্যাংকে রূপান্তর করেন। কুটির শিল্পের উন্নয়নে রেজাশাহ বেশ কিছু কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করেন ।

৯. সামাজিক সংস্কার : রেজাশাহ সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। তিনি সামাজিক ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিকাশে ধর্মান্ধতার অবসান করেন। মোল্লাতন্ত্রের শক্তি ও প্রাধান্য খর্ব করেন। তিনি সমাজ হতে ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করে আধুনিক ভাবধারার বিকাশ ঘটান ।

১০. শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার : ইরানের উন্নয়নে রেজাশাহ পাশ্চাত্য ভাবধারার আদর্শে শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। অনেক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং যোগ্য শিক্ষক নিয়োগদান করেন। তিনি একাধিক কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় তেহরানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

১১. পোশাকের পরিবর্তন : রেজাশাহ পাহলভী পর্দাপ্রথাকে মধ্যযুগীয় জীবনবোধের প্রতীক মনে করে পর্দাপ্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি সকল ইরানিদের পাশ্চাত্য পোশাক পরিধান করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং ফেজটুপির পরিবর্তে পাহলভী টুপি পরিধান বাধ্যতামূলক করেন ।

১২. নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা : সমাজের উন্নয়নে নারী ও পুরুষের মধ্যে মর্যাদাগত কোন পার্থক্য নেই। রেজাশাহ ক্ষমতায় এসে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বিবাহ রেজিস্ট্রি করার ব্যবস্থা করেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও তালাক দেয়ার ক্ষমতা দান করেন।

উপসংহার : রেজাশাহ পাহলভীর সংস্কার আধুনিক ইরানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি ইরানের মধ্যযুগীয় ভাবধারা পরিবর্তন করে আধুনিক ভাবধারার মধ্যে নিয়ে যান। তার সংষ্কারের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের আধুনিকীকরণ। রেজাশাহ তার পরিকল্পনায় সফল হতে না পারলেও তার শাসন ইরানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। রেজাশাহ তার সংস্কার কার্যাবলির মধ্যদিয়ে ইতিহাসে বরণীয় হয়ে আছেন ।

ভূমিকা : মিশর একসময় ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ছিল। মিশরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যে ক'জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজেদের মেধা, শ্রম ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দ্বারা মিশরীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের মধ্যে মিশরের তৃতীয় পর্যায়ের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা সা'দ জগলুল পাশা অন্যতম। তিনি তার নেতৃত্বে গড়ে উঠা একটি রাজনৈতিক দল দ্বারা মিশরের রাজনীতি, শাসননীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির মাধ্যমে এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চাঙ্গা করেন এবং মিশরকে পূর্ণ স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যান।

জগলুল পাশার পরিচয় : সা'দ জগলুল পাশা উত্তর মিশরের গারবিয়া প্রদেশের ইরিয়ানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। Encyclopedia of Britinica-এর তথ্যানুযায়ী তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের মক্তবে তিনি বাল্য শিক্ষা অর্জন করেন এবং উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করেন মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ১৮৯২ সালে আপিল বিভাগের আদালতে বিচারক নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে মিশরের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯১০ সালে আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পরবর্তীকে মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আসেন ।

জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তার ভূমিকা : সাদ জগলুল পাশা মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। নিম্নে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা সবিস্তারে আলোকপাত করা হলো :
Ward Party : প্যারিস শান্তি সম্মেলনের পর যখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয় যে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মিশরকে নিয়ে খেলতে চাচ্ছে তখন উইংগেট সুলতানের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে ব্যাপক গণআন্দোলন পরিচালনার জন্য সা'দ জগলুল পাশা ১৩ই নভেম্বর ‘মিশরীয় ডেলিগেশন' বা 'আল ওয়াফাতুল মিশরী’ নামক স্থায়ী কমিটি গঠন করেন। বস্তুত এই পরিপ্রেক্ষিতেই মিশরের ইতিহাসে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ‘ওয়াকফ’ এর জন্ম হয় যা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত মিশরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল ।

Ward Party ও মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জগলুল পাশা : উরাবী পাশা, আব্দুহূ এবং মোস্তফা কামিলের | অসাধারণ নেতৃত্বে মিশরে পরিচালিত গতিশীল আন্দোলনের ফলে মিশর একদিকে যেমন ব্রিটিশ শাসনের মূলে কুঠারাঘাত করে, অন্যদিকে তুরস্কের অধীনতা থেকেও বের হতে থাকে। এর মাঝে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটেন মিশরের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সুয়েজ খালের গুরুত্ব অনুধাবন করে মিশরকে নিজেদের সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেন। এমতাবস্থায় মিশরকে আশ্রিত রাজ্য বাতিল এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে মিশরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধে। ব্রিটিশরা যুদ্ধের পর মিশরকে স্বাধীনতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে যুদ্ধে মিশর ব্রিটেনকে সহযোগিতা করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে আবার আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠে। এ সময় সা'দ জগলুল পাশা, আব্দুল আজিজ ফাহমী এবং আলী শারারীর সমন্বয়ে গঠিত একটি অস্থায়ী কমিটি ১৯১৮ সালের ১৩ নভেম্বর স্যার রেজিনাল, উইংগেটের সাথে দেখা করে আশানুরূপ ফলাফল পায়নি। এরপর প্যারিস শান্তি সম্মেলনেও তাদের আশার প্রতিফলন না হলে Ward Party গঠন করেন। মিশরের পূর্ণ স্বাধীনতা আদায় এর মূল লক্ষ্য বলে ঘোষণা করা হয় এবং নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন পরিচালনার নীতি গ্রহণ করা হয় ।
ওয়াফদ পার্টি গঠনের পর মিশরের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নতুন রূপ লাভ করে। জগলুল পাশা বিভিন্ন দাবি আদায়ে ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করলে ব্রিটিশ সরকার তাকে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে বাধা সৃষ্টি করে। এর প্রতিবাদে তিনি সম্মেলনের দিন অর্থাৎ ১৩ জানুয়ারি ১৯১৯ এক জোরালো ভাষণ দেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার তাকে যেকোনো ধরনের সভা সম্মেলন করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ৮ মার্চ জগলুল পাশাসহ আরও তিনজন নেতাকে গ্রেফতার করলে কৃষক, শ্রমিক, সরকারি কর্মচারী, আইনজীবী সবাই কাজ বন্ধ ঘোষণা করে এবং হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। জগলুল পাশার অনুপস্থিতিতে সারাবী পাশা আন্দোলন পরিচালনা করে । এর মাঝে রুশদী পাশার নেতৃত্বে ব্রিটিশ আদলে একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে ব্রিটিশপন্থি হওয়ায় জনগণ তা ভেঙে দেয়। এরপর জগলুল পাশা মুক্তি পেলে তিনি আবারো আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯২০ সাল পর্যন্ত মিশরের সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণের জন্য Lord Milar এর নেতৃত্বে “মিলার কমিশন” মিশরে আসে। এ কমিশন ব্যর্থ হলে ১৯২১ সালে লর্ড এ্যালেনবি ইঙ্গ-মিশর চুক্তি সম্পাদনের জন্য সুলতানকে লন্ডনে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণের কথা জানায় । মিশরে জগলুল পাশার নেতৃত্বে আন্দোলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তিনি আবার গ্রেফতার হন। কিন্তু এসময় চতুর্মুখী চাপ স ও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলে লর্ড এ্যালেনবি ব্রিটিশ সরকারকে ও মিশরের একক স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে সুপারিশ করেন। এর প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৯২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এককভাবে মিশরের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। এভাবে মিশরের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের তৃতীয় স্তরের সমাপ্তি ঘটে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মিশরের স্বাধীনতার এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জগলুল পাশা এক অন্যান্য ব্যক্তি ছিলেন। মিশরের স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনে একাধিকবার নির্বাসিত হয়েছেন এবং অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার নেতৃত্ব এবং বলিষ্ঠ পরিচালনায় ওয়াফদ পার্টি একসময় জনগণের পার্টিতে রূপ নেয়। জগলুল পাশার প্রতিষ্ঠিত ওয়াফদ পার্টি ব্রিটেনের অধীনতা থেকে মিশরের যুক্তিতে অন্যান্য সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং বলা যায়, জগলুল পাশা ছিলেন মিশরের একজন প্রকৃত জাতীয় নেতা ।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram