nulibrary

অথবা, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।

ভূমিকা : পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো শাসনই চিরস্থায়ী নয়। যার শুরু আছে তার শেষও আছে। তবে কারো কারো শেষটা একটু দেরিতে হয়। ইতিহাসের ধর্ম হলো পরিবর্তন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। প্রায় দুইশত বছর ইংরেজরা শোষণ-নিপীড়নের মাধ্যমে এ দেশ শাসন করে। ভারতীয় জনগণ ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে তাদের এ নিপীড়নের প্রতিবাদ করে আসছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা কূট-কৌশলে সব আন্দোলন প্রতিরোধ করে দীর্ঘদিন শাসন করে। কিন্তু এই শাসনের ইতিতো একদিন টানতেই হবে। যারই প্রেক্ষাপটে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস ও ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হলে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার হয় এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এদেশের গভর্নর নিযুক্ত হলে ভারতীয়গণ তাকে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশ গঠন করে ভারত বিভক্ত করেন। তবে এই বিভাগের পিছনে রয়েছে এক বড় ইতিহাস ।

→ ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির পিছনে অনেক কারণ বিদ্যমান ছিল । নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো-

১. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসন যখন জনসাধারণের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে তখনি ১৮৫৭ সালে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। যদিও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয় তথাপি এ বিদ্রোহ ভারতবাসীর মনে নতুন চেতনা সঞ্চার করেছিল ।

২. ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা : ভারতে ব্রিটিশ সরকার যখন শোষণ, নিপীড়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশদের প্রতিবাদ করার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কারণ ভারতীয় জনগণ বুঝতে পেরেছিল সংগঠন ছাড়া আন্দোলন সফল হয় না। তাই ব্রিটিশ সিভিলিয়ান হিউম বড়লাট ডাফরিনের প্রেরণায় ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয় জনগণ কথা বলার মতো মাধ্যম খুঁজে পাই ।

৩. আলীগড় আন্দোলন : স্যার সৈয়দ আহমেদ কর্তৃক আলীগড় আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশে একটি আলোচিত ঘটনা। ভারতীয় কংগ্রেস প্রথমদিকে নিরপেক্ষ থাকলেও পরবর্তীতে তারা হিন্দুদের পক্ষপাতিত্ব করায় সৈয়দ আহমেদ মুসলমানদেরকে কংগ্রেস থেকে দূরে থাকতে বলেন । এই আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবনতির কথা তুলে ধরে তাদেরকে জাগ্রত করেন।

৪. বঙ্গভঙ্গ ও রদ : ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বঙ্গভঙ্গ করেন। বঙ্গভঙ্গে মুসলমানরা খুশি হলেও ভারতীয় কংগ্রেস তথা হিন্দুরা এর তীব্র সমালোচনা করেন। এক পর্যায়ে কংগ্রেস তীব্র সমালোচনা করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করলে মুসলমানরা আবার বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করে এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে মুসলমান ব্রিটিশ শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে এবং আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়।

৫. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা : ১৮৮৫ সালে সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে হিন্দু-মুসলমানরা যৌথ উদ্যোগে আন্দোলন-সান পরিচালনা করত। কিন্তু কংগ্রেস নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলতে মুসলমানরা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা করে। এভাবে এক পর্যায়ে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মুসলিম লীগ কংগ্রেসের মতোই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিল। ফলে বলা যায়, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ক্ষেত্রে মুসলিম লীগের যথেষ্ট অবদান লক্ষ করা যায়। স্বাধীন পাকিস্তানে সৃষ্টির জনক এই মুসলিম লীগ।

৬. মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন : ১৯০৯ সালে ভারতবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে লর্ড মিন্টো তার নামে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন। কিন্তু এ আইন ভারতবাসীর জন্য একটি নিপীড়নমূলক আইন হিসেবে প্রবর্তিত হয়। ফলে ভারতবাসীর মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে যায়। তাই তারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন এক সময় ভারত বিভক্তির পথ সুগম করেছিল ।

৭. খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন : ভারতবর্ষের ইতিহাসে ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের খিলাফত রক্ষা করার দাবিতে ভারতীয় মুসলমানরা এক আন্দোলনে নামে যা খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত এবং ভারতের স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের দমনে এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়। তথাপি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতবাসীর মধ্যে প্রতিবাদের জান্ডা জাতীয়তাবোধের চেতনা সঞ্চার করেছিল যা একদিন ভারতবাসীকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল ।

৮. ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন : ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন পাস ছিল ব্রিটিশ সরকারের আর এক শোষণের পন্থা। এ আইনের প্রতিবাদে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেয়। এ আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কুখ্যাত রাওলাট এ্যাক্ট প্রবর্তন করেন। ফলে ভারতবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে এক সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু ঐ সমাবেশে জেনারেলের নির্দেশে গুলি চালিয়ে শত শত লোককে হত্যা করে। এ ঘটনায় আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠে এবং অসহযোগ ও বিলাঞ্চল আন্দোলন ঐকমত্যে পৌঁছে আন্দোলন পরিচালনা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ দুটো আন্দোলনই ব্যর্থ হয়। তথাপি এ আন্দোলন ভারত বিভক্তির দ্বার উন্মোচন করেছিল।

৯. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন : ১৯৬৯ সালের মতো ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে এ আইন পাস করেন। কিন্তু এ আইনে যে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ভারতীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরো বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়।

১০. সাইমন কমিশন : ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা মোতাবেক এ আইনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ১০ বছর পর একটি কমিটি প্রেরণ করার কথা বলেন। কিন্তু ১০ বছর পূর্ণ না হতেই ব্রিটিশ স্বার্থে এ কমিশন ১৯২৭ সালে সাইমনের নেতৃত্বে ভারতে আসেন। কিন্তু এ কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ তা বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দেন । কিন্তু ভারতীয়রা এই কমিশনকে বর্জন করলেও সাইমন কমিশন ভারত বিভক্তির পথকে অনেক সহজ করেছিল।

১১. জিন্নাহর চৌদ্দ দফা : মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯২৮ সালের নেহেরু রিপোর্টের উপর কিছু সংশোধনী আনয়ন করার প্রস্তাব দেন। তবে কংগ্রেস এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে জিন্নাহ মুসলমানদের স্বার্থের কথা তুলে ধরে ১৪ দফা পেশ করেন। নেহেরু রিপোর্টে যেমন হিন্দুদের স্বার্থের কথা বলা হয়েছিল তেমনি জিন্নাহ এই রিপোর্টেও মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলেন। ফলে ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে গোলাযোগ সৃষ্টি হয় এবং ভারত বিভক্তির পথ সুগম হয় ।

১২. গান্ধী-ডারউইন চুক্তি : ১৯৩১ সালের ৫ মার্চ ভাইসরস ডারউইন ও গান্ধীজীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৩০.১৯৩১.১৯৩২ সালে তারপর তিনটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বৈঠকে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে গণঅসন্তোষ আরো বেড়ে যায়।

১৩. ১৯৩৭ সালের নির্বাচন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন অনুযায়ী প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। ফলে এই প্রদেশগুলোতে ১৯৩৭ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগ ও কৃষকপ্রজা পার্টি কোয়ালিশন করে মন্ত্রিসভা গঠন করে । তবে এ মন্ত্রিসভা বেশিদিন শাসনকার্য চালাতে পারে না । ফলে ভারতবাসীর মাঝে ভারতের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা অনুভব করে ।

১৪. লাহোর প্রস্তাব : ১৯৩৭ সালের প্রদেশগুলোর নির্বাচনে বাংলা প্রদেশের কৃষক পার্টির নেতা ফজলুল হক কংগ্রেসের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করলে মুসলমানরা আলাদা একটি জাতি হিসেবে স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪০ সালে লাহোরে মিলিত হয়। এই লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন একে ফজলুল হক, যা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত বলা হয়। ভারত বিভক্তির অন্যতম একটি কারণ এই লাহোর প্রস্তাব ।

১৫. জিন্নাহের দ্বিজাতি তত্ত্ব : ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ক্ষেত্রে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের দ্বিজাতি তত্ত্ব খুবই প্রভাব ফেলে। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ঐকমতের অভাব দেখা দিলে জিন্নাহ তার বিখ্যাত দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। তিনি এই তত্ত্বে মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা জাতি হিসেবে স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব দেন।

১৬. ক্রিপস মিশন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারত ব্রিটিশদের উপেক্ষা করে যাতে অন্য কোনো দেশকে সমর্থন না করে বা অন্য কোনো দেশ ভারতকে আক্রমণ না করে। এছাড়া

এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পত্তি | পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকরি ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের দেশ ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে করতে হবে। এছাড়া প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র ংশে যোগাযোগ ও প্রয়োজনমত অন্যান্য বিষয়ে সর্বক্ষমতা সংশিষ্ট অঞ্চলগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে।

১. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট : ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু এই মুসলমানদের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব মৌলিক। তারপরে ও হিন্দু মুসলিম এক সাথে অখণ্ড ভারতের স্বায়ত্তশাসনের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে আসছিলেন। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ফলে হিন্দু রাষ্ট্র মুসলিমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

২. পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম : সকল বন্ধন ছিন্ন করে ও সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। লাহোর প্রস্তাবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ একাধিক রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ত্যাগ করে একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন ।

৩. স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ বপন : লাহোর প্রস্তাবই স্বাধীন স্তাব বাংলাদেশের বীজ বপন করা হয়েছিল। কেননা লাহোর প্রস্তাবে মার্চ বলা হয় যে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে। তবে পরবর্তীকালে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের দ্বীন কারণে মাধ্যমে একাধিক জায়গায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলা হয়। কিন্তু বাংলার মুসলমানরা সর্বদাই লাহোর প্রস্তাবের লী স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন করতে থাকে। পন নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৪. ভারত বিভক্ত : লাহোর প্রস্তাবের ফলে ভারত বিভক্তির ল পথ অনেকটা সহজ হয়। এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার আগ পর্যন্ত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ অখণ্ড ভারতের জন্য একসাথে আন্দোলন করে | করেছিলেন। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে তার ছেদ পড়ে যায়। ব্রিটিশ সরকার ও লাহোর প্রস্তাবের ফলে উপলব্ধি করেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের কে একই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় রাখা হবে নির্বুদ্ধিতার শামিল।

৪. নবদিগন্তের সূচনা : ভারতবর্ষের রাজনীতিতে লাহোর প্রস্তাব নবদিগন্তের সূচনা করে। কেননা এই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ভারতবর্ষ তার হাজার বছরের ইতিহাস ছিন্ন করে বিভক্ত হয়ে পড়ে আর ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়া মুসলমানরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় |

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটা মুসলমানদের ইতিহাসেও ব্যাপক তাৎপর্যময় ঘটনা। ১৯৪০ বং সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে রে অসামান্য। এই প্রস্তাব আন্দোলনরত মুসলমান জাতির মধ্যে এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। তাই বলা যায় যদি ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব না হতো তাহলে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির কল্পনাই করা যেতো না ।

অথবা, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী কী ছিল? আলোচনা কর।

ভূমিকা : ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৮৮৫ সালে ভারতীয়দের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এটা প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ভারতবাসীর পক্ষে কাজ করতে পারেনি, কারণ মূলত এটি ছিল হিন্দু সংগঠন। এমন অবস্থায় ভারতীয় মুসলমানরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করতে থাকে। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের অধিবেশন বসে সম্মেলন শেষে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ১৯০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম হয় ।

→ মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ১৯০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ গঠন করার পর এ সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক হন নবাব মুহসিন উল মূলক ও নবাব ভিখার উল- মূলক । ৬০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহি কমিটি গঠন করা হয় গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য এ কমিটির কয়েকজন সদস্যের অপছন্দের কারণে সংঘ শব্দটি পরিত্যাগ করে "All India Muslim League করা হয়। এর সদস্যদপ্তর স্থাপন করা হয় চিন্তিত লক্ষ্মৌতে। এতে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে নিন্দা করা হয়। ংগ্রেসের মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয় ১৯০৮ সালের আলীগড় অধিবেশনে। একই বছর সৈয়দ আমির আলীর অন্যান্য | সভাপতিত্বে এর শাখা গঠিত হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯১৩ সালে মুসলিম লীগের অধিবেশনে যোগদান করেন ।

চীকালে ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের নে এর কথা বলা হয় তা ছিল নিম্নরূপ:

১. মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষা : মুসলিম লীগের সূচনা অধিবেশনে মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষা করা এবং মুসলমানদের সকল দাবি দাওয়া সরকারের কাছে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা করা হয়।

২. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ : ১৯০৬ সালের মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্যের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করা হয়। যে কোনো ত্বশাসন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের মুসলমানদের সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা জন্মালে তা দূর করার ব্যবস্থা করা হয়। কারণ তারা মত তাপূর্ণ | প্রকাশ করেন যে, সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করলে নিজেদের দাবি আদায় করা সহজ হবে না ।

নৈতিক ৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় : অন্য কোনো সম্প্রদায়ের সাথে যাতে মুসলমাদের বিদ্বেষ না দেখা দেয় সে ব্যবস্থা মুসলিম লীগের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঘোষণার সময় বলা হয়।

এগুলো ছাড়া মুসলিম লীগের লক্ষ্যে আরো বলা হয় যে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুসলমানদের সংখ্যানুপাতে নিয়োগ, হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালতে মুসলমান বিচারপতি নিয়োগদান, বঙ্গভঙ্গ রদ না করা এবং মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা দাবি ইত্যাদি ।

এছাড়া করাচিতে মুসলিম লীগের অধিবেশনে সিমলা ডেপুটেশনের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

(ক) সরকারি কার্যে মুসলমানদের সংখ্যা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সংখ্যার মধ্যকার যে তারতম্য তা দূর করে মুসলমানদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করা ।

(খ) মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি এবং ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক হাইকোর্ট ও চিফ কোর্টে মুসলমান বিচারপতি বস্থায় নিয়োগ করা।

(গ) বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, সিনেট এবং শিক্ষা বিষয়ক কে। কমিটিগুলোকে মুসলমান প্রতিনিধি নিয়োগ করে শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।

এ সকল ভাষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মুসলিম লের লীগ ক্রমান্বয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক অবস্থার স্বার্থে জড়িয়ে পড়ে

 উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলিম লীগ গঠন মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও দাবি দাওয়া প্রকাশে যুগ্ম | গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে এবং উল- ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুসলিম লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মুসলিম লীগ মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে ।

ভূমিকা : ব্রিটিশ ভারত ও বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৯০৫ সালে ভারতের তৎকালীন বড়লাট লর্ড জর্জ নাথানিয়েল কার্জন বাংলা প্রদেশ ভাগ করেন। যা ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গের ফলে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ ও ‘পূর্ববঙ্গ' নামে নতুন দুটি প্রদেশ গঠিত হয়। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার সমন্বয়ে গঠিত পূর্ববঙ্গের সাথে মালদা জেলার চিফ কমিশনার শাসিত আসামের সঙ্গে সংযুক্ত করে পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। যেটি ইতিহাসে 'বঙ্গ' নামে পরিচিতি লাভ করে। বঙ্গভঙ্গ ও এর পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। বঙ্গভঙ্গ ও রদকে কেন্দ্র করে বাংলার প্রধান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানের দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা ঐক্যের বিপরীতে অনৈক্যের সূত্রপাত ঘটে ।

→ বঙ্গভঙ্গ : ১৮৯৮ সালে লর্ড কার্জন ভারতের বড়লাট হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেন। লর্ড কার্জনের শাসনকালের মধ্যে সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার হলো বঙ্গভঙ্গ। তৎকালে সমগ্র বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে ছিল বঙ্গ প্রদেশ বা বাংলা প্রেসিডেন্সি। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য লর্ড কার্জন ১৯০৩ সালে এই বিরাট প্রদেশকে দুইভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । তিনি উত্তর ও পূর্ব বাংলাকে আসামের সাথে সংযুক্ত করে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করেন। এই নবগঠিত প্রদেশের নামকরণ করেন পূর্ব বাংলা ও আসাম। অপরদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সমন্বয়ে আরেকটি প্রদেশ গঠিত হয় । যার নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা প্রদেশ' (Bangla Presidency). ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে বঙ্গভঙ্গ আইন কার্যকর হয়।

→ বঙ্গভঙ্গের কারণ : বঙ্গভঙ্গের কারণ বিশ্লেষক ঐতিহাসিকরা দুটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ব্রিটিশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বঙ্গভঙ্গের প্রধান কারণ হিসেবে প্রশাসনিক কারণকে উল্লেখ করলেও এর পিছনে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনেতিক কারণও বিদ্যমান । নিচে বঙ্গভঙ্গের কারণগুলো আলোচনা করা হলো :

১. প্রশাসনিক কারণ : ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ নেয়ার পিছনে প্রশাসনিক কারণ হলো :

(ক) বাংলা প্রদেশের আয়তনের বিশালতা : ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মনে করেন যে, বাংলা একটি বিশাল প্রদেশ। বিভক্তির আগে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে বাংলা প্রদেশ ছিল। এটি ছিল আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে

সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এর আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল এবং ১৯০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ ।

একজন গভর্নরের পক্ষে এত বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এজন্য প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করা হয় ।

(খ) বঙ্গ প্রদেশে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : পূর্ব বাংলার যোগাযোগ, পুলিশ ও ডাক ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলার বিস্তীর্ণ চর ও হাওড়ে প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি ও বেআইনি কর্মকাণ্ড হতে থাকে। বাংলাকে এসব অরাজক পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ গ্রহণ করেন

২. রাজনৈতিক কারণ : বেশির ভাগ ভারতীয় ঐতিহাসিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে বঙ্গভঙ্গের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গভঙ্গের পিছনে যেসব রাজনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল তা হলো :

(ক) বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ধ্বংস করা : কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্ত ভিত গড়ে উঠে। বিশেষ করে ১৮৮৫ সালে ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে তা আরো সুদৃঢ় হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার মনে করে জাতীয়তাবাদী এ শক্তিকে নস্যাৎ করে দিতে পারলে বাঙালির শক্তি ক্ষীণ হয়ে যাবে । এই ভেবে সরকার বঙ্গভঙ্গের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ।

(খ) কংগ্রেসকে দুর্বল করা : ১৮৮৫ সালে ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারতবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক সচেতনতা ব্রিটিশ সরকারকে সঙ্কিত করে তুলে এবং বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে কংগ্রেসকে দ্বিধাবিভক্ত করে এর শক্তি হ্রাস করে।

(গ) বিভক্ত ও শাসননীতি : বঙ্গভঙ্গের অন্যতম কারণ ছিল ব্রিটিশ সরকারের ‘বিভক্ত ও শাসননীতি'র (Divide and Rule Policy) অন্যতম একটি অংশ। ভারতে ব্রিটিশ রাজশক্তিকে শক্তিশালী করা ও বাঙালিদের শক্তি ক্ষীণ করার জন্য দুই বাংলাকে বিভক্ত করা নীতি অবলম্বন করা হয়।

৩. অর্থনৈতিক কারণ : বঙ্গভঙ্গের পিছনে ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক কারণগুলো নিম্নরূপ :

(ক) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত করা : অবিভক্ত বাংলা বাংলার রাজধানী হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু কলকাতা কেন্দ্রিক হওয়ায় বাংলা প্রদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে। এজন্য বাংলায় অর্থনৈতিক বিকাশ সাধন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়। (খ) জমিদারদের অত্যাচার থেকে রায়তদের মুক্তি কলকাতা কেন্দ্রিক আধুনিক সভ্যতার বিকাশ সাধনের ফলে বাংলার অধিকাংশ জমিদার কলকাতায় বসবাস করা শুরু করে। তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের নিযুক্ত নায়েব, গোমস্তারা রায়ত দিয়েছিল তথা প্রজাদের উপর নানাভাবে অত্যাচার করতো। প্রজাদের এমন অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য ও তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনয়নের জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়।

৪. সামাজিক ও ধর্মীয় কারণ : ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে তাদের বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে মুসলমানরা ধীরে ধীরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য হারাতে থাকে। তাছাড়া স্মরণাতীতকাল থেকে পূর্ব বাংলায় মুসলমানদের ও পশ্চিম বাংলায় হিন্দুদের প্রাধান্য বিরাজমান ছিল। এজন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় বিবেচনা করে বঙ্গভঙ্গের জন্য উদ্যোগী হয় ।

→ বঙ্গভঙ্গের ফলাফল : ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের গভর্নর লর্ড কার্জন কর্তৃক ঘোষিত বঙ্গভঙ্গ বাংলার জনগণের জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্ত কারী পরিবর্তন এনে দেয়। এজন্য বাংলার জনগণ বঙ্গভঙ্গকে স্বাদরে গ্রহণ করে। ১৯০৬ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ইস্টার্ন বেঙ্গল এন্ড আসামের ‘ইরা' পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গের ৮টি সুবিধার কথা উল্লেখ করে । সেগুলো নিম্নরূপ:

১. ঢাকা নগরের পুনর্জন্ম ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি । ২. নদী ও খালগুলোর উন্নতি, রেললাইনের সম্প্রসারণ, চট্টগ্রামের সাথে সংযোগ স্থাপন।

৩. নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠিত হওয়ার ফলে জমিদার ও সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিদের পক্ষে জনসাধারণের অভাব অভিযোগের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ-সুবিধা ৷ ৪. সুষ্ঠু শাসন ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ৷

৫. পূর্ব বাংলার শিক্ষিত ও সভ্য লোকদের সংস্পর্শে আসায়

অনুন্নত আসামের অধিবাসীদের উপকার ।

৬. পূর্ব বাংলার জন্য কর্মদক্ষ পুলিশ বাহিনী গঠন ৷

৭. বাংলা প্রদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন ৷

৮. দেশের জনসাধারণ প্রদেশের প্রধান কর্মকর্তার সংস্পর্শে নবগঠিত আসতে সক্ষম হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গের উদ্যেগ প্রথমে ছিল প্রশাসনিক পরে রাজনৈতিক কারণই প্রাধান্য লাভ করে। বঙ্গভঙ্গ বাংলার জনগণের জন্য আশির্বাদস্বরূপ ছিল। এর ফলে বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়। বঙ্গভঙ্গ ও এর রদ মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে। মুসলমানরা উপলব্ধি করে যে ব্রিটিশ সরকারের হাতে মুসলমানদের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকতে পারে না। বঙ্গভঙ্গ ও এর রদ বাংলার মানুষকে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শিক্ষা দেয়।

ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আলোচনা কর।

অথবা, ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

ভূমিকা : ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা একটি একটির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই রাজনৈতিক দল ভারতের মানুষের দাবিদাওয়া ব্রিটিশদের নিকট পৌঁছে দিত। ভারতের সার্বিক কল্যাণে এই দলটি নিয়োজিত থাকত। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতীয়দের অধিকার অনেকাংশে খর্ব হত। জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধী প্রত্যেকটি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : নিম্নে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো :

কংগ্রেসের লক্ষ্য : কংগ্রেস নামক এ রাজনৈতিক দলটির বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য অর্জনের চিন্তাধারা থাকলেও মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য বস্তু। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

(ক)কংগ্রেসের রাজনৈতিক লক্ষ্য : কংগ্রেস রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় কাজ করে গেছেন। নিম্নে রাজনৈতিক অধিকারগুলো তুলে ধরা হলো :

১. জাতীয় ঐক্য স্থাপন : ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গড়ে তোলাই ছিল কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। জাতি, ধর্ম, নতৃবর্গ বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক হওয়ার আহ্বান জানায় কংগ্রেস। জাগরণ | প্রাদেশিকতার সংকীর্ণতা দূর করে সবার মধ্যে জাতীয় ঐক্য স্থাপনই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য ।

২. পরিচয় ও সৌহার্দ স্থাপন : ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ একে অন্যের সাথে আন্তরিক পরিচয় ঘটানো ছিল এই সংগঠনের অন্যতম একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য । এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আলোচনার মাধ্যমে তাদের সৌহার্দ স্থাপন হত। তারা একে অন্যের প্রতি আন্তরিক হয়ে উঠত। জাতীয় কোনো দাবিতে তারা সকলেই এক হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলত। ৩. রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন : জাতীয় কংগ্রেসের আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের রাজনৈতিক দুঃখ, দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়া। বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথকে প্রশস্ত করা ।

৪. সংস্কার সাধন : সংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ছিল শিক্ষিত শ্রেণির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে ভারতের ঐতিহ্যকে সুসংহত করা। ভারতের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে কুসংস্কার বাসা বেধেছে তা দূর করা। এভাবেই কংগ্রেস সামাজিক সংস্থার সাধনের জন্য চেষ্টা করতেন।

৫. কেন্দ্রীয় আইনসভায় নির্বাচিত ভারতীয়দের নির্ম্মিত করা য়িত : কংগ্রেসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় আইনসভায় যারা নির্বাচিত হয়েছিল তাদের গ্রহণে ইংরেজদের চাপ সৃষ্টি করা। ভারতীয়রা তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে ।

৬. সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত দাবি : ইংরেজরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স ২১ থেকে ১৯ বছরে করেছিল। কংগ্রেস প্রথমে এটিকে বাতিল করে এবং ব্রিটিশদের চাপ সৃষ্টি করে যেন ইংল্যান্ড ও ভারতে একযোগে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করে ।

৭. প্রশাসনিক পদে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ অধিক করা : রাধী | ভারতে জাতীয় কংগ্রেসে আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক পদে ভারতীয়দের অধিক হারে নিয়োগ। কংগ্রেস এ দাবির পক্ষে তাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরে।

৮. পরামর্শ সভার বিলোপ : কংগ্রেসের অন্যতম আরেকটি টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পরামর্শ সভার বিলোপ। অর্থাৎ যেকোনো বিষয়ে সেটা যদি ন্যায্য দাবিও হয় তাহলেও পরামর্শ সভার পরামর্শ নিতে হতো কিন্তু এটি ছিল দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ফলে কংগ্রেস ভারত সচিবের পরামর্শ সভার বিলোপসাধন করার জন্য কাজ করে ।

৯. সামরিক ব্যয় হ্রাস করা : ইংরেজরা তাদের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে আরও শক্তিশালী ও দখলদারিত্বের জন্য সামরিক ক বাহিনীতে অনেক বেশি ব্যয় করতেন যা ভারতীয়দের কাছ থেকে আদায় করা হতো। কিন্তু এই সামরিক বাহিনী ভারতীয়দের কাজে আসত না। ফলে কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ভারতের সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।

১০. আইনসভা স্থাপন করা : কংগ্রেসের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম প্রদেশে আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা এমনকি এই আইনসভার সদস্যবৃন্দের অ অধিকাংশ হবে ভারতীয় ।

১১. জাতীয়তাবোধ উদ্বুদ্ধ করা : সর্বোপরি কংগ্রেসের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করা। তাদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বজায় রাখা। যেকোনো দাবিতে ভারতীয়রা যেন সবাই একাত্মতা পোষণ করে। এছাড়া ঐক্যের মাধ্যমে যেকোনো রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে নেয়া।

(খ) কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্য : নিম্নে জাতীয় কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্য আলোচনা করা হলো :

১. কৃষকদের অবস্থার উন্নতি : ইংরেজরা সবসময় শোষণের শ্রেণি হিসেবে কৃষককেই বেছে নিত । তারা অধিক হারে কর ধার্য করে কৃষকদের শোষণ করতো। ফলে কংগ্রেসের অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষকদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করা ।

২. অবাধ বাণিজ্যনীতি বিরোধী : অবাধ বাণিজ্যনীতির কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। কংগ্রেস তাই ভারতীয় শিল্পের সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য অবাধ বিচ বাণিজ্যনীতি বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে নেমেছিল ।

৩. আধুনিক শিল্পায়ননীতি গ্রহণ : ভারতের জনগণের অর্থনৈতিক দূরবস্থা দূরকরণের জন্য আধুনিক শিল্পায়নের প্রতি জোর দিয়েছিল। কৃষি থেকে শিল্পকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিল এমনকি মনবতার আমলে শিল্পায়ন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আধুনিক শিল্পের প্রয়োগ ঘটানোর লক্ষ্য ছিল ।

৪. বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের স্বার্থ রক্ষা : কংগ্রেসে শুধু অভিজাত শ্রেণিদের স্বার্থ রক্ষা লক্ষ্য ছিল না; বরং একজন শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ আদায়ের ব্যাপারে সচেতন ছিল। কৃষক, কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল । দিনমজুর, বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ তাদের সকল অধিকার আদায়ও

৫. অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করা : ইংরেজদের শাসন ও শোষণের কারণে ভারতীয়দের অর্থনৈতিক ভিত্তি একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক দাবি নিয়ে তারা ইংরেজদের নিকট পেশ করতেন

৬. বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ : কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রাদেশিক শাসন পরিষদে ভারতীয় সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ভারতীয় বাজেট আলোচনায় ও বাজেট সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন তোলার অধিকারের কথা জানানো হয়। অর্থাৎ বাজেট যেন কোনোভাবেই ভারতীয়দের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায় ।কংগ্রেসের উদ্দেশ্য : নিম্নে কংগ্রেসের উদ্দেশ্য আলোচনা

করা হলো :

(ক) সরকারের নীতির সমালোচনা : পৃথিবী প্রত্যেকটি | রাজনৈতিক দল অন্যান্য দলের বিভিন্ন নীতির গঠনমূলক | সমালোচনা করে থাকে। কংগ্রেস সরকারের বিভিন্ন নীতির | সমালোচনা করার উদ্দেশ্য ছিল। যাতে সরকার কোনো ধরনের অপনীতির আশ্রয় নিতে না পারে। তাছাড়া দেশবাসীর দুর্ভোগ ও দারিদ্র্যের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করানোও কংগ্রেসের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ।

(খ) সংস্কার দাবি উত্থাপন : ভারতীয়দের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কংগ্রেসের কতিপয় সংস্কার দাবি ছিল গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য এ সকল সংস্কার দাবি নিম্নরূপ :

১. ভারত সচিবের পরামর্শ সভা বিলুপ্তি করা।

২. কেন্দ্র ও প্রদেশে প্রতিনিধিত্বমূলক কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বীয় শাসনের প্রসার ।

৩. ভারত প্রশাসনের তদন্তের মধ্যে একটি রাজকীয় সমিতি নিয়োগ দেয়া ।

৪. কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষার প্রসার ।

৫. ভারতীয়দের সামরিক শিক্ষা দান ও সামরিক খাতে ব্যয় হ্রাস করা।

৬. কেন্দ্রীয় আইনসভায় ভারতীয় সদস্যদের গ্রহণ করা । ৭. ফৌজদারি বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে কার্য নির্বাহক ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ।

৮. ইংল্যান্ডের ন্যায় ভারতেও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণ। ৯. প্রশাসনিক পদে অধিক হারে ভারতীয়দের নিয়োগ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শক্তিশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যখন ভারতবর্ষকে গ্রাস করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়েছিল তারই ফলশ্রুতি সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশদেরনিকট থেকে নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া ।

ভূমিকা : ভারত উপমহাদেশের সাংবিধানিক সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলমানদেরকে ক্ষুব্ধ করে গেলে। অগ্রগতির ক্ষেত্রে ১৯১৬ সালের লক্ষ্মৌ চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ – পদক্ষেপ। ১৯১৬ সালে বোম্বাই অধিবেশনে সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিই লক্ষ্মৌ চুক্তি নামে খ্যাত।

→ লক্ষ্মৌ প্যাক্ট/লক্ষ্মৌ চুক্তি : প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলেও ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। এ সময় ভারতে রাজনৈতিক চেতনার বৃদ্ধি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও দায়িত্বশীল সরকারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯১৪ সালে বলকান যুদ্ধে তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের মনোভাব ভারতীয় মুসলমানদেরকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। অপরদিকে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে কংগ্রেস আন্দোলন শুরু করে।

অপরদিকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে কংগ্রেস আন্দোলন শুরু করে । ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলমানদের অসন্তোষ এ দুটি সম্প্রদায়ের সংঘবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করে। এ প্রেক্ষিতে ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌতে জাতীয় কংগ্রেস ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগ যৌথভাবে এক সভায় মিলিত হয় এবং চুক্তি স্বাক্ষর করে, ঘা লক্ষ্মৌ চুক্তি নামে খ্যাত। এ চুক্তি সম্পাদনে সর্বভারতীয় মুসলি লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভূমিকা ছিল অনন্য।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুসলমানদের ১৯১৬ সালের লক্ষ্মৌ চুক্তি ছিল হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠর ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী পদক্ষেপ। এর ফলেই মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন ও হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় ।

 অথবা, স্বদেশি আন্দোলন সম্পর্কে কী জানো?

ভূমিকা : স্বদেশি আন্দোলন ব্রিটিশ ভারতের মুসলিমরা রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ছিল ভারতের সমাজের | স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি অংশ। স্বদেশি আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভারত থেকে তাদের উচ্ছেদ সাধন এবং দেশের বঙ্গভঙ্গ | সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। স্বদেশি আন্দোলনের র স্বার্থে মুখ্য প্রবক্তাগণ ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বীর বঙ্গভঙ্গ সাভারকর, বাল গঙ্গাধর তিলক ও লালা লাজপত রায়

→ স্বদেশি আন্দোলন : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ তাদের ঘটে। সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। তখন থেকেই ব্রিটিশ পণ্যসামগ্রী বয়কট ও স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে ইতিহাসে তা স্বদেশি আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। এই আন্দোলনের দুইটি দিক নিয়ে কর্মসূচি চালু করা হয়। প্রথমটা হলো সকল প্রকার বিলিতি পণ্য বর্জন করা। দ্বিতীয়টা হলো স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের প্রসার ঘটানো। এই আন্দোলনের ইতবাচক দিক হিসেবে স্বদেশিকতার উত্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জনগণের মধ্যে স্বদেশি পণ্য ব্যবহার ও স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করতে এই আন্দোলনের ভূমিকা ছিল। স্বদেশি আন্দোলনে বাংলার সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল । বাংলার বাইরেও এই আন্দোলন তিক | ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গ প্রবর্তনের পরই স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের বিকল্প স্বদেশি পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের ভঙ্গ বিকাশ। যার কারণে জনগণ বিলিতি পণ্যসামগ্রী বর্জন করে হয়।

অথবা, লর্ড রিপনের সংস্কারসমূহ আলোচনা কর ।

ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত যায়। এর সাথে ইংরেজদের শাসন শুরু হয় ভারতবর্ষে। ইংরেজরা এদেশের ক্ষমতা গ্রহণের পরে কয়েকজন লর্ডকে ভারতে পাঠিয়েছেন ভারতবর্ষ শাসন করার জন্য। লর্ড রিপন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বপ্রথম গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনি শান্তি, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাতন্ত্র্যবাদে লাক বিশ্বাসী ছিলেন। ভারতবাসীর প্রতি লর্ড রিপন সহানুভূতিশীল ছিলেন। যার জন্য তিনি ভারতের জনগণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করেছেন। তাঁর এসব সংস্কারের জন্য বোট ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন

পূর্বে → লর্ড রিপনের সংস্কারসমূহ : ব্রিটিশ শাসিত ভারতে রতে ভারতবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন লর্ড রিপন। তিনি তিনি ভারতবাসীর জন্য কল্যাণকর কাজ করেছেন। ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্রমূলক করার চেষ্টা করেছেন তিনি। বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করে ভারতবাসীর অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন ।

→ নিম্নে লর্ড রিপনের সংস্কারসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. শুল্ক বাতিল : লর্ড রিপন ভারতে এসে ভারতের আর্থিক ভার অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হন। ভারতের আর্থিক অবস্থা ননা স্মরণাতীত কাল থেকেই ভালো ছিল। তিনি ভারতের এসেও রিপন দেখতে পান ভারতের জনগণের আর্থিক অবস্থা ভালো আছে । যার জন্য তিনি ভারতবাসীর জন্য নতুন কিছু নিয়মকানুন তৈরি করেন। ভার | লবণ ও অন্যান্য বাণিজ্য দ্রব্যের উপর থেকে তিনি বাণিজ্য শুল্ক বাতিল করেন। তাছাড়া তিনি আয়করও রহিত করেন ।

২. রাজস্ব সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতে ভাইসরয় হিসেবে বিধা । এসে ভারতবাসীর আর্থিক অবস্থা ভালো দেখতে পান। তাই তিনি রাজস্ব সংস্কার সাধন করেন। তিনি লর্ড লিটন কর্তৃক প্রণীত ডকে অবাধ বাণিজ্য নীতির সম্পূর্ণতা সাধন করেন। যা ভারতের কর্তা আর্থিক অবস্থা উন্নতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তিনি চিরস্থায়ী মতো | বন্দোবস্ত বাতিল করার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু ভারত সচিবের বিরোধিতার কারণে তা সফল হয়নি।

৩. সরকারি চাকরি বিধি সংস্কার : ভারতবাসীর জন্য লর্ড রিপন সহানুভূতিশীল ছিলেন। পূর্বে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়রা কো সরাসরি যোগ দিতে পারতো না। এজন্য তাদের ব্রিটেনে যেতে শাসন হতো। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের ন্যূনতম বয়স ছিল ১৮ বছর। তাই তিনি ভারত ও ইংল্যান্ডে একই সাথে আই.সি.এস পরীক্ষার কথা বললে হাউস অব কমন্স তা বাতিল করে। তবে তিনি বয়স ভারতীয়দের জন্য ১৮ থেকে ২১ বছর করেন।

৪. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন : লর্ড রিপন ভারতবাসীর কল্যাণের জন্য স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রবর্তন করেন। তিনি ভারতের | আইন জনগণের রাজনৈতিক চেতনাকে গুরুত্ব দিয়ে ১৮৮১ সালে বঙ্গীয় মিউনিসিপ্যাল আইন লিপিবদ্ধ করেন। জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড গঠন করেন স্থানীয় লোকের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে। এর সাথে স্থানীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ তাদের হাতেই অর্পণ করেন। এছাড়া তিনি পৌরসভাগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন।

৫. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : লর্ড রিপনের পূর্বে ভারতের . ভাইসরয় ছিলেন লর্ড লিটন। তিনি ভারতবাসীর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা বন্ধ ভারত করার জন্য লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর আশী রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের অধিকার কেড়ে নেয়। কিন্তু বুঝে লর্ড রিপন 'Vernacular Press Act' বাতিল করেন। এতে করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত স্বাধীনতা ফিরে পায় ।

৬. শিক্ষা সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতবাসীকে আধুনিক ভারত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। যার জন্য তিনি ভারতবাসীর করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য হান্টার কমিশন গঠন করেন। এই হয়েে কমিটি সুপারিশ করে স্থানীয় লোকাল বোর্ড, মিউনিসিপ্যাল বোর্ড ভারত ও কর্পোরেশনের হাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রশ্ন প্রাদেশিক সরকারের রাজস্বের একাংশ প্রদান করা। এই কমিটির অধিকাংশ শর্ত ব্রিটিশ সরকার মেনে নিয়েছিল ।

৭. সামাজিক সংস্কার : লর্ড রিপন ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে সামাজিক সংস্কার সাধন করেছিল। তিনি জমিদারদের রিপ অন্যায় বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি একটি প্রজাস্বত্ব আইনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন। এই পরিকল্পনা পরে গভর্নর জেনারেল কর্তৃক আইনে পরিণত হয়। তিনি ১৮৮১ সালে সর্বপ্রথম লোক গণনার ব্যবস্থা করেছিলেন ।

৮. বিচারব্যবস্থার বৈষম্য দূর : লর্ড রিপন ১৮৮৩ সালে ‘ইলবার্ট বিল' নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনের পূর্বে কোনো ভারতীয় বিচারক ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারত না। তাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই তিনি পারেন বিচারব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার জন্য এই আইনের খসড়া প্রণয়ন গুরুত্ব করে। ইউরোপীয়রা এর বিরোধিতা করলে এই আইনের বিশ্বাস সংশোধন করেন। এতে বলা হয় ভারতীয় বিচারক ইউরোপীয় ভারত জুড়ির সাহায্য নিয়ে ইউরোপীয় অপরাধীর বিচার করবে

৯. আশ্রিত রাজ্যের প্রতি আচরণ : মহীশূর রাজ্যের শাসনভার রা কোম্পানির হাতে ন্যস্ত করা হয় লর্ড বেন্টিংকের আমলে । কেননা শাসনব্যবস্থার অব্যবস্থার অজুহাত এখানে দেখানো হয়। লর্ড - রিপন ভারতে ভাইসরয় হিসেবে এসে আশ্রিত রাজ্যের প্রতি ন ন্যায়সঙ্গত আচরণ করেন। কোম্পানির নিকট থেকে মহিশূর রাজ্যের শাসনভার রাজবংশের উত্তরাধিকারের কাছে ফিরিয়ে দেন লর্ড রিপন ।

১০. কারখানা আইন : ১৮৮১ সালে লর্ড রিপন ফ্যাক্টরি আইন পাস করান। এতে করে শ্রমজীবীদের সুবিধা হয়। শিশু শ্রমিকদের জন্য তিনি নয় ঘণ্টা কাজের নিয়ম করেন। এই আইনে বাধ্যতামূলক করা হয় বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি ঢেকে রাখার জন্য। এছাড়া কারখানা আইনে এক শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। যাদের দায়িত্ব হচ্ছে কারখানা আইন ঠিকমতো পালিত হচ্ছে কি না তা দেখাশোনা করা।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে লর্ড রিপন এদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। তিনি ভারতের জনগণের মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ভারতের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভারতে তিনি মাত্র ৪ বছর শাসন করেছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে ভারতবাসীর কল্যাণসাধনে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার শাসনকাল এদেশে অধিকহারে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন আইনও প্রণয়ন করেছিলেন। যা ছিল ভারতবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও সুখের ।

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল তা আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে কতখানি প্রাদেশিক শায়ত্ব শাসন প্রদান করা হয়েছিল?

ভূমিকা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ব্রিটিশ ভারতে যুক্তরাষ্টীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্টীয় ব্যবস্থা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনকে উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক

সরকারের উপর শাসন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ অর্পণ করা হয়। প্রদেশে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাতিল করে গভর্নর ও মন্ত্রিসভার উপর প্রদেশের শাসনভার দেয়া হয়। প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী করা হয়।

→ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন । প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনকে একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তবে সাধারণত প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন বলতে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রদেশগুলো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে স্বতন্ত্রভাবে আইন প্রণয়ন ও শাসন কার্য পরিচালনা করার ক্ষমতাকে বুঝায় । অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণযুক্ত হয়ে প্রদেশের সরকার স্বতন্ত্রভাবে আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করবে। আইন পরিষদের নিকট প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা দায়ী থাকবে এবং আইনসভা প্রাদেশিক গভর্নরের কর্তৃত্বযুক্ত থাকবে। এছাড়া প্রাদেশিক গভর্নর শুধু নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হবেন। Nc. Roy এর মতে, Provincial Autonomy was regarded as the cornerstone of the new constitution of India. I

→ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রকৃতি ও কার্যকারিতা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন শুরুর কিছুদিন পর থেকে ভারতীয়রা প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে। এ স্বায়ত্ত্বশাসনকে বাস্তবিক রূপ দেয়ার জন্য মন্টেগু চেমসফোর্ট তাদের রিপোর্টে অভিমত ব্যক্ত করেন । পরে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে আংশিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। যদিও তা বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়নি। পরে ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশনের রিপোর্টে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হলে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক বিষয় সুস্পষ্টভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। পরে প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে কেন্দ্রীয় বিষয়সমূহ হতে আলাদা করে দেয়া হয়। এছাড়া প্রাদেশিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, ভারত সচিব ও ভারত সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা হয়। গভর্নর শাসিত প্রদেশে দ্বৈত শাসন রহিত হয়। প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়িত্বশীল হওয়ার বিধান দেয়া হয়। ফলে তত্ত্বগত ধারণায় ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল তা বলা যায়।

তবে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন স্বীকার করে নেয়া হলেও নিম্নলিখিত কারণে তা কার্যকরী হয়নি যথা-

১. প্রাদেশিক গভর্নর নিয়মতান্ত্রিক প্রধান ছিলেন না : সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় প্রাদেশিক গভর্নর নিয়মতান্ত্রিক শাসকে পরিণত হন। প্রকৃতক্ষমতা ন্যস্ত থাকে নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারের হাতে। কিন্তু ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক নিয়মতান্ত্রিক প্রধান ছিলেন না।গভর্নরগণ ছিলেন প্রকৃত শাসন । তাদের ক্ষমতা ছিল অসাম এবং অনিয়ন্ত্রিত। গভর্নরগণ যে কোনো সময় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার

সিদ্ধান্ত আগ্রাহ্য করতে পারতেন।

২. গভর্নরের নিয়োগ পদ্ধতি : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনানুযায়ী গভর্নরগণ ছিলেন ব্রিটিশ রাজের প্রতিনিধি। তাঁরা ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক মনোনীত ও নিযুক্ত হতেন এবং শাসন ক্ষমতা লাভ করতেন। এরূপ নিয়োগ পদ্ধতি ছিল স্বায়ত্তশাসন নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

৩. গভর্নরের সীমাহীন ক্ষমতা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনানুযায়ী প্রাদেশিক গভর্নরের হাতে প্রভূত পরিমাণ

ক্ষমতা দেয়া হয়। যথা-

(ক) আইন সভার উপর নিয়ন্ত্রণ : এ আইন অনুসর প্রাদেশিক গভর্নর তার সেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে আইন পরিষদের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিতে পারতেন। আইনসভা প্রণীত বিল গভর্নরের কাছে প্রেরিত হলে তিনি এতে ভেটো প্রয়োগ করতে পারতেন অথবা বিলটি গভর্নর জেনারেলের বিবেচনার জন্য সংরক্ষিত রাখতে পারতেন। গভর্নর প্রাদেশিক আইনসভার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গভর্নরের আইন ও অধ্যাদেশ জারি করতে পারতেন ।

(খ) আইনসভার আর্থিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশে প্রাদেশিক সরকারের আয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে গভর্নরগণ আইনসভার উপর প্রাধান্য সৃষ্টি করতে পারতেন। প্রাদেশিক আইনসভা কর্তৃক বাতিলকৃত কোনো ব্যয় বরাদ্দপূর্ণ বহাল করার ক্ষমতা গভর্নরদের প্রদান করা হয়েছিল ।

(গ) মন্ত্রিসভার উপর গভর্নরের নিয়ন্ত্রণ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশে সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি অনুযায়ী মন্ত্রিসভার হাতেই প্রকৃত শাসনক্ষমতা ন্যস্ত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গভর্নর মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। বিশেষ দায়িত্ব পালনের অজুহাতে গভর্নর মন্ত্রিসভার কোনো পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারতেন। অ মন্ত্রীসভাকে গভর্নর ও আইনসভা উভয়ের কাছে দায়ী থাকতে হতো। এমনকি গভর্নর মন্ত্রীসভাকে ভেঙ্গেও দিতে পারতেন।

৪. গভর্নর জেনারেলের অপ্রতিহত ক্ষমতা : গভর্নরের ক্ষমতার ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য দিক ছিল । যথা-

(ক) গভর্নর জেনারেল কর্তৃক গভর্নরদের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ : যে সমস্ত ক্ষেত্রে গভর্নরগণ স্বীয় বিচারবুদ্ধি বলে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতেন এবং স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ না করে কাজ করতেন। সেসব ক্ষেত্রে গভর্নরগণ সরাসরি গভর্নর জেনারেলের নিয়ন্ত্রাণাধীন থেকে কাজ করতে বাধ্য ছিলেন।

(খ) গভর্নরদের উপর গভর্নর জেনারেলের নির্দেশ : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ১২৬ ধারায় বলা হয় যে, ভারতবর্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্য গভর্নর জেনারেল গভর্নরদের কাছে নির্দেশ পাঠাতে পারবেন। গভর্নরদের জন্য এসব নির্দেশ পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল। এর ফলে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের অজুহাতে গভর্নর জেনারেল প্রাদেশিক শাসনকার্যে যে কোনো মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করতে পারতেন।

(গ) গভর্নর জেনারেল কর্তৃক জরুরি অবস্থা ঘোষণা : গভর্নর জেনারেল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে কেন্দ্রীয় নান আইনসভা প্রাদেশিক বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারত। অধি ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির অজুহাতে গভর্নর পি জেনারেল প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা ও আইনসভা ভেঙে দিয়ে প্রদেশের সর শাসনক্ষমতা স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারতেন।

(ঘ) গভর্নর জেনারেলের উপদেশাবলি : গভর্নর তার ক্ষমতা শে প্রয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেলের কাছ থেকে উপদেশাবলি পেতেন। এসব উপদেশাবলিকে গভর্নর আদেশের মতই মান্য করতেন।

৫. প্রাদেশিক আইনসভার সীমাবদ্ধতা : প্রাদেশিক আ আইনসভা সব বিষয়ে আইন করতে পারত না। যেমন ব্রিটিশ কা জনগণের বাণিজ্যিক স্বার্থের প্রতি হুমকি বা বৈষম্য সৃষ্টি করতে প পারে এরূপ বিষয়সহ আরও কতিপয় বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রাদেশিক আইনসভার এখতিয়ার বহির্ভূত রাখা হয় ।

৬. যুগ্ম তালিকার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর উপর আইন ক প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্র ও প্রদেশের উপর অর্পণ করা হয়। কিন্তু য বাস্তবে যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ের উপর প্রাদেশিক সরকারের ব কোনো ক্ষমতা ছিল না বললেই চলে। কেননা, যুগ্ম তালিকাভুক্ত প বিষয়ে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে মতানৈক্য ঘটলে কেন্দ্ৰীয় সরকারের আইন বা অভিমতই বলবৎ থাকত ।

৭. প্রাদেশিক বিষয়ে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ : এ আইনে বলা হয় যে, ব্রিটিশ সরকার নির্দেশনামা জারির মাধ্যমে ভারতবর্ষের যে কোনো প্রাদেশিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, যা ছিল স্বায়ত্ত্বশাসন ব্যবস্থার পরিপন্থি ।

৮. প্রাদেশিক সরকারের সীমিত প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা : প্রাদেশিক প্রশাসনে নিযুক্ত আই.সি.এস. আ.পি.এস প্রভৃতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ভারত সচিব নামক ব্রিটিশ মন্ত্রী কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন । ভারত সচিব তাদের চাকরির শর্তাদিও নির্ধারণ করতেন। এসব উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ ভারত সচিব, গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতেন এবং তাদের নির্দেশ মেনে চলতেন । অথচ প্রাদেশিক সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ছিল মন্ত্রিসভার উপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ও আদেশ নির্দেশের প্রতি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা বা অবহেলা প্রদর্শন করতেন।

৯..গভর্নরের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভাগ : উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা সীমাহীন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরীণ সংগঠন ও প্রদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে মন্ত্রিসভার পরিবর্তে গভর্নরের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মূলনীতির বিনষ্ট হয়েছিল ।

এছাড়াও প্রদেশে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার পথে আরও কতিপয় বাধা ছিল, যথা- কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে বিরোধ । কারণ দেখা যায়, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাজিত হলে প্রাদেশিক আইনসভাগুলোতে মুসলিম লীগ লে কেন্দ্রীয় নানাভাবে কংগ্রেস মন্ত্রিসভার বিরোধিতা করতে থাকেন। তাদের তে পারত। অভিযোগ কংগ্রেস মন্ত্রিসভা মুসলমানদের নিরাপত্তা রক্ষার হাতে গভর্নর পরিবর্তে হিন্দুদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত। এসব কারণে প্রাদেশিক করতে পারেননি এবং য়ে প্রদেশের সরকারগুলো যথাযথভাবে কাজ প্রদেশগুলোতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা কার্যকর হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় বলি পেতেন। জনগণের সম্মতি না নিয়ে সরকারের যুদ্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রদেশের কংগ্রেস মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেন। মুহাম্মদ প্রাদেশিক আলী জিন্নাহ কংগ্রেস শাসনের অবমানান্তে মুক্তি দিবস পালন যমন ব্রিটিশ করেন। এভাবে প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রাদেশিক স্বাতন্ত্র্যের যে সৃষ্টি করতে | পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল তার অবসান ঘটে।

→ সমালোচনা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রয়োগের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তা প্রয়োগ না করায় এতে পূর্ণ বা প্রকৃত শাসন এর নামগন্ধ ছিল না। তাই দেখা যায়, প্রাদেশিক গভর্নর ও গভর্নর জেনারেলের ন্যায় প্রভাবশালী সরকারের কর্তার কর্তৃত্বের মুখে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্থহীন হয়ে পড়ে। তালিকাভুক্ত | পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৯৩৫ সালের এ আইনকে দাসত্বের লে কেন্দ্ৰীয় এক নতুন অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন। যদিও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হয়, তথাপিও বাস্তবে তা অসম্পূর্ণ ও অর্থহীন এবং হাস্যকর স্বায়ত্তশাসন । IC.S ৩ ছিল কর্মচারী সুবিধা অধিকারের মুখেও গভর্নরের বিয়ে ঋণী পরিপ্রেক্ষিতে এটা অবাস্তব হয়ে পড়ে। অনেকের প্রহসন, বাস্তবতা বিবর্জিত এবং চতুরতাপূর্ণ স্বায় করতে সক্ষম ণ ক্ষমতা : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, It করছে কৃষক এস প্রভৃতি of autonomy and ninety eight percent এক মুক্তির জন্য মন্ত্রী কর্তৃক | এছাড়া তৎকালীন ভারত সচিব লর্ড জেটল্য করেছেন যে, ১৯৩৫ সালের আইনে প্রদেশসমূে ার্টির কর্মসূচি প্রবর্তিত হয়নি। তাবে বলা যায়, ১৯৩৫ সাে ফজলুল হকের অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি থাকলেও ভারতের প্রদের ব্যবস্থা করা। আকারে হলেও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবম্মিলন অনুষ্ঠিত অভিজ্ঞতা ভারতবাসীর জন্য কাজে দিয়েছিল। চৌদ্দ দফায় ভারতীয়রা পরে অগ্রসর হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৩৫' শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা  ভারতবাসীর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় ।

ভূমিকা : রাজনৈতিক সংকট নিরসনে হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে তাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, আর এটাই বা এই চুক্তিই ল ইতিহাসে বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি নামে পরিচিত। এটা মূলত ১৯২০ সালে অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলে নতুনভাবে হিন্দু- মুসলিম দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত একটা রাজনৈতিক চুক্তি করা হয় আর এটাই বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি নামে পরিচিত 1

সজিদ → বেঙ্গল প্যাক্ট : ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে ভারতীয় দ্যযন্ত্র উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে -হত্যা তখন বেঙ্গল প্যাক্ট তাদের জন্য আশার আলো বয়ে আনে যার ।। এ নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি মুসলমানদের সহযোগিতা কূলে লাভের আশায় মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। রচনা তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে র না একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চিত্তরঞ্জন দাসের লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে মতে | পড়া মুসলমানদের কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে হিন্দুদের ত্যেক সমকক্ষ করা। আর এ কারণেই তিনি সমঝোতায় আসেন এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন। যা ১৯২৩ সালে স্বাক্ষরিত এ রাজনৈতিক চুক্তিই ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্ট নামে অভিহিত হয় ।

→ ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি : ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসমূহের মধ্যে ১৯২০-২১ সালের মহাত্মা গান্ধী এর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সর্বপ্রথম সমর্থন লাভে সক্ষম হয় এবং ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের শক্তি ও প্রশাসনিক যোগ্যতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কতিপয় উগ্রপন্থী ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চৌরিচিরিয়াতে পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দিলে ২২ জন পুলিশ মারা যায়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তর নির্বাচনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯২১ সালের পর ১৯২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, চিত্তরঞ্জন দাসের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয় কংগ্রেসীরা নির্বাচন আমলাগুলো দখল করে সরকারী নীতির বিরোধিতা করবে। ১৯২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাস চন্দ্ৰ বসু সভাপতি ও কর্মসচিব নির্বাচিত হন। স্বরাজ পার্টির পক্ষে সমর্থন গোছাতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাস তার মুসলিম সহযোগী বাংলার মৌলভী দর আব্দুল করিম, মাওলানা আকরাম খা, মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী নার এবং মৌলভী মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন ান যা ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্টর নামে পরিচিত ।

বেঙ্গল প্যাক্টের গুরুত্ব : ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট ছিল মূল ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতার পর মনোভাব প্রতিষ্ঠার দলিল। এ চুক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি রি সদাচারণ ন্যায্য অধিকার এবং ধর্মীয় মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা ক্ত জানানো হয়। আর এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের রেখা মুছে রে যায় হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে থেকে। চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে রি | বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরিত হওয়ায় স্বরাজ দলের নেতৃত্বে বাংলার জন্য বহু প্রস্তাব পাস এ অনেক প্রস্তাব বাতিল করা হয়। স্বরাজ দল বাংলার নির্বাচনে ৮৫টি আসনের মধ্যে ৪৭টি আসন লাভ করে। ল কলকাতা কর্পোরেশনে স্বরাজ দল তিন চতুর্থাংশ আসন দখল করার মাধ্যমে সি.আর. দাস মেয়র এবং হোসেন শহীদ - সোহরাওয়ার্দী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বেঙ্গল প্যাক্টের মূল ই লক্ষ্যই ছিল রাজনৈতিক অবসান ঘটানো এবং হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি - করা। চিত্তরঞ্জন দাস এর একান্ত ও নিরলস প্রচেষ্টায় যে চুক্তি, র স্বাক্ষরিত হয় তার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে ল সম্প্রীতি গড়ে উঠে এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি হয়। এবং এর মধ্যে সকল নতুন আশার আলো তৈরি হয় ।

অথবা, মর্লি মিন্টো সংস্কার আইনের ধারাসমূহ বর্ণনা কর।

ভূমিকা : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দেরকে উদারতার বাণী শোনান । যে উদারতার বাণী ভারতীয়রা ইতোপূর্বে শুনেছিল কিন্তু কাজ হয়নি। তাই ১৯০৯ সালে ভারতীয়দের প্রতি উদারতার মনোভাব পোষণ করে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টো। এ উদারতার মানসিকতার প্রেক্ষিতে তারা একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা চালান। যা ১৯০৯ সালের বাস্তবায়িত হয়। এটি ইতিহাসে মর্লি মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত। এ আইন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রণয়ন করা হয়। এ আইন সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ এর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন : ১৮৯২ সালের ভারত র শাসন আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে নতুন উপাদান যোগ করে। ব্রিটিশ প্রশাসন বিরোধী মনোভাবে উদ্রেক রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সক্রিয় হয়। যার ফলে ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে আগাখানের নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধি দল লর্ড মিন্টোর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া পেশ করে। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯০৯ সালে একটি আইন পাশ হয়। যা মর্লি মিন্টো সংস্কার আইন' বা ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন বলে ।

→ ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য বা ধারা : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন একটি সংশোধনী আইন। এ আইনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়নি। নিম্নে ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনের ধারা বা বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল পূর্বে ছিল ১৬ জন। ১৯০৯ সালের আইনে ৬৯ করা হয়। এ আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদের । সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। বড় বড় প্রদেশে শাসনতান্ত্রিক । সুবিধার জন্য ৫০ জন অতিরিক্ত সদস্য এবং ছোট প্রদেশগুলোতে 5 ৩০ জন সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদেশের আইনসভায় বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়া হয় ।

২. নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি প্রদান : ১৯০৯ সালের আইনের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সদস্যদের ভোটাধিকার সীমিত করা। পৌরসভা, লোকাল বোর্ড, বণিক সমিতি প্রভৃতিই ভোটাধিকার লাভ করে । কেন্দ্রীয় সংস্থার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার নীতি স্বীকৃত হয় ।

৩. মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা : এ আইনের দ্বারা সর্বপ্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া T হয়। কেননা ব্রিটিশ ভারতে অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। এই আইনের দ্বারা প্রথম মুসলমান প্রতিনিধিগণ মুসলমান ভোটার দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে ।

৪. আইন পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে আইন পরিষদের সদস্যরা যেকোনো প্রশ্ন এবং সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার লাভ | করে। এমনকি সরকারের সমীপে সুপারিশ আকারে পরিষদে প্রস্তব উত্থাপন করতে পারতো ।

৫. আইন পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত : আইন | আ পরিষদের সদস্যদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হলে আইন হি পরিষদে সভাপতির ক্ষমতা অপ্রতিহত রাখা হয়। এক্ষেত্রে আইন প্র পরিষদের সদস্যরা সরকারের নিকট সুপারিশ আকারে পরিষদে ক প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার পরিষদ সভাপতির হাতেই ন্যস্ত রাখা হয়।

৬. গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিষদে ভারতীয় প্রতিনিধি স্ব নিয়োগ : এ সংস্কার আইনে গভর্নর জেনারেলের কার্য নির্বাহক পরিম একজন ভারতীয় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

৭. শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি : ১৯০৯ সালের অ সংস্কার আইনে শাসন পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪ জনে উন্নীত করা হয় ।

৮. সহযোগিতার নীতি : ১৯০৯ সালের এ সংস্কার আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল সহযোগিতার নীতি গ্রহণ। জনস্বার্সের খাতিরে সরকারে সাথে উপর্যুক্ত ভারতীয় নেতৃবর্গের সহযোগতার নীতি গৃহীত হয় ৷

৯. বাংলা প্রদেশে কার্য নির্বাহ পরিষদ গঠন : এ আইনে ভারত শাসন অনুযায়ী ছোটলাট শাসিত প্রদেশেও কার্যনির্বাহ পরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় সেই মোতাবেক বাংলায় একটি কার্য নির্বাহক পরিষদ গঠন করা হয়।

১০. রাজনৈতিক অযোগ্যতা : ১৯০৯ সালের এ সংস্কর আইনে রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তবে সরকার প্রধানকে এ জাতীয় অযোগ্যতা পরিহার ক্ষমতাও দেওয়া হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৯ সালের সংস্কার আইন একটি গুরুত্ব স্থান দখল করে আছে। এ আইনের মাধ্যমে ব্রি সরকার ভারতীয়দের কিছু রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করলেও | সমগ্র ভারত কর্মীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.
© Copyright 2024 - aowlad - All Rights Reserved
magnifier linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram